Ads

ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান কি পুরুষের চেয়েও কম?

।। জামান শামস ।।

সপ্তম শতাব্দীর আরবে, আল্লাহর মনোনীত দীন “ইসলাম” সমাজে নারীদের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি বিপ্লবী ভূমিকা নিয়েছিলো। কুরআনে আল্লাহ তা’আলা কন্যাসন্তানের প্রতি পুত্রদের সাংস্কৃতিক পক্ষপাতিত্বের সমালোচনা করেছেন । তিনি সমালোচনা করেছেন মহিলা শিশু হত্যার মতো নিষ্ঠুরতম চর্চার এবং বলেছেন যে কন্যা সন্তান তোমাদের জন্য একটি উপহার।কন্যা সন্তান জন্মের বিষয়টিকে কুরআন এভাবে সেলেব্রেট করে-

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ

يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ ۚ أَيُمْسِكُهُ عَلَىٰ هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ

উহাদের কাহাকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তাহার মুখমণ্ডল কালো হইয়া যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। উহাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তাহার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হইতে আত্নোগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে উহাকে রাখিয়া দিবে, নাকি মাটিতে পুঁতিয়া দিবে! সাবধান! উহারা যাহা সিদ্ধান্ত নেয় তাহা কত নিকৃষ্ট।

(সূরা নাহলঃ৫৮-৫৯)

আরও পড়ুন-ইসলামে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন

নিশ্চয়ই জেনে রেখো ,তোমাদের পরিবারে একটি কন্যা সন্তানের আবির্ভাব একটি পুরুষ সন্তানের মতোই আনন্দের। পুত্র যিনি দেন কন্যাও তিনি দেন।পৃথিবীতে একজন পুত্র সন্তানের আবির্ভাবে তোমাদের উল্লসিত হবার একস্ট্রা কোন কারণ নেই।

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহ্‌রই তিনি যাহা ইচ্ছা তাহাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাহাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।

(আশ শুরাঃ৪৯)

এরপর কুরআন পুরুষ ও মহিলাদের আধ্যাত্মিক সাম্যকে নিশ্চিত করেছে।বন্দেগী ও তার পুরস্কারে নারী পুরুষে কোন পার্থক্য করা হয়নি। সালাত,সাওম,হজ্জ ও যাকাত-ইসলামের মৌলিক বন্দেগীতে সওয়াব সমান সমান। এমনকি নফল ইবাদাতেরও নারী-পুরুষে কোন তারতম্য নেই।

কুরআনের বক্তব্য,মুমিন মুসলমান নর-নারী যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তখন আল্লাহ তাআলা মুমিন নর-নারীর ডাকে সাড়া দেন। তাদের দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَىٰ ۖ بَعْضُكُمْ مِنْ بَعْضٍ ۖ فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ

অতঃপর তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের ডাকে সাড়া দিয়া বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্ম নিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না ; তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যাহারা হিজরত করিয়াছে, নিজ গৃহ হইতে উৎখাত হইয়াছে, আমার পথে নির্যাতিত হইয়াছে এবং যুদ্ধ করিয়াছে ও নিহত হইয়াছে আমি তাহাদের পাপ কাজ গুলি অবশ্যই দূরীভূত করিব এবং অবশ্যই তাহাদেরকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহা আল্লাহ্‌র নিকট হইতে পুরস্কার; উত্তম পুরস্কার আল্লাহ্‌রই নিকট।

(সুরা আল-ইমরানঃ ১৯৫)

আরও পড়ুন-নারীর সত্যিকারের স্বাধীনতা আসে যেভাবে

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আরো ঘোষণা করেন,

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ

আল্লাহ্ কাহারও উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যাহা তাহার সাধ্যাতীত। সে ভাল যাহা উপার্জন করে তাহার প্রতিফল তাহারই এবং সে মন্দ যাহা উপার্জন করে তাহার প্রতিফল তাহারই।

(সুরা বাকারাঃ ২৮৬)

 

إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

অবশ্যই আত্নসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্নসমর্পণকারী নারী, মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সাওম পালনকারী পুরুষ ও সাওম পালনকারী নারী, যৌন অংগ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌন অংগ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী-ইহাদের জন্য আল্লাহ্। রাখিয়াছেন ক্ষমা ও মহা-প্রতিদান। (সূরা আহযাবঃ৩৫)

وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا

পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎকাজ করলে ও মুমিন হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।(সুরা নিসাঃ১২৪)

কুরআন নারীর অর্থনৈতিক ও বৈবাহিক অধিকারকে সমুন্নত রাখতে সমাজকে আহ্বান জানিয়ে নারীর শিরোনামে এর চতুর্থ অধ্যায়টি উত্সর্গ করেছে মানে “নিসা” নামেই চার নম্বর সুরাটির নামকরন করা হয়েছে।নারীর অধিকার সম্পর্কিত ইসলামের বার্তা বিদ্যমান সংস্কৃতিটিকে উল্টে দিয়েছে এবং পুরুষরা যেভাবে নারীর অধিকার সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেছিল তাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ দাম্পত্য জীবনে একে অন্যের পরিপূরক।এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে রয়েছে,

ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ ۗ

তাহারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাহাদের পরিচ্ছদ।

(সূরা বাকারাঃ১৮৭)।

শরীর ও পরিচ্ছদ বা পোশাকের সম্পর্ক অতি নিবিড় ।উভয়ের কাছে উভয়ের প্রয়োজন সুতীব্র।পোশাক শরীরকে তাবৎ অপরিচ্ছন্নতা থেকে রক্ষা করে এবং ভিতরের দোষত্রুটি গোপন রাখে।শরীরের প্রয়োজনে পরিচ্ছদ আবার পোশাক পরিচ্ছদের মূল্য দেহ আবৃত করলে।স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের উদাহরন এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে।

দেখুন আল্লাহ আরো কি বলছেন-

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

আর তাঁহার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রহিয়াছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যাহাতে তোমরা উহাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রহিয়াছে।

(সূরা রুমঃ২১)

আধুনিক সমাজে নারীদের নিকট থেকে যে যৌতুক আদায় করা হয় সেটা ইসলামে হারাম। উপরন্ত মোহরানা হিসাবে পরিশোধ করা অর্থের এক কানা কড়িও স্বামী নিতে পারবেনা।বিয়ের সময়ই একজন নারীর আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ইসলামই দিয়েছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا ۖ وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ ۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

হে ঈমানদারগণ! নারীদেরকে জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা তোমাদের জন্য বৈধ নহে। তোমরা তাহাদেরকে যাহা দিয়াছ তাহা হইতে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাহাদেরকে অবরুদ্ধ করিয়া রাখিও না, যদি না তাহারা স্পষ্ট ব্যভিচার করে। তাহাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করিবে ; তোমরা যদি তাহাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হইতে পারে যে, আল্লাহ্ যাহাতে প্রভূত কল্যাণ রাখিয়াছেন তোমরা তাহাকেই অপছন্দ করিতেছ।

(সূরা নিসাঃ১৯)।

আরো সুস্পস্টভাবে বলা হয়েছে,

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাহাদের উপর পুরুষদের ; কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে। আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

(সূরা বাকারাঃ ২২৮)।

সুতরাং একজন কেবলমাত্র নারী ,এই কারনে শোষিত ও নির্যাতিত হবে,অধিকার বঞ্চিত হবে, সমান শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেও পেশায় পিছিয়ে থাকবে এটা ইনসাফের দৃষ্টিতে অবিচারই বটে।ইসলামে তো এটা অসম্ভব ব্যাপার।

 

লেখকঃ  জামান শামস, লেখক ও প্রাক্তন এএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

ফেসবুকে লেখক- জামান শামস

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন।

প্রিয় লেখক ! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected]

প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন