Ads

হীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে ।। ১ম পর্ব

।। মূলঃ হাফসা আদহাম ।

।। অনুবাদঃ সাবিহা সাবা ।।

ইসলামের ইতিহাস এমন সব ব্যক্তিত্বের উদাহরণ দিয়ে আলোকিত হয়েছে যারা বিশ্বমানের নেতা ছিলেন। তারা সমৃদ্ধ  সাম্রাজ্যের শীর্ষে আসীন ছিলেন এবং ওষুধ, গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও আইনি বিচারশাস্ত্র প্রভৃতি নানাবিধ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে ইসলামী বিশ্ব থেকে আসা অনেক উদ্ভাবন এবং আবিষ্কার আমাদের আধুনিক সমাজের ভিত্তির অনেকটা অংশ গঠন করেছে। কিন্তু আমরা আজ মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্বের এই পর্যায় দেখতে পাচ্ছি না, পরিবর্তে আমরা বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে মুসলমানদের ত্বরান্বিত ধ্বংস দেখতে পাচ্ছি। আমরা প্রত্যক্ষ করছি আমাদের উম্মাতের মধ্যে হীনমন্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; ব্যক্তি হিসেবে আমরা অমুসলিমদের থেকে নিজেদের অযোগ্য, ব্যর্থ মনে করি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা হিসাবে, আমরা মূলধারার কর্পোরেশনগুলির থেকে নিজেদের অসফল মনে করি। উম্মাহ হিসেবে আমরা অন্যান্য জাতির থেকে পশ্চাৎপদ মনে করি।

কেন এটি ঘটছে এবং আমরা এ সম্পর্কে কি ই বা করতে পারি? …

ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স বা হীনমন্যতা একটি ফ্যাক্ট

নিজের দূর্বলতা চিহ্নিত করবার জন্য অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা যেতেই পারে । কিন্তু এই সচেতনতার ফলে দীর্ঘস্থায়ী হীনম্মন্যতার অনুভূতি পোষণ করা বিপজ্জনক। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সহকর্মী পাবলিক স্পিকিংয়ে দুর্দান্ত তা জানা এবং আপনার পাবলিক স্পিকিং দক্ষতা মূল্যহীন, আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেন সময়ের সাথে সাথে কখনই উন্নতি করতে পারবেন না- এ দুটো ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আজকের বিশ্বে, আমরা এমন একটি সংস্কৃতির চর্চা করছি যেখানে চেহারা, সম্পদ, মর্যাদা এবং সমস্ত বস্তুবাদী জিনিসগুলি সাফল্যের পরিমাপক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমরা জানি যে আমাদের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ আমাদেরকে মূর্তিপূজা করা বা বস্তুজগতের পিছনে ছোটা থেকে দূরত্ব বজায় রাখার পথ দেখায় কিন্তু একই সাথে আমরা আশেপাশের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ি যেখানে আপাতদৃষ্টিতে উত্তেজনাপূর্ণ, চটকদার এবং সুন্দর জীবনযাপনের চিত্র দেখা যায়। আজকের বিশ্বের সাথে আমাদের নিজের জীবনকে তুলনা করা খুব লোভনীয় হতে পারে এবং এই ধ্রুবক তুলনা আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিকতাকে দ্রুত নষ্ট করে দেয়।

আরও পড়ুন- অন্যকে গড়ে তুলতে ভালো মন ও হৃদয় লাগে

উত্তর-ঔপনিবেশিকতা এই ধারণার জন্ম দেয় যে আমাদের পশ্চিমা প্রতিপক্ষগুলি সম্বন্ধে একটি ভালো ধারণা দেয়। যদিও হয়তো সচেতনভাবে আমরা এটি বিশ্বাস করি না, তথাপি এটি আমাদের চিন্তাভাবনা এবং কর্মে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আমরা পশ্চিমাদের জীবন ও সাফল্যের দিকে তাকাই এবং সহজেই মনে এ ভাবনা চলে আসে যে তারা এই দুনিয়ায় কত উপরের দিকেই না রয়েছে! দুঃখের বিষয়, এই অনুভূতি নিয়ে সচেতন না হলে তা এই শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বরং উম্মাহ পর্যায়েও একটি হীনমন্যতার বিষয়ে পরিণত হতে পারে।

আবুল হাসান আলী নদভী তার “ Islam and the world ” (পৃষ্ঠা ১৭৩) গ্রন্থে মুসলিম নেতৃত্বের পতন এবং কারণগুলি বর্ণনা করেছেন:

“পশ্চিমা দেশগুলির শক্তি এবং অগ্রগতিতে মুগ্ধ হয়ে, মুসলমানরা পরিণতির কথা না ভেবেই পশ্চিমা সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুকরণ করতে শুরু করে, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে ছিল তাদের চাইতে অনগ্রসর এবং বস্তুগত সাফল্যের প্রবল সাধনাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা ক্ষুন্ন করেছিল ধর্মের মর্যাদা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ভুলে যায়।  জীবনের সেই সমস্ত আদর্শ, যা জীবনের আধ্যাত্মিক দিক ও ক্ষণস্থায়ী জীবনের স্বরূপ উপলব্ধি- উভয়ই নিজেদের মধ্যে তারা পরিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত করেছিল।  তারপর তাদের এই শীর্ষস্থান দখল করে নিলো তারা, যারা ছিল একেবারেই এ আদর্শ হতে বহুদূরে।

জীবনের তুচ্ছ আকাঙ্ক্ষা এবং কর্মকান্ডে মুসলিমরা এতটাই মত্ত হয়ে পড়লো যে ধর্মীয় বিধিবিধান কাটছাঁট করা শুরু হলো। কেউ যদি বর্তমানের মুসলমানদের সাথে পূর্বের সেই আদর্শবান মুসলমানদের দৈনন্দিন কাজেত তুলনা করে, তবে এটি বিশ্বাস করা কঠিন হবে যে উভয়ই একই মতাদর্শের দাবিদার বা এদের মাঝে শুধুমাত্র কয়েক প্রজন্মই পার্থক্য  বিদ্যমান।”

আরও পড়ুন- প্রত্যয়ের সাথে চান, তিনি ভার তুলে নেবেন

আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্যুত করানোর জন্য এই পার্থিব দুনিয়ার আকর্ষণীয় মোহ-মায়ার পাশাপাশি শয়তানের ক্রমাগত ওয়াসওয়াসা তো রয়েছেই; সেই শয়তান, যার একমাত্র কাজই হচ্ছে মানুষকে অকৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করা।

[শয়তান] বলেছিল, “আমাকে বিপথগামী করার জন্য আমি তাদের জন্য আপনার সরল পথে ওঁত পেতে থাকব। আমি তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন দিক থেকে, তাদের ডান দিক থেকে, তাদের বাম দিক থেকে তাদের কাছে যাব এবং তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে অকৃতজ্ঞ পাবেন।” (৭ঃ ১৬-১৭)

আমরা যদি তার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন না হই এবং আল্লাহর ভাবনা দিয়ে আমাদের হৃদয় ও মনকে শক্তিশালী করার জন্য সতর্কতা অবলম্বন না করি, তাহলে আমরা তার ষড়যন্ত্রের জন্য আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ি। সে মনকে দূর্বল করবার মাধ্যমেই অন্তরে প্রবেশ করে ও এর কব্জা নেয়।

ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স বা হীনমন্যতা  কি?

ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স হল যুক্তিসঙ্গত বিচার ব্যতিরেকেই নিজের মাঝে অপ্রাপ্তির অনুভূতি বোধ করা। এটি একটি আবেগ দ্বারা পরিচালিত অনুভূতি যা আমাদেরকে ক্রমাগত অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার মাঝে ব্যস্ত রাখে। নিজেদের ভাল বোধ করার জন্য তাদের যা আছে তা আমরাও তা নিজের করে পেতে চাই।

এই অনুভূতি আমাদেরকে এমন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দেয় যেন আমরা কোন মরুভূমির মাঝে পানির তৃষ্ণায় কাতর এক পথিক, যাকে অন্যের সম্পদ ‘মরীচিকার’ ন্যায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে কিন্তু আমাদের কাছেই থাকা জলের বোতল দিয়ে তৃষ্ণা মেটানোর কোন চেষ্টা আমরা করছি না।

আরও পড়ুন – হীনমন্যতা যেভাবে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে ।। ২য় পর্ব

চলবে…

সূত্রঃ প্রোডাক্টিভ মুসলিম (www.productivemuslim.com)

লেখকঃ হাফসাহ আদহাম “দ্য কনফিডেন্ট মুসলিমাহ” এর প্রতিষ্ঠাতা ।  এটি একটি আধ্যাত্মিকতা উন্নয়ন কেন্দ্রিক কোচিং সেন্টার । এই প্রতিষ্ঠান কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে মুসলিমদের  আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং হীনমন্যতা দূর করতে ভূমিকা রাখে । স্বামী এবং তিন সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী এই লেখক আত্মবিশ্বাসী প্রশিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি একজন পাবলিক স্পিকার এবং কমিউনিটি কর্মী ।

অনুবাদকঃ সাবিহা সাবা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক এবং সহ-সম্পাদক, মহীয়সী

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন