Ads

শিশুর বিকাশ এবং বৃদ্ধিতে বাবার ভূমিকা

তৃপ্তি পোদ্দার

সামাজিক পরিচয়ে একজন পুরুষ তখনই বাবা হয়ে ওঠেন যখন তার সন্তান এই পৃথিবীতে আসে, পৃতিত্ব তখনই স্বার্থক হয় যখন শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশ সঠিক ভাবে হয়, মাতৃত্ব ও ঠিক তেমনটি। বাবার সন্তানের প্রতি কর্তব্য ও দ্বায়িত্ব নির্ভর করে সামাজিক মডেল এর উপর, কোনো সমাজে বাবা শুধু রোজগার করে থাকেন আবার কোনো সমাজে বাবা প্রতিদিনের কাজ ও করে থাকেন রোজগারের পাশাপাশি কিন্তু সনাতন পৃতিত্ব শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিয়ে কখনই ভাবতে হয়নি কারণ শিশুর হাতে উন্নত প্রযুক্তি ছিল না, ছিল না একটি রুমের মধ্যে আটকে থাকা, ছিল না একক পরিবারের ছোয়া, ছিল না করোনাকালীন আটকে থাকা জীবন। উন্নত বিশ্বে শৈশব কালীন বিকাশ এবং বৃদ্ধি নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রতিনিয়ত একাধারে গবেষনা হচ্ছে তেমনি হচ্ছে এর যুগপোযোগী ব্যবহার।

UK কারিকুলাম অনুযায়ী শিশুর শৈশবকালীন বিকাশকে ২ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি হলো বা প্রাথমিক ভাগ আর অন্যটি হলো বিশেষ ভাগ ।  প্রাথমিক ভাগের মধ্যে রয়েছে তিনটি বিকাশের মাপকাঠী ভাষা এবং যোগাযোগ বিকাশ, শারীরিক বিকাশ, ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং আবেগিক বিকাশ।আর বিশেষ ভাগের মধ্যে রয়েছে চারটি বিকাশের মাপকাঠী অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন বিকাশ, গনিতে বিকাশ, পৃথিবী সম্পর্কে বোঝার বিকাশ, এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ শিল্পের বিকাশ।

উপরিউক্ত প্রতিটি বিকাশ এবং বৃদ্ধিতে বাবার ভূমিকা অপরিসীম। বাবা ইচ্ছে করলেই শিশুকে সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, যুগপোযোগী শিক্ষা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন আবার ইচ্ছে না হলে শিশুকে সনাতনী পুরানো সমাজেও রাখতে পারেন কিন্তু অধিকাংশ বাবা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন তাহলে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে কেনো সনাতনী বাবা হয়ে থাকবেন, স্মার্ট ফোনের সাথে সাথে আপনি ও স্মার্ট হয়ে উঠুন, বস্তুগত চাহিদাই শিশুর একমাত্র অধিকার নয়, 1989 সালে UNCRC শিশুর অধিকারকে সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করেছে এবং ২ টি দেশ ছাড়া আর অন্য সব দেশ এই সনদে সাক্ষর করেছেন, কিন্তু শিশুদেরকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করা হচ্ছে শুধু অবহেলা করে, একটু যত্ন ০ থেকে ৫ বছর, এই সময়টি শিশুর সঠিক বিকাশের সঠিক সময় কিন্তু আমরা তা করছি না ।

বাবাদেরকে বলছি, শিশুকে মেধাবী করবেন, ভালো মানুষ করবেন অথবা আপনি হতে চান আপনার সন্তানের জীবনে রোল মডেল তবে আপনাকে সময় দিতে হবে, আপনি সহমর্মিতা না দেখালে শিশু কিভাবে সহমর্মিতা শিখবে । শিশুর প্রতিটি বিষয় শিখন শিক্ষন শুরু হয় মাতৃগর্ভ থেকে, তারপর পরিবার থেকে এবং পরিবেশ থেকে। শিশুকে ধারণ এবং ব্রেস্ট ফিডিং ছাড়া প্রতিটি বাবা শিশুর বিকাশে এবং বৃদ্ধিতে একটি পার্ট হতে পারেন, দিতে পারেন ভালো কিছু মুহূর্ত যা শিশুর লং টার্ম মেমোরি বিকাশে খুবই সাহায্য করে থাকে। শিশুকে সময় দিলে আপনাকে বৃদ্বাশ্রমে যেতে হবে না, কারণ শিশু ছোট বেলা থেকে অভ্যস্ত বাবার সাথে থাকতে আর যদি তাকে সময় না দিয়ে থাকেন তাহলে শিশুর তো অভ্যস্ততাই হয়নি, নেই কোন ভালো লাগা বা পরীক্ষামূলুক অভিজ্ঞতা, কেনো শিশু আপনাকে তার জীবনের একটি অংশ মনে করবে, কেনইবা আপনার কষ্টে অথবা আপনার অসুস্থতায় আপনার জন্য রাত জাগবে, আপনি তাকে যদি আপনার প্রিয় ফোন রেখে সময় দেন তাহলে আপনার সন্তানও অফিস ফেলে আপনার পাশে থাকবে, প্রতিটি সম্পর্ক হলো দেওয়া এবং নেওয়ার উপর নির্ভর করে ।

সর্বোপরি একটি কথা বলবো ভালো যত্ন,ভালো পরিবেশ এবং একটু সময় একটি শিশুকে ভালো এবং যুগপোযোগী মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারে।অবহেলা, ব্যস্ততা এবং অহংকার বোধ ( এটা মহিলাদের কাজ) বলে যদি দূরে সরিয়ে রাখেন নিজেকে, তাহলে আপনি-আপনার এবং আপনার সন্তানের ক্ষতি করছেন।

নিচে কয়েকজন মা এবং বাবার “শিশুর বিকাশে এবং বৃদ্ধিতে বাবার ভূমিকা” এই সম্পর্কে মতামত, অনুগ্রহ করে পড়বেন। I do not change any of parents’writing or comments:

“১)বাবারা তার স্ত্রীকে গর্ভধারণের দিনগুলো থেকে শুরু করে নিজের ইনভল্ভমেন্ট তৈরি করলে আমার ধারনা বাচ্চা হবার পর তার দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা ও করনীয় সহজ হয়,হুট করে বাবার সন্তানের প্রতি করনীয় যেমন সহজ হয়না তেমনি পরিবার আশেপাশের মানুষ পজেটিভ নেয় না ….বাবা টাকা ইনকাম করে তাহলে বাচ্চার জন্য কেন রাত জাগবে,বাবার ঠিকমত ঘুম হওয়া দরকার,টাইমলি খাওয়া দরকার অপরপাশে বিনিদ্রারজনী পার করে মা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত চিন্তাও করতে পারেনা কখন সে একটু ঘুমাবে অন্যসব তো বাদই দিলো। সাপোর্ট বলে বলে গলা ফাটিয়ে ফেলা মানুষগুলো হয়না সবসময় আপনার দায়িত্ব নেবার সঙ্গী ,সো বেশিরভাগ করতেই হয় বাবা মাকে তাই নিজেরা কতটা নিজেদের প্রতি যত্নশীল সেটার উপর আপনার পরবর্তী ধাপগুলোরও সহজ করে,মা বাবাকে স্বত:স্ফূর্ত দেখতে সন্তান সবচেয়ে বেশি আত্মতৃপ্তিতে ভোগে ।

২)1 Building, fixing toys 2 Demonstrating to children chores must be shared 3 Telling stories 4 Potty training (this is my personal experience, I felt my son picked up potty training fast during the lockdown as his father helped him). 5 Giving a bath. 6 Preparing snacks or a meal on a weekend

৩) ১। সন্তানের সাথে সময় কাটানো যেমন খেলাধুলা করা। ২। বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। ৩।মাঝে মধ্যে নিজ হাতে সন্তান কে খাইয়ে দেওয়া।

৪)অধিকাংশ বাবারা বাচ্চাকে যথেষ্ট সময় দিতে পারে না।।।কিন্তু, যেটুকু সময় ঘরে থাকে, সেটুকু সময়ে বাচ্চার সাথে সময় কাটানো উচিত। ৫ বছরের কম বয়সী শিশু হলে, তার খেলা,খাওয়া এবং ঘুম পাড়ানো। এই ৩টি কাজই যথেষ্ট বলে মনে করি। ৫ বছর থেকে একটু একটু পড়ার ব্যাপারে বাবার খেয়াল রাখাও জরুরি বলে মনে করছি।।

৫)বাবার ছায়াতলে সন্তানের পৃথিবী। বাবারা স্বপ্ন দেখায়, মায়েরা তা পূরণ করার চেষ্টা করে।

৬) Try to react with them according to their emotion, Communicating with them through spending quality time, But much failure to control siblings rivalry.

৭) ১.সন্তানের সাথে ব্যায়াম করা। ২. বই পড়ে শোনানো ৩. প্রকৃতির কাছে যাওয়ার জন্য সময় বের করা। ৪. ঘরের কাজে বাবার সাথে সাহায্য করা। ৫.বিভিন্ন শিক্ষনীয় বিভিন্ন ভাষার এনিমেশন চাইল্ড মুভি দেখা ও আলোচনায় অংশগ্রহন করানো।

৮)একজন বাবার সবচেয়ে ভালো যা করতে পারে তা হলো বাচ্চার মাকে সম্মান ও সহমর্মিতা দেখানো। এতেই সন্তান খুব ভালো ভাবে বড়ো হবে।

৯)একজন বাবা চাইলে সন্তানের ভালো বন্ধু হতে পারেন। অফ ডে তে বাচ্চা কে সময় দিতে পারেন। অন্যান্যদিন মা বাচ্চার জন্য যা করেন তা যদি একজন বাবা অফ ডে তে করে দেন তাহলে মা, বাচ্ছা উভয়ের জন্য ভালো হয়।

১০) সন্তান গর্ভে ধারণ ও জন্মদান করা ছাড়া আমার ধারণা আর বাকী সব কাজই বাবাও করতে পারেন এবং অবশ্যই করা উচিত।

১১)বাচ্চার মাকে সম্মান আর তাকে সহযোগীতা সন্তান লালন পালনে সবচেয়ে বড় সহায়ক

১২)সকালে ঘুম থেকে উঠে সন্তানকে দাঁত ব্রাশ, গোসল, স্কুলের জন্য রেডি করা, বাড়িতে থাকলে বিকেলে একসাথে খেলতে বসা বা গল্প করা বা ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, পড়তে বসানো, ঘুম পাড়ানো ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করতে পারেন। এছাড়া স্কুলে দিয়ে আসা, প্যারেন্টস মিটিং এটেন্ড করা এগুলো ও বাবারা করতে পারেন কখনো কখনো খুব বেশি সমস্যা না হলে। যেহেতু বেশিরভাগ পরিবারেই মায়েরাই রান্না ও গৃহস্থালি কাজগুলো তদারকি করেন। সব কাজ মায়ের ঘাড়ে না দিয়ে কিছু কাজ বাবারা করলে পরিবারে সৌহার্দ বজায় থাকে। আপু এর শেকড় তো আসলে অনেক গভীরে। যে শিশু তার বাবাকে দেখে মাকে সাহায্য করতে, মায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে, যে মা তার ছেলে শিশুকেও ঘরের কাজে ছোট থেকেই অভ্যস্ত করান সে বড় হলেও সাধারণত ঘরের কাজে ও সন্তান পালনে সম্মানের সাথেই অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া বড় হলেও যদি পরিবারের ও আশেপাশের সবাই শিশুর বাবাকে inspired করে appreciate করে তাহলে তারা সহযোগিতা করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে insult করা হয়, টিপ্পনী কাটা হয়, বিদ্রুপ করা হয়, হেয় করা হয় এদেশীয় সমাজে। তখন তারা চাইলেও নিরূৎসাহিত হয়। অথচ তাদের বড় একটা অংশই বিদেশে গেলে ঠিকই share করেন কাজগুলো। তখন কটু কথা বলার লোক থাকে না আশেপাশে, মনটাকে বিষিয়ে দেওয়ার কেউ থাকে না। এটা একটা বড় কারণ হতে পারে।

১৩) Except breastfeeding, there’s nothing a father can’t do which are done by a mother. Just a little willpower is required. Most importantly, if he is unable to do, atleast he can render a hand to help the mother.

১৪)কোন কিছু না করলেও ৩০ মিনিট খেলা করতে পারে

১৫)আমি সন্তানের জন্য ডিপিএস করে রেখেছি৷ ১৫ বছর পরে প্রায় ১০লাখ টাকা পাবো, যা তার পড়াশুনার জন্য ব্যয় করতে পারবো৷ আমার মেয়ের জন্মের প্রথম দিন থেকে শুরু করে এখন পযর্ন্ত মেয়ের বাবা ব্রেস্ট ফিড করানো ব্যাতীত মেয়ের সবকিছুই করছে।

১৬) কিছু সময় বাবুকে কোলে রাখতে পারে, সময় দিতে পারে,খাইয়ে দিতে পারে, ঘুম পাড়াতে পারে।”

লেখকঃ কলামিস্ট ও  আর্লি ইয়ার্স এক্সপার্ট, ইউ কে

 

আরও পড়ুন