Ads

যৌতুক ও মায়ের ভাবনা

মুরশীদা সাথী

 আজ একটি বিষয়ে কথা বলবো তা হলো যৌতুকের প্রচলিত সাধারণ পদ্ধতি আধুনিক পদ্ধতি এখন কেউ হয়ত বলবেন আরে মেয়েটা বলে কি! বর্তমানে যৌতুক হল গ্রামের নিরক্ষর মানুষের রীতি! জি তাই,  গ্রামের নিরক্ষর মানুষ সহজভাবে যৌতুক দেওয়া নেওয়া করে কিন্তু আধুনিক সমাজ আধুনিক পদ্ধতি গ্রহন করে!

আসছি  সেই বিষয়ে, তার আগে যৌতুকের সংঙ্গা সবাইকে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই,

সাধারণত যৌতুক হলো বিয়ের সময়, অথবা বিয়ের আগে বা পরে চুক্তি অনুযায়ী কনেপক্ষ কর্তৃক বরপক্ষকে নগদ টাকা বা উপঢৌকন দেওয়া

Dowry Prohibition Act in Nepal এর বর্ণনা মতে, “Proverty or mony given to the bridgroom or his family before or after the marriage beyond a certain limit or by froce under compulsion is called dowry”.

গ্রামের প্রচলিত পদ্ধতিতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাপ থাকে কিন্তু আধুনিক পদ্ধতিতে কোন পরিমাপ থাকে না সভ্য সমাজও তাই আধুনিক পদ্ধতি গ্রহন করে! কারণ দেশ ডিজিটালাইজড হওয়ার সাথে সাথে দেশের সবই ডিজিটালাইজড হচ্ছে! আমার মতে যারা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করছে তাদের কনের বাড়িতেই থাকা উচিত! কারণ আপনি তো কনের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন আমরা এমনটা কখনও  দেখিনা  যে ক্রেতা তার ক্রয়কৃত পণ্য দোকানদার কে দিয়ে আসতে সুতরাং  ক্রয়কৃত পণ্য হিসেবে তাকে মেয়ের বাড়িতেই থাকা উচিত!

সাধারণ ঘটনা: বেশ কিছু দিন আগে নানুদের পারিবারিক  আয়োজন উপলক্ষে গ্রামে গিয়েছিলাম মামীর টুকটাক কাজ করে এক আন্টি তো উনার সাথে কথা বলার এক ফাকে জানতে পারলাম উনার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে  চল্লিশ হাজার টাকা যৌতুক এবং আরো কি যেন দিতে হবে সেই শর্তে বিশ হাজার দেওয়া হয়েছে আন্টির বাবার বাড়ির সাহায্যে কারণ উনার স্বামী জুয়াড়ী এবং পরিবারের ভরণপোষণ করার মত মন  তার নেই! কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়ে পক্ষ যৌতুক পরিশোধ করতে পারলেই মেয়েকে শশুড় বাড়িতে জায়গা দেয় নতুবা শ্বশুর বাড়িতে তার জায়গা হয় না অনেকটা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মত, ভাড়া মিটাতে পারলে থাকবে নয়ত না

আন্টিকে বললাম, যৌতুক দিয়ে কেন বিয়ে দিলেন?

আন্টিঃ দেখো মা আমরা তো গরীব মানুষ টাকা ছাড়া বিয়ে, মেয়েরে বিয়েই বা দিমু কেমনে?

আমার আর কিছুই বলার ছিল না বিয়ের আগে জানলে  হয়তো উনাকে কিছুটা বুঝাতে পারতাম এখন আর সেই অবস্থা নেই তাই চুপ থাকলাম কারন উনার ধারণা হলো যারা নিম্নবিত্ত তাদের বিয়ে যৌতুক দিয়েই দিতে হয় এবং এখন বোঝানোর বৃথা চেষ্টা, করেও কোন লাভ হবে না এটা যৌতুকের খুবই সাধারণ গ্রাম্য ঘটনা

 এবার আসি আধুনিক পদ্ধতির ঘটনায়: বছর খানেক আগে একটা ছেলের বিয়ে হয়েছে ছেলেরা ভালো পর্যায়ের সচ্ছল তো বিয়ের আগে ছেলে একটা ঘর বানিয়েছে কিন্তু  বউ যে রুমে থাকবে সেখানে ফার্নিচার হিসেবে একটা খাট ছাড়া আর কিছুই রাখেনি এমনি প্রচন্ড গরমে একটা ফ্যান পর্যন্ত না! বউকে শশুড়বাড়ির লোকেরা বললআমরা তো সব দিয়েই এনেছি এখন তোমার বাবামাকে বলো তোমার ঘর সাজিয়ে দিতে হ্যাঁ মেয়েটির বাবা একদিন ঠিকই সব নিয়ে এসেছে

 তো এসব শুনে  একদিন আম্মু আমাকে বলছিলো, “দেখ অমুকদের এত টাকাপয়সা থাকা সত্ত্বেও ছেলের শশুড় বাড়ি থেকে কীভাবে যৌতুক নিচ্ছে আল্লাহ বাচাঁলে আমার ছেলের বিয়েতে আমি কিছুই নিবো না আমার যা সামর্থ থাকে তা দিয়েই বউকে ঘরে তুলবো

:বললাম যদি কনেপক্ষ সেচ্চায় দিতে চায় তখন?

:আমি যদি না নেই তখন কিভাবে দিবে? আম্মুর সহজসরল উত্তর

আমার বিশ্বাস আম্মু তার কথায় অটল থাকবে  ইনশা আল্লাহ

বর্তমানে বাবামায়েরা মেয়ের বিয়েতে দেওয়ার জন্য গহনা রেডি রাখে কারণ যৌতুক সবার কাছে নিয়মের ফ্রেমে বন্দি কিন্তু আম্মু এর  উল্টো;  উনি রাখে উনার ছেলের বউয়ের জন্য এতে আমরা কেউ কিন্তু অখুশি না! সবাই খুশি প্রত্যেকটি মায়ের মানসিকতা তো এমনই হওয়া উচিত

আমাদের দেশে যৌতুক নিরোধ আইন আছে ঠিক কিন্তু কার্যকারিতা নেই বললেই চলে অথচ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনে বলা হয়েছে; “যৌতুক গ্রহন বা প্রদান অথবা গ্রহন বা প্রদানে সহায়তা করলে এবং যৌতুক দাবি করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড, ( যা এক বছরের কম হবে না) জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে

আমার কাছে মনে হয় যৌতুক নিরোধ  আইনের সতর্কতা আর সিগারেটের বাক্সের দেওয়া সতর্কতা একই সূত্রে গাঁথা কারণ  যারা ধূমপান করে তারা যেনে শুনেই করে এবং কর্তৃপক্ষও জানিয়ে শুনিয়েই বাজারজাত করে মানুষকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে তেমনি যৌতুক নিরোধ আইন থাকা সত্ত্বেও যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় মানুষ এর কোন তোয়াক্কা করছে না যৌতুক পথা ভিন্ন একটি ধর্মের রীতি আর আমরা তাদের রীতিকে নিজেদের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছি কিন্তু আমি ধর্মের এমন পরিবারের কথা জানি যারা ছেলের শশুড় বাড়ি থেকে কিছুই আনেনি বরং ছেলের বউকে সাধ্যমত সাজিয়ে এনেছে অথচ তারা তাদের ধর্মের প্রতি খুব বেশি সোচ্চার এত সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও যদি পরিবার  বেহুদা রীতি  এড়িয়ে চলতে পারে তাহলে অন্য ধর্মের ধার করা  রীতি আমরা কেন বাদ দিতে পারি না?

কোরআনের কোথায়ও তো বললা নেই যৌতুকের কথা; বলা আছে মোহরানা এবং স্ত্রীকে ভরণপোষনের খরচ নির্বাহ করার সামর্থ্য না থাকলে রোযা রাখতে

আরো বলা আছে, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশি মনে দিয়ে দাও (সূরা নিসাঃ )

মহানবী (.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করার তার ইচ্ছে নেই, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে’ (মুসনাদে আহমাদ)

কোরআন এবং হাদীসে মেয়ের প্রাপ্য মোহরানা আদায় করার  কথা বলা হয়েছেসুতরাং আসুন আমরা আমাদের ধর্ম মানি নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি যৌতুক নিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে জীবন শুরু করি

 

 

আরও পড়ুন