Ads

কীভাবে যাত্রা শেষ করবেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ

।। মূলঃ মুফতি মেনক ।।

।। অনুবাদঃ মাসুম খলিলী।।

এক. এই ফাঁদে পা দেবেন না। আপনি কতটা সুবিধাপ্রাপ্ত অবস্থানে আছেন তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি কীভাবে যাত্রা শেষ করবেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এমন এক জীবন যাপনের চেষ্টা করুন যা আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রিয় করে তুলে। বাকি সবই গৌণ। একটি ভাল সমাপ্তির জন্য প্রার্থনা করতে থাকুন। তিনি যেন আমাদের নিয়ে যান এমন এক সময় যখন তিনি আমাদের প্রতি সবচেয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। আমীন

দুই. সবচেয়ে বরকতময় দিনগুলো নষ্ট করবেন না। দশ দিন দ্রুত যাবে তাই যতটা সম্ভব ভাল কাজ দিয়ে সেগুলি পূরণ করতে ভুলবেন না। সর্বশক্তিমান আমাদের সারা বছর ধরে আধ্যাত্মিক উন্নতির এই সময়গুলো দেন। আপনার উদ্দেশ্য পরিশুদ্ধ করুন, একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করুন আর আপনি অনেক কিছু অর্জনের পথে আছেন।

তিন. যখন আপনি আপনার আবেগগুলিকে বাড়তে দেন, তখন সাবধান হন। আপনি যখন অন্যকে অপমান করেন এবং তাদের কুকুর, গাধা ইত্যাদি নামে ডাকতে শুরু করেন, তখন সাবধান হন। আমরা কি একই প্রজাতির নই? আমরা কি একই সৃষ্টিকর্তাকে শেয়ার করি না? মনে রাখবেন, আপনি যে সমস্ত নেতিবাচকতা ছড়িয়েছেন, সেগুলি আপনার কাছে আবার ফিরে আসবে!

চার. অহঙ্কার থেকে সাবধান থাকুন। কেবল নম্ররাই সর্বশক্তিমানের সান্নিধ্য পেতে পারেন এবং বুঝতে পারেন যে সর্বশক্তিমান ব্যতীত তারা কিছুই নয়। অহঙ্কারের মুহূর্তটি যদি আপনার অন্তরে শিকড় গাড়ে তখন তা সেখানে একটি বাধা তৈরি করে; আপনার এবং আপনার স্রষ্টার মধ্যে তৈরি হয় এই বাধা। সর্বশক্তিমানের জন্য নিজেকে বিনীত করুন এবং তিনি পুনরায় আপনার উত্থান ঘটাবেন।

পাঁচ. বিশ্বকে দেখানোর জন্য অন্যের সামনে আপনি নিজেকে যেভাবে তুলে ধরেন তা জনজীবনের বাইরে আপনার যাপিত জীবন থেকে আলাদা হওয়া উচিত নয়। আপনার যদি বন্ধ দরজার পেছনে কাজের আলাদা ধরন থাকে, তবে আপনার সমস্যা রয়েছে, যার সমাধান করা আশু প্রয়োজন।

আরও পড়ুন-নিজেকে মুমিন মনে করলে ধৈর্য্য ধরতেই হবে!

পূনশ্চঃ

এক. সর্বশক্তিমান। আমাদের বুঝতে সাহায্য করুন যে আমরা যত বেশি অন্যদেরকে জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করি, তত বেশি আমরা উপরে উঠতে পারবো। ব্যাপকভাবে মানবতার কাছে পৌঁছাতে আমাদের সাহায্য করুন; আমরা যা করি তাতে আমাদের চারপাশের লোকদের উত্সাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে সহায়তা করুন। আমরা যেন সবসময় অনুপ্রাণিত করতে পারি এবং অন্যদের জন্য ভাল শব্দ ব্যবহার করতে পারি। আমীন।

দুই. আপত্তিজনক লোকদের ব্যাপারে ধীরে সুস্থে প্রতিক্রিয়া জানান। আপনাকে উস্কে দিতে সুযোগ দিবেন না তাদের। তারা ঠিক এটাই চায়। আপনি যেন নিয়ন্ত্রণ হারান এবং ক্রুদ্ধ  হয়ে উঠেন। তাদের খেলা আপনি খেলবেন না। আপনি নিজেকে শান্ত রাখুন। সর্বশক্তিমানের সাহায্য প্রার্থনা করুন। প্রায়শই, আপনি যখন প্রতিক্রিয়াহীন হন তখন তারা শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

তিন. আপনি নিজের কথায় সত্যনিষ্ঠ নাকি কেবলই আপনি বাস্তবের সাথে সম্পর্কহীন মুখের কথাই বলছেন তা দেখতে সর্বশক্তিমান আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। আপনার কাজগুলো কি আপনার কথার মতো উচ্চস্বরে কথা বলে? আপনি যা প্রচার করেন তা অনুশীলন করুন এবং তিনি আপনাকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন।

চার. ভুল হয়েছে বা যা কাজ করেনি এমন জিনিসগুলি ছেড়ে দিতে শিখুন। এসবের কাছ থেকে শিখুন। সংক্ষেপে এটাই জীবন। চলতে থাকুন। আপনি যদি বার বার ফিরে তাকাতে থাকেন তবে আপনি কখনই জীবনের এই দৌড়ে জিততে পারবেন না। আপনি যে ভুলগুলি করেছেন তা নির্ধারণ করে না আপনি আজ কে। ইতিবাচক চিন্তা করুন যে, জিনিসগুলি সামনে আরও ভাল হবে।

