।। মূলঃ মুফতি মেনক ।।
।। অনুবাদঃ মাসুম খলিলী।।
এক. সর্বশক্তিমান। আমাদের প্রতি আপনার রহমত দান করুন এবং আমাদের এই দশটি বরকতময় দিনের অপরিসীম তাৎপর্য উপলব্ধি করার সুযোগ দিন। আমরা আপনার কাছে প্রার্থনা করি যে আপনি আমাদের কাজগুলিকে শুধুমাত্র আপনার জন্য কবুল করুন এবং আমাদের ত্রুটিগুলি ক্ষমা করুন। আমীন।
দুই. সমালোচনায় প্রভাবিত হবেন না। ইতিবাচক বা নেতিবাচক, সমালোচনাকে আপনার পদক্ষেপের সাথে সমন্বয় করে নিন। জেনে রাখুন আপনার মূল্যের সাথে সাথে সমালোচনার মাত্রাও বেড়ে যায়।
তিন. ভাল, খাঁটি, সম্মানিত, ধার্মিক, চমৎকার এবং প্রশংসার যোগ্য বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ রাখার ব্যাপারে সহায়তার জন্য সর্বদা সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করুন। আমাদের বিচার বিবেচনাকে আচ্ছন্ন করে, সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং অন্যের সম্পর্কে খারাপ ভাবায় এমন চিন্তা পরিত্যাগ করুন! এসব শয়তানের কাজ। ভাল চিন্তাই সব ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করে!
চার. অন্যের জন্য সর্বদা সদয় হয়ে কথা বলুন। ইতিবাচক প্রভাব রাখুন, নেতিবাচক কাজ বেছে নেয়ার পরিবর্তে সর্বদা মানুষকে অনুপ্রাণিত করুন এবং তাদের ক্ষমতায়িত করুন। তাদের প্রশংসা করুন এবং এটি করুন প্রকৃতভাবে। আন্তরিক হন। আপনার কথা এখন থেকে বছরের পর বছর অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে।
পূনশ্চঃ
এক. মনে রাখবেন, আমাদের প্রত্যেকের জন্য কাজ চলছে। কখনও কখনও আপনার মনে হতে পারে যে সর্বশক্তিমান আপনাকে পরিত্যাগ করেছেন। এটি সত্য নয়। তিনি একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছেন এবং আপনার চরিত্র পরীক্ষা করছেন। এই জন্য সময় লাগে। বিলম্বে হতাশ হবেন না।
দুই. আমরা উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রবণতায় থাকি কারণ আমরা ভাবি যে আমাদের যা প্রয়োজন, যখন আমাদের এটি প্রয়োজন তখন আমাদের কাছে থাকবে কিনা। কিন্তু মনে রাখবেন যে আমরা যদি সর্বশক্তিমানের পরিবর্তে অন্য লোকেরা আমাদের চাহিদা পূরণের আশা করি, তাহলে আমরা হতাশ ও নিরাশ হব। তিনিই একমাত্র যিনি আমাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারেন।
তিন. জীবনে সবসময় পাটকেল ছোড়া আর হৈ চৈ বাধানোর লোক থাকবে। এটাই মানুষের স্বভাব। সর্বদা অন্য মানুষের জীবন নিয়ে আগ্রহী লোক থাকবে। আপনি নিজের যাত্রায় মনোনিবেশ করতে শিখুন। আপনি যদি থামেন এবং প্রতিটি ‘কুকুরের’ ছোঁড়া পাথর সেই কুকুরের উপরে নিক্ষেপ করেন তবে কখনই আপনি নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন না। সতর্ক থাকুন।
চার. প্রত্যেকের মধ্যে সব সময় ভাল কিছু থাকে। অন্যদের মধ্যে এটি দেখতে চেষ্টা করুন। কাজটি যতই ছোট হোক না কেন। তারা কোনও ভুল করলে সেটি গ্রহণ করুন। আমরা সবাই মানুষ এবং ভুল কাজ করা থেকে মুক্ত নই কেউ। পারলে ধৈর্য সহকারে আন্তরিক হৃদয় দিয়ে তাদের ভুল সংশোধন করুন। লোকদের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেবেন না। প্রার্থনায় তাদের জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে বলুন!
পাঁচ. আপনার পিতা-মাতার সাথে কোনো বিষয়ে একমত হতে না পারলেও, সর্বদা তাদের সম্মান করুন। আপনার অহংকে দৃশ্যপটের বাইরে রাখুন এবং তাদের সাথে আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলুন, আন্তরিক আচরণ করুন!
