Ads

আপনার কষ্ট, ভয় এবং অন্য সবকিছু তাঁকে বলুন

।। মূলঃ মুফতি মেনক ।।

।। অনুবাদঃ মাসুম খলিলী।।

এক. আপনার নিজের সাহচর্য্য পছন্দ করতে শিখুন। একা বসতে ভয় পাবেন না। নিজেকে প্রতিফলিত করুন। সর্বশক্তিমানের সাথে কথা বলুন। তাঁকে আপনার কষ্ট, আপনার ভয় এবং আপনি যা কিছুর সম্মুখীন হচ্ছেন তার সবকিছু বলুন। তিনি আপনাকে সঠিক পথে চালিত করবেন৷

দুই. হতাশাকে আত্মস্থ করতে আপনার হৃদয়কে শেখান। প্রতিটি বিলম্ব, প্রতিটি বাধা এক একটি আশীর্বাদ। তিনি পরিকল্পনা করেন এবং আপনিও পরিকল্পনা করেন। মনে রাখবেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী।

তিন. কোন ঝগড়া বা তর্কের শেষ পর্যন্ত মূল্য নেই। এই ধরনের তুচ্ছ কোন কিছুর জন্য আপনার পরকাল ত্যাগ করবেন না। আপনি যাদের অপমান করেছেন ও অপদস্ত করছেন তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করুন। এরপর সামনে চলতে থাকুন।

চার. সাবধানে আপনার শব্দ চয়ন করুন। সর্বদা কঠোর বক্তব্যের চেয়ে উদার, মৃদু ও মাপা শব্দগুলিকে পছন্দ করুন। আপনি যা কিছু বলেন তা বজ্র গতিতে বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে এবং আপনি এর জন্য আফসোস করবেন। বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ার টেক্সট আদান প্রদানের এই যুগে ভুল বার্তা একটি সাধারণ বিষয়। আমরা সবসময় ভাল শব্দ ব্যবহার বেছে নিতে পারি!

পূনশ্চঃ

এক. হারানো সুযোগ, বন্ধ দরজা এবং পথচলা নিয়ে কান্নাকাটি করার পরিবর্তে, থামুন এবং চিন্তা করুন। এটি হলো সর্বশক্তিমানের আমাদের বেদনা ও যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করার উপায়, যা আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়। যদি তিনি এটির সুযোগ দিতেন, তাহলে আমরা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়তাম এবং হয়ে পড়তাম হতাশ।

আরও পড়ুন-সর্বশক্তিমানের চ্যালেঞ্জ আপনাকে শক্তিশালী করে

দুই. আপনি যদি কোন কাহিনীর কেবল কিছু অংশ জানেন তবে সেই গল্পটি বলবেন না। গল্প তৈরি করা বা তা রঙ লাগিয়ে শোভিত করা এক বিশাল পাপ। এর পাশাপাশি একতরফা গল্প বিপজ্জনকও। পুরো বিষয়টি জানার আগে কেবল বোকারাই এর উত্তর দেয়। আপনার জিহ্বাকে গসিপ ফানেল হওয়া থেকে রক্ষা করুন। সর্বশক্তিমানের ক্রোধকে ভয় করুন।

তিন. অন্যরা যখন আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলে, তখন তাদের কাছে সত্যবাদী হন। তারা যখন আপনার আস্থার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখনও সত্যবাদী থাকুন। যখন তারা নীচ মানসিকতার পরিচয় দেয় তখনো আপনি বিনয়ী হন। আপনি নিজের জন্যই সত্যনিষ্ঠতা বজায় রাখুন!

চার. যে কোন ধরনের দুঃখ কষ্টে, হতাশাকে বাসা বাঁধতে দেবেন না। সর্বশক্তিমানের কাছে কষ্ট সহ্য করার শক্তি চান; কারণ হতাশার অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে তার পুরস্কার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

পাঁচ. আপনি কতটা সফল এবং আপনি কী মনোমুগ্ধকর জীবনযাপন করছেন তা বিশ্বকে চিৎকার করে শোনানোর দরকার নেই। যা আপনি তা জানার সুযোগ দিন, লোকদের কেবল তাই জেনে রাখা উচিত। বাকি বেশিরভাগই ব্যক্তিগত অবস্থায় রাখুন। তাদের নিজস্বভাবে আন্দাজ অনুমান করতে দিন। এ বিষয়ে আপনি তাদের থামাতে পারবেন না। আপনি কি মনে করেন না এটি বেঁচে থাকার ভাল এক উপায়?

