Ads

কেন জাহেল আরব জাতি নেতৃত্ব ও নবুওয়াত পেয়েছিল?

।। শারমিন আকতার ।। 

জাহেল আরব জাতির নেতৃত্ব পাওয়ার  ব্যাপারের চিন্তা করলে অনেকেরই হতো মনে হতে পারে এরকম একটা জাহেল আরব জাতি কেন নেতৃত্ব ও নবুওয়াত পেয়েছিল? জাহেলী যুগের আরবের লোকদের চারিত্রিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আর-রাহীকুল মাখতুমে লেখক উল্লেখ করেন-

“এটা স্বীকৃত সত্য যে ,আরবের লোকদের মধ্যে ঘৃণা ও নিন্দনীয় অভ্যাসসমূহ পাওয়া যেত এবং এমন সব কাজ তারা করতো যা বিবেক বুদ্ধি মোটেও অনুমোদন করত না । তবে তাদের মধ্যে এমন কিছু চারিত্রিক গুণাবলী ছিল যা রীতিমত বিস্ময়কর । নীচে কিছু বিবরণ দেয়া হল-

এক) দয়া ও দানশীলতাঃ এটা ছিল আরবদের এক বিশেষ গুণ । এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ল করা যেত লক্ষ করা যেত । এ গুনের উপর তারা এতো গর্ব করতো যে আরবের অর্ধেক মানুষই কবি হয়ে গিয়েছিল । এ ব্যাপারে কেউ নিজের প্রশংসা করতো, কেউ অন্যের প্রশংসা করতো । কখনও এমন হতো যে, প্রচণ্ড শীতে এবং অভাবের সময়েও হয়তো কারও বাড়িতে মেহমান এলো, সেই সময় গৃহস্বামীর কাছে একটা মাত্র উটই ছিল সম্বল । গৃহস্বামী আতিথেয়তা করার জন্য সেই পশুই জবাই করে দিত । দয়া ও উদারতার জন্যই তারা মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ করে নিত এবং সে ক্ষতিপূরণ যথারীতি আদায় করতো । এমনিভাবে মানুষকে ধ্বংস এবং রক্তপাত থেকে রক্ষা করে অন্যান্য ধনী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে গর্ব করতো ……।

দুই) অঙ্গীকার পালনঃ আরবের লোকেরা অঙ্গীকার পালনকে ধর্মের অংশ হিসাবে মনে করতো । অঙ্গীকার পালন বা কথা রাখতে গিয়ে তারা জান্মালের ক্ষতিকেও তুচ্ছ মনে করতো । এটা বুঝার জন্য হানী ইবনে মাসুদ শায়বানী সামোয়াল ইবনে আদীয়া এবং হাজের ইবনে জারারার ঘটনাগুলো যথেষ্ট ।

আরও পড়ুন- নাসার রকেট কর্মসূচীর ঘাঁটিতে টিপু সুলতানের বাহিনীর ছবি

তিন) আত্মমর্যাদা সচেতনতাঃ জুলুম অত্যাচার সহ্য করেও নিজের মর্যাদা বজায় রাখা জাহেলি যুগের পরিচিত একটি চারিত্রিক গুণ । এর ফলে বীরত্ব বাহাদুরি প্রকাশ করতো । তাদের ক্রোধ ছিল অসামান্য হঠাৎ করে তারা ক্ষেপে যেতো । অবমাননার সামান্য লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া গেলেও তারা অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়তো এবং রক্তপাত ঘটাতো । এ ব্যাপারে তারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করতো ।

চার) প্রতিজ্ঞা রক্ষাঃ জাহেলি যুগের লোকদের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, কোন কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞা করলে সে কাজ থেকে তারা কিছুতেই দূরে থাকতো না । কোন বাধাই তারা মানত না । জীবন বিপ্নন হলেও সে কাজ তারা সম্পাদন করতো ।

পাঁচ) সহিষ্ণুতা ও দূরদর্শিতামূলক প্রজ্ঞাঃ এটাও আরবের একটা মহৎ গুণ । কিন্তু বীরত্ব ও যুদ্ধের জন্য সব সময় তৈরি থাকার কারণে এ গুণ তাদের মধ্যে ছিল দুর্লভ ।

ছয়) বেদুইনসুলভ সরলতাঃ তারা সভ্যতার উপক্রন থেকে দূরে অবস্থান করতো এবং এক্ষেত্রে তাদের অনিহা ছিল । এ ধরণের সাদাসিধে সহজ-সরল জীবন যাপনের কারণে তাদের মধ্যে সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতা পাওয়া যেতো । প্রতারণা এবং অঙ্গীকার ভঙ্গকে তারা ঘৃণা করতো ।

আমরা মনে করি জাযিরাতুল আরবের সাথে সমগ্র বিশ্বের যে ধরণের ভৌগলিক অবস্থান ছিল সেটা ছাড়া উল্লেখিত চারিত্রিক গুণাবলীর কারণেই তাদেরকে মানব জাতির নেতৃত্ব এবং নবুওয়াতের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল । এসব গুণাবলীর জন্য যদিও তারা হঠাৎ করে ভয়ংকর হয়ে উঠতো এবং অঘটন ঘটাতো তবুও একথা অস্বীকার করা যাবে না যে এসব গুণাবলী ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয় । এসব গুণাবলী ও চারিত্রিক শক্তি ছাড়া বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও অকল্যাণ দূর করে ন্যায় নীতি ও সুবিচারমূলক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন সম্ভব নয় । ”

[আল্লামা সফিউর রহমান মুবারাকপুরী জনপ্রিয় সীরাত গ্রন্থ “আর-রাহীকুল মাখতুম” থেকে]

লেখা সংগ্রাহকঃ লেখক ও সম্পাদক, মহীয়সী 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন