Ads

কুরআন পাঠে আমার বাবার একাগ্রতা ।। পর্ব : ১

।। মূল: শায়েখ ওয়ালীদ বাসাইউনি ।। 

।। অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত ।।

শৈশবকাল থেকে আমি কখনো দেখিনি যে আমার বাবা এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেছেন । অথবা সপ্তাহে একবার কুরআন খতম করেননি। আমি খুব অবাক হয়ে একবার আমার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “বাবা কখন থেকে ধর্মের প্রতি এতটা নিবেদিত?” আমার মা উত্তর দিয়েছিলেন, “যখন থেকে আমাদের বিয়ে হয়েছে অর্থাৎ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি তাকে এরকমই দেখে আসছি এবং আমি শুনেছি কৈশোর থেকেই তিনি এই অভ্যাস গড়ে তুলেছেন।”

একসময় আমার বাবার গুরুতর অসুখ ধরা পড়ে। তখন পরিবারের সবাই আমরা তাকে জোর দিয়েছিলাম তিনি যেন বিদেশে গিয়ে তার চেকআপ এবং চিকিৎসা করান। অবশেষে, সবার চাপাচাপিতে তিনি চেকআপের জন্য আমেরিকা যেতে রাজি হন এবং সেখানে তিন মাস অবস্থান করেন। যখন তিনি ফিরে আসেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমেরিকা কেমন লাগলো?

উত্তরে তিনি বলেন: “দারুণ!! দেশটিকে আমার সত্যিই খুব পছন্দ হয়েছে, ওইখানে অবস্থানরত দিনগুলো ছিল আমার জীবনে কাটানো সবচেয়ে সুন্দর কিছু দিন।” বাড়ির সবাই অবাক হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, “কেন? সেখানে এমন কি ঘটেছে? বা কার সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয়েছে যে কারণে দেশটিকে আপনার এত পছন্দ হলো?” আমার মা শারীরিক সমস্যার কারণে তার সাথে ভ্রমন করতে পারেনি, মাকে তিনি বললেন, “দেশটিকে আমি এত পছন্দ করেছি কারণ দেশটির রাত আমাদের রিয়াদের রাতের তুলনায় অনেক বেশি দীর্ঘ। সেখানে আমি প্রতি তিন দিনে একবার করে কুরআন খতম করেছি এবং প্রতি সপ্তাহে দুইবার। এখানে প্রতি তিন চার দিনে কুরআন খতম করা তুলনামূলকভাবে কষ্টসাধ্য।

আরও পড়ুন- কুরআনের এক তৃতীয়াংশ

এভাবেই আমার বন্ধু তার বাবার অবিস্মরণীয় স্মৃতির কথা আমার কাছে উল্লেখ করেছেন। এই গল্পটি থেকে কিছু শিক্ষা আমি তুলে ধরতে চাই –

এই গল্পটি আমার মনে ভীষণভাবে দাগ কেটে গেছে । কারণ আমি নিজেও বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছি এবং আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় সৌদি আরবে কেটেছে । কিন্তু আমি কুরআন সম্পর্কে কখনো এভাবে ভাবিনি। হয়তো আমি কুরআনকে তেমনভাবে আঁকড়ে ধরতে পারিনি যেমনভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন আমার বন্ধুর বাবা। এই গল্পটি সম্পর্কে এটাই ছিল আমার প্রথম প্রতিফলন। যখন আমরা কোন কিছুর প্রতি ভীষণভাবে অনুরক্ত হই, আমরা কেবলমাত্র তা চাই না, বরং প্রতি মুহূর্তে এর সন্ধান করি, এবং এটা ছাড়া বাঁচতে পারি না।

একবার চিন্তা করে দেখুন তো আপনি দিনে কতবার আপনার সেলফোন ব্যবহার করেন; নিউজফিড, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেক্সট মেসেজ, ফেসবুক স্ট্যাটাস, ইনস্টাগ্রাম স্টোরি, লেটেস্ট টুইট, ইউটিউব এবং টিকটক ভিডিও দেখার জন্য? অনেক সময় আমার মনে হয় মানুষের জীবনে একমাত্র পঠিত book হল Facebook.

এবার তুলনা করে দেখুন, আপনি প্রতিদিন কতবার মুসহাফ খুলে কুরআনের একটি পৃষ্ঠা, সূরা বা নিদেনপক্ষে দশটি আয়াত পাঠ করেন? পড়াশুনা এবং ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতটা সিরিয়াস এবং এর জন্য কি পরিমান অর্থ ও সময় ব্যয় করতে ইচ্ছুক, সে কথা না হয় বাদই দিলাম।

আল্লাহ তাআলা বলেন –

وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَٰرَبِّ إِنَّ قَوۡمِى ٱتَّخَذُواْ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ مَهۡجُورًا

আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।[সূরা ফুরকান-২৫: আয়াত-৩০]

আমি জানি এমন অনেকেই আছেন যারা কুরআন পড়তে জানেন, কিন্তু তারা কেবল রোজার মাসেই কুরআন খতম করার চেষ্টা করেন। আবার এমন অনেকে আছেন যারা কুরআন পড়তে জানেন না, কিন্তু কুরআন শিক্ষার ব্যাপারেও ততটা সিরিয়াসও নন। বছর কয়েক ধরে তারা হয়তো মনে মনে ভাবছেন কুরআন শিক্ষার ব্যাপারে কিছু একটা করতে হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হয় না।

আমি ভাবছি আমাদের মধ্যে এমন কি অনুপস্থিত রয়েছে যা আমাদের হৃদয়কে কুরআনের সাথে তেমনভাবে সংযুক্ত এবং অনুরক্ত করছে না, যেভাবে করা উচিত! আল্লাহর কিতাব শেখার জন্য আমাদেরকে আরও বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হলে, আমাদের আসলে কি করা উচিত।

উত্তরটি সহজ “আমাদের অবশ্যই কুরআন শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে”। আমাদের বুঝতে হবে আল-কুরআন আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আল-কুরআন তেলাওয়াত করা হল সবচেয়ে পুরস্কৃত ইবাদতের একটি এবং সবচেয়ে সহজ কাজগুলির মধ্যে একটি।

আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার নেকী হবে। আর নেকী হয় দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম মিলে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, এবং মীম আরেকটি হরফ।”[তিরমিজি: ২৯১০]

এই গল্পটি সম্পর্কে আরো কিছু চিন্তা ভাবনা তুলে ধরবো পরবর্তী পর্বে।

চলবে ইন শা আল্লাহ-

সিরিজঃ  যে গল্প মন ছুয়ে যায়

অনুবাদকঃ ইউএসএ প্রবাসী অনুবাদক ও কলাম লেখক  

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন এবং সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হইন । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন