।। জুয়েল মল্লিক ।।
বইয়ের নামঃ কায়দা করে বেঁচে থাকো
লেখকঃ ইমরান মাহফুজ
প্রকাশকঃ ঐতিহ্য পাবলিকেশন্স
পড়লাম তরুণ কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ইমরান মাহফুজের কাব্যগ্রন্থ ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো৷’ জনাব ইমরান মাহফুজ সময়ের একজন আত্মসচেতন এবং সৃষ্টিশীল কবি ৷ গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি ৷ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসের ধারক ও বাহক এই কবি ছড়া, কবিতা, গান, গল্প ও প্রবন্ধ সাহিত্যে রেখে চলছেন তার সুদক্ষ হাতের আঁচর ৷
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
কবিতা হলো অল্প শব্দে অধিক ভাব প্রকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম ৷ অন্যভাবে বলতে গেলে গভীর অর্থবোধক অনেকগুলো কথার সংক্ষিপ্ত কথা হলো কবিতা ৷ প্রাচীন চর্যাপদ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের পুর্ব পর্যন্ত বেশিরভাগ সাহিত্য রচিত হয়েছে কবিতার ছন্দে ৷ সেসময় কবিরা সবকিছু বলে গেছেন কবিতার মাধ্যমে ৷ আধুনিক যুগেও জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য শক্তিশালী কবি ৷ আমি কর্মব্যস্ততার ফাঁকে সেসব জনপ্রিয় কবিদের লেখা পড়ি ৷ ছোট্ট একটা জীবনে তো সবার লেখা পড়া সম্ভব নয় তাই যথাসম্ভব বেছে বেছে পড়ি ৷ প্রিয় কবি ইমরান মাহফুজের লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো’ সেই বেছে নেওয়া প্রিয়তার অনবদ্য স্বাক্ষী বৈ কিছু নয়!
কবি ইমরান মাহফুজের লেখা এই কাব্যগ্রন্থটিতে মোট কবিতার সংখ্যা ৪৬ টি । কবিতাগুলো আকারে ছোট কিন্তু হৃদয়গ্রাহী, ভালো লাগার এবং ভালোবাসার। কবি আল মাহমুদের ভাষায় ‘কবিতা বুদ্ধি দিয়ে লেখা যায় না বরং কবিতা লেখা হয় হৃদয় দিয়ে ৷ ‘কায়দা করে বেঁচে থাকো’ কাব্যগ্রন্থের বেশির ভাগ কবিতা পড়েই মনে হয়েছে কবিতাগুলো কবির হৃদয়ের কানাগলিতে উঁকি দেওয়া এক একটা হৃদয় নিংড়ানো ভাবনার অনিবার্য ফলশ্রুতি৷ কাব্যগ্রন্থের শুরুতেই কবি হৃদয়ের গভীর জীবনবোধের পরিচয় পাওয়া যায় তার লেখা ‘বাংলাদেশ’ নামক অনু কবিতায় ৷ যার সরল স্বীকারোক্তি মিলেছে নিম্নোক্ত পঙতিগুলোর মাধ্যমে—
“গুহামুখী মানুষের রাষ্ট্রে বিশ কোটি মানুষের বাস
প্রত্যেক জীবনের গল্প একজনের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত
কারাগারে একেকজন যন্ত্রনার পুতুল
কারো বিষয় কাউকে ভাবিয়ে তোলে না”
বহ্যমান কথাগুলো আমাদেরই যাপিত জীবনের গল্প যা আবর্তিত হচ্ছে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির জীবনে অথচ তা আমাদের ভাবনা দেয়ালে অনুরণন তুলছে না। একজন আত্মসচেতন কবির কলমে সেই জবানবন্দীই ফুটে উঠেছে অনেকের অসংখ্য মানুষের অব্যক্ত কথা হয়ে।
আবার ‘দিগন্তরেখায় মায়ার ক্রোড়পত্র’ কবি বলেছেন –
“দেয়ালেরও বয়স বাড়লে অস্থিরতা কমে- মানুষের বাড়ে হাহাকার
একদিন জীবন দেখতে লাশের গ্রাম আজিমপুরে গিয়েছিলাম।
আজন্ম স্বভাবে হতাশার আকাশ—অঝোরে বৃষ্টি নামিয়ে কাঁদছে নিদারুণ দৃশ্য।
লাশের পর লাশ। দুনিয়ার অবাধ্যরা বাধ্য হয়ে শুয়ে আছে ৷”
এই পঙতিগুলোর মাধ্যমে কবি হৃদয়ে এক গভীর জীবনবোধের পরিচয় পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে যেখানে নাগরিক জীবনের সকল বৈষম্যের শেষে সেনাপতি থেকে রাষ্ট্রপতি, নেতা থেকে পিতা, আস্তিক থেকে নাস্তিক অথবা একই গুলিতে মারা যাওয়া চাকর অথবা মালিকের সকল অবাধ্যতার বিরুদ্ধে অনিবার্য বশ্যতার কথা বলা হয়েছে অকপটে।
এছাড়াও কবি হৃদয়ের গভীর স্বদেশ প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় “বাংলা ও বাঙালির চিঠি” কবিতায়, যেখানে কবি বলেন-
“প্রিয় আব্বাজানরা
একটু সময় লইয়া দেইখা যান
আপনাগো সংসারের কেউ বালা নাই
আত্মশূন্য ঘরে নির্দয় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ৷
অদ্ভূত অসুখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে আর প্রতিক্রিয়াশীলতা হাগছে
ভৌগলিক সীমারেখায় কেউ কাউকে বিন্দু ছাড় দেয় না, দৈন্যে ভরা মাথা”
আবার বোকাচোদা রাষ্ট্র কবিতায় কবি লেখেন–
“কোথাও কেউ নেই
এর নাম বাংলাদেশ!
সকরুণ স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে আছে কবি কাক কুকুর
ভিখিরি মেঘের মতো কাটাচ্ছে পরিহাসের নিদারুণ জীবন!”
আলোচ্য পঙতিগুলোয় যেমন অনুরাগের সন্নিবেশ ঘটেছে তেমনি প্রকাশ পেয়েছে গভীর রাগ আর ক্রোধের অনুভূতি৷ এই রাগের মধ্যে দিয়ে কবি ইমরান মাহফুজ প্রকারান্তরে আমাদেরই কথা বলে গেছেন বর্ণমালার গাঁথুনিতে৷একজন সচেতন কবি মাত্রই বহমান সময়কে ধারণ করেন তার লেখা কবিতায় আর এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নন কবি ইমরান মাহফুজ যার প্রমাণ ‘বেদনার কাব্যসমগ্র’ এবং ‘ভরসার অনুবাদ’ কবিতাটি ৷
সামাজিক জীবনের প্রতিনিধি হিসেবে সামাজিক অনাচার ও শ্রেনী বৈষম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপজীব্যও তার লেখায় উপেক্ষিত হয়নি৷ যার সুস্পষ্ট প্রমাণ ‘সামাজিক ময়নাতদন্ত’ বিষয়ে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের জীবনাচার নিয়ে তার রাখঢাকহীন বয়ান৷
একজন কবি মাত্রই খেলা করেন বর্ণমালার সাথে, শব্দের চাষাবাদে ব্যস্ত কবির প্রতিটি কবিতাই এক একটি সৃষ্টিশীলতার অনবদ্য নিদর্শন৷ সঙ্গত কারনে এটা বলতে পারি এই কাব্যগ্রন্থটি পড়া শেষে আপনার তৃপ্তির ঢেকুর না উঠলেও অতৃপ্তির আক্ষেপ থাকবে না ৷
লেখকঃ জুয়েল মল্লিক, প্রাবন্ধিক এবং ব্যাংকার
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।
ফেসবুকে লেখক জুয়েল মল্লিক