Ads

রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করবেন যেভাবে ।। ৩য় পর্ব

।। হাবিবা মুবাশ্বেরা ।।

গত দুটি পর্বে আমরা বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক রক্ষা এর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি। আসলে প্রতিটি সম্পর্কই গাছের মতো যাকে নিয়মিত সময় দিতে হয়, প্রতিনিয়ত যত্ন করতে হয়। তবে বিভিন্ন গাছের পরিচর্যা পদ্ধতি যেমন আলাদা তেমনি প্রতিটি সম্পর্ক মেইনটেইন করার টেকনিকও আলাদা। তবে সাধারণত যে কোনো মানুষের সাথে রিলেশনশিপ মেইনটেইন এর ক্ষেত্রে কয়েকটি কমন বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, যেগুলো খুব বেসিক শিষ্টাচার এর অন্তর্ভূক্ত। যেমন- কারো সাথে আলাপ করার সময় তার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কথা বলে তাকে খোঁচা না দেয়া। দুর্বলতাগুলো শারীরিক,মানসিক বা আর্থিক যে কোনো বিষয় হতে পারে । 

নিজে যে বিষয়ে দক্ষ না বা নিজের যে বিষয়ে ঘাটতি আছে, অন্যকে সে বিষয়ে উপদেশ না দেওয়া। যেমন – আপনি হয়তো নিজের ঘর ঠিকমতো গুছিয়ে রাখতে পারেন না,অগোছালো স্বভাবের অথচ অন্যের বাসায় গিয়ে তার ঘরের কোথায় কি ত্রুটি আছে তা খুঁজে বের করে কথা শুনাতে থাকেন। এক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তি আপনার কথাকে গুরুত্ব তো দেয়ই না, বরং আপনি নিজেই তাদের কাছে হাসির পাত্র হয়ে যান।

আরও পড়ুন- রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করবেন যেভাবে ।। পর্ব -১

অন্যকে নিজের মন মতো হওয়ার জন্য জোরপূর্বক প্রভাবিত করার চেষ্টা না করা। যদি একান্তই কারো কোনো স্পেসিফিক অভ্যাস বদলাতে চান তবে সেক্ষেত্রে আগে নিজেকে সেই বিষয়ে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। তাহলে আপনার আচরণ দেখে আপনার কাছের মানুষটি নিজেই এক সময় তা দ্বারা প্রভাবিত হবে। যেমন- আপনি যদি পিতা হিসেবে চান আপনার সন্তান ধূমপান না করুক তবে আপনাকে আগে অধূমপায়ী হতে হবে ।

একজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অন্যজনকে না বলা। এটাকে সহজ ভাষায় আমরা চোগলখুরিবলি। এই স্বভাব যেমন ধর্মীয়ভাবেও নিষিদ্ধ তেমনি অন্যের সাথে সম্পর্ক নষ্টের জন্য এটা অন্যতম কারণ। অনেকেই  তথ্য শেয়ার (Information share) করে নিজেকে মূল্যবান হিসেবে প্রমাণ করতে চায়। অনেকে আবার অন্যের দোষ হাইলাইট করে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু আদতে যখন আসল সত্য প্রকাশ পেয়ে যায় তখন সবাই চোগলখোর ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক কাটআপ করে থাকে। তাই অন্যের সম্পর্কে কোনো কিছু জানলে তা নিজের মধ্যেই রাখতে হবে।

আরও পড়ুন- রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করবেন যেভাবে ।। ২য় পর্ব

সর্বশেষে যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে আমি এই লেখার সমাপ্তি টানতে চাই, তা হলো ’স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক।’ এটিই একমাত্র সম্পর্ক যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী, চিরন্তন ও শ্বাশ্বত। সারাজীবন আমরা যতো ধরনের সম্পর্কের বেড়াজালেই জড়াই না কেন, শেষ পর্যন্ত এই সম্পর্কের কাছেই আমাদের আত্মসমপর্ণ করতে হয়। বস্তুত: পার্থিব অন্যান্য সম্পর্কগুলো এক একটি পরীক্ষা, যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে ফলাফল হিসেবে নির্ধারিত হয় স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্কের স্বরূপটা কেমন হবে, ভালো নাকি মন্দ।

পার্থিব সম্পর্কগুলো সমস্যা যুক্ত হলে, সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে না পারলে স্রষ্টার প্রিয়াপাত্র হওয়া যায় নাএটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও সত্যি যে, পার্থিব সব সম্পর্কে পারফেক্ট হতে না পারাটাও মানুষ হিসেবে আমাদের স্বীমাবদ্ধতা, যে স্বীমাবদ্ধতা সম্পর্কে স্রষ্টা স্বয়ং অবগত। তাই একটি স্পেসিফিক সম্পর্কের সাফল্য বা ব্যর্থতা দিয়ে অন্য সম্পর্কগুলোকে বিচার করার গুরুভার মানুষ হিসেবে আমাদের না নেয়াই ভালো।

এই মহান দায়িত্ব বরং সর্ববিষয়ে বিজ্ঞ স্রষ্টার উপরই ন্যস্ত করা উচিত, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যয়বিচারক। আমাদের বরং উচিত প্রতিটি সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের যে দায়বদ্ধতা আছে সেটুকুই হিকমাহর সাথে পালন করা।মহান আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমীন।

 

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং উদ্যোক্তা 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন