Ads

তুলনাহীন স্মরণ শক্তিতে বরিত জ্ঞান তাপসদের কয়েকজন

।। অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ ।।

ইমাম আমির শা’বী (র.)

জন্ম ১৭ হিজরি, কূফা। মৃত্যু ১০৪ হিজরি, কূফা। কুফার কাজী ছিলেন। উপাধি ছিল আল্লামাতুত তাবেয়ীন। ৫০০ জন সাহাবির সাক্ষাতধন্য তাবেয়ী। ৪৮ জন সাহাবি ছিলেন তার হাদিসের শিক্ষক।

শীর্ষ ওস্তাজগণঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ, আনাস ইবনু মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা.। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা. এর কাছে একাদিক্রমে ১০ মাস এলেম গ্রহণ করেন।

প্রসিদ্ধ শিষ্যগণঃ কাতাদা, হাম্মাদ ইবনু আবি সুলাইমান, ইমাম আবু হানিফা র.।

هو اكبر شيخ لأبي حنيفة

“তিনি ইমাম আবু হানিফা র. এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ওস্তাজ।”

ইমাম আমির ইবনু শুরাহিল শা’বী র. বলেনঃ

ما كتبت سوداء في بيضاء

“আমি মুখস্থ করার জন্য কখনো সাদা কাগজকে কালো কালি দিয়ে নোংরা করিনি।”

তিনি বলেন, জ্ঞানের সকল শাখার তুলনায় সবচেয়ে কম জানি কবিতা।

لو شئت انشدتكم شهرا وما اعيد

“আমি চাইলে তোমাদেরকে একমাস মুখস্থ কবিতা শোনাব, একটি কবিতাও দ্বিতীয়বার নয়।”

একবার একজন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলঃ

من أين لك هذا العلم كله

“আপনি এত জ্ঞান কোথা থেকে কিভাবে অর্জন করলেন?”

জবাবে তিনি বলেনঃ

بنفي الاعتماد، والسير في البلاد، وصبر كصبر الحمار, وبكور كبكور الغراب

“কারো উপর ভরসা না করে, দেশ বিদেশে সফর করে, গাধার মত ধৈর্য ধারণ করে এবং কাকের মত প্রত্যুষে নিদ্রা ত্যাগের মাধ্যমে।”

 

কাতাদা (র.)

জন্ম ৬১ হিজরি। মৃত্যু ১১৮ হিজরি, ইরাকের ওয়াসিতে। ছিলেন জন্মগত অন্ধ। শীর্ষ ওস্তাজগণঃ হযরত আনাস রা. সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব, ইকরিমা, হাসান বসরি, আমির শা’বী, আতা ইবনু আবি রাবাহ র.।

প্রসিদ্ধ শিষ্যগণঃ আইউব সিখতিয়ানি, শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ, আব্দুর রহমান আওযায়ী র.।

উপাধিঃ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, হাফেজ, আল্লামা।

كان ممن يضرب به المثل في قوة الحفظ

“তিনি ছিলেন ঐ ব্যক্তি যাকে মুখস্থ শক্তির ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।” -ইমাম যাহাবী।

ইমাম কাতাদা র. নিজেই বলেনঃ

ما سمعت أذناي قط شيئًا إلا وعاه قلبي

“আমার দুই কান যখনই যা শুনেছে, তখনই আমার হৃদয় তা সংরক্ষণ করেছে।”

كان قتادة أحفظ أهل البصرة لا يسمع شيءًا إلا حفظه؛ قرئت عليه صحيفة جابر مرة واحدة فحفظها

“কাতাদা ছিলেন বসরার শ্রেষ্ঠ স্মরণশক্তির আধার। যা শুনতেন তাই মুখস্থ করে ফেলতেন। আমি জাবির রা. এর সহিফা তার কাছে একবার মাত্র পড়ে শুনিয়েছি, সাথে সাথেই তিনি তা মুখস্থ করেছেন।” -ইমাম আহমাদ র.

ছিলেন বসরার অধিবাসী। এলেমের অন্বেষায় একবার মদিনা মুনাওয়ারার মহান শিক্ষক সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব র.(মৃত্যু ৯৪ হিজরি) এর খেদমতে হাজির হন। অসাধারণ মুখস্থ শক্তি সম্পন্ন এই তাবেয়ী আট দিন সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব র. এর সান্নিধ্যে ছিলেন। তৃতীয় দিনই সাঈদ তাকে বলেছিলেনঃ

ارتحل يا اعمى فقد انزفتني

“অন্ধ তুমি চলে যাও। তুমি আমাকে শুষে নিয়েছ।” -কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা।

 

ইমাম ইবনু শিহাব যুহুরি (র.)

বিখ্যাত তাবেয়ী, ধর্ম বিশারদ, মুহাদ্দিস, ইতিহাসবেত্তা। খলিফা উমার বিন আব্দুল আজিজ র. এর নির্দেশে হাদিস সংকলনের মত দূরূহ কাজে নেতৃত্ব দেন। জন্ম ৫০ হিজরি, মৃত্যু ১২৪ হিজরি।

শীর্ষ ওস্তাজঃ আনাস ইবনু মালিক রা.

প্রসিদ্ধ শিষ্যঃ ইমাম আওযায়ী, ইমাম মালেক র.

انه حفظ القرآن فى ثمانية ليلة

“তিনি মাত্র আশি রাত্রে কোরআন মজিদ সম্পূর্ণ মুখস্থ করেছেন”। -ইমাম বুখারি র. (১৯৪- ২৫৬ হি.)

ইমাম যুহুরি নিজেই বলেনঃ

ما استودعت حفظى شيئا فخاننى

“কোন কিছু মুখস্থ করার পর আমি তা কখনো ভুলে যাইনি।”

দু’ কানে আঙুল দিয়ে পথ চলতেন ইমাম যুহুরিঃ

যে তথ্যই তার কান দিয়ে প্রবেশ করত, তাই তার মেমোরিতে চিরস্থায়ী হতো।অপ্রয়োজনীয় কোন তথ্য তিনি গ্রহণ করবেন না এজন্য কানে আঙুল দিয়ে চলতেন তিনি।

তার স্ত্রীর অভিযোগঃ

ইমাম যুহুরী র. এর ছিল অসংখ্য কিতাব এবং সীমাহীন কিতাব আসক্তি। স্বামীকে অভিযুক্ত করে তার স্ত্রীঃ

والله لهذه الكتب أشد علىّ من ثلاث ضراءر

“আমার স্বামীর এই কিতাবগুলো আমার নিকট তিনজন সতীন থাকার চেয়েও মারাত্মক।”

 

ইমাম সারাখসি (র.)

আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আসসারাখসি। উপাধি ছিল শামসুল আইম্মা -ইমামগণের সূর্য। খোরাসানের সারাখস অঞ্চলে জন্ম নেয়া এই জ্ঞান তাপস ছিলেন হানাফি মাযহাবের শীর্ষ ফকিহদের একজন।

জন্মঃ ৪০০ হিজরি, মৃত্যুঃ ৪৮৩ হিজরি।

গর্তে বন্দি অবস্থায় তিনি ইলমের ইতিহাসে সমুজ্জল মহান ও বিরল গ্রন্থ ”আল মাবসুত” রচনা করেন। ৩০ খন্ডে সমাপ্ত এই বিরল গ্রন্থটি তিনি কুপে বসে বসে বলতেন আর ছাত্ররা কুপের পাড়ে বসে বসে লিখতেন। এভাবেই তা ইলমের অঙ্গনে হয়ে যায় বিরল ইতিহাস। মাবসুতের ভূমিকায় যা তিনি নিজেই লিখেছেন।

বন্দি অবস্থায় তিনি ছাত্রদের দিয়ে যে সব কিতাব গ্রন্থনা করাতেন তা কেবল তার স্মৃতিনির্ভর ছিল। সেখানে সাহায্য নেয়ার মত অন্য কোন কিতাবের ব্যাবস্থা ছিল না। এর দ্বারাই বুঝা যায় যে ইমামের স্মৃতিশক্তি কত প্রখর ছিল।

একবার তার এক মজলিসে কথা উঠল স্মৃতিশক্তি নিয়ে। একজন বললঃ حفظ الشافعي ثلاثمائة كُرّاس

“ইমাম শাফেয়ী (১৫০-২০৪ হিজরি) তিনশত পুস্তিকার হাফেজ।” সঙ্গে সঙ্গে শামসুল আইম্মা বলে উঠলেনঃ

حفظ الشافعي فزكاة ما احفظ

“শাফেয়ীর মুখস্থবিদ্যা আমার মুখস্থ বিদ্যার যাকাত পরিমাণ।”

গণনা করে দেখা গেলحفظ اثني عشرا الف كراس “ইমাম সারাখসির মুখস্থ এলেমের পরিমাণ বার হাজার পুস্তিকা।” -ড. কামাল আব্দুল আজিজ, ভূমিকা মাবসুত।

رب زدني علما

“হে প্রভু, আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।” -ত্বা হা, ১১৪

লেখকঃ লেখক এবং অধ্যক্ষ, পাউশগাড়া ফাজিল মাদ্রাসা, দিনাজপুর

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন । আসুন সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন