Ads

বহুবিবাহঃ ইসলামী দৃষ্টিকোণ

।। আলী ওসমান শেফায়েত ।।

বিয়ে মানবজীবনের এক অপরিহার্য অংশ। মানব প্রজন্মের সুরক্ষা, সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবার গঠন এবং সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য বিয়ে এক নির্বিকল্প ব্যবস্থা। সমাজের একক হচ্ছে পরিবার। বিয়ের মাধ্যমেই এই পরিবারের ভিত স্থাপিত হয় এবং তা সম্প্রসারিত হয়। ব্যক্তিজীবনের শৃঙ্খলা, ব্যক্তির মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা এবং ধৈর্য, সাহসিকতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণাবলিসহ তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনে বিয়ের ভূমিকা অভাবনীয়। সুতরাং বিয়ে ইসলামের অন্যতম প্রধান সামাজিক বিধান এবং মহানবী (সা.)-এর এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। ইসলামে বিয়েকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারের দেখা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।” (সূরা নূর, আয়াত: ৩২)

রাসূল সা: বলেছেন, “বিয়ে করা আমার সুন্নাত। যে আমার সুন্নাত অনুসরণ করলো না, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (ইবনে মাজাহ- ১৮৪৬)

ইসলামে শর্তসাপেক্ষে বহুবিবাহ বৈধ। তবে, সেটা শুধু পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিবাহ করতে পারবেন। তবে, স্বামী জীবিত থাকাবস্থায় বা তালাক না দিলে একজন নারী একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারবেন না। এটাই ইসলামের বিধান। (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব, ফতোয়া নং- ১০০০৯)।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- “আর যদি তোমরা ভয় করো যে, এতিম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা করো যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না; তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।” (সূরা নিসা, আয়াত: ৩)

এখানে বলা হয়েছে যে, দুই, তিন বা চারটি বিয়ে করা যাবে, তবে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করতে না পারলে একটি বিয়ে করতে। অর্থাৎ এখানে ন্যায়সংগত আচরণকে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আর পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন যা একটা বিয়ের কথা বলেছে এবং আমরা জানি এই ন্যায় সংগত আচরণ মেনে চলা খুব কঠিন।

কেননা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

“স্ত্রীদের মধ্যে পুরোপুরি ইনসাফ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তোমরা চাইলেও এ ক্ষমতা তোমাদের নেই। কাজেই এক স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অন্য স্ত্রীর প্রতি ঝুঁকে পড়বে না। যদি তোমরা নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, তাহলে আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” (সূরা নিসা, আয়াত: ১২৯)

আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তির দুজন স্ত্রী আছে সে যদি একজনের প্রতি ঝুকে পড়ে, তাহলে সে কিয়ামাতের দিন দেহের কেবল অর্ধাংশ (পঙ্গু হয়েই) নিয়েই উঠবে।” (নাসায়ী- ৩৯৪২; আবু দাউদ- ২১৩৩; তিরমিযী- ১১৪১; ইবনে মাজাহ- ১৯৬৯)

আরও পড়ুন-বহুবিবাহের প্রচারণা ও কুরআনের নির্দেশ ।। ১ম পর্ব

ইসলামে বহু বিবাহ বিশেষ কয়েকটি কারণেই আল্লাহ অপশান হিসেবে দিয়েছেন-

১. স্ত্রী যদি স্বাস্থ্যগত কারণে সন্তান জন্মদানে অক্ষম মর্মে চিকিৎসা অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, তখন সন্তান প্রত্যাশী স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করবেন এটিই স্বাভাবিক।

২. পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীদের সংখ্যা পুরুষদের সংখ্যার চেয়ে বেশি। যদি প্রত্যেক পুরুষ শুধু একজন নারীকেই বিয়ে করে, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়াবে যে কিছু নারীকে স্বামী ছাড়াই থাকতে হবে, যা তার ওপর এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করবে। তাহলে বাকী নারী হয় আজীবন একা থাকবেন নতুবা পাবলিক প্রোপার্টি হতে বাধ্য হবেন।

