Ads

ইমাম বুখারী, এক চোর এবং এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা

।। অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ ।।

ইমাম বুখারী র.

আমিরুল মুমিনিনা ফিল হাদিস। জন্ম ১৯৪ হিজরি, বুখারা, উজবেকিস্তান। মৃত্য ২৫৬ হিজরি, খরতঙ্গ, সমরখন্দ।

শীর্ষ ওস্তাজগণ

আহমাদ ইবনু হাম্বল, আলী ইবনুল মাদিনী, ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন, ইসহাক ইবনু রাওয়াহাই রাহিমাহুমুল্লাহ।

শীর্ষ শিষ্যগণ

ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, ইমাম আবু ঈসা তিরমিজী রাহিমাহুমুল্লাহ। ইমাম আহমাদকে এভাবেই স্মরণ করেন ইমাম বুখারি

دخلت بغداد اخر ثمان مرات كل ذالك اجالس أحمد بن حنبل فقال لى فى اخر ما ودعته يا أبا عبدالله تترك العلم والناس وتصير إلى خراسان

“আমি এলেমের জন্য আট বার বাগদাদে গিয়েছি।প্রত্যেক বারেই ইমাম আহমাদের সাথে বসেছি। শেষ বারে বিদায়ের সময় তিনি আমাকে বললেন, হে আবু আব্দুল্লাহ, তুমি এই বাগদাদের এলেম এবং আলেমগণকে ছেড়ে যাচ্ছ, আর এখন তুমি চিরতরে গমন করছ আপন ভূমি খোরাসানে।” -তারিখে বাগদাদ

আলেমগণের প্রশংসা/ثناء العلماء

دَعْني أُقبِّلْ رجلَيك يا أستاذ الأُستاذين، وسيِّدَ المحدِّثين، وطبيب الحديث في عِلَلِهِ. لا يبغضك إلا حاسدٌ، وأشهد أنَّه ليس في الدنيا مثلُك.

“আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনার দুই পায়ে চুমু দিই। হে অসংখ্য ওস্তাজের ওস্তাজ, মুহাদ্দিসগণের সরদার, এলমে হাদিসে দুর্বলতার চিকিৎসক! হিংসুক ছাড়া কেউ আপনাকে ঘৃণা করতে পারেনা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এই দুনিয়ায় আপনার সমকক্ষ আর কেউ নাই।” -ইমাম বুখারীর শীর্ষ শিষ্য ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ র.

كنت نائمًا بين الركن والمقام، فرأيت النبي صلى الله عليه وسلم فقال لي: يا أبا زيد، إلى متى تدرس كتاب الشافعي، ولا تدرس كتابي؟ فقلت: يا رسول الله، وما كتابك؟ قال جامع محمد بن إسماعيل

“আমি রুকনে ইয়ামানি এবং মাকামে ইবরাহীম এর মাঝখানে ঘুমিয়েছিলাম। আমি নবীজি স. কে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমাকে বললেন হে আবু যায়েদ, আর কতদিন শাফেয়ীর কিতাব পড়বে, অথচ তুমি আমার কিতাব পড় না? আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার কিতাব কোনটি ! নবীজি বললেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল বুখারীর কিতাব।” -আবু যায়েদ আলমারওয়াজি (৩০১ -৩৭১), সিয়ারু আ’লামিন নুবালা।

رأيت النبي صلى الله عليه وسلم في النوم فقال لي أين تريد؟ فقلت أريد محمد بن إسماعيل البخاري فقال أقرئه مني السلام

“আমি স্বপ্নে প্রিয় নবীজি স. কে দেখলাম। তিনি আমাকে বললেন, কোথায় যাও? জবাবে বললাম মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল বুখারীর নিকটে। নবীজি বললেন, তাকে আমার সালাম জানিয়ে দাও।” -মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ আলফেরাবরি (২৩১ -৩২৩ হিজরি), সিয়ারু আ’লামিন নুবালা

আরও পড়ুন- তুলনাহীন স্মরণ শক্তিতে বরিত জ্ঞান তাপসদের কয়েকজন

ইমাম বুখারী, এক চোর এবং এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা (قصة الإمام البخاري واللص والالف دينار)

أن الإمام البخاري ركب البحر مرة في أيام طلبه للحديث النبوي

ইমাম বুখারী র. হাদিসে নববীর অনুসন্ধানে একবার সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছিলেন।

وكان معه ألف دينار لتعينه على السفر وطلب العلم

সে সময় সফর এবং এলেম অনুসন্ধানে সহযোগী হিসাবে একহাজার দেরহাম তার সাথে ছিল।

فجاءه رجل من أصحاب السفينة وأظهر له حبه ومودته وتعلقه به وأصبح يقاربه ويجالسه

সমুদ্র সফরের সময় জাহাজে যাত্রীদের একজন এসে বেশ ভাব জমালো ইমাম বুখারীর সাথে। ভালোবাসা সম্প্রীতি ইত্যাদির মাধ্যমে সে ইমামের কাছাকাছি বসার সুযোগ করে নিল এবং নৈকট্য ধন্য হলো।

فلما رأى الإمام حبه وولاءه مالَ اليه واطمأنّ له

ইমাম বুখারী র. তার ভালোবাসা সম্প্রীতির পরশে তার দিকে ঝুঁকে পড়লেন এবং তার প্রতি আস্থা তৈরি হলো ইমামের।

حتى بلغ الأمر به أنه في يعض الجلسات أخبره عن الدنانير الموجودة عنده

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছল যে ইমাম কোন এক বৈঠকে নিজের কাছে থাকা দিনারগুলোর কথা তার কাছে প্রকাশ করে ফেলল।

(লোকটি ছিল ধূর্ত এক চোর। সে ইমামের এক হাজার দীনার মেরে দিতে মস্ত বড় এক ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিল)

وذات يوم قام الرجل من نومه وهو يبكي ويصيح ويمزق ثيابه ويلطم وجهه و رأسه

চোর লোকটি একদিন ঘুম থেকে উঠল আর কান্নাকাটি জুড়ে দিল। সে চিৎকার চেঁচামেচির সাথে সাথে নিজের কাপড় চোপড় ছিঁড়ে ফেলল এবং নিজের মুখে- মাথায় নিজেই থাবড়াতে লাগল।

فلما رأى الناس حالته تلك أخذتهم الدهشة والحيرة

তার এই অবস্থা দেখে মানুষ জন সবাই আশ্চর্য হলো এবং হয়রান হয়ে পড়ল।

وأخذو يسألونه عن السبب وألحوا عليه في السؤال

মানুষজন তাকে জিজ্ঞাসা করল, কি কারণে তার এই অবস্থা !

فقال لهم كانت عندي صرة فيها ألف دينار وقد ضاعت

সবাইকে সে বলল, আমার কাছে একটি থলে ছিল, থলেতে ছিল এক হাজার দিনার। সেই থলেটি চুরি হয়ে গেছে।

فقام اصحاب السفينة وبعض المسافرين يفتشون ركاب السفينة واحدا بعد واحد

জাহাজের মাঝি-মাল্লারা এক এক করে সকল যাত্রীকে তল্লাশি করা শুরু করল।

ولما فطِن البخاري للمكيدة أخرج صرة الدنانير خفية دون أن يلاحظه أحد وألقاها في البحر

ইমাম বুখারী চোরের এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে নিজের দিনারের থলেটি গোপনে বের করলেন এবং কেউ জানার আগেই সেটা সমুদ্রে ফেলে দিলেন।

ثم وصل المفتشون إليه وفتشوه أيضا حتى انتهوا من جميع ركاب السفينة

এমন সময়ে অনুসন্ধানী দলটি ইমামের কাছে আসল এবং তাকেও অনুসন্ধান করল। এমনকি সকল যাত্রীকে চেক করা শেষ করল।

ولم يجدوا شيئا فعادوا للرجل ولاموه و وبخوه توبيخا شديدا

অনুসন্ধান শেষে কারো কাছে কিছু না পেয়ে তারা ঐ লোকটির কাছে ফিরে গেল। শাস্তি হিসাবে তাকে গালিগালাজ করল এবং কঠিন ধিক্কার জানাল।

ولما وصلوا وجهتهم ونزل الناس من السفينة جاء الرجل الى الإمام البخاري

নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছে মানুষজন যখন জাহাজ থেকে নামলো, চোর লোকটি তখন ইমাম বুখারীর কাছে আসলো।

وسأله قائلا ماذا فعلت بصرة الدنانير؟

সে প্রশ্ন করল, দিনারের থলেটি আপনি কি করেছেন?

فقال ألقيتها في البحر

ইমাম বললেন, আমি সেটা সমুদ্রে ফেলে দিয়েছি।

قال كيف صبرت على ضياع هذا المال العظيم ؟

চোর বলল, এতগুলো সম্পদ নষ্ট হওয়াতে কিভাবে ধৈর্য ধরলেন আপনি?

فقال له الإمام يا جاهل أتدري أنني أفنيت حياتي كلها في جمع حديث رسول الله صلى الله عليه وسلم

ইমাম বুখারী বললেন, তুমি কি জানো না, আমি আমার সারা জীবন রাসূলুল্লাহ স. এর হাদিস সংগ্রহে শেষ করেছি?

وعرفني العالم و وثقوا في وصدقوني في كل ما أرويه من أحاديث شريفة

সারা দুনিয়ার মানুষ আমাকে চেনে। আমাকে বিশ্বাস করে, আমার সকল হাদিস বর্ণনায় আমাকে সত্য বলে জানে।

فكيف ينبغي لي أن أجعل نفسي عرضة للتهمة من أجل دراهم معدودة

এটা কিভাবে সম্ভব যে কয়েকটি দিনারের কারণে আমি নিজেই নিজের উপরে চুরির অভিযোগকে আরোপ করব?

(এজন্য আমি দিনারের থলেটি সমুদ্রে ফেলে দিয়েছি ।)

[সুত্রঃ সীরাতে বুখারী, আব্দুস সালাম আল মুবারাকপূরী]

(আরবি এবারাতঃ অনলাইন আরবি প্রবন্ধ অবলম্বনে)

লেখকঃ লেখক এবং অধ্যক্ষ, পাউশগাড়া ফাজিল মাদ্রাসা, দিনাজপুর

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন