Ads

চাটুকারিতায় আমরা পিছিয়ে নেই।

বিল গেটস ধনী হয়েছে তাই তার ছেলেবেলার কিছু কাহিনী ফেসবুকে ভাসে। দিপু মনি মন্ত্রী হওয়ায় তার ছেলেবেলার বিতর্ক প্রতিযোগিতার ভিডিও ইউটিউবসহ অন্যান্য জায়গায় স্থান করে নিয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্টের তার পিতার সাথে জন্মদিনের নুডলস খাওয়ার গল্প আমরা সবাই জানি। বারাক উবামার মেয়ের হোটেলে বয়ের কাজ করার ইতিহাস কেউ না জানা নই।

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদে নেজাদের অতীতের ইতিহাস আমরা জানি। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ওয়াশিংটন এর সাথে কন্টাক্ট্রের কথা সবার জানা ইতিহাস।

ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবুল কালাম আজাদ এর বিভিন্ন ইতিহাসের কথা না বললেই নয়। তার কিছু বানী ফেসবুকের পাতায় মাঝে মাঝে দেখা যায়।

আমাদের দেশের বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের দুধ বিক্রির টাকায় পড়াশোনা করার ইতিহাস জানা। স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরীর উথানের কথা কার অজানা?

এসব গেল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তিদের কথা। এবারে আসি কিছু সাহিত্যিকের কথায়। স্কুল পালিয়ে নজরুল আর ২য়টি আমরা ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাইনা। তার রুটির দোকানে কাজ করে সাহিত্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নজীর আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তবুও উদাহরণ হিসেবে তাকেই তুলে ধরি।

রবীন্দ্রনাথের মতো ক্ষুরধার লেখনি বাংলাসহ অন্য কোন সাহিত্যে খুজে পাওয়া যায় না। তার ছিল বহুমুখী প্রতিভা। তার প্রতিভা তার সন্তানদের মাঝেও দেখা যায় না।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো বহুভাষী মানুষ ইতিহাসে বিরল। এমনকি তার সন্তানরা তার ধারেকাছেও যেতে পারে নি।। যদিও তার এক সন্তান মুর্তজা বশীর নিজেও মেধাবী ছিলেন।

ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে এক ঝাক উজ্জ্বল নক্ষত্রের কথা বলতে পারে। তাদের মধ্যে হযরত উমর (রা) এর জেরুজালেম যাত্রার ইতিহাস, দুধে পানি মেশানোর ইতিহাস, তার অলৌকিক ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস, তার মুনাফিকদের বিপক্ষে অবস্থান তথা একজন নামে মুসলমানকে তরবারি দিয়ে হত্যার ইতিহাস উল্লেখযোগ্য।

হযরত আবু বকর (রা) এর ইসলাম গ্রহণ, তার হিজরতের রাতের কাহিনী, তার দানশীলতার কাহিনী, তার দূরদর্শিতার ইতিহাস কার অজানা নয়।

খলিফা আব্দুল আজিজের ইতিহাস সবার জানা। হযরত আবু হানিফা, আহমাদে ইবনে হাম্বল, শাফিসহ বড় বড় সাধকদের ইতিহাস সবার জানা।

হযরত আব্দুল কাদির জিলানীর সত্যবাদীতার ইতিহাস ইতিহাস হয়ে গেছে। বায়েজিদ বস্তামীর মায়ের সেবা ইতিহাসের উজ্জ্বল ঘটনা হিসেবে আজ প্রতীয়মান।

শেক্সপিয়রের মতো প্রতিভাবান কবি, নাট্যকার খুব কমই দেখা যায়। শেলির মতো নাস্তিকতাবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার খুব কম লেখকই হয়েছেন।প্রকৃতি নিয়ে লেখা ওয়ার্থসওয়াথের মতো খুব কমই আছে। সুকান্ত ভট্টাচার্য ও জন কিটসের মতো অল্প বয়সী প্রতিভাবান খুব একটা দেখা যায় না।

আরবি সাহিত্যের ইমরুল কায়েসের মতো সাহিত্যিক খুব কম পাওয়া যায়। রাশিয়ার বিখ্যাত লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি এর কথা না বললেই নয়। রবার্ট ব্রাউনিং এর কবিতার ভার মেলা বড় দায়।

এদের সকলের ইতিহাস পাঠ করেন দেখবেন তারা ছোট বেলায় সফল। তখন কেউ তাদের সমীহ করে নি। বড় হয়ে যখন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে মানুষ তখন মাথা নত করেছে। তার মানে সহজ কথায় এখন মানুষ তার চাটুকারিতা করছে।

ইতিহাসে আমরা তাদের মতো দুই বা তিনজনকে দেখতে বা দেখাতে পারিনা। আমরা ঘুরেফিরে তাদের নাম করি। কিন্তু আমরা দেখেছি তাদের মেধা ও সৃজনশীলতা ছিল আল্লাহ প্রদত্ত। এখানে অনেকে আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন।

আমি তাদের সাথে সবিনয়ে জানতে চাই আমরা আপেলের বাগানে বা পেয়ারার বাগানে বা আমের বাগানে থাকাকালীন আপেল/আম/ পেয়ারা পড়লে কেন তা তুলে মুখে দিই। অথচ নিউটন তা না তুলে চিন্তা করেছিল কেন তা উপরে না গিয়ে নিচে পড়েছে? আমরা খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত আর তারা চিন্তা নিয়ে।

আমরা আইনস্টাইনের জীবনী নিয়ে ব্যস্ত অথচ তার গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত নই। কারন জীবনী পড়তে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না কিন্তু গবেষণার জন্য অনেক ত্যাগ করতে হয়।

হ্যাঁ, আমাদের বড় বড় মানুষদের ইতিহাস জানতে হবে উৎসাহিত হওয়া বা করার জন্য। শুধুমাত্র চাটুকারিতা করার জন্য নয়। জ্ঞানীর মূল্যায়ন অবশ্যই করতে হবে। তাছাড়া জ্ঞানী আমাদের কাছে ধরা দেবে না। তবে সেটা যেন চাটুকারিতার পর্যায়ে না পড়ে।

আসলে কেউ বড় হয়ে গেলে আমরা তার চাটুকারিতা করতে পছন্দ করি। কেননা চাটুকারিতা খুব সহজ কিন্তু এতে দ্রুত আয় করার সম্ভাবনা থাকে। আর নিজে চিন্তা গবেষণা করে কিছু আয় করা কঠিন আবার সময়সাপেক্ষ।

আমাদের মেধার অভাব নেই। অভাব আছে শুধু মূল্যায়নের। আমরা ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, টাকা পয়সার কাছে নিজেদের আজ বিসর্জন দিয়েছি। আমরা চাটুকারিতার পথ বেছে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের ইতিহাস সে কথা বলে না। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ত বিলিয়ে দেওয়া জাতি। আমাদের আছে গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইতিহাস। আমাদের সেই সোনালী দিনের পুনরুদ্ধারের আশাবাদ ব্যক্ত করে শেষ করছি।

#KJ_Article 10

লেখকঃ কামরুজ্জামান জেমস, কবি,সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

আরও পড়ুন