Ads

সমাধান নাকি মনোযোগী কান

ড. এমারসন এগারিচেস

আমি বহু বছর ধরে একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার ক্রমাগত চেষ্টা করে একটি জিনিস শিখেছি। যখন কোনো সমস্যা নিয়ে সারা আমার কাছে আসত, তখন আমি তাকে দুটি প্রশ্ন করতাম। প্রথমটি হলো- ‘আমার কি কোনো ভুল হয়েছে?’ বেশিরভাগ সময় উত্তর আসত- ‘না’। এরপর দ্বিতীয় প্রশ্ন করতাম- ‘তুমি আমার কাছে সমাধান চাইছ, নাকি চাইছ আমি তোমার কথা শুনি?’ সে সাধারণত জবাবে বলত- ‘আমি চাচ্ছি, তুমি শুধু আমার কথা শোনো।’
অতএব, আমি শুনতাম। মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনতাম। ছোটো হোক কিংবা বড়ো, ওর সমস্যাগুলো আমার কাছে শেয়ার করার পর সারা হালকা বোধ করত। আমার শ্রবণই ওকে ভালোবাসার অনুভূতি এনে দিত। ফলে উৎসাহচক্র পরিপুষ্ট হতো।

অবশ্য বহু কাউন্সেলিং সেশন ও কনফারেন্সে আমি এমন বহু স্বামীকে দেখেছি- যারা ব্যাপারটি ঠিকমতো বুঝত না। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো- মনোযোগী শ্রোতা না হতে পারাই আপনার দাম্পত্য জীবনের প্রধান সমস্যাগুলোর একটি। মন দিয়ে ওর কথা শোনার ধৈর্য আপনার না থাকলে বুঝে নিতে হবে, আপনি এখনও আপনার নীল সানগ্লাস ও নীল হেয়ারিং এইডকে এডজাস্ট করে নিতে পারেননি। পুরুষকে অবশ্যই এ কথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, নারীর কাছে তার সমস্যা অন্যকে শোনানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রবাদ আছে এমন- “The wise husband is quick to listen, slow to speak.” “বুদ্ধিমান স্বামীরা শোনায় পটু, বলায় ধীর।”

কিন্তু পুরুষদের মনস্তত্ব অন্যভাবে কাজ করে। পুরুষ অপরের কাছে শুধু শুধু নিজের সমস্যা শেয়ার করে না। সে তার সমস্যা অপরের কাছে তখনই শেয়ার করে, যখন মনে করে- সেই ব্যক্তি তাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারবে। পুরুষ প্রকৃতিগতভাবে সমস্যা সমাধানে বেশি আগ্রহী। তাই দেখা যায়, ক্লাসে ছাত্র ও ছাত্রীদের দক্ষতার বিষয় হয় ভিন্ন ভিন্ন। ছাত্ররা কোনো বিষয় খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে, ছাত্রীরা সেটা খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারে।

পুরুষ প্রকৃতিগতভাবে এমন যে, কোনো সমস্যা তার কাছে আসা মাত্রই সে মনে মনে সমস্যাটি সমাধানের ছক তৈরি করতে শুরু করে।
পুরুষকে মনে রাখতে হবে- দাম্পত্য জীবনে তার এ বৈশিষ্ট্য প্রয়োগ করলে সে ভুল করবে। এ সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে এ রকম- স্ত্রী কোনো সমস্যা নিয়ে এলে স্বামী বলবে, ‘প্রিয়তমা! তুমি কি আমার কাছে সমাধান চাচ্ছ, নাকি চাচ্ছ আমি তোমার কথা শুনি?’ আমি দেখেছি এটি একটি কার্যকর কৌশল। কারণ, স্ত্রী সব সময় সমাধান পাওয়ার জন্য স্বামীর কাছে সমস্যা তুলে ধরে না। সে চায় তার মনের কথা শেয়ার করতে। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রী জানে, তার কী করা উচিত। তবু সে মনের কথা শেয়ার করতে চায়। এটাই নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য। আপনি যখন এ বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হবেন, তখন আপনার দাম্পত্য সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।

উদ্ধৃতীকারিঃ আমজাদ ইলাহী

বইঃ লাভ এন্ড রেসপেক্ট
লেখকঃ ড. এমারসন এগারিচেস
ভাষান্তরঃ রোকন উদ্দিন খান
প্রচ্ছদ প্রকাশন
*মুদ্রিত মূল্য : ৩২০/

আরও পড়ুন