ছয়. সত্য কথা বলুন এবং আপনি যা বলছেন তা প্রকৃতভাবে বোঝান। আপনার কথাই আপনার সম্মান। অনেক লোক এমন সব প্রতিশ্রুতি দেয় যা তারা কখনোই পূরণ করার ইচ্ছা করে না! আর দান করুন বিনিময়ে কিছু আশা না করেই। এটিই আপনার হৃদয়ের সৌন্দর্য। লোকেরা যদি তা না দেখে তাতে কিছু আসে যায় না। সর্বশক্তিমান সব কিছুর হিসাব রাখেন!

সাত. শীর্ষে থাকা মানুষকে হিংসা করবেন না। কারণ আপনি উচ্চতর স্থানে উঠলে সেখান থেকে অবনয়ন হবে কঠিন। তাই সর্বদা নম্র থাকুন। এটি আপনাকে ধীরে ধীরে নামতে সহায়তা করবে! আর অহেতুক ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। অন্য সবাই যখন অতিরিক্তভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে তখন আপনি ধীর গতি বজায় রাখুন। আপনার হৃদয়ের সুরক্ষার জন্য আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন।

আট. আজ সুন্দর কিছু কারো জন্য করুন। এ থেকে প্রথম উপকৃত হচ্ছেন আপনি। আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং মহা পুরস্কার তার কাছ থেকে পাচ্ছেন! আর আপনি যখন এমন কাউকে দেখেন, যে তার পথ হারিয়ে ফেলেছে, তখন আপনার সাহায্য তার প্রতি প্রসারিত করুন। বিচার করতে যাবেন না এবং অহঙ্কার দেখাবেন না। সদয়ভাবে কথা বলুন। সহনশীল হন। তার জন্য প্রার্থনা করুন।

আরও পড়ুন-প্রতিদিনের কাজগুলো যেভাবে সাদাকায়ে জারিয়া হবে

নয়. আপনি এই পৃথিবীর ভালোবাসায় যতক্ষণ আপনার হৃদয় ভরাবেন ততক্ষণ শূন্যতা বোধ করবেন। পরকালের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে তুলুন; এটি আপনার হৃদয়কে পরিপূর্ণ করবে! আর আপনি যদি সুখী হতে চান তবে দিতে শিখুন। একমাত্র সর্বশক্তিমানের জন্যই দান করুন। কারো দিবস বানানোর চেয়ে বড় কোনো অনুভূতি আর নেই!

দশ. আপনার কাজগুলি কেবল সর্বশক্তিমানের সাথেই নয়, অন্য লোকদের সামনেও পরিষ্কার করুন। আপনার বিরুদ্ধে কোন একজনেরও ন্যায়সঙ্গত বা বৈধ অভিযোগ আসতে দেবেন না, যা আপনার ভাল কাজটিকে অস্বীকার করতে পারবে। আপনার ভাল কাজকে রক্ষা করুন। আপনি যদি কাউকে আঘাত করেন তবে তার কাছে ক্ষমা চান। আখেরাত আসা পর্যন্ত দেরি করবেন না!

দ্রষ্টব্য:

আমি তোমাদের মাথার ওপর মজবুত সপ্ত-আকাশ এবং একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও পাতাঘন উদ্যান।’ (সুরা নাবা : ১২-১৬),

রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন, এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ কোনো পরোয়া করবে না যে সে কোত্থেকে উপার্জন করছে। সেটা হালাল পথে, নাকি হারাম পথে। (বুখারি, হাদিস : ২০৫৯)

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! দুনিয়ার সঙ্গে আখিরাতের পার্থক্য এতটুকুই যে তোমাদের কেউ সাগরের মাঝে তার আঙুলটা ডুবিয়ে দিক। তারপর দেখুক সে আঙুলে কতটুকু পানি তুলে আনতে পারে।’ (মুসলিম হাদিস : ২৮৫৮)

অনুবাদকঃ মাসুম খলিলী,  কলাম লেখক ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে অনুবাদক মাসুম খলিলী

আরও পড়ুন