Ads

সম অধিকারের নামে তৈরি বিশৃঙ্খলা কিভাবে ঠেকাবে নারী?

সালমা তালুকদার
সম অধিকার,সিগারেট খাওয়ার স্বাধীনতা,ছেলেরা এভাবে বসতে পারলে মেয়েরা কেন এভাবে বসতে পারবে না?এরকম আরো কত রকম অধিকার আদায় করতে নারীরা সব জায়গায় আজ সোচ্চার।মিডিয়া,রাস্তাঘাট,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় ভিডিওর মাধ্যমে,স্টেটাসের মাধ্যমে নারীরা চিৎকার করে এসব অধিকার আদায় করতে চাইছে।

যেসব পরিবার রক্ষনশীল সেসব পরিবারের মেয়েরা হয়তো রাস্তায় নামতে পারে না।বা পরিবারের চাপে মুখ দিয়ে এসব কথা বলতে পারে না।কিন্তু মনের ভেতর লালন করে,”ছেলেরা সব পারলে মেয়েরা কেন পারবে না?” কিছুদিন আগে আমার বাসায় আমার সন্তানের বন্ধুরা এসেছিলো।তাদের মধ্যে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়া একটা মেয়ে ছিলো।সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আন্টি ছেলেদের কত মজা তাই না?”আমি বললাম,”কেন মা?”বলে,”এই যে ছেলেরা যা খুশি তাই করতে পারে।যখন যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে।গরম লাগলে জামা কাপড় খুলে ফেলতে পারে।আমরা তো পারি না।ইশ্!আন্টি আল্লাহ্ যে কেন আমাকে ছেলে বানালো না?”
আমি হতবাক!কত হবে বয়স!১০ বছর।এখনই এই কথা বলছে?ওর মাকে আমি চিনি।জানি বয়সের সাথে মেয়েটা সঠিক শিক্ষা পাবে।কারণ মেয়েটার মা অনেক ভালো মানসিকতার একজন মানুষ।কিন্তু কষ্ট পেলাম এই ভেবে যে মেয়েটা এই বয়সে একটা ভুল ধারণা মনে পোষন করছে।যেসব নারীগন সমাজে এসব ছড়াচ্ছেন তাদের কাছে আমার কয়েকটা প্রশ্ন।পারবেন ছেলেদের মতো শারীরিক শক্তি ধারণ করতে?তাহলে প্রতিদিন ধর্ষিত হন কেন?ধর্ষনের সময় ধর্ষকের অন্ডকোষটা লাথি দিয়ে গেলে দেন না কেন?পারবেন খোলা রাস্তায় প্রচন্ড গরমে ছেলেদের মতো হঠাৎ করে গায়ের জামাটা টান দিয়ে খুলে ফেলতে?তাহলে খুলে দেখান তো।পারবেন ছেলেদের মত রাস্তার পাশে যত্র তত্র পায়জামা খুলে বসে জল বিয়োগ করতে?তাহলে দয়া করে এরকম একজন করে দেখান।
আমি জানি এসব না পারলেও একটা জিনিস খুব পারবেন সবাই।তা হচ্ছে,প্রকাশ্য রাস্তায়,আড্ডায় সিগারেট ফুঁকতে।ধোঁয়া গিলতে তো আর জামা কাপড় খোলা লাগে না।আমার কথা গুলো কিছু নারীর গায়ে হুল ফোঁটাবে জানি।তবু অনুরোধ রইলো একটু ভেবে দেখার।

আজকে আমি নিরাপদ না কেন?ভয়ে ভয়ে কেন পথ চলতে হয়? যদি বলি আমাদের আচরণের জন্যই।খুব কি ভুল বলা হবে?বাসে চড়লে কেন আজকাল পুরুষরা নারীদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয় না।একজন নারী চলন্ত বাসে দাঁড়িয়ে থাকলে পুরুষরা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকে আর তামাশা দেখে।মনে মনে বলে খুব তো বলো আমরা যা পারি তোমরাও তা পারো।তাহলে দাঁড়িয়েই থাকো।সত্যি কি আমরা সব পারি?চলন্ত বাসে দাঁড়িয়ে থাকতে আমাদের একটুও কষ্ট হয় না?সৃষ্টিকর্তা পুরুষদের এমন ভাবেই তৈরী করেছেন যে তারা শারীরিক কষ্টটা সহ্য করতে পারেন অনেক।যা আমরা পারি না।ঘন্টার পর ঘন্টা ওরা বাসে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।কিন্তু আমরা নারীরা একটু বসার জন্য অস্তির হয়ে যাই।এটা আমাদের দোষ না।প্রকৃতিগত ভাবেই আমরা এমন।কিন্তু মানতে চাই না।আচ্ছা হঠাৎ যদি বাস ব্রেক কষে আর আমরা নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে পরে যাই।তখন কি হয়!কোনো পুরুষের গায়ের উপর আমরা পরি।যার ফলে পুরুষের হাতটা নারীর বুক স্পর্শ করবে।নিতম্ব স্পর্শ করবে।এই সব কিছুতে পুরুষের কিছুই যাবে আসবে না।শুধু একটু সুখানুভূতি ছাড়া।নারীটি কিন্তু বাসায় ফিরে বার বার নিজের দেহে হাত বুলাবে।ঘেন্নায় চোখ মুখ কুঁচকাবে।ঘুমোতে পারবে না।এটা নারীর স্বাভাবিক আচরণ।কারণ এটা বাংলাদেশ।আমরা ছোটবেলা থেকে এই সংস্কৃতি লালন করেই বড় হয়েছি।ভেবে দেখেন তো ঠিক বলেছি কিনা?

ভাবছেন নারী হয়ে নারীর বিরুদ্ধে লিখছি!আমি বলবো মোটেই না।আমি জোড়ালো কন্ঠে বলছি আমি নারীর স্বপক্ষে লিখছি।কিভাবে?আচ্ছা আপনারাই বলুন পুরুষ কখনো মানব জন্ম দিতে পারবে?পারবে না।পুরুষের প্রতি মাসে মাসিক হয়?হয় না।কয়টা পুরুষ ঘর সামলাতে পারে?আমি তো দেখি হাজারে একজন।

যে কাজ গুলো একজন পুরুষ পারে না।সে কাজ গুলোই একজন নারী পারে।এবং নারীর করা কোনো কাজেরই টাকার হিসেবে পারিশ্রমিক নির্ণয় করা যাবে না।নারী মানব জন্ম দেয় এবং মানব শিশুকে নিজের শরীর নিসৃত দুধ খাওয়ায়।যা পান করে একজন মানব শিশু ছয় মাস জীবন ধারণ করতে পারে।তারপর অন্য খাবার গ্রহন করে।এত যার গুন সেই নারী আজকাল পদে পদে নিজেকে ছোট করছে।এমনকি নিজের মাসিকের রক্তমাখা সেনেটারি প্যাডের ছবি দেয়ার চিন্তা করে।কেন জানেন?শুধু মাত্র সম অধিকার বা নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে।অথচ আমরা জানি একজন নারী মা হন বলেই প্রতি মাসে রজশ্রাব হয়।একজন নারী মা হন বলেই তার জরায়ুর অনেক মূল্য।একজন নারী মানব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান বলেই তার স্তন দুটো স্ফীত হয়।যা পুরুষের যৌন উত্তেজনার খোরাক।একজন নারী নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন বলেই যোনী মানব জন্ম উপযোগী করে তৈরী।যা পুরুষ ধর্ষন করে উল্লাসে ফেটে পরে।বিকৃত পুরুষ বলে তাদের।আমরা কেন তবে তাদের উপর জেদ করে নিজেদের সম্মান নষ্ট করবো!

আমরা কি জানি নারী স্বাধীনতার নামে আমরা নিজেকে কত ছোট করছি!প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া আর রক্তমাখা সেনিটারী প্যাড দেখানোর মধ্যে কোনো বিরত্ব নেই।এসব কখনোই নারী স্বাধীনতা নয়।তাই যদি হোত বেগম রোকেয়ার মাথায় কাপড় থাকতো না।দেশের বরেন্য নারী ব্যক্তিত্বরা শারীর আঁচলটা বুকের উপর টেনে রাখতো না।আর এটাকে পর্দা বলে না।এটা আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতি।যা আমরা লালন করছি আদিকাল থেকে।

নারী স্বাধীনতার নামে নিজেকে উন্মুক্ত করার যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনি ঘরের কোনে আটকে থাকারও প্রয়োজন নেই।প্রয়োজন নেই ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করার।দরকার নিজেকে তৈরী করা।শিক্ষা,সংস্কৃতি,সাহস দিয়ে নিজেকে সমাজের প্রতিটি স্তরে বিলিয়ে দেয়া।প্রতিদিনের পেপার খুললে দেখি ধর্ষন,খুন।আর ধর্ষন মানেই যেন,পুরুষ নারীকে ধর্ষন করবে।মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হয়েছে কিন্তু এখনো ঘরে, বাইরে নিজেকে পুরুষের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।মনে হয় কবে সকালের পেপারটা খুললে দেখতে পাবো ধর্ষন করতে গিয়ে পুরুষের অঙ্গ হানি হয়েছে।হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে।কবে শুনবো নির্যাতনকারী স্বামী তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতে গিয়ে নিজের একটা হাত বা পা ভেঙ্গে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি আছে।

এসব দেখলে সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী কিছু পুরুষও উল্লোষিত হবে।নারীরাও সাহস পাবে।তা না করে আমরা নারী স্বাধীনতার নামে যা করছি তাতে আমাদের পরের জেনারেশন কিছু শিখছে না।নিজের আত্মরক্ষার জন্য আমরা আমাদের মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে পারি।তখন আর নারী হয়ে পুরুষের মত যখন তখন বাইরে যেতে পারি না,এর মতো আফসোসের সুর ধ্বনিত হবে না কোনো নারীর বা মেয়ে শিশুর মুখে।আর ধীরে ধীরে সমাজটা সুস্থ ও সুন্দর হয়ে উঠবে।

 

আরও পড়ুন