।। প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।
মুসলিম ছাত্রদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে সামনে রেখে সময়কে সর্বোচ্চ ব্যবহারের কৌশলগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কেননা সময়ের সঠিক ব্যবহারই জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি। ইসলামে সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তা সরাসরি সালাতের সাথে সম্পর্কিত। নিচে সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কিছু দিক এবং ইসলামিক মূল্যবোধের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. সময়ের কসম এবং মানুষ ভুলের মধ্যে আছে:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সময়ের কসম খেয়ে বলেন, “মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে” (সূরা আসর, আয়াত ১-২)। এর মাধ্যমে সময়ের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একজন মুসলিম ছাত্রের উচিত আল্লাহর দেওয়া সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার মাধ্যমে সময়ের শৃঙ্খলা শেখা যায়। নিয়মিত সালাত আদায় করলে দিনটি ভাগ করে কাজ করার সুযোগ মেলে, যা ভুলের মধ্যে ডুবে না গিয়ে কার্যকরীভাবে সময় ব্যবহারে সাহায্য করে।
২. মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য:
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, “আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” (সূরা আদ-ধারিয়াত, আয়াত ৫৬)। ইবাদত শুধু নামাজ, রোজা বা ধর্মীয় কাজ নয়, বরং জীবনযাত্রার প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। পড়াশোনা, কাজ বা পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে আল্লাহর ইবাদত হতে পারে যদি তা নিয়ত সহকারে এবং সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে ছাত্ররা নিজেদের প্রতিদিনের কাজে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
৩. আজকের দিনটি গতকালের থেকে ভালো হতে হবে:
হাদিসে এসেছে, “যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে ভালো নয়, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত।” এই নির্দেশনা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রতিদিন সময়ের সঠিক ব্যবহার করে গতকালের তুলনায় আজকে আরো উন্নত এবং সফল হতে চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া, দায়িত্বশীল থাকা এবং নামাজকে কেন্দ্র করে একটি কার্যকর দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করা।
৪. দৈনন্দিন রুটিন নিয়ে সময়কে কাজে লাগানো:
প্রতিদিনের রুটিনকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ভিত্তিতে সাজানো গেলে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ:
– ফজরের নামাজের পর: ফজরের পর পড়াশোনা বা কাজ করার জন্য উপযুক্ত সময়, কারণ এই সময় মন এবং মস্তিস্ক পরিষ্কার ও সতেজ থাকে।
– জোহরের আগে বা পরে: দুপুরের সময় কাজ বা ক্লাসের বিরতি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
– আসর ও মাগরিবের মাঝে: এই সময়ও পড়াশোনা বা অন্য জরুরি কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে।
– ইশার পর: ইশার নামাজের পর বিশ্রামের জন্য সময় নেওয়া উচিত এবং তাড়াতাড়ি ঘুমানো উচিত যেন ফজরে উঠতে কোনো সমস্যা না হয়।
আরও পড়ুন-
৫. খুব ভোরে উঠা ও ঈশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া:
হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, ভোরবেলা ওঠা বরকতময় সময়। তাই ফজরের নামাজের আগে ওঠা উচিত এবং ইশার নামাজের পর দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত। রাত জাগার বদলে ভোরে ওঠা পড়াশোনার জন্যও ভালো। এর ফলে দিনটি দীর্ঘ হয় এবং কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
৬. মুসলিম হিসেবে দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন করা:
মুসলিম ছাত্র হিসেবে সালাতের সাথে সাথে পারিবারিক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার জরুরি। নিজের কাজগুলোকে নামাজের সময়ের ভিত্তিতে ভাগ করে নেওয়া যায়, যেমন: পড়াশোনা, সামাজিক দায়িত্ব পালন, এবং পরিবারের দায়িত্ব পালন সবকিছু সালাতের সময়সূচির মধ্যে সাজিয়ে নেওয়া।
৭. সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক পরিকল্পনা:
সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। এতে ছাত্ররা নিজেদের পড়াশোনা, কাজ ও ইবাদত সবকিছুকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। নিয়মিত সাপ্তাহিক রুটিন চেক করে উন্নতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে, যেন নতুন পরিকল্পনা আরও ভালো হয়।
৮. দিনের কাজ দিনে করা:
দিনের কাজ রাত পর্যন্ত না ফেলে দেওয়া সবচেয়ে ভালো সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল। ইসলামে বলা হয়েছে, দিনে কাজ করা উচিত। রাতকে বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তাই, দিনের কাজ দিনে শেষ করতে পরিকল্পনা করা উচিত এবং রাতের সময় বিশ্রামের জন্য রাখা উচিত।
উপসংহার:
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মুসলিম ছাত্রদের জীবনকে শৃঙ্খলিত এবং সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পড়াশোনা, ইবাদত, এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে একজন ছাত্র সফল হতে পারে। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হলে সালাতকে কেন্দ্র করে জীবনকে সাজানো এবং প্রতিদিনের উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা জরুরি।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকপথে সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন!
লেখকঃ প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন