।। মহীয়সী ।।
টিপু সুলতানের সেনাবাহিনীর তৈলচিত্র আমেরিকার নাসার গবেষণা কেন্দ্রে ঝুলানো আছে রকেট বিজ্ঞানের অনুপ্রেরণা হিসাবে । এক পাশে ব্রিটিশ সৈন্য আর অন্য পাশে ঘোড়ায় আরোহণ করা টিপু সুলতানের বাহিনী ব্রিটিশ বাহিনীর দিকে রকেট বোমা ছুড়ে মারছে । এমন একটা ছবি ঝুলানো আছে সেখানে । এ পি জে আবুল কালাম আজাদ যখন নাসায় ট্রেনিং নিতে যান তখন তিনি এই ছবি দেখতে পান নাসার রকেট কর্মসূচীর ঘাঁটি ভার্জিনিয়ার ইস্ট কোস্টে ওয়ালপস আইল্যান্ডে ওয়ালপস ফ্লাইট ফ্যামিলিটিতে এবং তার বই “উইংস অব ফায়ার ” এ এই কথা তিনি উল্লেখ করেন । আলহামদুলিল্লাহ্ আমাদের পূর্বপুরুষ মুসলিমরা ঈমান ও আমলে কতো বলিয়ান ছিলেন ।
এ পি জে আবুল কালাম আজাদ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও রকেট বিজ্ঞানী । তিনি তার বই ‘উংস অব ফায়ার’ উল্লেখ করেন,
“আমাকে আমেরিকায় যেতে বলা হয় সফলভাবে রকেট উৎক্ষেপণের কলাকৌশল বিষয়ক ছয় মাস প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে যোগ দেয়ার জন্য । দ্যা ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) । ”
“ ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে হ্যাম্পটনে অবস্থিত নাসার ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টার (এলআরসি) এ আম ইকাজ শুরু করলাম । অ্যাডভান্সড অ্যারোস্পেস টেকনোলজির জন্য এত্যা ছিল প্রাথমিকভাবে আর অ্যান্ড ডি সেন্টার । এল আরসিতে আমার বর্ণবহুল স্মৃতিমালার একটা হচ্ছে এক খণ্ড ভাস্কর্য, পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে তাতাএ ফুটিয়ে তলা হয়েছে একজন রথি দুটো ঘোড়াকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, একটায় ফুটিয়ে উঠেছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর অন্যটায় প্রযুক্তির উন্নতি , তাতে রূপকঅর্থে প্রকাশ পাচ্ছে গবেষণা ও উন্নয়নের মধ্যে আত্মসংযোগ ।
এলারসি থেকে আমি গেলাম মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের গ্রিনবেল্টে গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার (যে এস এফসি) এ । সেই সেন্টারে নির্মাণ করা হয় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক উপগ্রহ । সমস্ত মহাশূন্য অভিযানের জন্য নাসার ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে এই কেন্দ্র ।
আমার সফরের শেষ দিকে আমি গিয়েছিলাম ভার্জিনিয়ার ইস্ট কোস্টে ওয়ালপস আইল্যান্ডে ওয়ালপস ফ্লাইট ফ্যামিলিটিতে । এই জায়গাটি ছিল নাসার রকেট কর্মসূচীর ঘাঁটি । এখানে আমি দেখতে পেলাম রিসেপশন লবিতে একটা তৈলচিত্র ঝুলানো আছে । পশ্চাৎভুমিতে কয়েকটা উড়ন্ত রকেটসহ একটা যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য ছিল তাতে । এই থিম নিয়ে আঁকা তৈলচিত্র কোনও ফ্লাইট ফ্যামিলিটিতে আতি সাধারণ ব্যাপার হতে পারে । কিন্তু ছবিটা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো তার কারণ রকেট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে যে দিক থেকে সেদিককার সৈন্যরা কেউ শ্বেতাঙ্গ ছিল না, তাদের চেহারা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার জাতিগুলর মতো আর তেমনি কালচে চামড়ার । একদিন আমার কৌতূহল চরম মাত্রায় পৌছাল, আমাকে টেনে নিয়ে গেল তৈলচিত্রটার কাছে। দেখা গেল ছবিটায় টিপু সুলতানের বাহিনী যুদ্ধ করছে বৃটিশদের সঙ্গে । একটা প্রকৃত ঘটনা যা টিপুর নিজের দেশ ভুলে গেছে তা প্রকাশিত হচ্ছে এই তৈলচিত্রে আর দুনিয়ার আরেক প্রান্তে তা স্মরণ করা হচ্ছে । রকেট যুদ্ধের নায়ক হিসাবে একজন ভারতীয়কে যে মহিমান্বিত করেছে নাসা তাতে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম ।”
তিনি আরও বলেন-‘নাসা থেকে আমার ফিরে আসার পর পরই ভারতের প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ করা হল ২১ নভেম্বর ১৯৬৩ সালে রকেটটার নাম ছিল ‘নাইক অ্যাপাচি’ তৈরি করা হয়েছিল নাসায়… । বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় রকেট উন্নয়নের কার্যক্রমকে দেখা যেতে পারে অষ্টাদশ শতাব্দীর দেখা টিপু সুলতানের স্বপ্নের পুরুজ্জীবন । টিপু সুলতান যখন নিহত হন , তখন বৃটিশরা ১৭৯৯ সালে তুরুখানাহাল্লীর যুদ্ধে ৭০০ রকেট ও ৯০০ রকেটের সাব সিস্টেম দখল করেছিল । তিপুর সৈন্যবাহিনীতে ছিল ২৭ টি ব্রিগেড , এদের বলা হত কুশন । আর প্রতিটি ব্রিগেডে ছিল রকেট নিক্ষেপকারীদের জন্য একটি করে কোম্পানি, এদের বলা হতো জুর্ক । উইলিয়াম কনগ্রিভ এই রকেটগুলো ইংল্যান্ডে নিয়ে যায় । বৃটিশরা সেখানে রকেট নিয়ে যে গবেষণা চালায় আজকের দিনে তাকে আমরা ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বলি । সে কালে অবশ্যই কোন গ্যাট, আই পি আর অ্যাক্ট অথবা পেটেন্ট ব্যবস্থা ছিল না । টিপু সুলতানের মৃত্যুর সাথে সাথে ভারতীয় রকেট বিজ্ঞানের মৃত্যু ঘতে-১৫০ বছরের জন্য ।”
সূত্রঃ
বইঃ উংস অব ফায়ার
লেখকঃ এ পি জে আবুল কালাম আজাদ
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন । আসুন সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।