Ads

“পরিশ্রম করতে পারলে সফলতা আসবেই” -লিলিয়ান

মহীয়সী

সফল হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই, লেগে থাকতে হবে নিরন্তর । এরকম ধারণার একজন সফল মানুষ  নুরুন নাহার লিলিয়ান । তিনি বলেন-“পরিশ্রম এবং সামাজিক বাঁধা গুলোকে অতিক্রম করতে পারলে সে সফল হবেই”

বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ শহর বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জে জন্ম গ্রহন করেন বর্তমান সময়ের একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা নুরুন নাহার লিলিয়ান।।
আলভার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন গভঃ গার্লস হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, গভঃ হরগঙগা কলেজ মুন্সিগঞ্জ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এই মেধাবী উদ্যোক্তা।।

রিসার্চ মেথোডোলজির উপর দেশ ও বিদেশ থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেইনিং প্রোগ্রাম সফলতার সাথে শেষ করেন। বাংলা ছাড়াও ফরাসি ও জাপানি ভাষায় রয়েছে একাডেমিক দক্ষতা।।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার সময় ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি প্রোজেক্টে রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে পেশাগত জীবনের কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরী জীবন শুরু করেন। চাকুরী জীবনের কিছুদিনের মধ্যেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন লিলিয়ান। স্বামী একজন বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী স্বামীর কর্মস্থল জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসারের প্রয়োজনে তাই আড়াই বছর চাকরি করার পর তা ছেড়ে জাপানে চলে যান । গবেষক স্বামীর সাথে বেশ কয়েক বছর কাটে জাপানের হোক্কাইডো আইল্যান্ডে। সেখানে তিনি জাপানি ভাষা শেখেন এবং যুক্ত হন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে। আর্ন্তজাতিকভাবে সংস্কৃতি বিনিময় সহ জাপানি স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করেন। সেই সাথে সেখানকার একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতাও করেন তিনি। সংসার আর চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে বিভিন্ন ব্লগ ও সংবাদ পত্রে নিয়মিত আর্থ সামাজিক ইস্যু নিয়ে স্বনামে ও ছদ্মনামে লেখালেখি করতে থাকেন।।

দেশে ফিরে ২০১৬ সালে আলিয়স ফ্রঁসেসে ফরাসি ভাষার উপর ডিপ্লোমা শুরু করেন । সেই সাথে অনলাইন বুক শপ ও ক্লাব লিলিয়ান লিটারেচার ক্যাফে শুরু করেন । অনলাইন বুক শপে অর্ডার আসা বইয়ের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তাই এই বুকশপটির আরও বিস্তৃত করতে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সাথে ঢাকার বনশ্রীতে থ্রি কিউ লিমিটেড নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্রকাশনা ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। যেকোন কাজের উদ্যোগ নেওয়া অনেক ঝুঁকি ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় । তবুও শত সমস্যার মধ্যেই সুন্দর ও সফলতার পথ আবিষ্কার করাই একজন প্রকৃত মানুষের সার্থকতা। লিলিয়ান লিটারেচার ক্যাফে ও দেশ বরেণ্য প্রকাশনা সংস্থা শিখা প্রকাশনী যৌথভাবে দেশি ও প্রবাসী তরুণ লেখকদের এগিয়ে নিতে প্রতি বছর সংকলন প্রকাশ সহ ছোট ছোট ইভেন্টের আয়োজন করছে । সেই সাথে কারুবাক প্রকাশনীর সাথে প্রকাশনা শিল্পে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। আর নিয়মিত নিজের লেখা বই প্রকাশ তো আছেই ।।

ভ্রমন করেছেন আমেরিকা, কানাডা, জাপান, চীন, হংকং সহ বেশ কয়েকটি দেশ। সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে নানা জায়গায়। স্বপ্ন দেখেন পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখার।।

স্কুল জীবন থেকে মেধাবী ছাত্রী ছিলেন লিলিয়ান। বই পড়তে , নতুন নতুন বন্ধুত্ব গড়তে ও নতুন জায়গায় ঘুরতে ভালবাসেন । বিশ্ব সাহিত্য এবং শিল্প সংস্কৃতির প্রতি তীব্র আকর্ষন রয়েছে। তাই নিয়মিত ভাবে বিশ্ব বিচিত্রতায় জ্ঞান আহরনে দৃষ্টি ও মন নিমজ্জিত থাকে। ১৯৯৯ সালে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশ হয় প্রথম গল্প ” অকারণ অঘটন “। প্রথম উপন্যাস “ইন্দিরা রোড” ২০০৬ সালে আগামী প্রকাশনি থেকে প্রকাশ হয়। এরপর শিখা প্রকাশনি থেকে ২০০৭ থেকে বর্তমানে ছয়টি বই প্রকাশ হয় । কবিতার বই “কাব্যধারিনী ” প্রকাশ হয় ২০০৮ সালে । ২০১৭ সালে প্রকাশ হয় ‘ অরোরা টাউন’ ও ২০১৯ সালে মারিজুয়ানা উপন্যাস পাঠকমহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়। এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী থেকে গল্পগ্রন্থ “জাপানি ভূতের গল্প”ও বেশ জনপ্রিয় হয় । প্রকাশিত একক বইয়ের সংখ্যা ১২ টি । বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ব্লগ এবং নিউজপোর্টালে প্রকাশিত জনপ্রিয় গল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে নিকোশিয়া, বিনামিকা, হিতামাতসুরি, সবুজ পাহাড়ে লাল শাড়ি, একজন নিশিউঁকি, এগারোটি লাল গোলাপ, ১৬ ক্যাভেলারি, সাপ্পোরো ষ্টেশন সহ প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি গল্প। লেখক হিসেবে অনেক সামাজিক সংস্থা থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরুস্কার। তিনি মনে করেন প্রকৃতি সবাইকে এক রকম ক্ষমতা দেন না। নিজের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাকে বুঝে ভাল লাগার বিষয়কে পেশা হিসেবে নিতে হয়। পরিশ্রম এবং সামাজিক বাঁধা গুলোকে অতিক্রম করতে পারলে সে সফল হবেই।।

স্বপ্ন দেখেন একটি আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থাগার ও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করতে। যেখানে বই পড়াকে কেন্দ্র করেই বছর ব্যাপী চলবে নানান আয়োজন । অনেক উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা কম। পড়াশোনা শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য নয়। নিজের দেশ ও পৃথিবীকে জানার জন্য বই পড়া জরুরি। সেই দেশই উন্নত যে দেশে বই পড়াই প্রধান সংস্কৃতির অংশ। একমাত্র বই পড়াই মানুষের ভেতরের মূল্যবোধ ও মানবিকতাবোধকে সমুন্নত রাখে। সমাজ ও দেশকে সমৃদ্ধ করে।।

আন্তর্জাতিক মানের গ্রন্থাগার ও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করার যে মহতী স্বপ্ন দেখছেন এই মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তা তা দ্রুতই বাস্তবায়ন হোক। সফল ও সার্থক হোক তার প্রতিটি কার্যক্রম। আরও বহুদূর এগিয়ে যাক লিলিয়ান। লিলিয়ানদের হাত ধরেই সমাজ ও দেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক।

আরও পড়ুন