Ads

ইসলামোফবিক অপপ্রচার ও বাংলাদেশ

।। মাহবুবুর রব চৌধুরী।।

ইসলামোফোবিক অপপ্রচার সারা বিশ্বেই ছড়ান। এখানে বাংলাদেশ অংশের কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে । এটি অপপ্রচারের ক্ষুদ্র এক অংশের প্রতিচ্ছবি। দেখা যাক সেগুলি মূলত কি?

১. বাংলাদেশী মুসলমান নিচু জাত থেকে আসা।

২. রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। দেশে কেন তারপরও ঘুষ দুর্নীতি হয় ?

৩. মসজিদ মাদ্রাসা দুর্নীতির টাকায় বানান । ঘুষের টাকায় মানুষ হজ করে ।

৪. কুরবানীর সময় এলে কিছু মানুষের পশু প্রেম উথলে উঠা ।

৫. দেশ হিজাবিতে ভরে গেলো। এটি যেন এক বিরাট সমস্যা। ইসলাম মরুর ধর্ম।। ইত্যাদি।

প্রকৃত পক্ষে যে কোন অজুহাতে মুসলমান ও ইসলামকে ছোট করা এবং খোঁচা মারাটাই – ” ইসলামোফবিক অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্য। এবার এ আলোচনায় বর্ণিত পাঁচটি বক্তব্যের উপর মন্তব্য।

ক) বাংলাদেশী মুসলমান নিচু জাত থেকে আসা। এটি একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। মুসলমান বিশ্বাস করে সকল মানুষ হজরত আদম ( আ: ) এবং মা হওয়ার সন্তান। । ইসলাম জাত ,পাত, বর্ণভেদের বিরোধী উঁচু এবং নিচু জাতের মানুষ এটি মানবতা বিরধী বক্তব্য। শ্রেণী বিভক্তি অত্যাচারী শোষকদের সৃষ্ট। এটি কোন ভাবেই মুসলিম প্রিন্সিপাল এর সাথে যায় না।

আমেরিকায় কালো মানুষকে কাল বলে ডাকা যেমন রেসিজম – অপরাধ । তেমনি বাংলাদেশেও – যে কোন ফর্মে বাংলাদেশী মুসলমানকে নিচু জাতের ইঙ্গিত করা তার থেকেও বড় অপরাধ। যে দেশের ৯২ % মানুষ মুসলমান তাদের কে নিচু করে অন্যরা সব উঁচু জাতের এটি অযৌতিক , হাস্যকর বক্তব্য।

আরও পড়ুন-হীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে ।। ১ম পর্ব

খ) রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম তাই দুর্নীতি হয় এটিও একটি অযৌতিক কথা। বিশ্বে আরো মুসলিম দেশ আছে টার্কি , ইরান, ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া, কসভো, বসনিয়া মুসলিম দেশ সে সব দেশে কি কেউ বলছে যে , মুসলিম দেশ বলে তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। দেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় সেকুলার সরকার, তারা কেন এটি বন্ধ করছে না ? প্রকৃত পক্ষে দুর্নীতি হয় সিস্টেমের গলদের কারণে এবং প্রচলিত সিস্টেমকে অংগুলি দেখিয়েই এটি হচ্ছে । দুর্নীতি দূর করতে প্রয়োজন দেশে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক সরকার ও দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন এবং জবাব দিহি , স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত সিস্টেম। আধুনিক উন্নত নাগরিক সমাজ গঠন। বিশ্ব মান সম্পন্ন পেশা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং স্বাধীন আগ্রাসন মুক্ত বাংলাদেশী কৃষ্টি-কালচার চর্চা। একই সাথে , এ উপলক্ষে বিশ্ব মানের একটি ইসলামী কৃষ্টি – কালচার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা । এ গুলি – এ পথে গুরুত্পূর্ণ পদক্ষেপ।

রাষ্ট্র ধর্মের বাস্তব ভিত্তি আছে। এ কথা কি সত্য নয় যে দেশের ৯২ % মানুষ মুসলমান বলেই স্বাধীন বাংলাদেশ। যদি কিনা ৯২ % মানুষ হিন্দু হত তবে এটি ইন্ডিয়ারই অংশ হত !

গ)  মসজিদ মাদ্রাসা দুর্নীতির টাকায় বানানো হয় । এবং ঘুষের টাকায় হজ করা হয়। এ ধরনে-ঢালাও কথা- অপ প্রচারের অংশ। চরম বিদ্বেষ প্রসূত।

ঘ) কুরবানীর সময় পশু প্রেম। এটিও আর একটি বিদ্বেষী অপপ্রচার। সারা দুনিয়ায় – সারা বছর পশু গোসের ব্যবসা চলছে – তখন তা বন্ধ করবার কথা না বলে। কুরবানীর সময় এলেই কিছু পশু প্রেমী গজায় উঠা এর উদাহরণ।

ঙ) দেশ হিজাবিতে ভরে গেলো । বিশ্বব্যাপী আজ হিজাবী মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে, বাংলাদেশেও ইসলামী পোশাক মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে। এটি কোনও চাপিয়ে দেওয়া বিষয় নয়। যারা দেশ হিজাবিতে ভরে গেলো বলে আতঙ্ক মিশ্রিত অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারাই আবার সৌদি আরবে মেয়েরা বিকিনি পরে বিউটি কনটেস্টে অংশ নেওয়ার খবর উদ্দেশ্যমূলকভাবে সকল মিডিয়াতে ছড়াতে ব্যাপক প্রচারে নেমেছেন । উদ্দেশ্য একটাই যে কোন অজুহাতে মুসলমানকে ছোট করা , বিব্রত করা।

ইসলামোফবিক অপপ্রচার যেমন নিন্দনীয়, বর্জনীয় তেমনি কোন মুসলমান অন্য ধর্মকে বা অন্য সম্প্রদায়কে একই প্রকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে আক্রমণ করে সেটিও সমভাবে নিন্দনীয়, বর্জনীয়। ইসলাম এবং মুসলিম স্ট্রাটেজি ডিফেন্সিভ। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সক্ষমতার শক্তি ধারণ করা, যা কিনা অন্যের জন্য আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে না ।

আরও পড়ুন-হীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে ।। ২য় পর্ব

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষিত কিছু স্বল্প জ্ঞানের তবে সোচ্চার একটি মোল্লা শ্রেণী ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা মুসলমান সমাজকে বিতর্কিত করছেন, বিভ্রান্ত করছেন এবং একই সাথে মুসলিম ঐক্যর বিপক্ষে কাজ করছেন। অনৈক্য সৃস্টি করছেন। এর পিছে মূলত অজ্ঞতা অথবা স্বার্থবাদী ক্ষুদ্রতা জড়িত।

সাধারণ শিক্ষিত মুসলমান বেশির ভাগই ধর্ম বিষয়ে বিতর্ক থেকে দূরে থাকেন। অধিকাংশ সময় তারা সুযোগ মত স্রোতের পক্ষেই কথা বলেন। দেশে শিক্ষিত সমাজের অনেকেই আবার মুসলিম আবেগ অনুভূতির বিপক্ষে কথা বলে মজা পান । এটাও ওদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। এ বিষয়টিও বাংলাদেশে ইসলামোফবিক অপপ্রচারকারীদের পক্ষেই যায়।

কারণ তাদের বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের – বুদ্ধি বৃত্তিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় না। তারা অপপ্রচারে ফ্রি হ্যান্ড পেয়ে যান । যারা মনের তাগিদে প্রতিবাদ করেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা যোগ্যতার অভাবের কারণেই কিছুটা পিছিয়ে পড়েন। এই ফাঁকে ” ইসলামোফবিক অপপ্রচার” কারীরা এক ধরনের হাসি – হাসবার সুযোগ পান।

বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য চ্যালেঞ্জের মূল দিকটি হল। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সাথে রেখে – সভ্য বাংলাদেশ গড়বার প্রতিজ্ঞার পাশা পাশি অসভ্য – ” ইসলামোফবিক অপপ্রচার” – শক্ত ভাবে দমন করা। আজ প্রয়োজন জরুরি ভাবে এ বিষয়ে উদার মুক্ত আলোচনা।

লেখকঃ মাহবুবুর রব চৌধুরী, লেখক এবং প্রবাসী বাংলাদেশী, টরন্টো, কানাডা

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক মাহবুবুর রব চৌধুরী

আরও পড়ুন