Ads

এইচ বি রিতা’র অণুকাব্য

 

(১)
ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায় চঞ্চল মুনিয়া
ডানা মেলে আকাশ তলে
এমন সুখ বুকে উড়েছিল কি কেউ?
শোক ভুলে ফুল তুলে?
আকাশ তবু বুকে ধরে মেঘ
দায়বদ্ধ মানুষ-ই তো
প্রেম ভুলে।

(২)
সরে গেলে তবে, অনেকটা
কতদূর গেলে শান্ত হবে মন!
ধোঁয়াশা
কাছে ডেকে দিয়ে যায় আলো।
জোৎস্না খুঁজো তুমি
রাতটি আমারও ছিল।
প্রেমহীন বুক আজ, পুরোটা
শূন্য বুকে দেখি জন্মের ঋণ।

(৩)
যতটুকু মনে পড়ে,
তোমাদের স্বরে ছিল চিৎকার
আদুরে মাদকতা, ছিল কি?
মনে পড়ে না।
স্মৃতিভ্রম! সময়ের দাবী
গোলাপ শুকিয়ে গেলে,
রঙ কালচে হয়, তাও তো জানি
তবু,
টিকে থাকায়,
কেন এত হানাহানি!

(৪)
এমনভাবে এলে, বুনোষাঁড়ের মত
তীরটি ছুড়লে, ক্ষত করে দিলে হৃদয়
ব্যথা হয়েছিল কি? পুড়ছিল সব?
বলা যায়, যতটা হলে হৃদয় ভাঙ্গে?

(৫)

এ জীবনে কেউ ভালবাসেনি যে আকাশটাকে
তার কান্না শুকিয়ে গেছে বহুদিন
হলদে পাতা বৃক্ষ তলে লুটুপুটি খেতে দেখে,
সবুজের বুকে সেও কাঁদে, রাতদিন

শীতের জ্বানালায় শীর্ণ রোদ বেহায়া আলাপ জুড়ে গেলে
ফুল-পাতা-শাখা স্পর্শের সঞ্চারে আকাশটা আজ;
মাটি খুঁজে
কেন খুঁজে! কি দরকারে!
সে কেবল আকাশটাই বুঝে।

(৬)
সরল বাক্যে কেন বলতে পারি না
রাতভর ঘুমাইনি
কেউ কেঁদেছিল
শরীরটা ভীষণ তাপে পুড়েছিল।

(৭)
মিথ্যের সবটুকু বলেছিলাম তাকে
নেশাগ্রস্থ্য ছেলেটার
ফলাফল ভাল
আঁধারে সেদিন ছিল না আলো।

(৮)
সব বলে দিব বাকি যতটুকু
দেয়ালে আঁকি
শুন্য বাসর
জ্বলজ্বলে তারা-রা শোকে কাতর।

(৯)
রাত বাড়তেই পুড়ে যায় সব
মনের মায়া
মায়ায় প্রেম
অবরুদ্ধ জীবন এক জটিল গেইম।

(১০)
দুঃখের লহরীতে শোকাহত প্রাণ
তুমি-আমি
পশুও কাঁদে
মেঘ বুকে আজ আকাশ কাঁদে।

(১১)
সবুজ বাতিঘর
টিপটিপ জ্বলে
আলোরা খেলে, কোথায় খেলে!
কোথায় তুমি
কেউ কি ডাকে
খুব খুঁজি যতবার দাও ফেলে।

(১২)
বক্ষবন্ধনী ছেদে হাটু গেড়ে বসে পড়ো
এদিকটায়
বেলা শেষে নয়,
প্রত্যুষে বেজে উঠে শঙ্খধ্বনি
শহর জুড়ে বাধা, নিগূঢ় নিরাময়
নৈঃশব্দের সবুজ বাতিঘরে
শূন্যতায় ধোঁয়াশা
ও আমার পদ্মপাতার জল
কোমরে গুজে রাখা তান্ত্রিক তাবিজ
কোথায় গেলে?

(১৩)
জনাব,
সূর্যের দেখা মেলেনি আজ
তাই আকাশটার বুকে খন্ড মেঘের ঘনঘটা ছিল বেশ!
অশ্রু বিসর্জনের অধিকার ছিলই বা কতটুকু!
কিংবা আদৌ ছিল কি?
আপনিই বলুন,
অভ্যাস কি বদলানো যায় !

(১৪)
অনুকম্পায় কাছে ডাকো
যেতেই বলো, হুম! তারপর!
চতুর কবি ঠিকই বুঝে নাও,
অপেক্ষায় ছিলাম সারাটা দিন
তবু, শুধু শুনবো বলে
আবারো অপেক্ষায় থাকি…

(১৫)

ছুঁয়ে দিলেই পেয়ে গেলাম
এমন তো নয়
পেয়ে গেলেই ছুঁতে হবে
তাও তো নয়
নীল খামে শূন্য চিঠি লিখে যে পাফিন্স
সাদা কাগজ পড়ে যাবার তারও থাকে ভয়।
ছুঁয়ে দিলেই পেয়ে গেলাম,
এমন তো নয়।

(১৬)
তোমাকে নিয়ে ভীষণ ধোঁয়াশা
ভাল লাগে-কি লাগে
কেন লাগে
তাও এক ধোঁয়াশা!
বল, দূরে থাকো
কাছে এলেই ভালবাসা-বাসি হবে
হোক না, একটু বা তারও বেশী
ধূয়াশা! কেবল ধোঁয়াশা
কেন এত জাগিয়ে তোলো
ঘুমন্ত মানুষ, পুস্তকের এক পৃষ্ঠা!

(১৭)
বলতে চেয়েছিলাম দু’টো কথা
অভিযোগে নয়, অনাধিকারে নয়
প্রেমের কথাও নয়
সাধারণ দু’টো কথা;
ব্যক্তি অনুভূতির কথা।
রেগে গেলে খুব; আগুনের ফিনকির মত
এতটা নোংরামি কখনো করেছিলাম বলে;
মনে পড়ে না।
প্রেমিক ভাবিনি
কাছের মানুষ ভেবেছি
ভাগ করার মত, যত্নের সাথে
খুব কাছের।
বলতে চেয়েছিলাম দু’টো কথা মাত্র
অভিযোগ নয়, অনুযোগ নয়।
এভাবেই তো ভাল থাকা
বেঁচে থাকা
বুকে-বুকে ঘর্ষণ নয়
অন্তত; হৃদয় উঁকি দেয়া।

 

এইচ বই রিতাঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি, লেখক, শিক্ষক ও সাংবাদিক

তার প্রকাশিত লেখাসমূহ-

শুধু মুনিয়া নয়, আদিকাল থেকেই নারীরা সমাজে ভোগপণ্য

নারী কখন স্বাধীন

আরও পড়ুন