Ads

মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, করোনা ভাইরাস ঝুঁকি এবং হাত ধোয়া

মাসুম আহমেদ পাটওয়ারী

বর্তমানে মানব জাতিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে এক ভয়ংকর ভাইরাসকে যা করোনা নামে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। প্রতিদিনই এই সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত আমরা সবাই কম বেশী জানতে পারছি। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস-এ আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

বহুল জনবসতি পূর্ন এই দেশে করোনা ভাইরাস সক্রিয় ভাবে ছড়িয়ে পড়লে তাহলে তা হবে মারাত্মক রকমের দুর্যোগ। আর এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাই হবে সব চাইতে বড় কারন। সুতরাং এ সময় আমাদের সকলের জানা উচিৎ মেডিক্যাল বর্জ্য কিভাবে ব্যবস্থাপনা করবো।

মনে রাখা উচিৎ, এই মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হতে হবে ব্যাক্তি পর্যায় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল বর্জ্য উতপাদন করে থাকে যেমন; হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরী, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদি সমূহ কে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সঠিক ভাবে মেনে চলতে হবে। যেমন এ ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বর্জ্যের উৎস পর্যায় থেকে নির্দিস্ট পাত্রে পৃথকীকরণ করে সংগ্রহ করতে হবে। নির্দিস্ট রঙের বিশেষায়িত পাত্রে বর্জ্য প্রাথমিক পর্যায়ে অস্থায়ী ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। বাংলাদেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান “প্রিজম বাংলাদেশ” সঠিক ভাবে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই প্রিজম বাংলাদেশ এর সাথে প্রতিষ্ঠান গুলি পরামর্শ করতে পারে। এ ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত নির্দেশিকা মেনেও ব্যবস্থাপনা করতে পারে। কোন প্রতিষ্ঠান চাইলে আমার সাথে ব্যাক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করতে পারে। মেডিক্যাল বর্জ্য বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমি অবশ্যই পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবো।

ব্যাক্তি পর্যায়ে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সচেতনতা
যে সকল প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল বর্জ্য উতপাদন করে থাকে, যদি সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে কাউকে যেতে হয় তাহলে নিম্ন লিখিত বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী।

১। প্রতিষ্ঠানের কোন দরজার হাতলে খালি হাতে না ধরা। যেন অবশ্যই অন্তত একটা কাগজ, টিস্যু অথবা কাপড় দিয়ে ধরা হয়। প্রতিবার ব্যবহারের পরে তা নির্দিস্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাত্রে ফেলতে হবে। কেউ যদি একবার ব্যাবহার করা যায় এমন গ্লাভস ব্যাবহার করে তাহলে তা হবে উত্তম।
২। লিফটের বাটন এ খালি হাতে চাপ না দেয়া। অবশ্যই কোন প্রতিরোধক বস্তু ব্যাবহার করা।
৩। হাসপাতালে রোগী পরিদর্শনের সময়ে অহেতুক উপহার নিয়ে না যাওয়া। যেমন, কাঁচা ফুল, বা কোন কার্ড।
৪। রোগী পরিদর্শনের সময়ে চিকিৎসকের অনুমতি ব্যাতিরেকে কোন কিছু ব্যাবহার না করা।
৫। প্রয়োজনের ব্যাতিরেকে হাস্পাতালের কোন কিছু স্পর্শ না করা।
৬। রোগীর কোন জিনিষ ব্যাবহার না করা।
৭। রোগী পরিদর্শনের সময়ে কোন বর্জ্য উতপাদিত হলে তা পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে ডেকে পরিষ্কার করিয়ে নেয়া।
৮। যে ধরনের বর্জ্য যে ধরনের বা রঙের পাত্রে সংরক্ষিত করতে বলা হয়েছে তা অবশ্যই মেনে চলা।
৯। হাসতালের কোন বর্জ্য বা রোগীর কোন বর্জ্য, দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাবহার না করা বা পুনচক্রায়ন না করা। যেমন গজ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন ব্যাগ, সিরিঞ্জ, নিডল ইত্যাদি।
১০। হাসপাতালে অবস্থান কালীন কোন কিছু করার পড়ে বা ধরার পর পর হাত ধোয়া।

নিম্নে হাত ধুবার বিভিন্ন ধাপ পর্যায় ক্রমিক ভাবে বর্ণনা করা হল।
• পানি দিয়ে দুই হাত ভালো করে ভিজাতে হবে যেন প্রত্যেক আঙ্গুল এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালো ভাবে ভিজে যায়। এই ভাবে অন্তত তিনবার পানি দিয়ে হাত ভিজাতে হবে।
• দুই হাতে যথেষ্ট পরিমাণ সাবান এবং জীবাণু প্রতিরোধক নিয়ে প্রত্যেক আঙ্গুল এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত মাখাতে হবে।
• দুই হাতের তালু দিয়ে এক সাথে করে সাবান মাখাতে হবে।
• ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের উপরে এবং আঙ্গুলের ফাঁকে ভালো করে ঘসতে হবে। ঠিক এমনি করে বাম হাত দিয়ে ডান হাত ঘসতে হবে।
• দুই হাতের তালু এক সাথে করে এবং এক হাতের আঙ্গুল আর এক হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিয়ে ঘসতে হবে।
• দুই হাতের আঙ্গুল দুই দিক থেকে বিপরীত মুখি করে আটকাতে হবে এবং এই ভাবে ঘসতে হবে।
• বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল ডান হাত দিয়ে মুঠি করে ধরে ঘসতে হবে। আবার ঠিক এমনি করে ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল বাম হাত দিয়ে ধরে ঘসতে হবে।
• বাম হাতের তালু কে ডান হাতের সব আঙ্গুল একসাথে করে ঘসতে হবে। ঠিক একই ভাবে ডান হাতের তালু কেও বাম হাতের সব আঙ্গুল এক সাথে করে সামনে পিছনে ঘসতে হবে।
• এই পর্যায়ে পানি দিয়ে হাত ভালো করে ভিজাতে হবে। এবং ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে দুই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
• পরিষ্কার শুকনা তোয়ালে দিয়ে দুই হাত মুছে ফেলতে হবে এবং হাত শুকাতে হবে।
• একটি শুকনা পরিষ্কার কাপর দিয়ে পানির কল বন্ধ করতে হবে এবং একই সাথে পানির কল টিকেও ওই কাপর দিয়ে মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
• এই পর্যায়ে দেখতে দেখতে হবে হাত পরিষ্কার হয়েছে কি না, এবং ব্যাক্তি সন্তুষ্টি পর্যায়ে হাত ধুয়া শেষ হবে।

লেখকঃ
পরিবেশ পরিকল্পনাবিদ
ক্যালিফোর্নিয়া

আরও পড়ুন