Ads

বেবি পার্লার

মনসুর আলম

বিগত দুই দশকে দেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য বিউটি পার্লার গড়ে উঠেছে এবং চাহিদা অনুযায়ীই হয়েছে। একসময় এমনটা ছিলো না। এখন বিউটি পার্লারগুলিতে কেবল বিয়ে, গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে সাজগোজ করার জন্যই মানুষ যায় না। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীসহ আরো নানারকম অনুষ্ঠানের জন্যও সাজগোজ করতে হাজির হয়ে থাকেন অসংখ্য ফ্যাশন সচেতন মানুষ। শুধু কি চুল কাটা? হাত/পায়ের নক কাটা, পেডিকিওর, মেনিকিউর, বিভিন্নধরনের রুপচর্চাসহ নানারকমের ম্যাসাজ সার্ভিসও দেয়া হয়ে থাকে। অসংখ্য শিক্ষিত মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়ে রীতিমতো ডিগ্রি নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। রুপচর্চা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা প্রদানকে মোটামুটি একটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। চাহিদা এবং প্রতিষ্ঠান পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যুগের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে এই শিল্প। অথচ এরচেয়ে ঢের বেশি প্রয়োজন ছিলো আমাদের বাচ্চাদের জন্য ‘শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র’ গড়ে তোলার।

আমাদের সমাজে কর্মজীবি নারীদের সংখ্যাও বেড়েছে গত দুই দশকে প্রচুর। নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে একটি বিপ্লব ঘটে গেছে নীরবে। এখনকার সমাজ ব্যবস্থায় যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে। সামাজিক বাস্তবতা এবং শহুরে জীবনের নানাবিধ প্রতিকূলতায় পরিবারে কর্মহীন একজন বাড়তি নারী সদস্য থাকাটাও বেশ বিলাসীতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।

একজন কর্মজীবি নারীর জন্য সবচেয়ে কঠিন সময় হলো সন্তান জন্মদানের পরবর্তী সময়টুকু। এসময় ওনারা একেবারে দিশেহারা হয়ে যান। কলিজার টুকরাকে কার কাছে রেখে কাজে যাবেন? কীভাবে সন্তানের সঠিক পরিচর্যা হবে। অনেকেই নিজ সন্তানের নিরাপত্তা এবং সঠিক পরিচর্যার কথা চিন্তা করে নিজের ভবিষ্যত জলাঞ্জলি দিয়ে চাকুরী ছেড়ে দিচ্ছেন। আমি সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করার জন্য। কিন্তু, এরপর কী? ছয়মাস পর কী হবে? পরিবারে যদি বাড়তি কেউ না থাকেন যার কাছে বাচ্চা রেখে কাজে যাওয়া যায় তখনই একজন প্রসূতি মায়ের জীবনে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধটা যতটা না কায়িক তারচেয়ে ঢের বেশি মনস্তাত্বিক। অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়াও সন্তানের চিন্তায় একজন মা বিধ্বস্ত হয়ে যান। তখনই চলে আসে গৃহকর্মীর প্রসঙ্গ।

একজন মা নিজের সাথে যুদ্ধ করে যখন নিজের ক্যারিয়ার চালিয়ে যেতে চান তখনই ওনার একজন গৃহকর্মীর প্রয়োজন পরে। ছয় মাসের বাচ্চাকে অনাত্মীয় কারো কাছে রেখে যে নারী কাজে যান তাদের মানসিক অবস্থা চিন্তা করারও দুঃসাহস আমার নেই। কেবল স্যালুট জানাই সকল মায়েদেরকে। গৃহকর্মীর বিষয়টি একেবারে নিষ্কণ্টক নয়। নানাবিধ জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেইসব নেতিবাচক বিষয়গুলি আজ এড়িয়ে যেতে চাচ্ছি। একটি বিষয় আমরা প্রায়শই ভুলে যাই ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে না। যেকোনো কার্যক্রম যখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায় তখন সেবার মানোন্নয়ন ঘটে প্রত্যাশিত ভাবেই, জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতা অনেক বেশি স্পষ্ট থাকে।

মায়েদের এই সমস্যা দূরীকরণে আমাদের প্রয়োজন প্রি – স্কুল তথা ডে কেয়ার সেন্টার। যেনতেন ডে কেয়ার সেন্টার নয়, একেবারে প্রশিক্ষিত লোকজন দ্বারা পরিচালিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রয়োজন যেখানে মায়েরা তাদের বাচ্চাদেরকে নিশ্চিন্তে রেখে কাজে যেতে পারেন। বাচ্চাদের মৌলিক পরিচর্যা, পুষ্টিজ্ঞান, প্রাথমিক চিকিৎসা, মনস্তাত্বিক আচরণ, প্রি-স্কুল এক্টিভিটিস প্রভৃতি বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে খুবই দক্ষ একদল জনশক্তি তৈরি করে পরিচালনা করতে হবে ডে কেয়ার সেন্টারগুলি। এইড এবং বাচ্চাদের অনুপাত খুবই কঠিনভাবে মেনে চলতে হবে। পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসেবার দিকে রাখতে হবে বিশেষ নজর, থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট মনিটরিং সিস্টেম। প্রাতিষ্ঠানিক এই কার্যক্রম মায়েদের দুশ্চিন্তা কমানো, গৃহকর্মী নির্যাতনসহ আরো কিছু সামাজিক অনাচার বন্ধে হতে পারে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। সময়ের প্রয়োজনেই আমাদেরকে মনযোগ দিতে হবে একটি নতুন অধ্যায় সূচনার। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা কীভাবে লালনপালন করবো সেটিই আমাদের প্রথম প্রাধিকার নয় কি?

মনসুর
সাউথ আফ্রিকা।

আরও পড়ুন