Ads

রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করবেন যেভাবে ।। ২য় পর্ব

।। হাবিবা মুবাশ্বেরা ।।

গত পর্বে বলেছিলাম , কিভাবে পারিবারিক সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে One-to-one relation maintain করতে হবে সে ব্যাপারে। এই পর্বে অন্যান্য সম্পর্কগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

দ্বিতীয়ত : বাইরের মানুষের সাথে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি এবং প্রায়োরিটি সেট করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা

পার্থিব সম্পর্কগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক (Fixed relationship) এবং পরিবর্তনশীল সম্পর্ক ( Variable relationship) মা, বাবা, ভাই, বোন, জীবনসঙ্গী ও তাদের পরিবার, সন্তান, সন্তানের জীবনসঙ্গী, তাদের সন্তান——- এসব পারিবারিক সম্পর্কগুলো হলো সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক (Fixed relationship) । আর সহপাঠী, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী—– এগুলো হলো পরিবর্তনশীল সম্পর্ক (Variable relationship) । এই  পরিবর্তনশীল সম্পর্কগুলো ( Variable relationship)  জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তৈরি হয়, আবার সময়ের প্রয়োজনে হারিয়েও যায়।

তো এই  পরিবর্তনশীল সম্পর্কগুলোর (Variable relationship) ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্কে ( deep relation)  এ না যাওয়াই উত্তম । বিশেষ করে নিজের জীবনের পার্সোনাল বিষয়গুলোকে এসব রিলেশনশিপের ক্ষেত্রে  প্রকাশ করা উচিত নয়। আপনি হয়তো আপনার মন খারাপের মূহূর্তে আপনার পরিবারের কারও সম্পর্কে আপনার সহপাঠীর কাছে নেগেটিভ তথ্য শেয়ার করলেন । এরপর তার সাথে আপনার সম্পর্ক ঠিকঠাক হয়ে গেল । আপনি নিজে সব ভুলে গেলেন। কিন্তু আপনার সহপাঠীর মনে আপনার পরিবারের সেই সদস্য সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা (negative impression)  রয়ে গেল। আবার উল্টোটাও হতে পারে। আপনি হয়তো আপনার সহকর্মীর কাছে আপনার জীবনসঙ্গী সম্পর্কে অনেক প্রশংসা করলেন, তার দোষগুলো গোপন রাখলেন। ফলে আপনার সহকর্মীর মনে ঈর্ষা বা নিজে না পাওয়ার হাহাকার জন্ম নিল, যার খোঁজ আপনি জানলেনও না।

এজন্য এসব পরিবর্তনশীল সম্পর্কগুলোতে (variable relationship) একটা দূরত্ব বজায় রাখা ভালো। এসব ক্ষেত্রে বরং দেশ, রাজনীতি, খেলাধূলা, সাহিত্য, মিডিয়া এসব বিষয় নিয়ে আলাপ করা নিরাপদ। অর্থ্যাৎ বাইরের মানুষের সাথে বাইরের জগতের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিবর্তনশীল সম্পর্কগুলোকে (Variable relationship) গুলোকে  সুনির্দিষ্ট সম্পর্কের (Fixed relationship)  উপরে অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না। মা-বাবার অসুস্থতার সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়াকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। জীবনসঙ্গী বা সন্তানদের সময় না দিয়ে ছুটি বা অবসর সময়গুলোতেও সহকর্মীদের সাথে বেড়াতে যাওয়া যাবে না। অর্থ্যাৎ পরিবার সবার আগে (Family comes first) এই নীতি মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার দু:সময়ে কিন্তু সবার আগে পরিবারের সদস্যরাই এগিয়ে আসবে।

তবে এটাও ঠিক পরিবর্তনশীল সম্পর্কগুলোর (variable relation) মধ্যেও কারও কারও সাথে এমন আত্মিক বন্ধন তৈরি হতে পারে যা সারাজীবন অটুট থাকে। এরকম গুটিকয়েক মানুষ জীবনে আসতেই পারে, তবে তাদেরকে নির্বাচনের ক্ষেত্রেও হিকমাহর পরিচয় দিতে হবে।

তৃতীয়ত: ভার্চুয়াল রিলেশনশিপলোকে সিরিয়াসলি না নেয়া

বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম ফিতনা হলো ভার্চুয়াল রিলেশনশিপ। এই রিলেশনশিপগুলোকে মানুষ ইদানীং এতটাই গুরুত্ব দেয় যে, কেউ কেউ অনলাইন থেকে অফলাইন রিলেশনশিপে চলে যায় আবার কেউ কেউ অনলাইন রিলেশনশিপের জন্য অফলাইন রিলেশনশিপগুলোকে নষ্ট করে। অথচ অনলাইন জগতে মানুষ তার জীবনের খন্ডিত অংশগুলোকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী উপস্থাপন করে, যা অনেক সময় fake পর্যন্ত হতে পারে। তাই অনলাইনে পরিচিতদের virtual activities দেখে প্রভাবিত হওয়া যাবে না। যার মধ্যে যেটুকু ভালো আছে সেটুকু নিয়ে নিজের আত্মন্নোয়নে ‍(self development) কাজে লাগানো গেলে সেটাই যথেষ্ট ।

আরও পড়ুন- রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করবেন যেভাবে ।। পর্ব -১

চতুর্থত: দ্বৈত সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া

আমাদের অনেকের জীবনেই এমন অবস্থা তৈরি হয় যে, একই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তিগত ( Personal) এবং পেশাগত (Professional) সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। যেমন- স্বামী-স্ত্রী  বা ভাই-ভাই  অথবা বোন-বোন একসাথে ব্যবসা করা বা কোনো প্রতিষ্ঠান চালানো প্রভৃতি। এই ধরনের দ্বৈত সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই যথেষ্ট হিকমাহ’র পরিচয় দিতে হয় যেন দুই ধরনের সম্পর্কের মাঝে কোনো conflict তৈরি না হয় এবং একটি সম্পর্কের কারণে অন্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

আমি নিজেই বিগত পাঁচ বছর যাবৎ এমন একটি দ্বৈত সম্পর্ক রক্ষা করছি আমার বোনের সাথে। Mubashera sisters পেইজের মাধ্যমে আমরা কোর্স, ওয়েবিনার, সাদাকাহ প্রজেক্টসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি ।  সাথে লেখালেখি তো আছেই। তো ব্যাপারটা এমন না যে, কখনও দুই বোনের মধ্যে মতানৈক্য হয় না। যেহেতু আমাদের দুইজনের মধ্যে বয়সের একটা পার্থক্য আছে, বেসিক স্বভাবেও কিছু অমিল আছে আবার দীর্ঘদিন যাবৎ দুইজন দুই দেশে অবস্থান করায় পারিপার্শ্বিকতার একটা প্রভাব আছে । সবমিলিয়ে অনেক বিষয়েই দুজনের মতের পার্থক্য ঘটে। কিন্তু এই মতানৈক্যকে আমরা বেশিদূর বাড়তে দেই না। কখনও একপক্ষ ছাড় দেই; তো কখনও অপর পক্ষ ছাড় দেই। নিজেদের মতানৈক্যের জন্য যেন অডিয়েন্স বা পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটাকে প্রায়োরিটি দেই।

আবার একই সাথে পারিবারিক সম্পর্ক আছে বিধায় যেহেতু দুজন দুজনের ব্যস্ততা, সুবিধা-অসুবিধা জানি তাই একজনের সংকটপূর্ণ সময়ে ( critical time) এ আরেকজন পেইজের কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাই যেন পেইজ সক্রিয় (active) থাকে। এটা হচ্ছে পারিবারিক সম্পর্ককে প্রফেশনাল জায়গায় পজিটিভলি কাজে লাগানোর উদাহরণ। বিপরীতক্রমে প্রফেশনাল সম্পর্কও আমরা পারিবারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাই। যখন দেখা যায় পারিবারিক কোনো বিষয় নিয়ে মতের অমিল হয়, সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় তখন আমরা প্রফেশনাল কোনো প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা শুরু করি যেন পারিবারিক বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যায়।এভাবে পারিবারিক এবং প্রফেশনাল —এই সম্পর্ক দুটোকে আমরা একটিকে আরেকটির সম্পূরক (supplement) হিসেবে ব্যবহার করি যেন উম্মাহর জন্য বৃহত্তর কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

এককথায় একই সাথে ব্যক্তিগত (Personal) এবং পেশাগত (Professional) সম্পর্ক রক্ষা করতে হলে এই দুই সম্পর্কের শক্তিগুলকে (Strength) ব্যবহার করতে হবে এবং দুর্বলতাগুলোকে (Weakness)  উপেক্ষা করতে হবে। তাহলেই সর্বোচ্চ ভাল ফল  (Maximum output) বের করা যাবে।

পঞ্চমত: নিজের সাথে সম্পর্কের যত্ন নেয়া।

এই কথাটা খুব অদ্ভুত শোনালেও এটাই বাস্তব যে, নিজের আত্মার সাথে নিজের সম্পর্কের  পরিচর্যা না করলে তার প্রভাব অন্যান্য সম্পর্কগুলোর উপরও পড়ে। ঘরে-বাইরে বিবিধ সম্পর্কগুলো কৌশলে সামলাতে সামলাতে আমরা একসময় ক্লান্ত হয়ে যাই। এই ক্লান্তি যতটা না শারীরিক, তার চেয়েও বেশি মানসিক । তাই এই ক্লান্তি দূর করার জন্য নিজেকে সময় দেয়া উচিত ।  নিজের একান্ত ভালো লাগার কিছু কাজ করা উচিত। সেটা হতে পারে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন সৃজনশীল কিছু। বই পড়া, ছবি আঁকা, সেলাই করা, লেখালেখি করা । যার যেটা ভালো লাগে সেটাই করতে হবে। প্রতিদিন না পারলেও প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে। এর ফলে হতাশা, হীনমন্যতা কেটে গিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে ।  নিজের কর্মস্পৃহা ফিরে আসবে। ফলে অন্য সম্পর্কগুলোর প্রতি দায়িত্ব পালনও সহজতর হবে।

চলবে…

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং উদ্যোক্তা 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক হাবিবা মুবাশ্বেরা

আরও পড়ুন