Ads

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কেয়ার

মিনা

আজ এক মায়ের গল্প বলি শুনুন।এক ছেলে আর চার মেয়ে নিয়ে উনার সংসার। বাবা সরকারী চাকুরিজীবী সারাদিন পরিশ্রম করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটানোর আপ্রাণ চেষ্টায় উনার দিন কেটে যায়।

একজন মা বললেন আমি আমার সন্তানকে ভালো মানুষ করতে পারিনি বলে অনেক ক্ষণ কাঁদলেন।যাদের সাথে বসে এই কথা বলছেন তারা উনাকে নানান ভাবে কথা শোনাচ্ছেন আর নিজের ছেলে মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন এতে ঐ মায়ের কষ্ট আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।

আমি বিষয়টি খেয়াল করলাম এবং উঠে গিয়ে উনার কাছে বসলাম বললাম দেখুন পিতা মাতা যে কেউ হয়তোবা হতে পারে তবে আদর্শ পিতা মাতা সবাই হতে পারে না। আপনার সন্তান কি করছে,কার সাথে চলছে বাহিরে সে ঘন্টার পর ঘন্টা কাদের সাথে সময় পার করছে সেটা জানার দায়িত্ব পিতা মাতার।
আপনার আদরের সেই শিশু সন্তানটি একদিন কিশোর অথবা কিশোরী থেকে তরুণ অথবা তরুণীতে পরিণত হবে নিজের বিবেক বুদ্ধি তৈরি হবে তবে তার মধ্যে সেই শিক্ষাটুকু কাজে লাগবে যা আপনি শৈশব থেকে আপনার সন্তানকে দিয়ে এসেছেন।

আপনার আদরের সন্তানটিও একদিন নষ্ট পথে চলে যেতে পারে আপনার কথার তোয়াক্কাও করবেনা কারণ আপনি তাকে যদি সেই আদর্শ দিতে না পারেন । আর কেন দিতে পারেন নি এটা আপনার ব্যর্থতা।

আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত তবে সত্যি কথা বলতে আমরা এই শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা কতটুকু রাখতে পারছি?
মুখে মুখে অনেক ভালো মানুষ সাজার চেষ্টায় আমরা আমাদের আমিত্বকে লুটিয়ে দিচ্ছি হারাম পথে। অন্যের দোষ খুঁজতে খুঁজতে নিজে যে অন্ধকার জগতে তলিয়ে যাচ্ছি নিজের পরিবারের সন্তানদের আদর্শ সন্তান হিসেব গড়ে তুলতে পারছিনা সেই খেয়াল কি আমাদের আছে?

বিবেক নামের এই শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত কথায় আছে ‘বিবেক থাকতে আদালত কেন’

“যে ব্যাক্তি নিজের বিচার নিজেই করতে পারে, তার মতো ন্যায় বিচারক আর নেই।” হযরত আলী (রাঃ)।

প্রতিটি মানুষ তার নিজের কাজ সম্পর্কে অবগত।একটা জায়গায় আগুন রাখা আরেকটা জায়গায় পানি আপনাকে হাত দিয়ে পরখ করতে বললে আপনি কিন্তু পানিতেই দিবেন কারণ আপনি বুঝেন যে আগুনে হাত দিলে তা পুড়ে যাবে। ভালো আর মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারলে মনে রাখবেন আপনার বিবেক এখনো ঘুমন্ত রয়ে গেছে।

পরিবারের একজন ভালো সন্তান মানে বাবা মায়ের মর্যাদা দ্বিগুন বৃদ্ধি পাওয়া কারণ যখনই আপনার ছেলে অথবা মেয়ে অসৎ পথ অবলম্বন করবে তখনই উঠে আসবে পারিবারিক মূল্যবোধ এর কথা । যে কেউ বলে উঠবে সে তার পরিবার থেকে সুশিক্ষা পায়নি।

সন্তানদের মনে সেই বোধটুকু জাগ্রত করে দিতে হবে ছোট বেলা থেকেই যে সব সময় ন্যায়ের পথে চলতে হবে ।এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যা জানার পর তোমাকে লজ্জিত হতে হয় পরিবার এবং সমাজে মাথা নিচু করতে হয়। মনে রাখবেন আপনার ছোট ছোট যত্ন, শিক্ষা, উপদেশ সন্তানদের জীবন গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যদি কোন খারাপ কাজের জন্য আপনার সন্তান বিপদগ্রস্ত হয় তবে তার দায়ভার পিতা মাতাকেই বহন করতে হবে।

“অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা অনেক ভালো ।” -(হোমার)

নিজের সন্তানরা ভালো পথে চলতে পারলে হালাল পন্থা অবলম্বন করলে আপনার সন্তান তাদের আরো দশজন বন্ধুকে এই ভালো পথে নিয়ে আসতে পারবে । আপনার সন্তান দ্বারা পরিবার সমাজ এবং দেশের কল্যাণ সাধিত হবে। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন সন্তানদের প্রতি সদাচরণ করুন তাহলে শেষ বয়সে আপনাদের আফসোস হবে না গর্বিত পিতা মাতা হোন লজ্জিত নয়।

লেখকঃ কলাম লেখক

আরও পড়ুন