ছয়. জীবনে কোন পর্যায়ে আমরা সবাই দুর্বলভাবে পছন্দ করি। নিজেকে অত্যাচার করবেন না। যা হয়েছে তা নিয়ে অনুশোচনা, অপরাধবোধ, লজ্জা ও যন্ত্রণা নিয়ে বেশি সময় ও শক্তি অপচয় করার পরিবর্তে এই বিষয়গুলিকে পরিবর্তনের জন্য তা ব্যবহার করুন, যাতে দুর্বল পছন্দগুলি অতীতে থেকে যায় আর তা থেকে শেখা পাঠ ভবিষ্যতে কাজে লাগে।
সাত. আপনার শৈতিল্য হারানো এত সহজ! কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজেকে শান্ত থাকার জন্য প্রশিক্ষণ দিন। দৃঢ়ভাবে কিন্তু নম্র হয়ে আপনার অবস্থানে দাঁড়ান। অভিশাপ এবং গালমন্দ তাদের করতে দিন। সস্তা, মৌখিক অসৌজন্যতার উপরে ওঠা বেছে নিন আজকের পুরো দিন। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং উপলব্ধি করবে কতটা আগ্রাসি ছিল তারা!
আট. আপনি যদি কিছু চান, একটি ভালো কাজ, একজন দায়িত্ববান স্বামী বা স্ত্রী, তবে তার জন্য সর্বশক্তিমানকে বলুন; আন্তরিকভাবে তার কাছে আপনার হাত উত্থাপন করুন। তাঁর পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
আরও পড়ুন-অন্যকে গড়ে তুলতে ভালো মন ও হৃদয় লাগে
নয়. আপনার পা সর্বদা স্থিরভাবে মাটিতে রেখে চলুন এবং নম্র থাকুন। তারা যতই ভালো অবস্থায় না থাকুক না কেন অন্যের দিকে হেয়ভাবে তাকাবেন না। মনে রাখবেন, আপনি আজকে যাকে নিচুভাবে দেখছেন তিনিই সেই ব্যক্তি হতে পারেন যে আগামীকাল আপনাকে একই অবস্থায় দেখার পর্যায়ে থাকবেন। এটাই জীবন!
দশ. কখনো এ কথা বলবেন না যে, আপনার দেয়ার মতো কিছু নেই। আপনার কাছে সর্বদা কিছু না কিছু দেয়ার মতো থাকে। এটি আপনার কাছে খুব বেশি মনে হচ্ছে না তবে সর্বশক্তিমানের কাছে এটি আপনার আশপাশের ধনী লোকদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারের চেয়ে অনেক ভালো!
এগারো. আমরা সকলেই মাঝে মাঝে ব্যর্থতার মতো অনুভব করি। তবে সেই অনুভূতিতে ডুবে যাবেন না। আপনি যে যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন, আপনি যে বিপত্তিগুলি কাটিয়ে উঠেছেন, আপনি যে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছেন সেসবকে স্মরণে রাখুন। সর্বশক্তিমান প্রতিজ্ঞা করেছেন যে কোন কিছুই স্থায়ী হবে না। আশা বাঁচিয়ে রাখুন এবং চালিয়ে যান। তিনি সর্বদা আপনার উপর নজর রাখছেন।
দ্রষ্টব্য:
তার সহচর (শয়তান) বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত। আল্লাহ বলবেন, তোমরা আমার কাছে বাক-বিতণ্ডা করো না। অবশ্যই আমি আগেই তোমাদের সতর্ক করেছিলাম।’ (সুরা কাফ : ২৭-২৮)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা.বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি (অবশিষ্ট) নেই; যার সঙ্গে তার সহচর (কারিন অথবা খান্নাস) জিন (শয়তান সহচর) নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল সা! আপনার সঙ্গেও কি? তিনি বললেন- আমার সঙ্গেও। তবে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করেছেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে ( বা আমার অনুগত হয়ে গেছে)। ফলে সে আমাকে শুধু ভাল কাজেরই পরামর্শ দেয়। অন্য এক হাদিসে আবু সুফিয়ানের বর্ণনায় এসেছে-রাসুলুল্লাহ সা.বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গে তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি।’ (মুসলিম)
লেখকঃ একজন মুসলিম শিক্ষাবিদ, ইসলাম প্রচারক ও বক্তা
অনুবাদকঃ মাসুম খলিলী, কলাম লেখক ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।
ফেসবুকে অনুবাদক মাসুম খলিলী