Ads

ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং …

।। শহীদ সিরাজী ।।

ট্রান্সজেন্ডার এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এ এক মহা ফিতনা। দেশে এমন নিত্য নতুন কত এজেন্ডা আসছে আবার চলেও যাচ্ছে। তবে কখনো কখনো তা সিডরের মত সভ্যতার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সভ্য মানুষ তা টের পাচ্ছি না।

আসলে ট্রান্সজেন্ডার কি বা রূপান্তরিত লিঙ্গ ?ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গ তাদের বলা হয় যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন মনে করে। এর মানে যারা জন্মের সময় নির্ধারিত হওয়া লিঙ্গ নয় বরং অন্য লিঙ্গের পরিচয় দেয়।

ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ’ বা রূপান্তরকামীতা-অনেকে একে ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ বা লিঙ্গ পরিচয় মতবাদও বলেন। এটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে।মজার ব্যাপার হচ্ছে “এই মতবাদে কোন পুরুষ যদি ‘নিজেকে নারী বলে মনে করে, তাহলে সে একজন নারী। সমাজ ও আইন নারী হিসেবেই তাকে বিবেচনা করবে। সেই পুরুষ শারীরিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হোক, তিন বাচ্চার বাপ হোক, কিছু আসে যায় না তাতে।

আবার কোন নারী নিজেকে যদি পুরুষ মনে করে, তাহলে সে পুরুষ। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে হয় ১০০% সুস্থ। তাদের মতে নিজেকে পুরুষ মনে করা নারী যদি সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সেটা ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ না। বরং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, ‘পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে’!

এই মতবাদ অনুযায়ী কোনো বালকের যদি ‘মনে হয়’ সে বালিকা অথবা কোনো বালিকার যদি মনে হয় সে বালক, তাহলে এই ‘মনে হওয়া’র ভিত্তিতে সেই বালক কিংবা বালিকাকে চাহিবামাত্র হরমোন ট্রিটমেন্ট আর বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে কাটাকুটি করে নিজের শরীরকে বদলে ফেলার ‘অধিকার’ দিতে হবে। তার এই ‘মনে হওয়া’র চিকিৎসা করা যাবে না, বরং বদলে দিতে হবে শরীরকে।”তাহলে বুঝুন এ মতবাদ কতটা অস্বাভাবিক, মানুষের ফিতরাত বিরোধি, কতটা ভয়ংকর!

ট্রান্সজেন্ডারের আলোচনায় হিজড়ার বিষয় এসে যায়। অনেকটা কান টানলে মাথা আসার মত।হিজড়া হলো যারা পুরুষ হয়ে জন্ম নিলেও কিংবা পুরুষের মতো গড়ন হলেও তাদের আচার আচরণ নারীদের মতো। ট্রান্সজেন্ডরের সাথে হিজড়াকে মিলিয়ে ফেলার কোন সুযোগ নাই। বেশিরভাগ হিজড়ারা নিজেদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ বলেও মনে করে। তবে তারা ট্রান্সজেন্ডার নয়।

আমাদের আলোচনার বিষয় ট্রান্সজেন্ডার। আমরা জেনেছি “ট্রান্সজেন্ডার হলো তারা, যারা পুরুষ হয়ে জন্মায় কিন্তু পরে নিজেকে ধীরে ধীরে নারী ভাবতে থাকে আবার কেউ নারী হয়ে জন্মায় পরে নিজেকে ধীরে ধীরে পুরুষ ভাবতে থাকে।”

আসলে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ বিস্ময়করভাবে তার লিঙ্গ নিয়ে বিচিত্র ভাবনা ভাবছে।এ নিয়ে রম্যকথন – মানুষ যা কিছু ভাবে তা তার মন মগজ দিয়ে ভাবে। মানব দেহের মগজও তো একটা অঙ্গ। আবার পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ এগুলোও মানব দেহের অঙ্গ।

কোন পুরুষের মগজ যদি ভাবে আমি নারী তো সে তার ভাবনা দিয়ে তার পুং অঙ্গকে স্ত্রী অঙ্গে রূপান্তর করবে! অনুরূপ কোন নারী যদি তার মগজ দিয়ে ভাবে সে পুরুষ তো সে তার স্ত্রী অঙ্গকে পুংঅঙ্গে রূপান্তর করে প্রমান করুক। এমন ভাবনা কোন সুস্থ মন্তিস্কের ভাবনা হতে কি-না !

এ ভাবনার আরও গলদ আছে। যারা ট্রান্সজেন্ডার তাদের লিঙ্গ নিয়ে যতো সব ভাবনা! তারা মগজের উদ্ভট চিন্তা দিয়ে যখন নিজেকে রুপান্তরিত লিঙ্গধারী বলছে তো তারা তাদের অন্য অঙ্গও রুপান্তর করে দেখাক না কেন?

তারা বলুক আমরা আমাদের হাতকে পায়ে আর পাকে হাতে রূপান্তর করেছি। এখন নিজেকে উল্টিয়ে দুই হাত দিয়ে হাঁটবো আর দু পা দিয়ে খাবো, ধরবো আরও সব কাজ করবো। নাক দিয়ে দেখবো চোখ দিয়ে গন্ধ শুঁকবো।

তাছাড়া যখন তারা পথে কারো দ্বারা কখনো আক্রান্ত হয় তখন নিজের মুখ, দাঁত, হাত ও পা বাঘের মত পরিবর্তন করে নখর বের করে প্রতিরোধ করে খাবলা খাবলা তার মাংশ খেয়ে ফেলুক না কেন? তা না পারলে শুধুমাত্র সেক্সঅঙ্গ নিয়ে এমন দাবি করা কেন? এখানে একটা গোপন উদ্দেশ্য উঁকি মারছে যেন ।

মানুষের যৌনক্ষুধা তার ফিতরাত। শারীরিক চাহিদা। প্রত্যেক সুস্থ মানুষের এটা রয়েছে। যৌনাঙ্গ থাকলে তার ক্ষুধা থাকবে। তা পূরণ করা শরীরের স্বাভাবিক দাবি। এটা মেটানোর ব্যবস্থা রয়েছে বিবাহিত জীবনে নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন-ট্রান্সজেন্ডার লিঙ্গ-পুনর্নির্ধারণ সার্জারি: খোমেনি ও তানতাভির ফতোয়া

যারা ট্রান্সজেন্ডারে বিশ্বাসী তাদেরও যৌন অঙ্গ তো জায়গা মত রয়েছে। সুতরাং তাদের যৌনচাহিদা বা ক্ষুধা অবশ্যই রয়েছে। তো তারা কিভাবে তা মেটাবে?

ভেবে দেখুন, ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ নিজেকে নারী ভাবছে সুতরাং এ মতবাদে তাকে নরীর সংগে অবাধে মেলামেশা করার, একত্রে বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে। তার মানে একজন নারী ও একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ (রুপান্তরিত নারী) একত্রে থাকছে। তারা এক বিছানায় ঘুমাচ্ছো তো তাদের যৌন অঙ্গগুলি কি ফেরেশতা? তাদের কি ক্ষুধা থাকবে না? তারা কি যৌনক্রিয়া করবে না? মুলত: এ ভাবেই তারা ট্রান্সজেন্ডারের নামে ব্যভিচারে জড়াচ্ছে।

এছাড়া সমকামিতা তো আছেই। তারা পুরুষের সাথে পুরুষ, নারীর সাথে নারী যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছে। আজকে পশ্চিমা বিশ্বে হাজার মানুষ নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার দাবি করে জারজ সন্তান উৎপাদন করছে। অনেকে আবার সমকামিতায় জড়িয়ে ঘৃণ্য পশুত্বের পরিচয় দিচ্ছে। লিভ টুগেদার করছে।দেশ সমাজকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে।

ইসলাম সমকামিতার ব্যাপারে কি বলে?  

আসুন আমরা সমকামিতার ভয়াল পরিরতি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে তা জানার চেষ্টা করি। ইসলামে সমকামিতাকে সম্পুর্ণ হারাম করা হয়েছে। কুরআনে এর বিস্তর বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন- “সমকামিতার জন্য আমি সেই (Now Deadsea) জনপদকে উপর নিচ করে উল্টে দিলাম,আর তাদের উপর স্তরে স্তরে পাকানো মাটির প্রস্তর বর্ষণ করলাম (সূরা হুদ :আয়াত ৮২)

এছাড়াও রয়েছে আরও উদাহরণ –

১. মহান আল্লাহ বলেন,”আর আমি লূতকে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছিলাম। যখন সে নিজ লোকদের বলল,তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদেরপূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরাকামবসত: নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছো। তোমরা নিশ্চিতই সীমালঙ্ঘনকারী।” (আরাফ ৮০-৮১)

২. তাদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন – “এরপর ওদের (সমকামীদের) উপর মুষলধারে (পাথর)বর্ষণ করেছিলাম। অতএব অপরাধীদের পরিণতি কী হয়েছিল বুঝতেই পারছ।” (আরাফ : ৮৪)

৩. আল্লাহ বলছেন – “সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” ( শু`আরা : ১৬৫-১৬৬)

৪. রব্বুল আলামিন বলেন, “স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর জাতিকে বলেছিলেন, তোমরা স্বজ্ঞানেই অশ্লীল কাজ করছ? তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তারা শুধু এ কথাটিই বললো,লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।আমি ওদের উপর (শাস্তি স্বরূপ কঙ্কর ) বর্ষন করেছিলাম” ( সূরা নামল : ৫৪-৫৮)

হাদিসেও সমকামীদের উপরে কঠোর শাস্তির বর্ণনা রয়েছে –

১. “ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, নবিজি (স) বলেছেন, তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর; যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।”(আবু দাউদ :৪৪৪৭)

২. “আবু সাইদ আল খুদরী(রা) বলেন, নবিজি (স) বলেছেন, একজন পুরুষ আরেক পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক নারী আরেক নারীর যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে অন্তত নিচের পোষাক না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না। এক নারী আরেক নারীর সাথে কখনও অন্তত নিচের পোষাক না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না।” (আবু দাউদ: ৪০০৭)

৩. “জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, নবিজি (স) বলেছেন, আমি আমার জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আশঙ্কা করি সেটা হল লুতের কওম যা করত সেটা যদি কেউ করে।”

(তিরমিজি, ১৪৫৭)

৪. ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, নবিজি (স) বলেছেন, অভিশপ্ত সে যে কিনা কোন পশুর সাথে যৌনক্রিয়া করে, আর অভিশপ্ত সে যে কিনা সেটা করে যা লুতের সম্প্রদায় করত।” (আহমদ:১৮৭৮)

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে –

বাংলাদেশেও যে এর বাইরে নয় তা এতদিন রাখঢাক থাকলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে।  ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কারণে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

ড. আসিফ মাহতাব এক শিক্ষা সেমিনারে পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারের নামে ইসলাম নিষিদ্ধ সমকামিতাকে উৎসাহিত করার গল্পের উদ্বৃতি দিয়ে সমকামিতা থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানকে সতর্ক করতে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ বক্তব্যের কারণে লেকচারার আসিফ মাহতাবকে শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা সমকামিতাকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া নয় কি? আসলে সপ্তম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের শরিফ থেকে শরিফা হওয়ার গল্প দিয়ে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের কি শেখানোর চেষ্টা চলছে? শিক্ষার এতকিছু বিষয় থাকতে ছোট বাচ্চাদেকে কেন এমন কিছু শেখানো হচ্ছে?

এ সব ঘটনা কি নির্দেশ করে? ভাববার সময় এসেছে। আমাদের সন্তানদের এই কচি বয়সে আমরা কি ট্রান্সজেন্ডার শেখাবো না-কি ট্রান্সজেন্ডারের নির্মম পরিনতি সমকামিতা শেখাবো। না-কি নিজেরাও একে গ্রহন করবো? এভাবেই কি আমরা কুরআনে বর্নিত লুত জাতির লোকের মত অভিশপ্ত জাতিতে পরিনত হবো? এ সব ভাববার সময় এসেছে। নিঃসন্দেহে এটা নাস্তিক ভোগবাদীদের ইবলিসি চক্রান্ত। খোদাদ্রোহীদের নাস্তিক্য ষড়যন্ত্রের আইসবার্গ। কারা সুকৌশলে কোমলমতি ছেলেমেয়েদের এ সব শিখিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করতে চায়? জাতিকে ধ্বংস করতে চায়।

এখনই সময়। চুপ করে না থেকে নিজের সন্তানদের পথ দেখাতে হবে। জাতিকে সংশোধন করে রক্ষা করতে হবে। নইলে সেসময় বেশি দূরে নয় আমাদেরকেও লুত জাতির ভাগ্য বরণ করতে হবে।

লেখকঃ ইসলামী লেখক এবং প্রাক্তন  সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন