Ads

৭ মার্চ ভাষণঃ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ

এম আর রাসেল

‘আর দাবায়ে রাখবার পারবা না’– কথাটির মাঝে জেগে উঠার উদ্দীপ্ত ভাব প্রকাশ পায়। আহমদ ছফার মতে, এই বাক্যটি হল বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। মেনে নিতে অনেকের আপত্তি থাকলেও কথাটি সত্য। 

যুগে যুগে যে কয়টি ভাষণ কালজয়ী তকমা পেয়েছে এর মধ্যে ৭ মার্চ- এর ভাষণ অন্যতম। মূল ভাষণ ছিল ২৩ মিনিটের। তবে ভাষণটি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮ মিনিট। ১০০৫ শব্দের এই ভাষণ এখনও শুনলে মন নেচে উঠে, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি খুঁজে পাই। 

আহমদ ছফা তাঁর একটি লেখায় লিখেছেন, ‘মাত্র দুবার আমার মনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি মমত্ববোধ জন্ম নিয়েছিল। একবার যখন তাঁকে আগরতলা মামলায় আটক করা হয়। সে সময় তাঁকে আমার মনে হয়েছিল আপন সন্তান। তারপর ৭ মার্চে শেখ মুজিবের ভাষণ শুনে কবিতার দুটো লাইন আমার জিভের আগা থেকে পাকা তালের মত আচমকা বিস্ময়ে ঝরে পড়েছিল,

‘চমকে উঠা অন্ধকার থমকে দাঁড়ায় রাত আদ্যিকালের ইতিহাস বাড়ায় লোহার হাত

আসলেই কিন্তু বাঙালির হাত লোহা হয়ে উঠেছিল। অস্ত্রের সামনে এই লোহার হাত হয়ে উঠেছিল প্রধান অস্ত্র। এই ভাষণের সুর বাঙালির প্রাণে সাহসের মন্ত্র ছড়িয়ে দিয়েছিল। বাঙালি যোদ্ধা হয়ে উঠেছিল। এ ইতিহাস আমাদের পরম গর্বের ধন। 

৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে মুহম্মদ হাবিবুর রহমান খান লিখেছেন, ‘এই ভাষণের শেষ কথা কি ছিল, তা নিয়ে যে সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে তা বক্তৃতাটির গুরুত্বকে বিন্দুমাত্র খর্ব করে না।’ বস্তুত তাই বাস্তব। ‘গেটিসবার্গ’, ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ‘টিয়ারস ডাউন ওয়াল’ প্রভৃতি কালজয়ী ভাষণ এর মত ৭ মার্চ  ভাষণের গুরুত্ব কোনদিনই বিলীন হওয়ার নয়। 

ভাষণ নিয়ে মুহম্মদ হাবিবুর রহমান এর আরেকটি বাক্য শোনা যাক, ‘একজন মানুষের কন্ঠস্বর তার পরিচয় বহন করে। শেখ মুজিবের উচ্চারণে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না, কোনো ভঙ্গিমা ছিল না। আর পাঁচটা মানুষের মতো তা ছিল সাধারণ। কিন্তু সেই উচ্চারণের  মধ্যে যে সাবলীলতা ছিল, তা অসাধারণ। তাঁর বজ্রকন্ঠে যে নির্ঘোষ ছিল, তাও অতি বিরল।’

বিরল এই কণ্ঠের সোচ্চারিত উচ্চারণকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি গর্বের বিষয়। 

পরিশেষে সবাইকে বলি, ৭ মার্চ এর বিখ্যাত ভাষণটিকে শুধু আবেগ দিয়ে নয় দিব্যদৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করুন। এ ভাষণের মূলমন্ত্রকে অনুধাবন করতে চেষ্টা করুন। 

আজও আমাদের সমাজে শোষণ ও বৈষম্যের রমরমা চিত্র দেখতে পাওয়া যায়, ন্যায্য কথাকে দমিয়ে রাখার আয়োজনও মহা সমারোহে পালিত হয়। শোষকদের বিরুদ্ধে, বিরাজমান সব অসংগতির বিনাশ সাধনে ৭ মার্চের ভাষণ হতে পারে প্রেরণার মূল উৎসস্থল।  

লেখকঃ গবেষক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন