Ads

বন্ধু নির্বাচন

আব্দুল্লাহ আল- মামুর

‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ প্রবাদটি জানেনা এমন লোকের সংখ্যা বোধ হয় নিতান্তই কম। মানুষ সামাজিক জীব বলে জীবনে বন্ধুর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত একজন সৎ বন্ধু যেমন জীবনের বক্র গতিপথ পাল্টে সোজা ও সুন্দর করতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু সঙ্গীর জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে খুব সহজেই।

সজ্ঞানে কেউ খারাপ, সুযোগসন্ধানী, স্বার্থপর, কৃপন ও নেতিবাচক কাজে উৎসাহদাতাদের ছায়া মাড়াতে চান এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু নিয়মিত চলাফেরা, কোনো স্বার্থ উদ্ধারে একত্রে কাজ করতে গিয়ে কিংবা কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে গিয়ে এমন কিছু লোকের সাথে এমনিতেই সম্পর্ক গড়ে উঠে যা এক পর্যায়ে বন্ধুত্বে পরিণত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে একে অপরকে সঙ্গ দিয়ে, সুখ দুখঃ শেয়ার করে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ফলে সেই বন্ধু যখন কোনো খারাপ প্রস্তাব করে বসে তখন অনেক সময় মন চাইলেও না করা খুব কঠিন হয়ে উঠে।

অাল কোরঅানে এই বিষয়েও দৃষ্টি অাকর্ষণ করা হয়েছে। শেখানো হয়েছে আমাদের বন্ধু কেমন হবে। আসুন দেখি আল্লাহতা’লা আমাদেরকে কাদের সাথী বা সঙ্গী হতে বলেছেন।

সূরা তাওবার ১১৯ নং অায়াতে আল্লাহতা’লা বলেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’

তিনি অারও বলেন,
“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”

বন্ধু নির্বাচনে ভুল হলে আজীবন অন্ধগলির বাসিন্দা হতে হয়। অন্যদিকে পরকালেও কপালে জুটে মহা শাস্তি।

মহান আল্লাহতা’লা খারাপ বন্ধুত্বের ভয়াবহতা প্রসংগে বলেন, ‘জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম, হায় আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।
( সূরা আল ফুরকান-২৭ ও ২৮ নং আয়াত)

তাহলে কেমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত দেখা যাক ইমাম গাযযালী (রহঃ) এ সম্পর্কে কী বলেছেন। তিনি বলেন ‘৩টি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। সেগুলো হলো-

১. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ
২. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং
৩. বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান

উপরের আলোচনা থেকে এটুকু উপলব্ধি আমাদের আসা উচিত যে, কোনো মিথ্যাবদী, নির্বোধ, ভিতু, পাপাচারি ও কৃপণ ব্যক্তি আমাদের বন্ধু হতে পারে না।

নিজের আবেগ ও বিবেকের সমন্বয় করে অাসুন অামরা বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এমন বন্ধু নির্বাচন করি যেন তা ইহকালে কল্যাণের ও পরকালে মুক্তির পথে সহযোগী হতে পারে। এমন কেউ যেনো আমাদের বন্ধু হতে না পারে যাদের জন্য ইহকালে মজা মাস্তি হলেও পরকালে জাহান্নামের কঠিন আযাবের সম্মুখীন হতে হয়।

আব্দুল্লাহ আল- মামুর – কবি ও গবেষক 

আরও পড়ুন