পাঁচ. আপনি স্বীকার করে নিতে পারেন যে, এই বছরটি এ পর্যন্ত এমন এক বছর ছিল যেখানে আমরা “সাধারণ” বলে বিশ্বাস করি এমন সবকিছুকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলাম। সম্ভবত সর্বশক্তিমান আমাদের এ শিক্ষা দিতে চেয়েছেন যেন তাঁর ইচ্ছার কাছে আমরা সম্পূর্ণভাবে সমর্পন করে দেই। আমাদের সমস্ত সেরা পরিকল্পনা জানালা দিয়ে পালিয়েছে এমনটি দেখিয়ে দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সৃষ্টি জগতের দায়িত্বে আসলে রয়েছেন কে।

ছয়. যখন কেউ আপনাকে অপমানজনক কিছু বলে, সেটাকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। আপনি কী ভুল করেছেন তা বিবেচনা না করেও বলা যায় আপনি অপমানিত হওয়ার মত নন। আপনার ভুলের জন্য দায় নিন তবে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি একজন মূল্যহীন ব্যক্তি যাকে অন্য কারও অবজ্ঞা করা উচিত!

সাত. আমরা একটি দুঃখ ভারাক্রান্ত বিশ্বে বাস করছি। এটাই বাস্তবতা। আমাদের মধ্যে এমন লোক রয়েছেন যারা নিজেরা সফল হওয়ার জন্য অন্যকে ঘৃণা করেন। যারা আরও ভাল করার চেষ্টা করছেন তাদের বিচারে বসেন আর সমালোচনা করেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকটবর্তী হোন। তালিকাটি সামনে এগিয়ে যাবে। আমরা কেন আমাদের নিজস্ব কাজ নিয়ে থাকতে পারি না এবং মানুষকে তার মতো থাকতে দেই না? এটা কি সত্যিই খুব কঠিন?

আট. প্রতিদিন আমরা আরো উন্নত হওয়ার চেষ্টা করি এবং সর্বশক্তিমানের সান্নিধ্য লাভ করার প্রয়াশ নেই। এটা এত সহজ নয়। এটি আমাদের কামনা বাসনা এবং অহঙ্কারের বিরুদ্ধে অবিচ্ছিন্ন লড়াই! তিনি সব জানেন! আর মানুষের মধ্যে বাইরের যা আছে কেবল তা নিয়ে মুগ্ধ হবেন না। আরো গভীরে তাকান। সততা এবং আন্তরিকতার বিষয়টি দেখুন; শেষ পর্যন্ত অর্থবহ হয় এই জিনিসগুলো।

নয়. আপনি যা গ্রহণ করেন তার চেয়ে বেশি দিতে শিখুন। ভদ্র পরিশীলিত হন। দিনের শেষে, পৃথিবীতে হালকাভাবে চলা ফেরা করুন। মনে রাখবেন, আমরা তাঁর রহমত ছাড়া কিছুই নই!আর দুনিয়া আপনাকে সৌন্দর্যের নিজস্ব সংজ্ঞা বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করবে। তবে শেষ পর্যন্ত, আমরা কেবল সবচেয়ে সুন্দর হৃদয় এবং আত্মাকে স্মরণ করব।

আরও পড়ুন-আপনার চিন্তাকে পরিশুদ্ধ রাখুন

দশ. আপনি যাকে ঘৃণা করেন এবং নীচভাবে তাকাচ্ছেন তিনি সর্বশক্তিমানের নিকটতম হতে পারেন। আপনি কখনো জানেন না, কোনো ধরনের ফাঁদে পড়বেন না। মানুষের প্রতি সম্মানের সাথে আচরণ করুন। আর আপনি যদি নিজের জীবনে সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ চান তবে তাঁকে দেখান যে, আপনি বিশ্বাসে দৃঢ় রয়েছেন। আপনি সর্বদা তাঁকে সন্ধান করেন। তিনি অন্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে।

এগারো. আপনি যখন ইবাদতের কাজটি কেবল সর্বশক্তিমান আপনাকে আদেশ করেছেন বলেই করেন এবং অন্যের প্রশংসা বা দেখানোর জন্য তা না করেন, তবে সেটাই হয় ইবাদতের বিশুদ্ধতম রূপ! আর সর্বশক্তিমান একক, আপনার হৃদয়ে কি আছে তা যিনি জানেন। সুতরাং কারো কাছে আপনার ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হবে বলে মনে করবেন না। কেবল তিনিই গুরুত্বপূর্ণ!

দ্রষ্টব্যঃ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা আল্লাহভীরু ও অনুগ্রহকারী। (সুরা নাহল : ১২৮); তোমরা ভয় পেয়ো না, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও দেখি। (সুরা ত্ব-হা : ৪৬);

যখন দুই দল পরস্পরকে দেখল, মুসার অনুসারীরা বলল, নিশ্চয়ই আমরা ধরা পড়ে যাব। মুসা বলল, কখনোই না। নিশ্চয়ই আমার প্রভু আমার সঙ্গে আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন। ’ (সুরা আশ-শুরা : ৬২);

যখন তারা গুহায় ছিল, তখন সে তার সঙ্গীকে বলেছিল, বিষণ্ন হয়ো না। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা তাওবা : ৪০);

হাদিসে এসেছে, ‘বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে নিরত থাকে, আল্লাহও তার সাহায্যে থাকেন। (সহিহ মুসলিম : ২৬৯৯);

লেখকঃ একজন মুসলিম শিক্ষাবিদ, ইসলাম প্রচারক ও বক্তা

অনুবাদকঃ মাসুম খলিলী,  কলাম লেখক ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে অনুবাদক মাসুম খলিলী

আরও পড়ুন