Ads

মা শুধু মা দিবসেরই মা নন, তিনি আমার হৃদয়ে সর্বক্ষণ

।। জামান শামস ।।

আলহামদুলিল্লাহ। আমার পরম প্রিয় মা জননী এখনো বেঁচে আছেন। আমার বয়স সাতষট্টি হলে তিনি নিশ্চয়ই আরো কুড়ি বাইশ বছরের সিনিয়র। তিনি এখনো আমার জন্য মাটির জায়নামাজে ভেজা চোখে হ্রস্ব নিনাদে কাঁদেন,আমিও রাজ্যের সমস্ত মমতা দিয়ে তার জন্য কাঁদি। এ এক উপমাহীন অদ্ভুত মায়াজাল।সন্তানের জন্য মায়ের আর মায়ের জন্য সন্তানের।মা বেঁচে আছেন-তার মানে আপনার দোয়ার ভান্ডার এখনো সজীব আছে।

তিনি পরম যত্ন সহকারে তোমাকে তার ভিতরে নিয়ে পরিপালন করেছেন নিশ্চিত করে যে তার প্রতিটি পদক্ষেপ নিরাপদ ছিলো। তিনি তোমার জন্মের আগেই তোমাকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। তিনি আক্ষরিক অর্থেই অনুভব করেছেন এবং তোমাকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন । তোমার লাথি তাকে বিরক্ত করেছে । তোমার ওজন টানতে তার তীব্র পিঠে ব্যথা করেছে। তিনি দেখতে পান যে তার পা তার স্বাভাবিক আকারের তিনগুণ ফুলে গেছে এবং প্রসারিত চিহ্নগুলি তার সুন্দর শরীরকে দাগ লাগিয়ে দিয়েছে।তোমার জন্য এতো কষ্ট আগে কোন মহিলা করেননি ।  ভবিষ্যতেও আর কখনও করবেন না। তিনি আর কেউ নন।আমার, তোমার,সকলের মা। প্রতিটি সন্তানের জন্মের জন্য একজন মাও পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি সারা রাত তোমার যত্ন নিয়েছেন প্রায়শই রাতের পর রাত জেগে তোমাকে স্তন্য পান করিয়েছেন ।  তোমার পেশাব পায়খানা পরিস্কার করে বুকের উষ্ণতায় লালন-পালন করেছেন এবং তোমার তিল তিল যত্ন নিয়েছেন।তুমি যখন কথা বলতে পারেনতে না, তিনি কান্নার ভাষা বুঝতে পেরে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতেন যত ব্যস্তই তিনি থাকতেন না কেন এবং তোমার ভয়কে প্রশমিত করেছেন।

তিনি তোমার প্রথম পদক্ষেপগুলি দেখে খুব গর্বিত ছিলেন কারণ তিনি তোমার কোমল কচি হাতটি শক্তভাবে ধরে রেখেছেন যখন তার হৃদয় সুখে অভিভূত।তুমি যখন প্রথম মা বলেছিলে তখন এটি তার শোনা সেরা শব্দ ছিলো। তোমাকে মা বলতে শুনলে আজও তার হৃদয় ছটফট করে।তোমার জীবনের প্রতিটি মাইলফলক তার জন্য জীবনের সেরা সম্পদ।তার শিশুটি ধীরে ধীরে স্বাধীন হয়ে উঠছিল তবুও এখনও মায়ের উপর এত নির্ভরশীল যে মায়ের হাতে তৈরী যে কিছুই তার কাছে অমৃতসম।

তিনি তোমার চেয়ে দুঃখী ছিলেন যখন তোমাকে তোমার প্রথম গ্রেডের ক্লাসে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার বাচ্চা খুব দ্রুত বড় হচ্ছিল। তিনি সদা গর্বিত হতেন যখনই তুমি সাফল্যের সাথে জীবনের একটি একটি সিঁড়ি ভেংগে ক্রমেই এগুচ্ছিলে। হাসির পিছনে তিনি তার চোখের জল লুকিয়ে রেখেছিলেন কারণ তিনি তোমাকে প্রতিটি পদক্ষেপে উত্সাহিত করেছিলেন। যেদিন তুমি হাই স্কুল এবং তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছো তার হৃদয়ও আনন্দে কেঁদেছিলো। তার বাচ্চা এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছে তবুও তিনি তোমাকে তার বাচ্চা বলেই ভাবেন।

তোমার নিকাহের পরে তিনি তোমাকে অভিবাদন ও আলিঙ্গন করার সময় আবেগে এবং দোআ দিয়ে অভিভূত হয়েছিলেন। তিনি তোমার পত্নীকে তার নিজের হিসাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি তোমাকে বিবাহ সম্পর্কে অমূল্য উপদেশ দিয়েছেন কারণ তিনি সর্বদা তার সন্তানের জন্য এই দুনিয়া এবং পরকালের সর্বোত্তম চান।

তুমি চিরকাল তার বাচ্চা হয়ে থাকবে..

একজন মায়ের ভালবাসা নিঃশর্ত, বিশুদ্ধ এবং সুন্দর…

আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের মাকে এই পৃথিবীতে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য এবং সুখ এবং পরকালে অনন্ত সুখ দিয়ে আশীর্বাদ করুন।

وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡهِ ۚ حَمَلَتۡهُ اُمُّهٗ وَهۡنًا عَلٰی وَهۡنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ

জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৪)।

وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡهِ اِحۡسٰنًا ؕ حَمَلَتۡهُ اُمُّهٗ کُرۡهًا وَّ وَضَعَتۡهُ کُرۡهًا ؕ وَ حَمۡلُهٗ وَ فِصٰلُهٗ ثَلٰثُوۡنَ شَهۡرًا ؕ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَ بَلَغَ اَرۡبَعِیۡنَ سَنَۃً ۙ قَالَ رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰهُ وَ اَصۡلِحۡ لِیۡ فِیۡ ذُرِّیَّتِیۡ ۚؕ اِنِّیۡ تُبۡتُ اِلَیۡکَ وَ اِنِّیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡ

আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।(সুরা আহকাফ, আয়াত: ১৫)।

وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوۡ کِلٰهُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنۡهَرۡهُمَا وَ قُلۡ لَّهُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا

وَ اخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَ قُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا

আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেমনভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন।’ (সূরা ইসরা,আয়াত: ২৩-২৪)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি ও মুসলিম )।

আল্লাহ জীবিত সকল মায়েদের সুস্থ ও সুন্দর রাখুন।আমিন।

লেখকঃ জামান শামস, কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক জামান শামস

আরও পড়ুন