সরকার আফরিন জাহান
এসএস সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেলাম । আমার আগে আমার স্কুল থেকে এমনকি আমার উপজেলায় এর আগে কেউ গোল্ডেন এ প্লাস পায়নি ।
বড় ভাই বিভাগীয় শহরে নামিদামি সরকারী কলেজে ভর্তি করে দিলেন।
যে আমি কখনো জেলা শহর দেখিনি তার কাছে বিভাগীয় শহর যেনো পৃথিবী!
পরিবেশের সাথে মানিয়ে উঠতে খুব বেগ পেতে হলো কিন্তু পড়ালেখায় আগের চেয়ে ভালো করার চেষ্টা করতে লাগলাম।
দেখতে দেখতে ইন্টার পরীক্ষা হয়ে গেলো ।
এবার এপ্লাস ই এলো ।
রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলাম । পরীক্ষা দিয়ে রাতের বাসে মেসে ফিরছিলাম হঠাৎ করেই জাহিন ! আমার হাতে হাত রেখে বলতে লাগলো ” ভাইয়া আপনি সুইট”।
বাসে আধো আলো আধো অন্ধকারে গল্প করছিলাম,আমি এমন কথা শুনে আচমকা ভয়ই পেলাম ।ভয় পেয়ে আমি হেসে দিলাম,কি যে বলো জাহিন!
(উল্লেখ্য আমি এমন কথা কখনো এর আগে শুনিনি)
জাহিন আমাদেরই মেসে থাকে ।আমরা সহপাঠী কিন্তু সে দেখতে বেটে বলে আমাকে ভাই ডাকে ।
মেসে ফেরার পর থেকেই জাহিন সব সময় আমার কাছাকাছি থাকে যদিও এর আগে একই মেসে থাকতাম কিন্তু তেমন কথা হতো না।
সিঙ্গেল বেড;গ্রুপ স্টাডির বাহানা করে সব সময় আমার রুমে আসতো প্রায়ই রাতে আমার সাথে থাকতো কিন্তু হঠাৎ এক রাতে তাকে নতুন করে আবিস্কার করি !
আমি কিছু বলতেই সে পায়ে পড়ে মাফ চায়।
এরপর মাঝে মাঝে ই রুমে আসতো মাথা নিচু করে; কিন্তু আগের মতই গ্রুপ স্টাডির বাহানা করে; আমি ভাবতাম, যুবক ছেলে যেহেতু হঠাৎ হয়ত ভুল করেছে !
এই প্রশ্রয়ই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অধঃপতনের সূত্র।
সে রাতে আমার সাথে ঘুমাতো আর আমার রুমে দুটি সিট ছিল ।বড় ভাইয়েরা এক সময় ওকে আমার রুমেই চলে আসতে বললো কারণ যে বড় ভাই আমার রুমে থাকতেন তিনি সিট ছেড়ে দিছে আর জাহিন যেহেতু সহপাঠী তাই আমার রুমেই ট্রান্সফার করলো ।
গ্রাম থেকে উঠে আসা সরল আর হাবাগোবা ছেলে ছিলাম।আর জাহিন শহুরে চালাক চতুর ছিল।এক পর্যায়ে আমি শয়তানের ওয়াসওয়াসার কাছে দূর্বল ঈমান হারিয়ে বসলাম।
আমি ” সমকামীতায় ” জড়িয়ে পড়লাম।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন” নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে” কিন্তু আমার সালাত আমাকে বিরত রাখতো না ।
বিরত রাখবেই কি করে? আমার তো স্বলাতই হতোনা , ঈমানই ছিল না।নিয়মিত কুরআন ও পড়তাম !
কেউ বুঝতোই না আমি সমকামী!
এরপর আমার আরও অধঃপতন নেমে আসে।
আমি এক মেয়ের সাথে কথা বলা শুরু করি ।
মেয়েটির বাড়ীতে প্রথম যেদিন বেড়াতে যাই , মেয়েটি তার বক্ষ দেশের কাপড় আপনা আপনি মেলে ধরে।
এরপর মেয়েটির সাথে আমার অনেক বার জেনা হয় এমনকি তার মা বিছানায় থাকত ,বাবা ছিল না ; আমি গেলে দরজা খুলে ঘরে নিয়ে বিছানার পাশেই আমার সাথে জেনা করত!
আমি আজও ভেবে অবাক হই ; মেয়েটির মাকি মোটেও বুঝতো না?
যতটুকু জানতে পেরেছি , মেয়েটিকে আমার সাথেই নয় ভালো ঘর ও ভালো ছেলে পাওয়ার জন্য তার মা এতে এক প্রকার অনুমতিই দিয়েছে ধরা যায় ।
মেয়েটির সাথে আমার জেনা হওয়ার আগে এবং এখন পর্যন্ত! সে অবিবাহিত,জেনা করেই চলছে ।
চিটাগাং ( ইউনিভার্সিটি/ মেডিকেল/ ইঞ্জিনিয়ারিং উল্লেখ করা হলো না)
চান্স পাওয়ার পর থেকেই এই মেয়ের সাথে পরিচয় এবং জেনা ।
মেসে যেদিন সর্বশেষ আসবাবপত্র আনতে যাই সেদিন ও জাহিনের সাথে ……..
জাহিন আজও বিয়ে করেনি নিজের চাহিদা মেটাতে যাদের কাছে যেতো তারা ওকে পাত্তা দেয় না; প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগে ।আমি বিয়ে করেছি ।সমকামীতা ছেড়েছি এখন ব্যভিচার ছেড়েছি ।তওবা করেছি কিন্তু আল্লাহ আমাকে ছাড় দিয়েছে ,ছেড়ে দেননি।
এখন আমি শারীরিক ভাবে অক্ষমই বলা যায় । স্ত্রীর হক্ব অনেকাংশেই আমি আদায়ে ব্যর্থ। ডাক্তার দেখিয়েছি, নিয়মিত ওষুধ সেবন করলেও আমার স্বাভাবিকতা আসে না অথচ ঐ একই ওষুধ হাজার হাজার পেশেন্ট সেবন করে স্বাভাবিক হচ্ছে।
আমি আজও নজরের হেফাজত করে উঠতে পারি না ।অন্য নারী দিকে চোখ পড়তেই আমি সতেজ হই কিন্তু স্ত্রী পাশে থাকলেও আমি নিরব ,নিথর ।
আমার পাপের শাস্তি আমার স্ত্রী বহন করছে; মেয়েটি ছলছল নয়ণে অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে; মেয়েটি আমাকে ভালবাসে; ছেড়ে যেতে পারে না ।
আর সে যদি আমায় ছেড়ে যায় আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমি তো নোংরা জলে ভেসে থাকা নোংরা খড়কুটো !
কেইবা আছে, আমাকে আগলে রাখার?
বিঃদ্রঃ লেখাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
আল্লাহ আমাদের সমাজের এহেন ঘৃণ্য অবস্থার পরিবর্তন করুন। আল্লাহ যুবক সম্প্রদায়ের চরিত্র হেফাজতের তৌফিক দিন।
লেখক : সাহিত্যিক ও কলামিস্ট