এইচ বি রিতা
মার্কিন ইতিহাসে আফ্রিকান আমেরিকানদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা অর্জনের বার্ষিক উদযাপনের মাসটি হল ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি মাসটি ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ হিসাবে বি্শ্বের কাছে পরিচিত। শিল্প সাহিত্য সঙ্গীতাঙ্গনে কৃষ্ণাঙ্গদের অবদান ও কৃতিত্বকে স্মরণে রেখেই বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে এই মাসটি উদযাপন করা হয়।
১৯২৬ সালে নিগ্রো দাসের সন্তান ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ এবং প্রকাশক কার্টার জি উডম্যান এর মাধ্যমে ‘নিগ্রো হিস্ট্রি উইক’ নামের আন্দোলনটির সূচনা থেকেই ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থটি শুরু হয়।
১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিটি মার্কিন প্রিসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ফেব্রুয়ারি মাসকে ব্ল্যাক হিষ্ট্রি মান্থ হিসাবে পালন করে আসছেন। কানাডা এবং যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলিও ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসটিকে উৎসর্গ করে থাকেন।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে ১৯০৯ সালে বর্ধমান জাতিগত সহিংসতার দরুণ, বিশেষ করে ১৯০৮ সালের স্প্রিংফিল্ড, ইলিনয়েস এর জাতিগত দাঙ্গার দ্বারা উৎসাহিত আফ্রিকান আমেরিকানদের একদল নেতা একসাথে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালার্ড পিউপল (এনএএসিপি) নামে একটি স্থায়ী নাগরিক অধিকার সংগঠন গঠন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের কয়েকজন ডু-বোইসের নেতৃত্বে নাগরিক অধিকার সংগঠন নায়াগ্রা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯১০ সালে এনএএসিপি ক্রাইসিস নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। পত্রিকাটি প্রথম ২৪ বছর ডু-বোইস সম্পাদনা করেছিলেন। পত্রিকায় এনএএসিপির কর্মগুলোতে জাতীয় ইস্যুতও ফোকাস করা হতো।
১৯০৫ সালে ডু-বোইসের নাগরিক অধিকারে নায়াগ্রা আন্দোলনের ডাকের সাথে এনএএসিপির লক্ষ্য ছিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩তম, ১৪তম এবং ১৫তম সংশোধিত সকল অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া, যা দাসত্বের অবসানের অঙ্গিকার করেছিল। সেই সাথে আইনের সমান সুরক্ষা এবং সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ভোটাধিকার রক্ষা করা।
তদনুসারে, এনএএসিপির মিশন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নাগরিকদের রাজনৈতিক, শিক্ষামূলক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্যতা নিশ্চিত করা এবং জাতিগত কুসংস্কার দূর করা। এনএএসিপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে জাতিগত বৈষম্যের সমস্ত বাধা অপসারণের চেষ্টা করে।
এরপরই ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থের শুরু। ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থটি মূলত শিকাগোতে ১৯১৫ সালে শুরু হয়েছিল, ত্রয়োদশ সংশোধনীর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দাসত্ব বিলুপ্ত হওয়ার অর্ধশতক আগে। সে বছর সেপ্টেম্বরে হার্ভার্ড প্রশিক্ষিত ইতিহাসবিদ কার্টার জি উডসন এবং বিশিষ্ট মন্ত্রী জেসি ই মুরল্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ নিগ্রো লাইফ অ্যান্ড হিস্ট্রি (এএসএনএলএইচ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি ব্ল্যাক আমেরিকান এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের অর্জনগুলি গবেষণা ও প্রচারের জন্য নিবেদিত একটি সংস্থা।
এই সংস্থাটি ১৯২৬ সালে একটি জাতীয় ‘নিগ্রো হিষ্ট্রি উইক’ শুরু করেছিল। আব্রাহাম লিংকন এবং ফ্রেড্রিক ডগলাসের জন্মদিন পালন হতো ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে। নিগ্রোদের অবস্থার ক্রমোন্নতির জন্য তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদানকে সম্মান জানাতে আব্রাহাম লিংকন এবং ফ্রেডেরিক ডগলাসের জন্মদিনের সাথে মিল রেখে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহটি বেছে নেয়া হয় নিগ্রো হিস্ট্রি উইক হিসাবে। এর ইভেন্টগুলো স্থানীয় উদযাপনের আয়োজন, হিস্ট্রি ক্লাব, হোস্ট পারফরম্যান্স এবং বক্তৃতা প্রতিষ্ঠার জন্য স্কুল ও সম্প্রদায়গুলিকে দেশব্যাপী অনুপ্রাণিত করেছিল।
প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৬ সালে নিগ্রো হিস্ট্রি উইককে ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বর্তমানে স্কুল কলেজ অফিস আদালতে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে ‘ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ’ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়।
লেখকঃ প্রবাসী সাহিত্যিক ও সাংবাদিক, যুক্তরাষ্ট্র