Ads

আইবিবিএলের ইভিপি নজিবুর রহমানের মৃত্যুর আগের কিছু ঘটনা

ফারহানা শারমীন জেনী

আজ মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত। মৃত্যু উপত্যকার ওপর দিয়ে এখনও দোর্দন্ডপ্রতাপে হাটছি আলহামদুলিল্লাহ। প্রিয়জন বিশেষ করে বাবা মা হারানোর কষ্ট বর্ণনাতীত। আজ ফেইসবুকের স্ট্যাটাসগুলো দেখতে দেখতে খুব প্রিয় একজন মানুষের স্ট্যাটাসে এসে আটকে গেল চোখ।সেই প্রিয়মুখ হলেন মহীয়সীর প্রথম লাইভ অনুষ্ঠানের গেস্ট তাযকিয়া বিনতে নজীব আপুর পোস্টে এসে। কয়দিন আগেই তিনি হারিয়েছেন তার প্রাণপ্রিয় বাবা ইসলামি ব্যাংকের ইভিপি জনাব নজিবর রহমানকে।ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজীউন। তার বাবা যেমন ছিলেন সমাজের কাছে প্রিয় তেমন পরিবারের কাছে প্রিয়।নিঃসন্দেহে এটা তাযকিয়া আপুর জন্য এক অসহনীয় শোক।করোনার ভয়াল থাবা কেড়ে নিল তার প্রাণপ্রিয় পিতাকে।কিন্তু এই চরম দুঃসময়ে তাকে লড়ে যেতে হয়েছে সমাজের মুখোশধারীদের মুখোশ খুলতে।

কিন্তু আমার কাছে মর্মান্তিক যেটা সেটা হলো এই চরম দুঃসময়ে ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত স্বনামধন্য হাসপাতাল ইবনে সিনা হাসপাতালে কতিপয় ডাক্তারের চরম পরিবারতন্ত্র এবং আইসিইউ নিয়ে ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে । আজ একটা আইসিইউয়ের জন্য মানুষ কতোটা অসহায় অথচ এই দুঃসময়ে কতিপয় মানুষ ক্ষমতার অপব্যাবহার করছেন।একদিকে নিবেদিত প্রাণ ডাক্তারেরা পরিবার পরিজনকে তুচ্ছ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এরইমাঝে আবার গুটিকতক ক্ষমতধর ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে খেলছে।

আইবিবিএলের অবসরপ্রাপ্ত ইভিবি জনাব নজিবুর রহমান ২২ এপ্রিল মারা যান । তার মেয়ে তাজকিয়া বিনতে নজিব  দিগন্ত চ্যানেলের নিউজ প্রেজেন্টার ছিলেন । বর্তমানে তিনি রেডিও টুডের একজন সাংবাড পাঠক ।  তিনি অনেক অনুনয় করে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার মৃত্যু পথযাত্রী বাবার জন্য আইসিইউ পাচ্ছিলেন না । পরে তিনি ১৯  এপ্রিল সেই দুঃখ ফেসবুক বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্য  ফেসবুক লাইভে আসেন এবং তার বাবার জন্য আইসিইউ না পাওয়ার কাহিনী তুলে ধরেন । তিনি  ফেসবুক লাইভে বলেন,

“বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে, মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, ডিউটি ডাক্তার বলছেন আইসিইউ লাগবে । কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের ডাক্তার বলছেন আইসিইউ লাগবে না …।”

তিনি আরও বলেন-

“ইবনে সিনার ঠাকুর কারা? আমাকে বলা হচ্ছে বাইরে আইসিইউ খুঁজেন? আমার মা করোনা আক্রান্ত, আমার ভাই, ভাইয়ের বউ সবাই আক্রান্ত । আমি একা হাসপাতালে আমার বাবার পাশে । এতো রাতে আমি আমার বাবাকে নিয়ে কোথায় আইসিইউ খুঁজতে যাব? কোথায় আইসিইউ পাব? আপনারা শুধু আমাকে বলেন ইবনে সিনার ঠাকুর কে? আমি তার পা ধরবো? আমি জেনেছি আই সিইউ ফাঁকা আছে । কিন্তু এখন বলছে ফাঁকা নাই । দশ মিনিটে আইসিইউ কীভাবে ভরে গেল? আমি একা একজন মেয়ে মানুষ এতো রাতে আমার বাবাকে নিয়ে কোথায় যাব আইসিইউ খুঁজতে? যদি রাস্তায় কিছু হয়?”

তিনি পরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

“আমি নিজে  ইবনে সিনার একজন ছাত্রী , তারপরও তারা আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে, তাহলে তারা অন্যদের সাথে কেমন আচরণ করে ।”

তিনি অবশেষে সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন,

“আপনারা আমাকে বলেন কাকে বললে আমি আমার বাবার জন্য আইসিইউ পাবো ? আমার বাবা ছাড়া আমার কেউ নাই ।… আমি জানি সিট খালি আছে। আমাকে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে ।”

নানা ঘটনা, কাহিনীর পর তাজকিয়া বিনতে নজিবের বাবার জন্য আইসিইউ দেয়া হলেও আইসিইউ এ থাকার তিন দিনের মাথায় তার বাবা, ইসলামী ব্যাংকের ইভিপি ও সাবেক এইচআরডি প্রধান নজিবুর রাহমান মারা যান ।মানুষের জীবন নিয়ে এই খেলা বাদ দিয়ে আমরা মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেই সবার প্রতি ।

যদিও মানুষের মৃত্যুর উপর কারও হাত নেই, কিন্তু উসিলা তো থাকে । তাজকিয়া বিনতে নজিব বাবার মৃত্যুর কারণ হিসাবে সঠিক সময়ে ইবনে সিনায় অনিয়মের কারণে আইসিইউ না পাওয়াকে দায়ী করেন । তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন,

“আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে, সময় মতো আইসিইউ পেলে হয়ত বাবাই বেঁচে যেতেন ।”

করোনাকালীন এই দুঃসময়ে আমাদের বিবেক জাগ্রত হোক।আমরা  নিজেদের সংশোধন করে সমাজের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করার ব্রত গ্রহণ করি।

বাবার মৃত্যুর তিন দিন আগে তাজকিয়া বিনতে নাজিবের লাইভ

প্রতিবেদকঃ সাহিত্যিক ও সহ-সম্পাদক, মহীয়সী

আরও পড়ুন