৩. কখনো কখনো যুদ্ধ বিগ্রহ, দুর্ঘটনা ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি সংখ্যায় নিহত হয়ে থাকে। এটি হলো স্বামীবিহীন নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর তার একমাত্র সমাধান হলো একাধিক বিয়ে।

৪. পুরুষদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রবল শারীরিক চাহিদা বিদ্যমান, যাদের জন্য একজন স্ত্রী যথেষ্ট নয়। যদি এমন একজন ব্যক্তির জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে এটি তার জন্য কঠিন কষ্টের কারণ হবে এবং তার জৈবিক চাহিদা তাকে হারাম পথে পরিচালিত করবে।

৫. একজন স্ত্রী হয়তো এতোটা রুগ্ন হতে পারে যে তার সঙ্গে তার স্বামী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। সেক্ষেত্রে তার একমাত্র উপায় হলো অন্য একজন স্ত্রীকে বিয়ে করা।

আল্লাহ তাআলা সূরা নিসার ৩নং আয়াতে সংখ্যার বিষয়ে স্পষ্ট করেছেন সুতরাং উম্মাহর কোনো পুরুষের জন্য চারের অধিক বিবাহ করা হারাম। ইমাম ইবনে কাসির (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আলেমদের ঐকমত্যানুসারে চারের অধিক বিবাহ করা হারাম। এক্ষেত্রে অবশ্যই পঞ্চম বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এটি কুরআন, সহিহ হাদিস ও ইজমা বিরোধী কার্যকলাপ।” (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব, ফতোয়া নং- ২৩৪২৯৮)।

ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত: “যে সময়ে গাইলান ইবনে সালামা আস-সাকাফী ইসলাম গ্রহণ করেন সে সময়ে তার দশজন স্ত্রী ছিল, যাদের তিনি বিয়ে করেছিলেন জাহিলী যুগের মধ্যে। তার সাথে সাথে তারাও মুসলমান হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এদের মধ্যে যে কোনো চারজনকে বেছে নেওয়ার নির্দেশ দেন।” (তিরমিযী ১১২৮)

হারিস ইবনে ক্বায়িস ইবনে উমাইর আল-আসাদী (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, “আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিলো। বিষয়টি আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানালে তিনি বলেন: তাদের যে কোনো চারজনকে বেছে নাও।” (আবু দাউদ- ২২৪১; ইবনে মাজাহ- ১৯৫২)।

ইমাম ইবনু হায্ম (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম বাগাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আলেমগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রাসূল (সা.)-এর পরে কোনো পুরুষের জন্য চারের অধিক বিবাহ করা হালাল নয়। কেননা এটি রাসূল (সা.)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল” (মারাতিবুল ইজমা, পৃষ্ঠা- ১১৫; তাফসীরে বাগাবী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৬১)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “সাহাবীদের ইজমা অনুযায়ী চারের অধিক বিবাহ করা হারাম” (আল-ফাতাওয়াউল কুবরা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা-  ২৬৪ পৃ)।

ইমাম ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “যদি এক সঙ্গে চারের অধিক স্ত্রী রাখা জায়েয হতো, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা সেটা বর্ণনা করতেন” (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নিসার ৩নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।

আরও পড়ুন-যৌন হয়রানির প্রতিরোধ কোন পথে?

যে কুরআন ও সহিহ হাদিসের বিধানকে অমান্য করে চারের অধিক বিবাহ করেছে, নিঃসন্দেহে সে কাবীরা গুনাহ করেছে। আর যে এ বিধানকে অস্বীকার করবে সে কাফির হিসাবে বিবেচিত হবে (সূরা নিসা, আয়াত: ৬৫ ও  ১১৫; তিরমিযী- ১১২৮; ইবনে মাজাহ- ১৯৫২, ১৯৫৩; আবু দাউদ- ২২৪১)।

কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বহু-বিবাহের কোনো মাত্রা নির্ধারিত ছিল না এবং বিবাহ বাতিকগ্রস্থ ক্ষমতাবান প্রায় প্রতিটি মানুষ যত খুশী নারীভোগে অভ্যস্ত ছিল। কেউ কেউ তো শ’ এর মাত্রা ছাড়ালেও ক্ষান্ত হতো না। সে অহস্থায় কুরআন সর্বোচ্চ চার জনের একটা মাত্রা নির্ধারণ করে দিলো। ইসলাম একজন পুরুষকে দুজন, তিনজন অথবা চারজনের যে অনুমতি দিয়েছে তা কঠিন শর্তের মধ্যে আবদ্ধ যে, কেবলমাত্র তখনই তা সম্ভব যখন তাদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সুবিচারমূলক আচরণ করতে পারবে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলেছেন- “স্ত্রীদের মধ্যে পুরোপুরি ইনসাফ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তোমরা চাইলেও এ ক্ষমতা তোমাদের নেই। কাজেই (আল্লাহর বিধানের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, ) এক স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অন্য স্ত্রীর প্রতি ঝুঁকে পড়বে না। যদি তোমরা নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, তাহলে আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” (সূরা নিসা, আয়াত: ১২৯)

এখানে এটাই বুঝানো হয়েছে-

ন্যায়সংগত আচরণ করা খুব কঠিন। তাই যারা ন্যায় সঙ্গত আচরণ করতে পারবে না তারা যেন একটি বিয়েই করে। এটাই ইসলামের বিধান। (নাসায়ী- ৩৯৪২; আবু দাউদ- ২১৩৩; তিরমিযী- ১১৪১; ইবনে মাজাহ- ১৯৬৯)

মনে রাখতে হবে এটা আপদকালীন সময়ের ট্রিটমেন্ট, বাধ্যতামূলক আদেশ নয়। ইসলামে এটা ঐচ্ছিক কাজ। একজন পুরুষ একজন নারীকে বিয়ে করেই অনেক ভালো মুসলিম হতে পারে এবং আমার মতে, একাধিক বিয়ে করলে বরং অবিচার করার আশংকা তৈরী হবে। এটা অসংগত নয় যে স্বামী যে কোনো একজনের দিকে অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়বেন। একই মান ও দামের দুটি শাড়ী দু’জনকে উপহার দিলেও উভয়ে সমান সন্তষ্ট নাও হতে পারেন। একই ডিজাইনের দুটি অলংকার দু’জনকে সমান খুশী নাও করতে পারে। তবুও যারা মনে করে ন্যায়সংগত আচরণ করতে পারবেন এবং স্ত্রীগণও সমান অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে তবে তারা সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারবেন, তার অধিক নয়।

বিয়ে একটা চুক্তি। যার মাধ্যমে একজন নারী এবং একজন পুরুষের মধ্যে একটি বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আর প্রত্যেকটা সম্পর্কের মত এই সম্পর্কও কিছু দায়িত্বের জন্ম দেয়। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যেরকম দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে, তেমনি স্ত্রীর প্রতিও স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তমান। বিয়ের মাধ্যমে একটি পরিবারও গঠন হয়। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী যেমন একটা অংশ; সন্তান ও তাদের লালন-পালনও এমন আরেকটি অংশ। পরিবারের কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্যই স্বামী বা স্ত্রীর একার নয়; বরং এটা একটা যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত সুনিয়ন্ত্রিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কাজ আলাদাভাবে স্ত্রীকে করতে হয় আর কিছু কাজ স্বামীকে। একটু ব্যাখ্যা করেই বলি- যেমন ধরুন বাচ্চাদের দেখাশোনা, রান্না, ঘর পরিষ্কার, কাপড় চোপড় ধোয়া, পরিবারের সদস্যের দেখাশোনা ইত্যাদি স্ত্রীকে দেখতে হয়। এক্ষেত্রে স্বামীর সামর্থ্য থাকলে সাহায্যকারীর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। এক্ষেত্রে স্ত্রী কাজ তদারকি করবেন। নিজে কাজ করার থেকে কিন্তু লোক চালানো কঠিন। স্ত্রীকে সেই ম্যানেজমেন্টের কাজটাই করতে হবে।

আবার স্বামীকে উপার্জনের জন্য বাইরে কাজ করতে যেতে হবে। তাকে পরিবারের সবার জন্য যেমন আর্থিক দিকটা খেয়াল রাখতে হয়, তেমনি সবার শারীরিক, মানসিক সুস্থতা, বিনোদনের ব্যবস্থা (ছোটখাট ঘুরতে যাওয়া), বাজার সদাই এবং ক্ষেত্রবিশেষে সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে স্ত্রীকে সাহায্য এরকম অনেক ভারী ভারী কাজ করতে হয়।

আরও পড়ুন- স্বামী তার স্ত্রীকে কখন পাগলের মত ভালোবাসে?

তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, বিয়ে শুধুই একটা সম্পর্ক স্থাপন নয়- সাথে আছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রী যেমন স্বামীর অভিভাবকত্ব মেনে নিয়ে তার প্রতি আনুগত্য, সৌহার্দ ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে- এটাই কাম্য। আনুগত্য ব্যাপারটা কিন্তু অত সহজ নয়! এটা অনেক ক্ষেত্রেই মুসলিমা স্ত্রীকে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থেকেই মেনে নিতে হয়। আর এর জন্য অবশ্য পুরস্কারটাও সেই মাপের।

একই ভাবে স্বামীকে নিশ্চয়তা দিতে হবে তার বিবাহিতা স্ত্রীকে একটা সৌহার্দ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের। যেহেতু পরিবার একটা যৌথ প্রতিষ্ঠান, একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া এটার সফলতা আনয়ন সম্ভব নয়। স্বামীর পারিবারিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক মান রক্ষা করা যেমন স্ত্রীর কর্তব্য তেমনি স্ত্রীর সামাজিক, পারিবারিক নিরাপত্তা ও শারীরিক, মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার দায়িত্বও স্বামীর। এমনকি স্ত্রীর দ্বীনের বিষয়ে জ্ঞানার্জন করার সুযোগ, উৎসাহ প্রদান ও আমল করার স্পৃহা যোগানও স্বামীর কর্তব্য। কারণ স্ত্রীর দ্বীন ও তার কর্মকান্ড সম্পর্কে স্বামী বেচারাকে জবাবদিহি করতে হবে আখিরাতে।

সুতরাং বিয়ে মানে নেহায়েত খাদ্যানুষ্ঠান ও নাচগানের অনুষ্ঠান সর্বস্ব আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি একজন দায়িত্ববান পুরুষ ও কর্তব্যপরায়ণ নারীর একসাথে পথচলার বৈধতা। অতএব ২য়, ৩য় বা ৪র্থ বিবাহ কেবল আরেকটা স্ত্রী বা আরেকটি অনুষ্ঠান নয়; বরং এক একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব, যেটা আল্লাহ দায়িত্ববান এবং শারীরিক, আর্থিক, মানসিক সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য জায়েজ করেছেন। যারা এই দায়িত্বগুলো সুন্দর করে পালন করতে পারবে তাদের জন্য রয়েছে অবারিত পুরষ্কার।

আল্লাহর বিধান পরিপালনে সহজ এবং জীবনকে সহজ করার জন্যই প্রেরিত কিন্ত কোন একটি নির্দেশকে নিজের জন্য সুবিধাজনক বানিয়ে সেটাকে ঠাট্টা বিদ্রুপের বিষয়বস্ত বানানো কুফরি কাজ। আল্লাহ তা‘আলার অহী এবং দীনের বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত পবিত্র। বহুবিবাহের নামে সীমালংঘন আল্লাহ, তাঁর রাসূল, কিতাব এবং শরী‘আতকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রমাণ বহন করে। যারা এ ধরণের কাজ করবে, তাদের উচিৎ আল্লাহর দরবারে তাওবা করে এবং ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সংশোধন করা অর্থাৎ সীমার মধ্যে অবিলম্বে প্রত্যাবর্তন করা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কুরআন ও হাদিসের মানদণ্ডে ইসলামের সঠিক কর্মনীতি সম্পর্কে জানার ও মানার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখকঃ আলী ওসমান শেফায়েত,  শিক্ষক ও গবেষক, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার

ইমেইল: [email protected]

[লেখাটি দৈনিক নয়া দিগন্তে পূর্ব প্রকাশিত]

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক আলী ওসমান শেফায়েত

আরও পড়ুন