Ads

নারীর নিরাপদ পৃথিবীর খোঁজে !

।। রাজু আহমেদ ।।

কর্মক্ষেত্রে, পাবলিক পরিবহনে, জনাকীর্ণ আয়োজনে এমনকি ঘরে নারী নিরাপদ কি-না এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে সাথে সাপেক্ষ সম্পর্কে জড়িয়ে আছে, সব পুরুষ মানুষ হতে পেরেছে কি-না? ঘরে-বাইরে নারী-পুরুষের যে সম্পর্ক তা কখনও কখনও হতাশাজনক চিত্র জানায়। নারীর সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত আইন আছে কিন্তু নারীর প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে কতখানি?- সেটা এখনো বোধহয় সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। ঘরে-বাইরে নারীদেরকে অশ্রাব্য বাক্যবানে এবং শারীরিকভাবে শ্লীলতাহানিতে বিপর্যস্ত করার ঘটনা অহরহ ঘটছে। কেউ কেউ নারীকে এখনো পণ্য হিসেবে পেতে চাইছে। কারো কারো থেকে নারীর শরীরের প্রতি বিকৃতমনস্কতার ভাষ্যরূপ বেরিয়ে আসছে। শারীরিক নির্যাতন,  মানসিক লাঞ্ছনা এবং অধিকার বঞ্চনার মধ্য দিয়েই নারী এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই রোজকার ডায়েরি লিখতে হচ্ছে।

নারী উন্নতি ও অগ্রযাত্রার অন্তরালে কেবল পুরুষ নয় বরং কখনো কখনো নারীরাও অধিক হারে দায়ী। সেই নারীরাও আবার দূরের সম্পর্কের কেউ নয়! নিজের মা-খালা, আপন বোন কিংবা শ্বাশুড়ি-ননদদের দ্বারা নারীরা আজকের সমাজে সবচেয়ে বেশিবাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একটা মেয়ের উচ্চশিক্ষিত হওয়া, নিজের পরিচয় খোঁজা এবং স্বাবলম্বিতা অর্জনের পথে বড় বাধা পরিবার থেকেই সর্বাগ্রে আসে। শত সংকট ও সংগ্রাম শেষে যে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে এবং সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে  সমাজ তাদেরকে বারবার নিরুৎসাহিত করে, কটুকথা শোনায় এবং উপর্যুপরি বাঁধার সৃষ্টি করে। সভ্যতার বাতিঘর তথা শিক্ষালয়ে, পাবলিক পরিবহনে এবং কর্মক্ষেত্রেও নারীকে শারীরিক অনেক চ্যালেঞ্জমোকাবেলা করে সামনে যেতে হয়। এমন শত বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে, আত্মপরিচয়ের দ্বারা বলীয়সী হচ্ছে এমনকি রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে বহিঃবিশ্বে বেগবান করছে।

আরও পড়ুন-ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান কি পুরুষের চেয়েও কম?

একজন সফল পুরুষ এবং একজন সফল নারীর যাত্রাকালকে যদি পাশাপাশি রেখে বিচার করা হয় তবে নারীর ক্ষেত্রে পরিবারে দৃষ্টভঙ্গি, সমাজের মন্তব্য এমনকি উচ্চশিক্ষিতদের পর্যবেক্ষণ ঘাত-প্রতিঘাতের হবে! সেখানে নারী প্রগতি-উন্নতির পক্ষের থেকে বিপক্ষের মতামত জোরলো! মেয়েদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে ঘিরে আশা-আকাঙ্ক্ষার অন্ত থাকে না। এখানে পরিবার বলতে বাবা-মায়ের বাইরেও আরও কিছু আপনজনকে ইঙ্গিত করা চেষ্টা করেছি। সুযোগ সন্ধানীরা আঁধার গলিয়ে একটা মেয়ের সাথে কি পরিমাণ পাশবিক আচরণ করতে পারে, সমাজস্থরা কত কত ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতে পারে তার নজির নতুনভাবে লিখতে হবে বলে মনে করছি না। বিজ্ঞ পাঠকের আশেপাশেই প্রমাণ আছে। যে সমাজের কথিত শিক্ষিত এলিটদের অনেকেই নারীকে কেবল বিছানায় কল্পনা করে, কায়দা করে ফায়দা হাসিলের জন্য ওঁৎপেতে থাকে এবং নারীর জীবনকে রান্নাঘরের চারদেয়ালে আটকে দিতে চায় সেখানে নজরুলের সাম্যবাদের কবিতায় খুব বেশি পরিবর্তন সাধিত করবে- সেই আশাবাদ অনেকটাই অহেতুক।

আরও পড়ুন-বিশ্বব্যাপী শিক্ষা বিস্তারে সোনালি যুগের মুসলিম নারীদের ভূমিকা

পুরুষ কলিগের কাছে নারী কলিগের নিপীড়ন, বাসে-রেলে সুযোগ পেলে নারীর শরীর ছুঁয়ে দেওয়া এবং ঘরে-বাইরে বুলিং করে নারীর মনোবল ভেঙে দেওয়া- এসব এই সমাজে এখনো বিরল নয়। অফিসের বস থেকে শুরু করে পাড়ার অকর্মা, সহযাত্রী থেকে শুরু করে সুযোগবাদী ছোকড়াটাও নারীকে নিয়ে পাছে মন্তব্য করে। শিস বাজানো, হাসাহাসি করা- এসব এখন নারীর জন্য নৈমিত্তিক সহনীয় আচরণ। যারা বিনয়কে দুর্বলতা ভাবে, যারা ভদ্রতাকে সুযোগ দেওয়া মনে করে এবং যাদের মধ্যে পারিবারিক পৈশাচিকতা আছে তারা নারীকে বিছানায় কল্পনা করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের বিবেক কখনোই সুপথে ক্রিয়াশীল থাকে না। ভাবছেন তাদের দ্বারা মা-বোন, বউ-কন্যা নিরাপদ? যারা পশু তারা বাহির-ভেতর সর্বত্রই পাশবিকতাবয়ে বেড়ায়। যাদের কাছে নারী মানে কামের আধার, মেয়ে মানেই চাকরানী তারা নারী-পুরুষ- যেমন ছদ্মবেশেই থাকুক, আসলে তো তারা সাক্ষাৎ অমানুষ।

আরও পড়ুন-নারীর সত্যিকারের স্বাধীনতা আসে যেভাবে

নারীদের জন্য একটা নিরাপদ পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই দুনিয়ায় নারী-পুরুষ স্বসম্মানে পাশাপাশি-কাছাকাছি থাকবে। রাত-বিরেতেও ক্ষতির শঙ্কা থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে তথা ঘরে-বাইরের সর্বত্রই সকল নারী মা, বোন, স্ত্রী এবং কন্যার মত সম্মান, স্নেহ, প্রেম ও ভালোবাসা পাবে- এমন প্রত্যয় কাল্পনিক কোন প্রত্যাশা নয় বরং বাস্তবিক আশাবাদ। এজন্য নারীকেও ত্যাগ-তিতিক্ষার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার দরদ বুঝতে হবে। একটা জাতিকে শক্ত ভিতের উপর  দাঁড়াতে স্বপ্ন দেখালে এবং এগিয়ে চলতে সাহায্য করলে তাদের সর্বপ্রথম বৈষম্যহীন জাতীয়তাবাদ এবং বিদ্বেষহীন সমাজে বসবাসের আহ্বান জানাতে হয়।

দু’পক্ষ যদি দু’পক্ষের পোশাক না হয়, আত্মত্যাগের শিক্ষা যদি অকার্যকর হয় এবং নারী পুরুষের মধ্য শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণের রিপু যদি সক্রিয় হয় তবে সেই পৃথিবীতে বিশ্বাস, ভরসা এবং আস্থার জায়গা থাকবে না। সহনশীলতা এবং সহযোগিতার মানসিকতায় নারীর নিরাপদ পৃথিবী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবেই গড়ে তুলতে হবে। জবরদস্তি নয় বরং মনকে জয়ের মানসিকতা দৃঢ় রাখতে হবে।  তবে বিবেকের স্বপ্ন বাস্তবিক হিসেবে ধরা দেবে এবং আমরা স়ভ্যতা সুধায় তৃপ্ত হবো।

সভ্যতার স্বার্থে এবং মনুষ্যত্বের শপথে নারীদেরকে সর্বত্রই নিরাপত্তা ও নিরাপদ পথচলার নিশ্চয়তা দিতে হবে। মানুষের জীবনে নারীর প্রতি অসম্মান থাকলে সে শিক্ষিত-অশিক্ষিত যাই হোক সে সাক্ষাৎ অমানুষ। নারীদের ঠকা ও ঠকানোর প্রশ্নে, ভোগ ও ব্যথার প্রশ্নে নারীরা অশিক্ষিত মানুষের চেয়ে শিক্ষিত মানুষের দ্বারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়। ধর্ষণ-নির্যাতনের মত বর্বরোচিত ব্যাপারেও সভ্যের মুখোশধারী শয়তান জড়িত থাকে। বিশ্বাসে অমর্যাদা এবং ভন্ডামির আশ্রয়ে কাছের মানুষেরও নাম উঠে আসে। যে নারী ঘরে নিরাপত্তা পায় না,যে নারীকে বাহিরে স্বাভাবিক জীবনের গ্যারান্টি সমাজ দেয় না সেই নারীদেরকে আমরা মাতা-ভগ্নীর স্বজাতি হিসেবে আদৌ প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি? কোন পুরুষের দ্বারা নারী বিপদগ্রস্ত হলে, নির্যাতিত এবং নিপীড়িত হলে মা-বোনের অভিসম্পাতও সে পুরুষের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। নারীরাও নারীদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রগতির মূল্যায়ন করতে শিখুক এবং পুরুষরাও নারীর সম্পূরক ও পরস্পর শ্রদ্ধা-বিশ্বাসের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকুক- এমন প্রত্যাশায় এই জীবনের বাকিপথবয়ে চলুক।

লেখকঃ রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।

ই-মেইলঃ  [email protected]

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন