Ads

মানুষের স্বভাব-চরিত্র নিয়ে কুরআনে উল্লেখিত মন্তব্য

।। জামান শামস ।।

মানুষ আল্লাহ পাকের এক অনুপম সৃষ্টি। পৃথিবীর সকল প্রাণীর চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ। তবে তা শক্তিমত্তার দিক থেকে নয় বরং বুদ্ধিজ্ঞান ও দায়িত্ব কর্তব্য পালনের যোগ্যতার জন্য। অন্য প্রাণীদের দেহ আছে, দেহের সঙ্গ অনুসঙ্গও আছে। আছে চাহিদা এবং সেটা পূরণের মত তাগাদাও । আছে ব্যথা ও সুখের অনুভূতি। এসব মানুষেরও আছে। মানুষকেই কেবল বুদ্ধি বিবেচনা, জ্ঞান ও আকল দেয়া হয়েছে। সত্য ও ন্যায়কে চিনে নেয়ার চেষ্টা, অন্যায় ও অসত্যকে বুঝার ক্ষমতা মানুষের আছে। ভাল বা মন্দ যেটা খুশি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা তার একান্ত।

আল্লাহ ইচ্ছে করে কাউকে ন্যায়ের দিকে যেমন হাঁকিয়ে নেবার জন্য ফেরেশতা পাঠান না, তেমনি খারাপ কাজের দিকেও তিনি ধাবিত করেন না। দুনিয়ার সব সৃষ্টিই মানুষের জন্য- প্রাণী, অপ্রাণী সবাই। নদী, প্রকৃতি, আকাশের মেঘমালা, বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষই ব্যবহার করে কল্যাণ লাভ করে, পরিপুষ্ট হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষ ধীরে ধীরে বাড়ন্ত হয়, শৈশব কৈশোর, যৌবনের চক্র পূর্ণ করে ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগোয়। মানব জীবনের পরিবর্তন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় না বরং তা অব্যাহত থাকে- রূপান্তরের আরেক জগতে সে প্রবেশ করে। সেখানে তার কর্মের হিসাব নিকাশ ফলাফল এবং চূড়ান্ত প্রাপ্তির ঘোষণা হবে। কারো জন্য অনন্তকালের সুখ সংবাদ আর কারো জন্য প্রজ্জ্বলিত অগ্নি অপেক্ষা করবে।

মানুষকে সর্বোত্তম করে সৃষ্টি করলেও তার স্বভাবের মধ্যে কিছু দোষ ত্রুটি আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। এগুলো তার দুর্বলতাও বটে। ভালো আমলের মানুষেরা এ দুর্লতাগুলো অতিক্রম করেই ভালো মানুষ হয়। দুর্দমনীয় মন্দ ইচ্ছাশক্তিকে তারা আল্লাহর ভয়ে পরাস্ত করে। পক্ষান্তরে মন্দ আমলের মানুষেরা এগুলো লালন করে, বিস্তার ঘটায় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করে। মানুষের দুর্বলতা সম্পর্কে আল্লাহ্পাক কুরআনে নিজেই অনেক মন্তব্য করেছেন। সেগুলো হলো-

১. মানুষ সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম অথচ অপরাধ প্রবণতায় সে পশুকেও হার মানায়

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫﴿۴﴾ ثُمَّ رَدَدْنَهُ أَسْفَلَ سَفِلِينَ .

অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। তারপর সে উল্টা নিচ থেকে নিচতম স্থানে পৌঁছে যায়। (তীন: ৪-৫)

অর্থাৎ সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসাবে মানুষকে বানানো হলেও সে যখন তার দৈহিক ও মানসিক শক্তিকে খারাপ কাজে ব্যবহার করে তখন সে অনেক নিচে নেমে যায় যা আর কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। লোভ- লালসা স্বার্থপরতা, কামভাব, নেশাখোরী, ক্রোধ বা এজাতীয় বদ চরিত্রের লক্ষণ যার মধ্যে প্রকাশ পায় সে তখন দুনিয়ার হিংস্র পশুদেরও হার মানায়। একটি হিংস্র পশু কেবল নিজের খাবারের জন্য শিকারে বের হয় ব্যাপকভাবে অন্য পশু নিধন করে চলেনা। পশু দাঁত ও নখর শিকার কাজে লাগায় কিন্তু মানুষ হত্যার নেশায় মেতে উঠে হত্যার জন্য ভাড়াটে শক্তি নিয়োগ দেয়। মানুষ হত্যার জন্য বন্দুক কামান গোলাও ব্যবহার করে। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে। জৈবিক তাড়নায় রাতের আঁধারে পথগামী নীরিহ কোন নারীকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে, শরীরের কোমল অংশগুলো বিধ্বস্ত করে এরপর খুন করে। এতেও তার পশুত্ব নিবৃত্ত হয় না। নিথর দেহটিকে টুকরা টুকরা করে কেটে পলিথিনে ঢুকিয়ে কোন জঙ্গলে বা নদীর ধারে ফেলে দেয়। স্কুলগামী মেয়েদের উত্যক্ত করে, প্রেম নিবেদনে সাড়া না পেয়ে তার উপর এসিড ছুঁড়ে দেয়। তাকে হাইজ্যাক করে নিয়ে যায়, অত্যাচার করে কেউ প্রতিবাদে এগিয়ে এলে তার উপর হামলা করে। জমি জমার বিরোধ, অন্যায় কাজে বাঁধা কিংবা ভাড়ার বচসায় খুন পর্যন্ত গড়াতে সময় লাগে না। দুনিয়ার পশুদের মধ্যে এমন কোন দৃষ্টান্ত নাই যা মানুষের এই বর্বরতার সাথে তুলনা করা যায়।

২. মানুষ যা পায় তা তার চেষ্টার ফসল নয় বরং আল্লাহ অনুগ্রহ করে তা দেন

মানুষ তার জীবনে যত নেয়ামত লাভ করেছে তার কোনটিই তার অর্থ উপার্জন কিংবা একমাত্র চেষ্টার ফসল একথা বলা যাবে না। কেননা মানুষই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের জন্য চেষ্টা করে যদিও ফল লাভ নিশ্চিত নয়। কৃষক মাঠে মাটির অসমান ঢেলাকে কর্ষণ করে চাষোপযোগী বানায়, সার দেয়, বীজ বুনে তারপর উপযুক্ত পরিবেশে ফসল আসে কিন্তু সে ফসল তুলে নেবার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? এভাবে সব মানুষের সব কাজেই স্রষ্টার অনুগ্রহ ব্যতীত মানুষের একক সাধনায় সম্ভব হয় না। তাই মানুষের উচিৎ স্রষ্টার প্রতি অনুগত থেকে তাকে প্রতিপালক হিসাবে মেনে নেয়া এবং তার হুকুমের সামনে অবনত মস্তক হওয়া। এটিই স্রষ্টার অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা। কিন্তু মানুষ কি সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে? আমরা স্রষ্টার সৃষ্টি হিসাবে তাঁর কাছে যা চাই তাতো পাইই উপরন্তু না চাইতেই তিনি আমাদের প্রকৃতির সব চাহিদা পূরণ করে দেন। জীবন যাপনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস, পানি ও উত্তাপ কোনটির জন্য আমরা সমবেত ভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করিনি। ব্যক্তিগতভাবেও কখনো এসব মৌলিক বিষয়বস্ত তাঁর কাছে চাইনি।আবার যা তাঁর কাছে চাইতে হাত তুলে দোয়া করি তাও তিনি দান করেন-

وَ اٰتٰىکُمۡ مِّنۡ کُلِّ مَا سَاَلۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَا ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَظَلُوۡمٌ کَفَّارٌ

তিনি এমন কিছু তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছো। যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে চাও তোমরা তাতে সক্ষম হবেনা। আসলে মানুষ বড় জালিম ও অকৃতজ্ঞ। (ইব্রাহীম : ৩৪)

وَ مَا بِکُمۡ مِّنۡ نِّعۡمَۃٍ فَمِنَ اللّٰهِ

আর তোমাদের কাছ যে সব নিআমত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।(সূরা নাহাল ৫৩)

৩. মানুষ ভোগপ্রবণ, নেয়ামতের শোকর আদায় করে না

তার মধ্যে ভোগস্পৃহা এত প্রবল যে আল্লাহ পাকের দেয়া নেয়ামতরাজি পেয়ে সে ভোগে মেতে উঠে। মনে হয় দুনিয়ার তাবৎ সম্পদ পেলেও তার ভোগের মাত্রা বিন্দুমাত্র প্রশমিত হবে না কিংবা ক্ষুধার তীব্রতা হ্রাস পাবেনা। এর সংগে যদি ক্ষমতা ও অর্থাগম যোগ হয় তাহলে তো কথাই নাই। তাহলে ধরাকে সরা জ্ঞান করেনা এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। এটি মানুষের দুর্বল প্রবৃত্তি অথবা প্রকৃতির দুর্বলতা। জীবন উপকরণের সহজলভ্যতা যেন মানুষকে গোমরাহ না করে কিংবা ক্ষমতা ও শক্তি যেন স্রষ্টার স্মরণ ভুলিয়ে না দেয় বরং নেয়ামত পেয়ে যেন শোকরকারী হয় সেজন্য সতর্ক থাকাই ঈমানদারদের কাজ। আল্লাহ মানুষের এই দুর্বলতার বিষয়ে বলছেন-

وَ لَقَدۡ مَکَّنّٰکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡهَا مَعَایِشَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ

তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা সহকারে জমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য জীবন উপকরণ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকরগুজারী করে থাক। (সূরা আরাফ: ১০)

وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو فَضْلِ عَلَى النَّاسِ وَلَكُن أَكْثَرَهُمْ لا يَشْكُرُونَ

নিশ্চয়ই তোমার রব মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ। (সূরা নামল: ৭৩)

৪. সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দুর্নিবার। যেখানে অর্থ সেখানেই মানুষ।

মানুষের এ এক চিরন্তন ক্ষুধা, আল্লাহ রক্ষা করেছেন এমন গুটিকতেক গোলাম ছাড়া। যাদেরকে আল্লাহপাক ভাল রুজির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, পদ পদবীও উল্লেখযোগ্য, সম্মান খ্যাতিও সমাজে বিস্তর তাদের মধ্যে এই রোগ বাসা বাঁধে সর্বাগ্রে। চাই চাই ভাব সর্বক্ষণ,আরো চাই । অর্থের জন্য মান সম্মান বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত নয়। নীতি আদর্শ টাকার কাছে দারুনভাবে পর্যুদস্ত হয়। পাড়া পড়শী বা উঁচু স্তরের কর্মকর্তা কি করেন সারাক্ষণ সেটাই পর্যবেক্ষণ করে এবং তাকে টেক্কা দিতে হবে সেজন্য দুর্নীতি করে হলেও টাকা কামাই করতে হবে। বেতন পারিশ্রমিক বা মাসোহারাই যথেষ্ট নয়, সেটিই রোজগারের উপায় নয় বরং লক্ষ্য হলো কত বেশি উপরি কামাই করা যায়।

কম বেশি সবাই এমন অন্যায্য প্রতিযোগিতার মধ্যে আছে কিছু সম্মানীয় ব্যক্তি ব্যতীত। এদের অর্থ লোলুপতা এত ব্যাপক যে, সমাজ সমষ্টির দুঃখ, ব্যথা-বেদনা সব তুচ্ছ।এরা শুধু অর্থের জন্য অর্থের বিনিময়ে মানুষ হত্যা করে।। পরিবারও এদের কাছে গৌণ- সম্পর্ক রাখার জন্যই রাখা। দিন নাই রাত নাই বিরামহীন বিশৃঙ্খলা কেবল টাকা কামাই করার জন্য। সব কামাই দুনিয়ার জন্য, কবরের জন্য এদের কোন কামাই নাই। সন্তান গোল্লায় যাচ্ছে, নেশাখোর হচ্ছে খুন খারাবির সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে- তবু থামছেনা ঘুষ খাবার নেশা, পরের সম্পদ হস্তগত করার লালসা।

إِنَّ الإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودٌ.

وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيدٌ،

وَإِنَّهُ لِحُبّ الخَيْرِ لَشَدِيدُ

أَفَلَا يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فِي الْقُبُورِ.

আসলে মানুষ তার রবের প্রতি চরম উদাসীন। সেতো নিজেই এর সাক্ষী। ধনদৌলতের প্রতি তার চরম ভালবাসা। তবে কি সে একথা জানেনা যে তাকে একদিন কবর থেকে তুলে আনা হবে। (আল আদিয়াত: ৬-৯)

لا يَسْتَمُ الإِنْسَانُ مِنْ دُعَاءِ الخَيْرِ .

মানুষ ধন সম্পদ প্রার্থনায় যেন ক্লান্তিবোধ করেনা। (হামীম সাজদা: ৪৯)

৫. মানুষের আকাঙ্ক্ষা অশেষ, চাহিদার কোন অন্ত নাই।

প্রত্যেকটি প্রয়োজনই মানুষের মিটে যেতে পারে যখন ঐ উপকরণ হাতের কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা এই যে একটি প্রয়োজন মিটে গেলেও আরেকটি প্রয়োজন তখন দরজায় আঘাত করে। এরপর হয়তো আরেকটি। এভাবে কোন কিছুই তাকে তৃপ্তির স্বাদ দিতে পারে না. একটি বাড়ি হলে আরেকটিও চাই। একটি গাড়ি হলে আরেকটিও বটে কেননা তাতে স্টাটাস বাড়বে।

وَّ جَعَلۡتُ لَهٗ مَالًا مَّمۡدُوۡدًا

، وَبَنِينَ شُهُودًا

. وَمَهَّدْتُ لَهُ تَمْهِيدًا

ثُمَّ یَطۡمَعُ اَنۡ اَزِیۡدَ ﴿٭ۙ۱۵﴾

আমি তাকে দিয়েছি বিপুল ধনসম্পদ এবং নিত্য সঙ্গী পুত্রগণ এবং দিয়েছি স্বচ্ছন্দ জীবনের প্রচুর উপকরণ। এরপরও সে কামনা করে আমি তাকে আরো দেই। (মুদ্দাসসির: ১২-১৫)

৬. মানুষের সুখের প্রতিক্রিয়া ও দুঃখের প্রতিক্রিয়া এক হয় না।

সুখের সময় মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে কিন্তু দুঃখের সময় সে উপায়হীন হয়ে পড়ে, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়। সুখ ও আনন্দে আল্লাহকে স্মরণ করতে ভুলে গেলেও কষ্টে পড়ে আল্লাহকে স্মরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিরামহীন সুখের সময় তার ভাবনায়ও আল্লাহ্ থাকে না, কার্যক্রমে তো নয়ই। এদের জীবনে আল্লাহর Function শুধু মুছিবতে এদের সাহায্য করা, বিপদ দূর করা। তাই মুসিবতে পড়লে তারা দীর্ঘ দোয়া করতে থাকে।

وَ اِذَاۤ اَنۡعَمۡنَا عَلَی الۡاِنۡسَانِ اَعۡرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِهٖ ۚ وَ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُوۡ دُعَآءٍ عَرِیۡضٍ

যখন আমি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে যায়। কিন্তু কোন অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে দীর্ঘ প্রার্থনায় রত হয়। (হামীম সেজদা : ৫১)

لَا یَسۡـَٔمُ الۡاِنۡسَانُ مِنۡ دُعَآءِ الۡخَیۡرِ ۫ وَ اِنۡ مَّسَّهُ الشَّرُّ فَیَـُٔوۡسٌ قَنُوۡطٌ

মানুষ কল্যাণ প্রার্থনায় কোন ক্লান্তি বোধ করে না, কিন্তু যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে তখন সে প্রচণ্ডভাবে হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়ে। (হামীম সাজদা : ৪৯)

বিপদকালে মানুষ আল্লাহকে বিশুদ্ধচিত্তে মুখলেছ বান্দার মত ডাকে এবং তখন নানা প্রকার ওয়াদা প্রতিশ্রুতিও দেয়। সে বলে, ‘আল্লাহ্ তুমি আমাকে নিরাপদে কুলে পৌছালে বড় আকারে দান করবো, বড় পশু কুরবানী করবো, ইয়াতিমদের সারা বছর খাওয়াবো ইত্যাদি। প্রভাবশালী মুশরিক মূর্তিপুজারীও তখন নিজেদের উপাস্য দেবতার নাম ভুলে গিয়ে আল্লাহ আল্লাহ্ বলতে থাকে, কট্টর নাস্তিকও তখন দোয়াতে মন দেয়। আল্লাহ জ্বলন্ত উপমা দিয়ে মানুষের এ খাসলতের কথা উদ্ধৃত করেছেন-

هُوَ الَّذِیۡ یُسَیِّرُکُمۡ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا کُنۡتُمۡ فِی الۡفُلۡکِ ۚ وَ جَرَیۡنَ بِهِمۡ بِرِیۡحٍ طَیِّبَۃٍ وَّ فَرِحُوۡا بِهَا جَآءَتۡهَا رِیۡحٌ عَاصِفٌ وَّ جَآءَهُمُ الۡمَوۡجُ مِنۡ کُلِّ مَکَانٍ وَّ ظَنُّوۡۤا اَنَّهُمۡ اُحِیۡطَ بِهِمۡ ۙ دَعَوُا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۚ لَئِنۡ اَنۡجَیۡتَنَا مِنۡ هٰذِهٖ لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰکِرِیۡنَ

তিনিই তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় থাক, আর তা তাদেরকে নিয়ে চলতে থাকে অনুকুল হাওয়ায় এবং তারা তা নিয়ে আনন্দিত হয়, (এ সময়) তাকে পেয়ে বসে ঝড়ো হাওয়া, আর চারদিক থেকে ধেয়ে আসে তরঙ্গ এবং তাদের নিশ্চিত ধারণা হয় যে, তাদেরকে পরিবেষ্টন করা হয়েছে। তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, ‘যদি আপনি এ থেকে আমাদেরকে নাজাত দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’। (ইউনুস: ২২)

আল্লাহকে ডাকার কারণে আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে যখন মানুষকে উদ্ধার করে তীরে পৌঁছান, সে হিন্দু বৌদ্ধ নাস্তিক যেই হোক তীরে উঠেই আল্লাহর কথা ভুলে যায়। যে ওয়াদা সে করেছিল তাও স্মরণ করেনা উপরন্তু এমন ভাব করে যেন সে কোন বিপদেই পড়েনি অথবা নিজের দক্ষতার কারণে এই যাত্রায় রক্ষা পেয়েছে অথবা অন্য কোন মানুষের কৌশল এতে সাহায্য করছে।

فَاِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ۫ ثُمَّ اِذَا خَوَّلۡنٰهُ نِعۡمَۃً مِّنَّا ۙ قَالَ اِنَّمَاۤ اُوۡتِیۡتُهٗ عَلٰی عِلۡمٍ ؕ بَلۡ هِیَ فِتۡنَۃٌ وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

মানুষকে বিপদাপদ স্পর্শ করলে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নি‘মাত দিয়ে ধন্য করি তখন সে বলে- আমার জ্ঞান গরিমার বদৌলতেই আমাকে তা দেয়া হয়েছে। না, তা নয়। এটা একটা পরীক্ষা (অনুগ্রহ লাভ করে কে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হয় আর কে নিজের বড়াই প্রকাশ করে তা দেখার জন্য)। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুঝে না। (ঝুমার : ৪৯)

বড় আফসোসের বিষয় হল মানুষ এখানেই থেমে থাকেনা বরং আল্লাহর অনুগ্রহে মুসিবত থেকে উদ্ধার পাবার পর আল্লাহর সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে শিরকও করে বসে। অসুস্থতা থেকে আরোগ্য পাবার পর ডাক্তার কবিরাজের উচ্ছসিত প্রশংসা করে, ভাল রেজাল্ট করার পর ছাত্রের শিক্ষকের গুণগান করে কিংবা সুসন্তান লাভের পর পীর বুজুর্গের দরগাহে ফুলচন্দন দেয়। অথচ এগুলো ছিল মাধ্যম মাত্র। মূল মালিক মহান রবের পরিবর্তে এদেরকেই বিপদ দূরীভূতকারী মনে করে শিরক করে।

وَ اِذَا مَسَّ النَّاسَ ضُرٌّ دَعَوۡا رَبَّهُمۡ مُّنِیۡبِیۡنَ اِلَیۡهِ ثُمَّ اِذَاۤ اَذَاقَهُمۡ مِّنۡهُ رَحۡمَۃً اِذَا فَرِیۡقٌ مِّنۡهُمۡ بِرَبِّهِمۡ یُشۡرِکُوۡنَ

মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন তারা বিশুদ্ধ চিত্তে তাদের রাববকে ডাকে, অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ আস্বাদন করান তখন তাদের এক দল তাদের রবের সাথে শরীক করে। (রুম: ৩৩)

৭. আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন অস্থিরচিত্ততা দিয়ে

মানুষের মন খুব অস্থির ও দুর্বল। জটিল কোন বিষয় সামনে এলে প্রথমেই ঘাবড়ে যায়, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ নিকট একজনের কঠিন অসুখের খবর পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারো ব্যর্থতার সংবাদে প্রচণ্ডভাবে হতাশ ও অস্থিরচিত্ত হয়। আবার অনেকগুলো মুছিবত একের পর এক আসতে থাকলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, নিজেই মৃতুর কাছাকাছি পৌছে যায়। এটি মানুষের স্বাভাবিক নৈতিক দুর্বলতা।

إِنَّ الإِنْسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا.

নিশ্চয়ই মানুষকে খুব দুর্বল মনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। বিপদ মুসিবতে পড়লেই সে ঘাবড়ে যায়। (মাআরিজ: ১৯-২০)

৮. দুনিয়ার স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতাকে মানুষ মর্যাদা ও অপমানের মানদণ্ড মনে করে

স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতা উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। ধন সম্পদ, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পেলে মানুষ খুশি হয়ে বলে যে আল্লাহ্ আমাকে মর্যাদা দিয়েছেন আবার না পেলে অথবা ছিনিয়ে নিলে বলে আল্লাহ আমাকে অপমানিত করেছেন। ধন সম্পদ পাওয়া যেমন মর্যাদার কিছু নয় বরং আল্লাহ’ দেখতে চান এগুলো পেয়ে বান্দা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় কিনা। অন্যদিকে না পাওয়াও অপমানের কিছু নয় বরং দারিদ্রতা ও অভাবে পড়ে মানুষ কিভাবে ধৈর্যধারণ করে, কিভাবে আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকে, সততা ও বিশ্বস্ততার উপর কিভাবে দিনযাপন করে সেটিও তিনি দেখে থাকেন।

فَأَمَّا الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَكْرَ مَنِ ، وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَهَانَنِ.

মানুষের স্বভাব এমন যে যখন তাঁর রব তাকে পরীক্ষায় ফেলেন তাকে সম্মান ও নিয়ামত দান করেন তখন সে বলে আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন আবার যখন তার রিযিক সংকীর্ণ করে পরীক্ষায় ফেলেন তখন সে আমার রব আমাকে হেয় করেছেন। (ফযর: ১৫-১৬)

৯. মানুষ সমস্ত প্রাণীদের থেকে দুর্বল

মানুষের উপযুক্ত বয়সে পৌছতে সময় লাগে কমপক্ষে দশ বছর। হাঁটতে উঠতে বসতেও এক বছর সময় সে নেয়। জন্ম হবার সময় অর্থাৎ শিশুকালের অসহায়ত্ব আরো করুণ। সে সময় সে ঠাণ্ডা উষ্ণতা বুঝেনা, আগুন আলোর তফাৎ বুঝে না, ক্ষুধা লাগলে কাঁদা ছাড়া ভাষা নাই। অথচ একটি গরুর বাচ্চাও মায়ের পেট থেকে বেরুনোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছুটোছুটি করতে পারে, ক্ষুধা লাগলে স্তন চুষতে পারে। এমনকি একটি মুরগীর বাচ্চাও ঈগলের হানা বুঝে মায়ের বুকে আশ্রয় নিতে পারে। আল্লাহপাক দয়ার আধার রাহমানুর রাহীম। তাই তিনি গোলামীর বাধ্যবাধকতা শিশু বয়সের জন্য দেননি। নামাজ রোজাকে বেশ বিলম্বে ফরজ করেছেন।

یُرِیۡدُ اللّٰهُ اَنۡ یُّخَفِّفَ عَنۡکُمۡ ۚ وَ خُلِقَ الۡاِنۡسَانُ ضَعِیۡفًا

আল্লাহ্ তোমাদের উপর তার বিধি নিষেধ হালকা করতে চান কেননা মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। (নেছা: ২৮)

বন্দেগীর সকল বিধি-বিধানকে আল্লাহপাক বান্দার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। অসুস্থ, রোগী, শিশু ও মেয়েদের জন্য অনেক বিধানেই সহজতা রয়েছে। সফরে নামাজ সংক্ষিপ্ত অর্থাৎ ৪ রাকাতের স্থলে ২ রাকাত করে দেয়া, ভয় ও যুদ্ধকালে আরো সংক্ষিপ্ত অর্থাৎ ২ রাকাতের স্থলে ১ রাকাত, মহিলাদের মাসিককালে নামাজ মাফ করে দেয়া, মুসাফির ও রোগীর জন্য রোজা স্থগিত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এমন ইবাদাত বন্দেগী আল্লাহ মানুষের উপর চাপিয়ে দেননি যা তার পক্ষে পালন করা অত্যন্ত কঠিন।

১০. ভালকাজে খরচের ব্যাপারে মানুষ বড় কৃপণ স্বভাবের

মানুষ কষ্ট করে যা কিছু আয় উপার্জন করে তার সবটুকুই নিজের কাছে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। নিজ প্রয়োজনের বাইরে এক কপর্দকও সে খরচ করতে রাজী নয়। এমনকি তার কাছে যদি সাধ্যের বাইরে সম্পদও মজুদ হয় তবু মানুষ স্বার্থ রক্ষা করে চলে। সে গোলার ধানের দিকে একবার তাকায় আবার সন্তানদের অভুক্ত পেটের দিকেও তাকায়। অর্থাৎ গোলার ধান ফুরিয়ে যাবার ভয়ে সন্তানদের অভুক্ত রাখে। আল্লাহপাক একথাটিই ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে-

قُلۡ لَّوۡ اَنۡتُمۡ تَمۡلِکُوۡنَ خَزَآئِنَ رَحۡمَۃِ رَبِّیۡۤ اِذًا لَّاَمۡسَکۡتُمۡ خَشۡیَۃَ الۡاِنۡفَاقِ ؕ وَ کَانَ الۡاِنۡسَانُ قَتُوۡرًا

হে মুহাম্মদ! তুমি এদের বলে দাও যদি আমার রবের রহমতের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে থাকত তাহলে খরচ হয়ে যাবার আশংকায় নিশ্চিতভাবেই তা ধরে রাখতে। সত্যিই মানুষ বড় সংকীর্ণমনা। (ইসরা: ১০০)

মানুষের দানের এই সংকীর্ণতা দূর করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে দান ছাদাকার মাধ্যমে। সমাজের অস্বচ্ছল, আয় রোজগারহীন, দরিদ্র অসহায় শ্রেণীর প্রতি এই দান হবে স্বেচ্ছামূলক, সন্তুষ্টি সহকারে এবং প্রয়োজন অনুপাতে। প্রতি বছর সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদ থেকে হিসাব করে বাধ্যতামূলক ভাবে যাকাত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে ছাদাকা ও ইনফাকের আহ্বান। বেছে বেছে উৎকৃষ্ট এবং প্রিয়বস্তু দান করতে বলা হয়েছে। কোথায় স্বউদ্যোগী হয়ে মানুষ দানে প্রতিযোগিতা করবে অথচ বাস্তবে অনেক ভাল মানুষও ভাল কাজের জন্য দান অনুদান চাইলে হাত গুটিয়ে নেয়। আল্লাহ এদের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন-

هَا أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُ ۖ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ ۚ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاءُ ۚ وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُم

দেখ, তোমরাইতো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে অর্থ খরচের জন্য বলা হয়েছে অথচ তোমরা কৃপণতা করছ। যারা কার্পণ্য করল তারা তো নিজেদের প্রতিই কার্পণ্য করল। জেনে রেখো আল্লাহ অভাবমুক্ত আর তোমরা অভাবীর দল। (মুহাম্মদ : ৩৮)

১১. নিজের স্বার্থ উদ্ধারের ব্যাপারে মানুষ অনৈতিক ভূমিকা নিতেও দ্বিধা করে না।

মানুষ এমন ভান করে যে তার মত ধার্মিক ব্যক্তি, সত্যানুসন্ধানী এবং উত্তম চরিত্রের বুঝি আর কেউ নাই। নিজের কাজকর্মের ব্যাপারে সে ঘন ঘন আল্লাহকে স্বাক্ষী বানায় এবং বলে আল্লাহ স্বাক্ষী, আমি কেবল তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী। ঠিক এমন কাজটি শয়তান আদম (আ:)কে নিষিদ্ধ গাছের কাছে যেতে করেছিল। সে বলেছিল- وَ قَاسَمَهُمَاۤ اِنِّیۡ لَکُمَا لَمِنَ النّٰصِحِیۡنَ দেখ, আমি কসম করে বলছি, আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন (আরাফ : ২১) শয়তানের মত এরূপ অবস্থা মানুষের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। মানুষের রায় ও আস্থা অর্জনের জন্য এমন পন্থা অবলম্বনকে মানুষ দোষের কিছু ভাবেনা। চরম মিথ্যা ও প্রতারনামূলক কথাকেও সে কসমের দ্বারা সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য বানায়।কেউ তার দোষত্রুটি ধরিয়ে সংশোধনের চেষ্টা করে তো তাকে সে শত্রু ভাবে।

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّعۡجِبُکَ قَوۡلُهٗ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ یُشۡهِدُ اللّٰهَ عَلٰی مَا فِیۡ قَلۡبِهٖ ۙ وَ هُوَ اَلَدُّ الۡخِصَامِ

মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে পার্থিব জীবন সম্পর্কে যার কথাবার্তা তোমাকে চকৎকৃত করে এবং নিজের সদিচ্ছার ব্যাপারে সে বারবার আল্লাহকে সাক্ষী বানায়। কিন্তু আসলে সে সত্যের নিকৃষ্টতম শত্রু। (বাকারা: ২০৪)

And of the people is he whose speech pleases you in worldly life, and he calls Allah to witness as to what is in his heart, yet he is the fiercest of opponents.

১২. মানুষ ভয়ানকভাবে বিতর্কপ্রিয়

মানুষ প্রকৃতিগতভাবে ঝগড়াটে স্বভাবের। দুনিয়ার বিষয়াদির ব্যাপারে তো বটেই দ্বীনি ব্যাপারেও তাদের বিতর্ক ও বহু বিভক্তি লক্ষ্যনীয়। মানুষের সামনে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরার জন্য যতখানি দলিল প্রমাণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রয়োজন কুরআন মজীদে আল্লাহপাক সবই বলে দিয়েছেন। মানুষের ব্যক্তি, পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে উত্থাপিত সকল সমস্যার ক্ষেত্রে নির্দেশনা রয়েছে কুরআনে যাতে বান্দা সকল কিছু একটি মাত্র গ্রন্থেই খুঁজে পায়। তদুপরি রয়েছে রাসুলে করীমের হাদীস গ্রন্থ,রয়েছে আছহাবে রাসুলের সত্যাশ্রিত জীবন কাহিনী। সকলেই কিতাব, নবী-রাসূল ও ছাহাবাগণকে সত্য বলে মানি অথচ কী আশ্চর্য এরপরও উম্মাহর সব অনুসারী একই মতাদর্শভুক্ত নয়।

وَ لَقَدۡ صَرَّفۡنَا فِیۡ هٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لِلنَّاسِ مِنۡ کُلِّ مَثَلٍ ؕ وَ کَانَ الۡاِنۡسَانُ اَکۡثَرَ شَیۡءٍ جَدَلًا

আমি মানুষের জন্য এই কুরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। অথচ মানুষ অধিকাংশ বিষয়ে বিতর্ক প্রিয়। (কাহাফ : ৫৪)

And We have certainly diversified in this Qur’an for the people from every [kind of] example; but man has ever been, most of anything, [prone to] dispute.

মানুষ বিতর্ক করে দুনিয়াবী বিষয় নিয়ে কেবলমাত্র নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে, নিজের মতামতকে অগ্রে স্থান দিতে কিংবা নিজের স্বার্থকে পরের উপর অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে। যে সম্পদ ও অর্থকড়ির জন্য মানুষ ঝগড়া বাঁধায়, হানাহানি করে সে সম্পদের না সে মালিক আর না সে সম্পদ কবরে সাথে নিয়ে যেতে পারবে। এক টাকা দুই টাকা ভাড়া নিয়ে বচসায় যাত্রীর হাতে চালক খুন হয় অথবা চালক হেলপারের হাতে যাত্রী প্রহৃত হয়। এভাবে অতি সামান্য কারণে মানুষে মানুষে ঝগড়া, বিতর্ক ও হানাহানি তৈরি হয়। অপ্রিয় হলেও সত্য যে ঝগড়ার ব্যাপারে মহিলারা (অবশ্য সবাই নয়) একধাপ অগ্রণী। কথা চালাচালি, সন্দেহ প্রবণতা, পরনিন্দা, অপরের গীবত করা, পাড়াপড়শীর সুখ অসুখ নিয়ে মন্তব্য করা পরের জামাইর আয় রোজগার তুলনা করা নিজের স্বামীর কাজকর্মকে অপর স্বামীর কাজ কর্মের থার্মোমিটারে মাপা- এগুলো নিয়ে অনেক পরিবারেই ঝগড়া লেগে থাকে।

একটি উপমা এখানে উল্লেখ করা খুবই প্রাসঙ্গিক। সেটি হল আমরা সবাই জানি শয়তানকে আল্লাহপাক কেয়ামত পর্যন্ত ঈমানদার মানুষদের জন্য শত্রু করে পাঠিয়েছেন। বেহেশত থেকে উভয়ে একই সাথে পতিত হয়। শয়তানের কাজই হল ভাল মানুষদের পশ্চাতে লাগা, কুমন্ত্রনা দেয়া এবং শেষতক ভাল কাজ থেকে সরিয়ে খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করা। এজন্য শয়তান সব ধরনের কূট-কৌশলের আশ্রয় নেয়। আপাত দৃষ্টিতে সে ও তার সঙ্গীরা বিরাট প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে এলেও ঈমানদারদের ঈমানী শক্তির মোকাবেলায় তার সব ষড়যন্ত্র ও কৌশল ব্যর্থ হয়। একারণে শয়তানের ব্যাপারে আল্লাহর মন্তব্য হল-

فَقَاتِلُوۡۤا اَوۡلِیَآءَ الشَّیۡطٰنِ ۚ اِنَّ کَیۡدَ الشَّیۡطٰنِ کَانَ ضَعِیۡفًا

শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়াই কর। নিশ্চিত জেনে রাখ শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্ত দুর্বল। (নেছা: ৭৬)

অন্যদিকে দুষ্ট প্রকৃতির রমণী যাদের কূটনামি, পরনিন্দা ও পরতুলনার অভ্যাস রয়েছে এবং যারা কথার ফেরী করে মানুষে মানুষে সম্পর্ক বিনষ্ট করে বেড়ায়, সর্বক্ষণ পরের তুলনায় নিজের অবস্থান নিয়ে অতৃপ্ত থাকে তাদের প্রতিচ্ছবি যদি নবী ইউসুফ (আঃ)-কে ধোঁকা দানকারী মিশরের রাজার স্ত্রীর কথা ভাবি তাহলে সেই মহিলা সম্পর্কে আল্লাহর মন্তব্যটি একটু শুনি-

فَلَمَّا رَاٰ قَمِیۡصَهٗ قُدَّ مِنۡ دُبُرٍ قَالَ اِنَّهٗ مِنۡ کَیۡدِکُنَّ ؕ اِنَّ کَیۡدَکُنَّ عَظِیۡمٌ

স্বামী যখন দেখল ইউসুফের জামা পিছন থেকে ছেঁড়া তখন বলল, এসব তোমাদের মেয়েলোকদের ষড়যন্ত্র। নিশ্চয়ই তোমাদের ষড়যন্ত্র বড় ভয়ানক। (ইউসুফ: ২৮)

প্রাসংগিক কারণে বলে রাখি,অনেকেই এই উপমাটি সার্বজনীনভাবে ভাল-মন্দ নির্বিশেষে সকল নারীর উপর আরোপ করেন এবং নিজ স্ত্রীকেও বলে বসেন,”তোমরা তো শয়তানের চাইতেও খারাপ,তোমরা ছলনাপ্রবণ”।একথা সঠিক নয়। আল্লাহ কুরআনে এ উপমাটি কেবল একজনের জন্যেই ব্যবহার করেছেন এবং বড়জোর কেবলমাত্র দুষ্ট প্রকৃতির নারীদের এরকম তুলনা দেওয়া যেতে পারে।

১৩. মানুষের আরেকটি বড় দুর্বলতা হল মানুষ খুব ত্বরাপ্রবণ

মানুষ যে কোন কাজেই বিদ্যুৎ বেগে ফলাফল আকাঙ্ক্ষা করে। কতইনা ভাল হতো শিশু জন্ম নিয়েই যদি তারুণ্যে পৌঁছে যেতো, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বনে যেতো। কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয় অবস্থা কামনা করতে ত্বরা করার প্রবণতা সমভাবে বিদ্যমান। কোন কোন ক্ষেত্রে হতাশ হয়ে মানুষ বিপদ মুসিবত রোগ বালাইও আমন্ত্রণ করে। কোন বিশেষ লক্ষ্য হাসিল হয় না অথবা চেষ্টা করে সফলতা এলো না, কোন বিশেষ সম্পর্ক তৈরী করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় তখন কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে মৃত্যুও কামনা করে অথবা শাস্তি আহ্বান করে বলে, “আমার উপর গযব নাযিল হয় না কেন? অথবা আমি যদি মরে যেতাম” ইত্যাদি ইত্যাদি।

وَ یَدۡعُ الۡاِنۡسَانُ بِالشَّرِّ دُعَآءَهٗ بِالۡخَیۡرِ ؕ وَ کَانَ الۡاِنۡسَانُ عَجُوۡلًا

আর মানুষ অকল্যাণ কামনা করে;(১) যেভাবে কল্যাণ কামনা করে; মানুষ তো প্রকৃতিগতভাবে খুব বেশী তাড়াহুড়াকারী। (সূরা ইসরা: ১১)

আল্লাহ তাঁর রহমতের কারণে মানুষের নেক-দো’আ সমূহকে কবুল করে থাকেন আর বদ-দোআর জন্য সময় দেন। মানুষের এ তাড়াহুড়াকারী চরিত্রের কারণে যদি তিনি তাদের শাস্তি দিতেন তবে অনেকেই ক্ষতিগ্ৰস্ত হতো। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে তার নিজের ও সন্তান সন্ততির উপর বদ-দোআ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের নিজের এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও তোমাদের কর্মচারীদের উপর বদ-দো’আ করো না। অনুরূপভাবে তোমাদের সম্পদ নাশের জন্যও বদ-দো’আ করো না। কারণ এমন হতে পারে যে, আল্লাহর দো’আ কবুলের সময় তোমাদের এ বদ-দো’আগুলো সংঘটিত হয়ে যাবে আর তা কবুল হয়ে যাবে।” [আবু দাউদঃ ১৫৩২]

অন্য এক হাদীসে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ কষ্ট ও যাতনায় পড়ে কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তবে সে যেন বলেঃ “আয় আল্লাহ! যতদিন বেঁচে থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় ততদিন আমাকে জীবিত রাখেন এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম হয়, তখন আমার মৃত্যু দেন।” [বুখারীঃ ৬৩৫১]

১৪. মানুষ যা কিছুই অর্জন করে, খাটা-খাটুনি, পরিশ্রম ও কায়ক্লেশের মধ্য দিয়েই তা অর্জন করে

কঠোর সাধনা ব্যতীত দুনিয়ায় এক লোকমা খাদ্য কারো জন্য বরাদ্দ নয়। সাধারণ মানুষের জন্য যেমন এটি সত্য তেমনি আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ নবী (আঃ) গণের জীবনেও তাই ঘটেছিল।আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণও কায় ক্লেষে রোজগার করে নিজে ও পরিবার পরিচালনা করেছেন। মানুষ,অল্প বা বিস্তর সময় ব্যয় করে,আল্লাহ তাতে বরকত ঢেলে দেন।

لا أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ، وَأَنْتَ حِلْ بِهَذَا الْبَلَدِ .

وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ . لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡ کَبَدٍ

শপথ এই নগরের। আর তুমি এই নগরের অধিবাসী।

শপথ জন্মদাতা পিতার ও তার পুত্রের। আমি তো মানুষ সৃষ্টি করেছি কায়ক্লেশের মধ্যে।

(সূরা বালাদ ১-৪)

আপন অস্তিত্বের ঘোষণা ও সাফল্যের জন্য জীবনের প্রতিটি পল অনুপলে প্রাণান্তকর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে, নিজের যোগ্যতা ও কর্মের গুণে সকল প্রতিযোগীকে ছাপিয়ে তবেই সাফল্য অর্জিত হবে। তাই সংগ্রামে যারা উপযুক্ত তারা টিকবে অন্যরা ঝরে পড়বে।

وَأَنْ لَيْسَ لِلإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى .

আর মানুষ তাই পায়, যার জন্য সে কঠিন পরিশ্রম করে (নাজম: ৩৯)

অর্থাৎ দুনিয়ার কর্মক্ষেত্র মানুষের ভবিষ্যত তার চেষ্টা প্রচেষ্টা, সংগ্রাম, কষ্ট সহিষ্ণুতা ও ত্যাগের উপর নির্ভরশীল। কাজেই নিজের জগত নিজেকেই গড়তে হবে। এই অংগীকার নিজেকেই করতে হবে যে জগত বদলানোর জন্য সে না অন্য কারো উপর নির্ভর করে সময় অপচয় করবে আর না অপর কেউ এসে আমার ভাগ্য পাল্টিয়ে দিয়ে যাবে। দোয়া প্রার্থনা দিয়েও ভাগ্য বদলানোর কৌশল নবীরা (আঃ) আমাদের শিক্ষা দেননি। দোয়া প্রার্থনা চেষ্টা প্রচেষ্টায় সহযোগী হতে পারে। আল্লাহ বলেন-

لَهٗ مُعَقِّبٰتٌ مِّنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡهِ وَ مِنۡ خَلۡفِهٖ یَحۡفَظُوۡنَهٗ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ ؕ وَ اِذَاۤ اَرَادَ اللّٰهُ بِقَوۡمٍ سُوۡٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَهٗ ۚ وَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ وَّالٍ

মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাযত করে। নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোন জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না এবং তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোন অভিভাবক নেই। (সূরা রাদ- ১১)

১৫. মানুষ নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে মোটেও ফিরে তাকায় না

মানুষ একবারও ভাবেনা যে তার সৃষ্টি এক বিন্দু নাপাক পানি থেকে- যা অত্যন্ত নগণ্য, ঘৃণিত ও অপবিত্র যা শরীর থেকে নির্গত হওয়ামাত্র গোসল ফরয হয়ে যায়। দুনিয়ার সব মানুষ একই প্রক্রিয়ায় একই বস্তু থেকে সৃষ্ট। অথচ সে যখন কথা বলে তখন মনে হয় অন্যান্য মানুষ থেকে সে বুঝি আলাদা। তার বাগাড়ম্বর স্বভাব, অহংকারী মনোভাব, শক্তিমত্তার প্রকাশ ও হুমকি হুংকার ও আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার মোকাবেলায় কূটতর্ক দেখে প্রশ্ন জাগে এই শক্তির উৎস কি? অনুল্লেখযোগ্য একটি নাপাক বস্তু থেকে যার জন্ম সে এমন অহংকারী হতে পারে না।

خَلَقَ الإنْسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ .

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ছোট একটি ফোঁটা থেকে অথচ দেখ সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। (নাহল। ৪)

هَلْ أَتَى عَلَى الإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ ، لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذۡکُوۡرًا .

কালের প্রবাহে মানুষের তো এমন একসময় এসেছিল যখন সে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু ছিলনা। (দাহর। ১)

এতে আসলে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে যে, সে সুন্দর এক আকৃতি নিয়ে পৃথিবীতে আসার পর প্রতিপালকের সামনে অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে। তাকে তো নিজের অবস্থা স্মরণ রাখা উচিত যে, আমি তো সে-ই, যার কোন অস্তিত্ব ছিল না, কে আমাকে জানতো, চিনতো?

মানুষ পরস্পরের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারে না। চলার জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে পরনির্ভরশীল, অসহায় ও দুর্বল কেউ নয়। খাবার, পানি ও বাতাসের প্রয়োজন প্রকৃতি থেকে আহরণ করতে হয়। জীবনের সব প্রয়োজন পূরণের জন্য পুরো সৃষ্টির সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদের প্রয়োজন থাকলেও অল্পস্বল্পতেই সেটি পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ প্রতিটি কদমে কদমে অন্যের মুখাপেক্ষী। মানুষের সৃষ্টির সূচনা যেমন দুর্বলতার মধ্যে তেমনি মৃত্যুও দুর্বলতার মধ্যেই।

اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ ضُؔعۡفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ ضُؔعۡفٍ قُوَّۃً ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّۃٍ ضُؔعۡفًا وَّ شَیۡبَۃً ؕ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ۚ وَ هُوَ الۡعَلِیۡمُ الۡقَدِیۡرُ

‘আল্লাহ তিনিই, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি (যৌবন)। শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সূরা রুম ৫৪)

শারীরিক সক্ষমতা এবং নিজেকে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মানুষ অনেক প্রাণীর চেয়ে অনেক দুর্বল। নিজকে অন্য প্রাণী বা পরিবেশ থেকে রক্ষার ক্ষমতার ক্ষেত্রেও মানুষ অনেক দুর্বল। সে জন্যই হয়তো মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বুদ্ধিবল দিয়েছেন যা দিয়ে প্রতিরক্ষা করা সম্ভব হয়। বেঁচে থাকতে আমাদেরকে দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আর রোগ-জীবাণুর আক্রমণ থেকে ক্রমাগত বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রেও মানুষ দুর্বল। সম্ভবত মানুষই সবচেয়ে দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থার অধিকারী। বনে জঙ্গলে, গহিনে অরণ্যে বসবাসরত কোটি কোটি প্রাণীর জন্য নেই কোনো ডাক্তার বা এন্টিবায়োটিক। কিন্তু অদৃশ্য একটি ভাইরাস মানুষকে নিমিষেই মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে পারে।আল্লাহ আমাদের এ সমস্ত ত্রুটিগুলো থেকে মুক্ত রাখুন এবং তাঁর গোলাম হিসাবে পূর্ণ গোলামী করার তৌফিক দিন।আমিন।

লেখকঃ কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক জামান শামস

আরও পড়ুন