Ads

বাংলাদেশের সেকুলারিজমের প্রেক্ষাপট

।। ফাহমিদ-উর-রহমান ।।

আমাদের এখানে সেকুলারিজমের বয়ান যারা নির্মাণ করেছেন, তাদের বড়ো একটা অংশ প্রগতিশীল বলে পরিচিত এবং হয় কমিউনিস্ট অথবা কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন।

এ দেশে আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা কিংবা কমিউনিজমের চর্চা– যাই বলি না কেন, কোনো সেকুলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হয়নি এটা ঐতিহাসিক সত্য। কলোনির যুগে কলকাতার এলিট হিন্দুদের ঔরসে এবং ব্রিটিশদের ব্যবস্থাপনায় যে বেঙ্গল রেনেসাঁর পত্তন হয়েছিল, সেটাকে অনেকে এ দেশে আধুনিকতা বলে স্তব করলেও এটা কোনো সেকুলার ঘটনা ছিল না।

বেঙ্গল রেনেসাঁর ভেতর দিয়ে যে রাজনীতি ও সংস্কৃতি তৈরি হলো, তার কোনো জাতীয় পরিচয় তৈরি হয়নি। হিন্দুদের হেজিমনি আকারে সেদিন যে রাজনীতি বা সংস্কৃতি খাড়া হলো, সেখানে বাংলাভাষীদের বড়ো শরিক বাঙালি মুসলমানের যেমন জায়গা হলো না, তেমনি তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিও পরিত্যাজ্য হয়ে রইল।

সেই কালে বাঙালি মানে দাঁড়াল হিন্দু জাতির সমার্থক। তার মানে যাহা হিন্দু তাহাই বাঙালি। এ কথার সহজ মানে দাঁড়াল মুসলমানরা কেউ বাঙালি নন। বেঙ্গল রেনেসাঁ নামের এই হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প সেদিন বাঙালির সংজ্ঞা তৈরি করল। এই এথনিক বাঙালিত্ব যারা মেনে নিতে চাইল না বা এই বাঙালিত্বকে যারা চ্যালেঞ্জ করল, তাদেরকে বলা হলো সাম্প্রদায়িক।

আর যারা এই হিন্দুত্ববাদী বাঙালি প্রকল্পের অংশীদার হলো, তাদেরকে বলা হলো অসাম্প্রদায়িক, উদার ও প্রগতিশীল। লক্ষ করার বিষয় হচ্ছে, বাঙালি মুসলমানের শিরে সেই থেকে এই সাম্প্রদায়িকতার তকমাটা আজও জুড়ে আছে।

বেঙ্গল রেনেসাঁর হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প প্রথমবারের মতো ধাক্কা খায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়। বঙ্গভঙ্গ কায়েমের পর কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু এলিটরা ভয় পেয়ে যায় এই ভেবে যে, পূর্ববঙ্গে তাদের জমিদারি আধিপত্য তছনছ হয়ে যেতে পারে এবং ঢাকাকেন্দ্রিক বাঙালি মুসলমানদের কলকাতার সমান্তরাল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখে।

এটাই কলকাতা সহ্য করতে পারেনি। সেখানকার হিন্দু এলিটরা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ফ্যান্টাসি শুরু করে। এই সশস্ত্র লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেয় ‘অনুশীলন’ ও ‘যুগান্তরে’র মতো দুটো গ্রুপ।

অনুশীলন ও যুগান্তর ছিল হিন্দু এলিট ও জমিদারদের স্বার্থের লোক। এখন বলা হচ্ছে, এরা নাকি স্বাধীনতার লড়াই করেছিল। অথচ এর আগে বাঙালি হিন্দুরা কোনোদিন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে একটা ঢিলও ছোড়েনি। নিজেদের জমিদারি আধিপত্য ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই তারা এই সশস্ত্র উদ্যোগ নিয়েছিল।

কিন্তু সশস্ত্র উদ্যোগ নিলেই সেটা যে বিপ্লবী হয়ে যাবে অথবা জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলন হবে, এমন কোনো কথা নেই। অত্যাচারী জমিদারদের স্বার্থের আন্দোলন কীভাবে স্বদেশি আন্দোলন কিংবা সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী আন্দোলন হয়? এটা ছিল নিছক কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু এলিটদের স্বার্থের পক্ষের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন।

বাঙালি হিন্দুরা উপায়ান্তর না দেখে সে সময় বাঙালিত্বের নামে বাঙালি মুসলমানদের কাছে ডাকার চেষ্টা করেন। রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে তারা ‘রাখীবন্ধন’ আর ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গান গেয়ে গেয়ে জাতীয় ঐক্যের ধুয়া তোলেন। কিন্তু বেঙ্গল রেনেসাঁর প্রকল্প তো ইতঃপূর্বে বাঙালির জাতীয় ঐক্যের পিঠে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল। তাই মুসলমানরা সেদিন রবীন্দ্রনাথের গানের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেনি।

 

[ বাংলাদেশের সেকুলারিজমের প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখিত ‘সেকুলারিজম প্রশ্ন’ বই থেকে]

বইঃ সেকুলারিজম প্রশ্ন

লেখক : ফাহমিদ-উর-রহমান

প্রকাশক: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

মূল্য : ২২০ টাকা

 

বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন বাংলাদেশের অভিজাত লাইব্রেরিগুলো থেকে অথবা যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে অথবা গার্ডিয়ানের সেলস সেন্টার থেকে।

যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন- গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স ৩৪, নর্থব্রুক হলরোড, মাদরাসা মার্কেট (২য় তলা), বাংলাবাজার।

মোবাইলঃ

01710-197558, 01998-584958 02-57163214 (টেলিফোন)

01710-197558 (হোয়াটসঅ্যাপ)

অফিস টাইমঃ সকাল ১০.০০টা থেকে সন্ধ্যা ০৭.০০টা

আরও পড়ুন