Ads

রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করবেন যেভাবে ।। পর্ব -১

। হাবিবা মুবাশ্বেরা ।।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা মানুষকে নানাবিধ সম্পর্কের জালে জড়িয়ে থাকতে হয়। কারও না কারও সন্তান হিসেবে যে জীবনের সূচনা হয় মৃত্যুর সময় সে জীবনের সমাপ্তি ঘটে অনেকগুলো সম্পর্কের পরিচয় নিয়ে। একজন মানুষের পক্ষে কি আদৌ সম্ভব এই সবগুলো পরিচয়ে সফল হওয়া?

সত্যি কথা বলতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না সবার কাছে একজন ’আদর্শ মানুষ’ হিসেবে বিবেচিত হওয়া। তবে অন্তত এমন একজন মানুষ হওয়ার চেষ্টা তো করাই যায়, যার মৃত্যুর পর তার সাথে বিভিন্ন সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো তাকে নিয়ে দোয়া না করলেও অন্তত বদদোয়া করবে না, তার মৃত্যুতে শোকে ব্যাকুল না হলেও অন্তত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে না।

এমন একজন মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন জীবনের সম্পর্কগুলো রক্ষা করার ক্ষেত্রে কৌশলী ও চিন্তাশীল হওয়া। এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতালব্ধ কিছু টিপস শেয়ার করতে চাই এই লেখায় ।

পারিবারিক সম্পর্ক, বাইরের মানুষের সাথে সম্পর্ক, ভার্চুয়াল সম্পর্ক, দ্বৈত সম্পর্ক, নিজের সাথে সম্পর্ক এবং সর্বোপরি স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক—-এই বহুবিধ সম্পর্কগুলো কিভাবে রক্ষা করা যায়, সে বিষয়গুলোতে ফোকাস করবো ইনশাআল্লাহ।

প্রথমত: পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে সরলরৈখিকভাবে বিবেচনা করা।

যেমন- সন্তান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত মা এবং বাবাকে দুটি পৃথক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে তারা আমাদের প্রতি তাদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করেছে  বা করছে কিনা তা বিবেচনা করা । কিন্তু আমরা যে বিরাট ভুল করি তাহলো মা-বাবার মধ্যকার দাম্পত্য সম্পর্ককে আমরা আমাদের জাজমেন্টের মধ্যে নিয়ে আসি। আমরা ভুলে যাই যে, দাম্পত্য সম্পর্ক আর অপত্য সম্পর্ক এক নয়। দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে ভিন্ন কিছু কেমিস্ট্রি থাকে, মান -অভিমান থাকে, ঝগড়া -ভালোবাসা থাকে. পাওয়া -না পাওয়ার হিসাব থাকে— যা নিজেরা বিবাহিত জীবনে প্রবেশ না করা পর্যন্ত বোঝা যায় না। তাই সন্তান হিসেবে আমাদের উচিত তাদের সম্পর্কের ঠিক বা  ভুলের ব্যাপার বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়া ।

সাধারণত আমরা সন্তান হিসেবে মায়েদের কাছ থেকে খাবার, পোশাক, সেবা- যত্ন, পড়াশোনা, আখলাক, ধর্মীয় জ্ঞান- এসব বিষয়ে এবং বাবাদের কাছ থেকে ভরণপোষণ, বেড়ানো, বাইরের জগত সম্পর্কে জ্ঞানার্জন— এসব বিষয়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন প্রত্যাশা করি। এবার মা বা বাবা যদি সন্তানের প্রতি এই দায়িত্বগুলো পালনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ  প্রচেষ্টা দিয়ে থাকেন, তবে সন্তানদের উচিত হবে না মা-বাবার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক (Inter-personal relationship) নিয়ে  মাথা ঘামানো ।

এটা ঠিক যে, একটি সুস্থ দাম্পত্য সম্পর্ক যেমন সন্তানকে নিরাপত্তাবোধ ( sense of security)  দেয় তেমনি একটি দ্বন্দ্বমুখর সম্পর্ক সন্তানের সঠিক মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই বাবা- মা’রও উচিত নিজেদের সম্পর্কের টানাপোড়েন যেন সন্তানের ওপর প্রভাব না ফেলে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। একজন মানুষ ভালো জীবনসঙ্গী নাই হতে পারে কিন্তু তাকে ভালো অভিভাবক হওয়ার সুযোগটা দেওয়া উচিত। একই টেকনিক ফলো করতে হবে ভাই- বোনের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও।

আপনার দৃষ্টিতে দারুণ কেয়ারিং ভাই  বা বোনটি হয়তো তার জীবনসঙ্গী বা সন্তানদের ব্যাপারে দারুন উদাসীন ব্যক্তি। আপনার সুখ -দুঃখের সময় সবার আগে এগিয়ে আসা ভাই /বোনটি হয়তো তার নিজের জীবনসঙ্গী, সন্তানের বেসিক দায়িত্বগুলোও পূরণ করে না। তাই তাদের পারিবারিক বিষয়ে নিজের ভাই বা  বোনকে অন্ধভাবে সমর্থন করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

বিবাহিত ভাই বা বোনদের বরং উচিত নিজেদের মধ্যেকার কমন টপিক, যেমন – নিজেদের আত্মীয়-স্বজন. নিজেদের প্রাক্তন প্রতিবেশী, নিজেদের সম্পত্তি– প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের মধ্যকার বন্ডিং বজায় রাখা।

আরও পড়ুন- হীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে ।। ১ম পর্ব

ভাই বা বোন বা তাদের জীবনসঙ্গী যদি তাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেও চায় তবে সেক্ষেত্রে নীরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করাই নিরাপদ। অনাবশ্যক কৌতূহল প্রকাশ করা বা উপযাচক হয়ে উপদেশ দেওয়া– কোনটাই করার দরকার নেই।একান্তই যদি কোনো বিষয়ে মীমাংসা করতে হয় ,তবে অবশ্যই উভয় পক্ষের কথা শুনতে হবে। যদিও রক্তের সম্পর্ককে উপেক্ষা করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত ( Unbiased desicion ) দেওয়া খুব কঠিন, তবুও নিজস্ব হিকমাহ কাজে লাগিয়ে মতামত দিতে হবে।

একই কথা প্রযোজ্য শ্বশুর/ শাশুড়ি হিসেবে পুত্রবধূ এবং মেয়ের জামাইয়ের ক্ষেত্রেও। মা-বাবার অতি বাধ্য পুত্র  বা কন্যাটি দাম্পত্য জীবনে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে কেমন তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই না করে কারো প্রতি একতরফা পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। তার চেয়ে বরং তাদের সম্পর্ক তাদেরকেই তৈরি করতে দিতে হবে। সম্পর্কে উত্থান-পতন আসবে, সেগুলোকে সামলানোর জন্য তাদেরকে সময় ও অবকাশ  দিতে হবে। নিজেরা সরাসরি হস্তক্ষেপ (direct interfere) করা যাবে না ।

এক কথায় One-to-one relationship maintain করতে হবে। মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ককে মা-বাবার নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্ক কিংবা সন্তানের নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্ক দ্বারা প্রভাবিত করা যাবে না। যদিও এভাবে One-to-one relationship maintain করা কঠিন কিন্তু অসম্ভব না। এজন্য দরকার নিজের অধিকারের সীমারেখা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সব ব্যাপারে নাক গলানোর স্বভাবকে কন্ট্রোল করা। না হলে দেখা যাবে সেকেন্ডারি সম্পর্কের জায়গায় (Secondary relation) এ  হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে প্রাথমিক সম্পর্ক( Primary relation) নষ্ট হয়ে যাবে।

চলবে…

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং উদ্যোক্তা 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন