Ads

টেকসই উন্নয়নে মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে!

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

টেকসই উন্নয়নের ধারণা আধুনিক সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এটি এমন একটি উন্নয়ন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সক্ষমতা ক্ষুন্ন না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং মেধার যথাযথ মূল্যায়ন অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে যা বিভিন্ন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণে বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে মেধার যথাযথ মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা এবং কোটা ব্যবস্থার প্রভাব নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে জাতির মেধাবী সন্তানদের মূল্যায়ন টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এবং কেন চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া উচিত।

টেকসই উন্নয়ন ও মেধার ভূমিকা:

১. মেধা ও দক্ষতার সংজ্ঞা:

মেধা সাধারণত প্রাকৃতিক ক্ষমতা বা জ্ঞানের একটি বিশেষ স্তর নির্দেশ করে যা শিক্ষার মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। দক্ষতা হলো সেই মেধার বাস্তব প্রয়োগ যা ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মেধাবী ব্যক্তিরা তাদের কাজের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রদর্শন করে যা কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. টেকসই উন্নয়ন:

টেকসই উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত দিকগুলোকে সমন্বিতভাবে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যায়। মেধাবী ব্যক্তিরা এই তিনটি ক্ষেত্রেই অবদান রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সামাজিক ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, এবং পরিবেশগত ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিকাশ।

৩. মেধার মূল্যায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন:

মেধার যথাযথ মূল্যায়ন টেকসই উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে। যদি একটি দেশ তার মেধাবী সন্তানদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে, তাহলে তারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মেধা এবং দক্ষতা প্রয়োগ করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবে। শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ মেধার বিকাশে সহায়ক হতে পারে।

কোটা ব্যবস্থা ও এর প্রভাব:

১. কোটা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশসহ অনেক দেশে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে যা মূলত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া, এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। কোটা ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল, যেমন নারীদের জন্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা।

আরও পড়ুন-কোরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব

২. কোটা ব্যবস্থার সুবিধা:

কোটা ব্যবস্থা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু সুবিধা প্রদান করে। এটি তাদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে, যা সামাজিক বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি এটি সমাজের দুর্বল শ্রেণির অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

৩. কোটা ব্যবস্থার অসুবিধা:

কোটা ব্যবস্থার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে যা মেধার যথাযথ মূল্যায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় কোটা ব্যবস্থার অপব্যবহার হয় এবং প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়। এটি কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব সৃষ্টি করতে পারে যা সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

মেধার ভিত্তিতে চাকরি ও টেকসই উন্নয়ন:

১. মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ:

মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয় যা কর্মীদের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। এটি চাকরির ক্ষেত্রে উচ্চ মান নিশ্চিত করে এবং কর্মক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হতে সাহায্য করে।

২. টেকসই উন্নয়নে মেধার অবদান:

মেধাবী কর্মীরা নতুন প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সক্ষম এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মেধাবী ব্যক্তিরা গবেষণা এবং উন্নয়নে অবদান রাখে যা টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন-বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

৩. মেধার মূল্যায়ন ও প্রণোদনা:

মেধার যথাযথ মূল্যায়ন এবং প্রণোদনা প্রদান করলে কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত হয়। এটি কর্মক্ষেত্রে সঠিক দক্ষতার মূল্যায়ন নিশ্চিত করে এবং কর্মীদের মেধা এবং দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে।

সমাজে মেধার মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা:

১. শিক্ষা ব্যবস্থা ও মেধার বিকাশ:

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে যাতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে। সঠিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা সুযোগ এবং উদ্ভাবনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করলে শিক্ষার্থীরা সমাজের জন্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

২. গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ:

টেকসই উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণা এবং উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। গবেষণা কার্যক্রমে মেধাবী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হলে তারা নতুন প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবে যা টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রগতি ঘটাবে।

আরও পড়ুন-পেশা হিসাবে ব্যাংকিং কতটা নির্ভরযোগ্য ?

৩. নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব:

মেধার যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে সমাজে নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে মেধাবী ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হলে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায়বিচার বজায় থাকবে।

পরিশেষে বলবো, জাতির মেধাবী সন্তানদের মূল্যায়ন করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করা হলে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে যা টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে। কোটা ব্যবস্থা যদিও কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে, তবে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন এবং দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। তাই, চাকরির ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন এবং প্রণোদনা প্রদান করে একটি ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মহান আল্লাহ দয়া করে জাতিকে সৎ ও সঠিকপথে পরিচালিত করুন।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন