Ads

মা-তুমি দুনিয়ায় বেহেশতের শ্রেষ্ঠ নিয়ামাত

।। সাবিকুন্নাহার মু্ন্নী ।।

“আর আমি মানুষকে মা-বাবার সঙ্গে সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছেন। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ৩০ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং ৪০ বছরে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার ওপর ও আমার মা-বাবার ওপর যে নিয়ামত দান করেছ, তোমার সে নিয়ামতের যেন আমি কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি এবং আমি যেন ভালো কাজ করতে পারি, যা তুমি পছন্দ করো। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আহকাফ : ১৫)।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি তুমি-মা! সন্তানের কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম মা! জীবন নামের ঝোড়ো সমুদ্রে আমাদের কাছে তুমি নোঙ্গরসম! বেঁচে থাকার অক্সিজেন! ভালোবাসা, ত্যাগ এবং শক্তির বিশুদ্ধতম রূপ তুমি! পরিস্থিতি ও যুগ বদলালেও তোমার ভালোবাসা বদলায়না! মায়ের ভালোবাসা এতোটাই শক্তিশালী যে এটি সবসময় নিজের চিহ্ন রেখে যায়। এতো বেশি গভীর আর শক্তিধর সেই ভালোবাসা, যা সারাজীবন সুরক্ষা কবজের মতো আমাদের ঘিরে থাকে।

পাশ্চাত্যের অনুকরণে আজ মা দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়। এ দিবস যেন সন্তানদের মনে করিয়ে দেয় সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য ও সম্মানের কথা।

মা দিবসের নেপথ্য ইতিহাস

প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের আরাধনা, প্রাচীন রোমানে দেবী জুনোর আরাধনা ও ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে মাদারিং সানডের মতো বেশ ক’টি আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম মা দিবসের ধারণা সামনে আসে। যুক্তরাজ্যে মায়েদের সম্মানে মাদারিং সানডে পালিত হতো নির্দিষ্ট একটি রবিবারে।

যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদার’স ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিল। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন।

এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে হার মানেননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। অপর একটি সূত্রে বলা হয়-

ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক শান্তিবাদী সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি কাজ করতেন নারী অধিকার নিয়ে। ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা করতেন তিনি।

লেখকের আরও লেখা পড়ুন –বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামের পরিপূর্ণ সংস্কার চাই

অ্যানের একটি কন্যাসন্তান ছিল, যার নাম আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। একদিন ছোট্ট মেয়ের সামনেই অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন, ‘আমি প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটি তাদের অধিকার।’

মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় আনার। পরে অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন আনা মারিয়া। এরপর থেকে মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে মা দিবস।

মা দিবস পালিত হবার কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা যায় বাণ্যিজ্যিক প্রভাবে কমতে থাকে দিনটির মূল আবেদন। যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে ওঠে যে আনা মেরি জার্ভিস ,এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। দিনটির এমন অবমাননার প্রতিবাদে তিনি নিজের সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করেন ও ঘোর বিরোধিতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় ।

এ ঘটনা প্রমাণ করে আজ মা দিবসটি তার মূল আবেদন থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে এটা যেমন বানিজ্যিক হয়ে উঠেছে তেমনই হয়ে উঠেছে অতি আনুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিকতার মাঝে চাপা পড়েছে হাজারো মায়ের চাপা কষ্ট আর কান্না।আজ অনেক পরিবারে সন্তানের অবহেলার শিকার হয়ে-

শেষ বয়সে এসে তারা যেন কারো সন্তানের কাছে বোঝা. বাড়তি ঝামেলা আবার কারো কাছে গলার কাটা! পরিণতিতে একাকী নিঃসঙ্গতার প্রহর কেটে কেটে তারা ক্রমশঃ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

এভাবে শেষ বয়সে এসে -কারো স্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে, আবার কারো হচ্ছে কবরে!

মানবতার ধর্ম ইমলাম মাকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান। হজরত ঈসা (আ.) বলেন- ‘আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমি যেন আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করি (অনুগত ও বাধ্য থাকি); আমাকে করা হয়নি উদ্ধত, অবাধ্য ও দুর্ভাগা হতভাগ্য (সূরা মারিয়াম : ৩০-৩২)।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই- এক. মা-বাবার দোয়া তার সন্তানের জন্য; দুই. মুসাফিরের দোয়া ও তিন. অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে’ (সুনানে আবু দাউদ-১৫৩৮)।

বিশ্বনবি (সা.) আরো বলেছেন, যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে। মহান আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন (বায়হাকি মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪২১)।

ইসলাম মাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’- (ইবনে মাজাহ-মিশকাত, পৃ. ৪২১)

তাই পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরনে নয়! মুসলমানদের জন্য মা -দিবস বছরের সকল দিন ! সকল ক্ষণ! আসুন , বেঁচে থাকতে মাকে কদর করি,চলে গেলে যেন আফসোস্ করতে না হয়!হে আমার প্রতিপালক!তুমি আমাদেরপিতা-মাতাকে ক্ষমা কর ,তাদের প্রতি দয়া কর,যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাদের প্রতিপালন করেছেন!

লেখকঃ  কলাম লেখক, অ্যাডভোকেট  এবং নির্বাহী পরিচালক, মানবাধিকার ও আইনী সুরক্ষা কেন্দ্র (মাসুক)

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক সাবিকুন্নাহার মু্ন্নী

আরও পড়ুন