Ads

নিজেকে মুমিন মনে করলে ধৈর্য্য ধরতেই হবে!

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

ধৈর্য্য বা সবর (صبر) একজন প্রকৃত মুমিনের জীবনের অপরিহার্য একটি গুণ। আল-কোরআন ও হাদিসে ধৈর্য্যের গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আল-কোরআন ও হাদিসের আলোকে একজন প্রকৃত মুমিনের ধৈর্য্যধারণের পদ্ধতি এবং তার গুরুত্ব সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।

আল-কোরআনে বিভিন্ন স্থানে ধৈর্য্যের গুরুত্ব এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

১। “ওয়াস্‌তাঈনু বিস্‌সবরি ওয়াস্‌সালাতি। ওয়াইন্নাহা লাকবীরাতুন ইল্লা আলাল-খাশেঈন।” অর্থাৎ, “তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজ দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা কর। এটি অবশ্যই একটি কঠিন কাজ, তবে বিনয়ী লোকদের জন্য নয়।” (সূরা বাকারা, ২:৪৫)

২। “ইন্নাল্লাহা মা’আস-সাবিরীন।”অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা বাকারা, ২:১৫৩)

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ধৈর্য্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিসে উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ:

১৷ “আসবাবু মিং সবরিন ফাজাতুন ফা হাওয়ানুহা মিং আসসবরু সা’আহ।”অর্থাৎ, “প্রথম ধাক্কায় ধৈর্য্য ধারণ করা হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য্য।” (বুখারী ও মুসলিম)

২৷ “মা ইউসিবুল মুসলিমা মিন নাসাবিন ওলা ওয়াসাবিন ওলা হাম্মিন ওলা হাযিন ওলা আযা অঁ হাযন, হাটা শৌকা ইয়ুশিকুহা ইল্লা কাফারাল্লাহু মিন খাতাইয়াহু।”

অর্থাৎ, “যদি কোন মুসলমান কষ্ট, দুঃখ, চিন্তা, দুশ্চিন্তা, শোক বা কষ্টের সম্মুখীন হয় এবং এমনকি যদি একটি কাঁটা তাকে বিঁধে, তবে আল্লাহ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

আরও পড়ুন-কুরআন পাঠে আমার বাবার একাগ্রতা ।। পর্ব : ১

ধৈর্য্যের বিভিন্ন দিক

ধৈর্য্য মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত

১। আল্লাহর আদেশ পালন করার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য: নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি পালন করতে ধৈর্য্যের প্রয়োজন।

২। হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য: পাপাচার ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে ধৈর্য্য দরকার।

২৷ আল্লাহর পরীক্ষা ও বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য্য: জীবন চলার পথে নানা রকম কষ্ট ও বিপদ আসতে পারে, এসময় ধৈর্য্য ধারণ করা জরুরি।

কিভাবে ধৈর্য্যধারণ করা উচিত

একজন প্রকৃত মুমিনের ধৈর্য্যধারণ করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো:

১। আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা: ধৈর্য্যধারণের প্রথম শর্ত হল আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ আমাদের সকল অবস্থার খবর রাখেন এবং তিনি সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।

২৷ নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে ধৈর্য্য প্রার্থনা করা: আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ধৈর্য্য ও নামাজ দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা কর।” নিয়মিত নামাজ আদায় ও দোয়া ধৈর্য্য ধারণে সহায়ক।

৩৷ আল-কোরআন তেলাওয়াত করা: কোরআন তেলাওয়াত আমাদের মনে শান্তি আনে এবং ধৈর্য্যশীল হতে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “নিশ্চয়ই কোরআন পাঠে অন্তর প্রশান্ত হয়।” (সূরা রা’দ, ১৩:২৮)

সর্বশক্তিমানের চ্যালেঞ্জ শক্তিশালী করে

৪। নবীজীর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা: প্রিয় নবী (সা.) এর জীবন ধৈর্য্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তার জীবনে অনেক কষ্ট ও বিপদ এসেছিল, কিন্তু তিনি সবসময় ধৈর্য্য ধারণ করতেন। তার জীবনের গল্প থেকে আমরা ধৈর্য্য ধারণের অনুপ্রেরণা পেতে পারি।

৫৷ বিপদ-মুসিবতকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা: বিপদ-মুসিবত আসলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মুমিন হিসেবে আমাদের উচিত এ ধরনের পরিস্থিতিকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য্য ধারণ করা।

৬৷ অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া: যখন আমরা অন্যের কষ্ট ও বিপদ দেখি এবং তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করি, তখন আমাদের নিজের ধৈর্য্যও বাড়ে।

আরও পড়ুন-আপনার হৃদয় ও অন্তরকে হেফাজত করুন

ধৈর্য্য ধারণের উপকারিতা

ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে একজন মুমিন যে সব উপকারিতা পেতে পারে তা হলো:

১। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা: ধৈর্য্যশীলদের সাথে আল্লাহ থাকেন এবং তিনি তাদের সহায়ক।

২। পরকালে পুরস্কার লাভ: ধৈর্য্যশীলদের জন্য জান্নাতে বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “নিশ্চয়ই ধৈর্য্যশীলদের তাদের পুরস্কার নির্ধারিত হিসাব ছাড়াই দেওয়া হবে।” (সূরা যুমার, ৩৯:১০)

৩৷ আত্মিক প্রশান্তি: ধৈর্য্যশীল ব্যক্তি সবসময় মনঃশান্তিতে থাকেন।

৪৷ সমাজে সম্মান বৃদ্ধি: ধৈর্য্যশীল ব্যক্তিরা সমাজে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হন।

পরিশেষে, বলবো ধৈর্য্য একজন মুমিনের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আল-কোরআন ও হাদিসে ধৈর্য্যের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন এবং পরকালে বিশাল পুরস্কার লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত ধৈর্য্যশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বুল আলামীন।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন