Ads

‘ইনশাল্লাহ’ কেন বলতে হয়?

।। আহমদ হাসান ইমরান ।।

মুসলিমদের যেকোনও কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রহিম’ অর্থাৎ ‘পরম করুণাময়, দয়াময় আল্লাহর নামে শুরু করছি’। আর সেইসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে , ‘আল্লাহতে বিশ্বাসী মুসলিমরা ভবিষ্যতে কোনও কাজ করার কথা বললে তাকে অবশ্যই ‘ইনশাল্লাহ’ বলা উচিত।’ ‘ইনশাল্লাহ’ শব্দটির অর্থ হল ‘যদি আল্লাহ্ চান’। ইংরেজিতে বললে বলতে হয় ‘ইফ গড উইলস’, ‘যদি ঈশ্বর ইচ্ছা করেন’। এটা এজন্য বলতে বলা হয়েছে, মানুষ কোনও নিয়ত বা অভিপ্রায় করে কিংবা পরিকল্পনা করে, আর সেটা কাউকে বলে, তাহলে আল্লাহর উপর ভরসা করেই বলা উচিত। কারণ, সেই কাজটি শেষ পর্যন্ত হবে কি না তা নির্ভর করে আল্লাহর উপর। তাই বিশ্বাসীরা সবসময় ভবিষ্যতের কোনও কাজ বা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ‘ইনশাল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করে। এর দ্বারা আল্লাহর উপর ভরসা ও আস্থা প্রকাশ পায়।

পবিত্র কুরআনে এই সম্পর্কে একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে। সূরা কলম-এ তা আল্লাহ্ বিবৃত করেছেন। ‘আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে যখন তারা শপথ করেছিল যে, প্রত্যুষেই তারা বাগান থেকে ফল কেটে নেবে (কিন্তু) তারা ইনশাল্লাহ বলেনি। অতঃপর তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে এক আযাব অবতীর্ণ হল সেই বাগানে, যখন তারা নিদ্রিত ছিল। ফলে বাগান পুড়ে ছাই বর্ণ ধারণ করল। প্রভাতে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফল কাটতে (সংগ্রহ) চাও তবে সকাল সকাল বাগানে চল। অতঃপর তারা চলল ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে। আজ বাগানে যেন তোমাদের নিকট কোনও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। এরপর তারা অভাবীদের প্রতিহত করতে সক্ষম এই বিশ্বাস নিয়ে প্রভাতকালে (নিজেদের বাগানে) যাত্রা করল। অতঃপর তারা যখন ওই বাগান প্রত্যক্ষ করল, তারা বলল, আমরা তো দিশা হারিয়ে ফেলেছি, (না) বরং আমরাই বঞ্চিত হয়েছি। তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলল, আমি কী তোমাদেরকে বলিনি? যদি তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে। তখন তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আমরা অত্যাচারি ছিলাম। এভাবে তারা একে অপরকে দোষ দিতে লাগল। তারা বলল, হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারী। আমরা আশা রাখি, আমাদের রব এর পরিবর্তে আমাদেরকে দেবেন উৎকৃষ্টতর বাগান। আমরা আমাদের রব-এর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। শাস্তি এভাবেই এসে থাকে এবং পরকালের শাস্তি কঠিনতর হবে, যদি তারা জানত।’ (সূরা কলম, আয়াত : ১৭-৩৩)

আরও পড়ুন-কেন জাহেল আরব জাতি নেতৃত্ব ও নবুওয়াত পেয়েছিল?

এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাগানের মালিকরা আল্লাহর উপর ভরসা করে ‘ইনশাল্লাহ’ বলেনি। তারা নিশ্চিত ছিল যে, তাদের ফলে পরিপূর্ণ বাগান তাদের জন্য নিরাপদ থাকবে। কেউ এর ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর উপর বিশ্বাস না থাকায় আল্লাহ্ এই গর্বিত মালিকদের শাস্তি দিলেন। দ্বিতীয়ত, এই বাগান মালিকরা ছিল খুবই কৃপণ। তারা কোনও অভাবগ্রস্তকে সাহায্য না করার অভিপ্রায় করেছিল। এটা করুণাময় আল্লাহ্ পছন্দ করেননি। কারণ আল্লাহ্ সবসময় দুর্বল, মজলুম ও অভাবগ্রস্তদের পাশে থাকার জন্য ঈমানদারদের তাগিদ দিয়েছেন। তাই অভাবগ্রস্তদের বাগানে ঢুকতে দেব না, এই মনোবৃত্তির জন্য তাদের বাগানকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কুরআন শরীফের এই নির্দেশ থেকে আমরা জানতে পারি, বিশ্বাসী মুসলিমদের প্রত্যেক কাজের অভিপ্রায় জানানোর আগে ‘ইনশাল্লাহ’ বলতে হবে। অর্থাৎ যদি আল্লাহ্ চান।

লেখকঃ  লেখক, প্রাবন্ধিক এবং সম্পাদক, পুবের কলম, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন