Ads

বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামের পরিপূর্ণ সংস্কার চাই

।। সাবিকুন্নাহার মুন্নী ।।

বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম পর্যালোচনায় ধর্মীয় আলেম ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অধিকাংশ জনগনের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশীয় ইতিহাস ঐতিহ্যের ভিত্তিতে নূতনভাবে শিক্ষা কারিকুলামকে সংস্কার সাধন করা প্রয়োজন! আদর্শ ও যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলতে , শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিজ্ঞান, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সুসমন্বিত ও প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ের সুসামঞ্জস্যপূর্ন পাঠ্যক্রম প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই!

মেধা মনন ও সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়তা করবে এমন পাঠ্যসূচী প্রণয়ন ও সম্পাদনে দায়িত্ববান শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করে তাদের দিয়ে নূতন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন,শিক্ষা উপকরন তৈরী ও দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্হা গ্রহন করতে হবে। অধিকাংশ অভিভাবকদের অভিযোগ- *বর্তমান শিক্ষাক্রম ছাত্র-ছাত্রীদের চাকর তৈরী করবে, কর্মকর্তা বা বিশেষজ্ঞ নয়!*

নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে *মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা*অধ্যায়ের ‘ শরীফ থেকে শরীফা’ গল্প নিয়ে উদ্ভূত আলোচনা সমালোচনার প্রেক্ষিতে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনার জন্য এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) সহায়তা জন্যে ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়! কিন্তু তাতেই কি শুধু উদ্ভূত এ জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব?

উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে “বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ” শীর্ষক এক সেমিনারে জাতীয় শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় ওঠে!

আরও পড়ুন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেনো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো?

ওই সেমিনারে আসিফ মাহতাব অভিযোগ করেন—সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে থাকা “ট্রান্সজেন্ডার” নিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘মগজধোলাই’ করা হচ্ছে। এ সময় তিনি ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের ‘*শরীফার গল্প’*অংশের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে বরখাস্ত করে।

এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুইয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাতকারে -“একটি গোষ্ঠীর ধর্মকে ব্যবহার করে অরাজকতা সৃষ্টির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । ‘ বলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যে মন্তব্য করেছেন প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক নয়। ২০২৩ সাল থেকেই সর্বমহল থেকে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

শরীফা গল্পটি নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, “‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) যারা সহকর্মীরা আছেন তাদের সাথে আলোচনা করব। যদি একটি গল্পের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া হয়, কেন হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠীর নানান বিষয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে হোক বা ধর্মীয় অনুভূতি হোক নানান সময়ে অরাজকতা করা বা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রবণতা আছে। গত বছরও এই বিতর্ক ছিল। একটি সংগঠন থেকে কিছুদিন আগে আমার কাছে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, কওমি মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক এসেছিলেন। তারা দাবি করেছেন, এখানে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা যখন আলোচনা করেছি তখন দেখেছি শব্দটা ট্রান্সজেন্ডার নয়, থার্ড জেন্ডার।”’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “তৃতীয় লিঙ্গ অর্থাৎ যারা সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত এটি আইনত স্বীকৃত। তারা দেশের নাগরিক, তাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে। তবে গল্প উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যদি এ ধরনের বিভ্রান্তি এবং বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস থেকে থাকে তাহলে এ গল্পের উপস্থাপনা পরিবর্তন করা যায় কিনা এই বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করব। তাদের প্রতি সম্মান রেখে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি ভিন্ন কোনো সুযোগ থাকে তাহলে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন। উপস্থাপনে যদি কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে যদি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।”

দেশের আলেম ওলামা, শিক্ষাবিদ , রাজনীতিবিদ, অভিভাবকমহল থেকে শুরু করে সর্বমহলে আজ বিতর্কিত এ শিক্ষাকারিকুলামের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে॥ আমরা মনে করি ,শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে, বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষাক্রমের অসামঞ্জস্যতা ও অযৌক্তিক উপস্হাপনা ! যার প্রেক্ষিতে তারা কিছু বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন! তাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, সেই সাথে আমরা দেশের আপামর জনতার পক্ষ থেকে দাবী জানাই-

শুধু কিছু বিষয় বা অধ্যায়ের আংশিক পরিবর্তন নয়, গোটা কারিকুলামকেই ঢেলে সাজাতে হবে।এ ক্ষেত্রে গন মানুষের শ্লোগান হচ্ছে-

“বর্তমান অসলগ্ন বিজ্ঞান বিমুখ ও ধর্মীয় আদর্শ বিবর্জিত শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল কর!

করতে হবে!

ছাত্র ছাত্রীদের নৈতিকতা ও মেধা মনন বিকাশে ,

ধর্মীয় আদর্শ ও বিজ্ঞান ভিত্তিক নূতন কারিকুলাম চালু কর! করতে হবে!”

লেখকের আরও লেখা পড়ুন-“শরীফ ও শরীফা”র গল্প বাদ দিতে আইনী নোটিশ

ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির সম্মানিত সাহসী শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে শুধু মাত্র এ কারণে যদি চাকুরী চ্যুত করা হয়, তবে তার তীব্র নিন্দা করছি এবং অনতিবিলম্বে তাকে তার চাকুরীতে পূনর্বহালের দাবী করছি! তিনি সাহসের সাথে প্রতিবাদের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ গোটা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন! কিছুটা হলেও প্রশাসনের টনক নড়তে বাধ্য করেছেন!

তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তার চাকুরির চেয়েও দেশ ও দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত হয়েছেন । ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ গড়ার কাজটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।সেদিন তিনি এভাবে না বললে হয়তো বিষয়টা একপ্রকার নিরবেই স্বীকৃতি পেয়ে যেত! সকলের কাছে গা সওয়া হয়ে যেত!

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্নেহের ছাত্রদের এ জন্যে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, তারা তাদের শিক্ষকের প্রতি অন্যায় আচরণ এবং এন্টি-কালচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে যা জাতির জন্য আশাব্যঞ্জক! ছাত্ররা যেন আবারো অতীতের গৌরবজ্জ্বল ভূমিকায় ফিরে গেছে! তরুণ ছাত্রসমাজের কাছে আমরা এ ধরনের ভূমিকাই আশা করি! তাদের এ যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ আমাদের আশান্বিত করে যে, আমাদের ছেলেরা এখনোও সব স্পয়েল্ড হয়ে যায় নি!

একজন ছাত্র নেতার চলমান শিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক কথা দিয়েই আজকের আলোচনা শেষ করছি-

“সোসাইটি বিনির্মাণের কাজ চলছে!

সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত!”

Bravo! Go ahead young boy!

লেখকঃ  কলাম লেখক, অ্যাডভোকেট  এবং নির্বাহী পরিচালক, মানবাধিকার ও আইনী সুরক্ষা কেন্দ্র (মাসুক)

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন