Ads

পরম প্রশান্তি পেতে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ইসলামী পদ্ধতি

।। কোহিনুর বেগম ।।

প্রতিটা মানুষেরই রাগ আছে। কারণ রাগ একটি স্বভাবজাত বিষয়। তবে সবার রাগের মাত্রা সমান নয়। কারো খুব বেশি আবার কারো কম। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ইসলামী পদ্ধতি ও অবশ্য রয়েছে । হাদিসে রাগের ধরন অনুযায়ী মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।  

 এক.উত্তম হলেন- ওই ব্যক্তি, যার রাগ আসে দেরিতে। কিন্তু যায় খুব দ্রুত।  

দুই.আর মন্দ হলেন- ওই ব্যক্তি, যে খুব সহজেই রেগে যায়। সামান্য এদিক-সেদিক হলেই ক্রোধান্বিত হয়। তার রাগ আসে দ্রুত কিন্তু তাড়াতাড়ি শেষ হয় না। বরং রাগ নিয়েই বসে থাকে। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২১৯১) 

বেসামাল রাগে বেশুমার ক্ষতি। প্রথম ক্ষতি নিজের। কারণ রাগান্বিত ব্যক্তি প্রথমেই ক্রোধের আগুনে দগ্ধ হয়। ফলে রাগের মাথায় কখনো সে নিজের জীবন শেষ করতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেউ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়। এছাড়া রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ামেজাজ খিটখিটে হওয়া। স্বাচ্ছন্দ্য ও ফুরফুরে ভাব বিলিন হওয়ার ক্ষতি তো আছেই। 

অতিরিক্ত রাগের কারণে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনে নেমে আসে অশান্তির কালো মেঘ। নষ্ট হয় ব্যক্তির সম্পদ ও সম্মান। মারামারি,ফাটাফাটি, কাটাকাটি,ছাড়াছাড়ি,খুনাখুনি পর্যন্ত হয়ে যায়প্রাণপ্রিয় বন্ধু হয়ে যায় চরম শত্রু। অস্বাভাবিক রাগ মানুষকে নিমজ্জিত করতে পারে কুফরির অন্ধকারে। মুমিনের সবচেয়ে দামি সম্পদ ঈমানও নষ্ট হতে পারে বেপরোয়া রাগের কারণে। রাগের মাথায় কোনো রাষ্ট্রপ্রধান পরমাণু বোমার সুইচ টিপে দিলে পৃথিবী হারাতে পারে সজীবতানিশ্চিহ্ন হতে পারে মানুষের অস্তিত্ব। 

তাই ক্রোধের অনিষ্টতা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ধরতে হবে কুরআন-হাদিসের আলোকিত পথ। রাগ সংবরণের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ক্রোধ সংবরণে যে বিরাট প্রতিদান আছে। তা অন্য কিছুতে নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১৮৯) 

একজন মুমিনের স্বপ্ন এবং সর্বোচ্চ প্রত্যাশার বিষয় হলো জান্নাতহাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণকারীকে এই জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে 

নবীজির প্রিয় সাহাবী ছিলেন হজরত আবু দারদা রা:। একবার তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। নবীজি বললেন, তুমি রাগ করবে না। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত। (তাবারানী, হাদিস: ২৩৫৩) 

 আল্লাহর কাছে কোনো আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো ঈমানঈমান ছাড়া নাজাতও অসম্ভব। আর রাগ সংবরণ মানুষের ঈমানে পূর্ণতা এনে দেয়। 

 নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাগ হজম করে নেয়, আল্লাহ তার অন্তরকে ঈমান দ্বারা পূর্ণ করে দেবেন।” (মুসনাদে আহমদ: ১/৩২৭) 

 একবার নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কাকে বেশি শক্তিশালী মনে করো? উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন,যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে তাকে। নবীজি বললেন,সে নয়। বরং প্রকৃত বীর হলো সে,যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৪) 

 যারা বুদ্ধিমান তারা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।  

আরও পড়ুন-

কঠিন সময়ে আমাদের আপনার সুরক্ষায় রাখুন

একদিন এক ব্যক্তি নবীজির কাছে এসে বললেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। নবীজি বললেন, রাগ করো না। সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বললো, নবীজি প্রত্যেকবার বললেন, রাগ করো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১১৬) 

সংসার জীবনে অনেক সময় কোনো কারণে মানুষ হিসেবে রাগ উঠতেই পারে। তাই বলে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল জানতে হবে। 

এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয় তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৮৪)  

 অন্য এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাগ আসে শয়তান থেকে। শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন দিয়ে। আর আগুনকে নেভাতে হয় পানির সাহায্যে। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হলে তার উচিত অজু করা। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৮৬) 

অপর হাদিসে নবীজি বলেন, আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। তা হলো আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৩১৭)  

 

রাগ সংবরণের আরেকটি পন্থা শিখিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয়, তখন সে যেন চুপ হয়ে যায়। (সহিহ বুখারি: ২৪৫) 

রাগ হজম করে কাউকে ক্ষমা করে দেয়া খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু কেউ যদি এটা করতে পারে তাহলে আল্লাহ তাকে ভীষন ভালোবাসেন। তার প্রশংসায় আল্লাহ বলেন,

“যারা সুসময় ও দুঃসময় সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং ক্রোধকে হজম করে ও মানুষের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেয়। আর এমন মহৎ লোকদের আল্লাহ বড়ই ভালবাসেন।” (সূরা আল ইমরান ১৩৪) 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রাগের পরিণাম এবং ভয়াবহ দিকগুলো মনে রাখা উচিত। বিপদ-বিপর্যয় ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাগ নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন থেকে বেপরোয়া রাগের  ঘূর্ণিঝড় থেকে আত্মরক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কারণ রাগ পুষে রাখলে নিজেরই ক্ষতি হয়। যারা রাগ পুষে রাখে তারা তার সাথে অতীতে ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনাগুলো বারবার স্মরণ করে মানসিক কষ্ট পায় এবং সব সময় অশান্তির আগুনে জ্বলতে থাকে।কিন্তু ক্ষমা করে দিলে পরম প্রশান্তি পাওয়া যায়। তাই ক্রোধ দমন করা এবং মানুষকে মাফ করে দেয়ার সাধনা করতে হবে।এটি আমাদের উভয় জগতেই শান্তি দেবে। আমরা যেন এই মহৎ গুন অর্জন করতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমীন। 

লেখকঃ গল্পকার ও কলাম লেখক

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১)

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন