Ads

বাংলাদেশী বৃদ্ধ মা ও তার সম্পদের ভাগাভাগি হয় যেভাবে

ডাঃ আহমেদ জোবায়ের

আমিনা বেগমের ৬ ছেলে মেয়ে।স্বামী গত হয়েছেন দুই বছর হলো। তিনিও ৭০ বছর পার করলেন।ছেলে মেয়েরা সবাই নিজ সংসারে ব্যস্ত।বৃদ্ধাকে দেখেন এক ছেলে।সে আবার শহরে থাকে।মাকে নিজ বাসায় নেওয়ার অনেক চেষ্টা করলেও মা যাবেন না।এই বাড়ি,বাগান,জমি জিরাত, বড় আম গাছ,নারিকেল সুপারি গাছ এসব ফেলে তিনি শহরে যাবেন না।

ছেলে আর জোর করে না।মাসে একবার এসে মায়ের বাজার করে দিয়ে যায়।হাত খরচ দিয়ে যায়।মেডিসিন কিনে দিয়ে যায়।মা এই বয়সেও নিজ হাতে রান্না করে খান।তিনি আলাদা ঘরে থাকেন।

আরো তিন ছেলের বউ গ্রামে থাকলেও তিনি কারো উপর বোঝা হতে নারাজ।মেয়েরা তো এত ব্যস্ত বছরেও একবার মায়ের খবর নিতে আসে না।
একদিন সব সন্তান বাড়িতে একত্রিত হলো।সম্পত্তি বন্টন হবে। কে কোন জমি নিবে, কোনটা দামী জমি,কোনটা রাস্তার পাশের জমি এসব নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।শহর থেকে মেঝো ছেলেও এসেছে।সেই শুধু মায়ের যত্ন নেয়।তাছাড়া বাকি সব ভাইবোন সবার লেখাপড়া বিয়েশাদি সব সেই করিয়েছে।
আমিনা বেগমের বড় ছেলে আত্মকেন্দ্রিক। বাবা যদি বড় ছেলেকে টাকার কথা বলতো,তখন সে চিঠি লিখতো তার পেটে ব্যাথা। আজীবন পেটে ব্যাথার অজুহাত দিয়ে গেলো।কারো দিকে সে তাকায়নি।মেঝো ছেলেই সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে এতদূর।

বৈঠকে ৬ ভাইবোন।মাও আছেন দূরে মোড়ায়।উঠানে সবাই বসেছে।আমিনা বেগমের মেঝো ছেলের প্রস্তাব সব সম্পত্তি ৬ ভাগ হবে।বোনেরা চায় মায়ের ভাগও হবে।কারণ মায়ের জমি তারা পাবে এই আশায়।

মেঝো ছেলের কথা মায়ের দায়িত্ব তোমরা কেউ কোনদিন নাওনি।আমিই মাকে দেখে যাবো।মায়ের জমির কি দরকার।এই যখন সিদ্ধান্ত হবে তখন মা বললেন, খোকা তুই আমাকে দেখছিস, আর কেউ দেখে না ।আমি যে তোর আগে দুনিয়া থেকে যাবো তার নিশ্চয়তা কি? তুই যদি আমার আগে চলে যাস, তখন আমার কি হবে?যদি আমার নামে সম্পত্তি থাকে,তবে এই সম্পত্তির লোভে হলেও তারা দু’মোট ভাত আমাকে খেতে দিবে।আজ আমি রান্না করে খাই কিন্ত কয়দিন আর পারবো।

মেঝো ছেলের চোখ ছলছল করে উঠলো।সে তো এটা ভাবনায় আনেনি মায়ের আগে সেও দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারে।এতকাল যারা মাকে দেখেনি, তারা তখন দেখবে তার গ্যারান্টি কি?

মেঝো ছেলে সম্পত্তি ৬ ভাগই করলো।তার সম্পত্তি মায়ের নামে দিয়ে শহরে ফিরে আসলো।মেঝো ছেলে ভাবলো একদিন আমরা সবাই এক গাছের ডালপালা ছিলাম।তারপর সবাই আলাদা আলাদা গাছ হয়ে গেলো।সবার মাঝে দূরত্ব হয়ে গেলো।

যেই গাছ থেকে সবার জন্ম, সেই গাছের প্রতি আজ সবার কত অনাদর, উদাসীনতা। মায়ের আগেই চলে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে ফিরে এলো।বাকিরা সেই গাছ কখন মরবে সেই অপেক্ষায় দিন গুজার করতে লাগলো।

লেখকঃ সাহিত্যিক, কলাম লেখক ও চিকিৎসক

লেখকের পূর্ব প্রকাশিত অন্যান্য লেখাসমূহ-

সন্তানের মুখ দেখে মায়েরা ভুলে যান সব ব্যাথা

স্টকহোম সিনড্রোমঃ অপরাধীর প্রতি সহানুভূতির অদ্ভুত ব্যাধি

খুলে দেওয়ার আগে ভাবতে হয়

আরও পড়ুন