Ads

★ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বনাম বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ★

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর সোবহান সাহেবের অবৈধ? নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের নিয়োগের বৈধতা দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারা নাকি উঁচু মাপের! আমার জানতে ইচ্ছে করছে কতটা উঁচু!
আর নিয়োগ বিধিসম্মত হলে কারো সাধ্য নেই, তা বাতিল করে। তাহলে কেন আন্দোলন? ডালমে কুছ—
ভাগ্যিস করোনা বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধ রেখেছে, তা না হলে এরাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতো। আফসোস! এ কারণে আন্দোলনে বাতাস লাগছে না। ঠিক একই অপকর্ম করেছিলেন প্রফেসর শাহাদাত হোসেন, উপ উপাচার্য(সাবেক) বিএনপি আমলে।
সে যাক, আমি নিজেও দীর্ঘ ১১ বছর শিক্ষকতা করেছি। আমি চাই এ পেশা হবে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে। যারা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিযুক্ত এবং তার মর্যাদা ধরে রেখেছেন, তাদের প্রতি ক্ষমা চেয়ে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় মানে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মুক্ত জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার পাদপীঠ। কিন্তু অপ রাজনীতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের পবিত্র চরিত্র নষ্ঠ করেছে। রাজনৈতিক চর্চা আর তেলবাজি -মাসলম্যানগিরি এক নয়।
শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয় কিন্তু আজ অনেক শিক্ষক সামান্য প্রাপ্তির জন্য তেলবাজি করেন, নীতি- নৈতিকতা বিসর্জন দেন, যা দেশ ও জাতির জন্য অশনিসংকেত।
২। বিএসএস শিক্ষা ক্যাডারে ৩য় বিভাগ প্রাপ্ত কেউ আবেদন করতে পারে না। এমনকি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক হওয়ার জন্য যে নিবন্ধন পরীক্ষা, তাতেও ৩য় বিভাগের কেউ আবেদন করার যোগ্যতা না রাখলেও ৩য় বিভাগ প্রাপ্ত ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোন। সকল পর্যায়ে ২য় বিভাগ প্রাপ্ত অনেক ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন, (অবশ্য কারো পিএইচডি আছে) এটি কিভাবে সম্ভব? শুধুই তাই নয়, এ যোগ্যতায় ইতোমধ্যে কেউ কেউ সর্বোচ্চ পদ উপাচার্য পদেও আসীন হয়েছেন।
৩। এমন নজিরও আছে একই বিভাগে ছেলে-মেয়ে বা বউকে ভর্তি করে দিয়ে পরস্পরের যোগসাজশে ১ম শ্রেণি দিয়ে তাকে শিক্ষক বানানো হয়েছে, এখানে বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্যে অলিখিত চুক্তি থাকে যে পরস্পরের আত্মীয়কে বেশি নম্বর দিবেন। এসব নিয়ে বিভাগীয় সম্পর্ক খুবই তিক্ত বা মধুর। উদাহরণ আমার কাছে মজুদ আছে।
৪। নিজ আত্মীয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানাতে হবে কিন্তু যোগ্যতা হয় না! কি করা যায়! একজনকে টার্গেট করে পুরা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি বানানো হয়েছে। হ্যা, অবাক হওয়ার কিছু নেই!
৫। বিশ্ববিদ্যালয় মানে অনেকটা প্রাইমারী স্কুল। মানে হলো যিনি পড়ান,তিনি প্রশ্ন করেন, তিনিই খাতা দেখেন! খাতিরের লোককে বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে সাজেশন নামক বটিকা বিতরণ করেন। এ কারণে সাধারণ স্টুডেন্টরা অসহায়, কিছু বলতে পারে না। বললে জীবন ফ্যানাফ্যানা!
উদ্বেগ ও কষ্টের বিষয় হলো, ৩য় ও ২য় শ্রেণি প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোন, তবে শিক্ষার মান কোন পর্যায়ে গেছে, তা ভেবে দেখুন। ঐ ক্লাসে শিক্ষকের চেয়ে ভালো ইংরেজি জানা স্টুডেন্ট থাকলেও ভয়ে সারাজীবন চুপ করে থাকে। কারণ কিছু বললেই ৩৪ নম্বর!!
আবার শিক্ষকের প্রতিহিংসার শিকার অনেক স্টুডেন্ট আছে, যারা সারাজীবন কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে। আমার দেখা একজন শিক্ষক অনার্সে ১ম শ্রেণি প্রাপ্ত ছাত্রীর ট্যাবুলেশন সীট ঘষামাজা করে নম্বর কমিয়ে দিয়ে ২য় বিভাগ দিলেন, অন্য শিক্ষককে রাস্তায় ভুলভাল বুঝিয়ে সীটে স্বাক্ষর নিয়েছিলেন। সবুজ কাগজের ঘষামাজা বুঝা গেলেও কোনো বিচার হলো না। ছাত্রটিও মাস্টার্সের কথা চিন্তা করে টু শব্দটি করলো না। ছাত্রী এখন ঐ বিভাগেই প্রফেসর!
অনেক শিক্ষক আছেন যারা তারই ছাত্র জীবনের নোট দেখে বা টিউটোরিয়াল ক্লাসে প্রাপ্ত ভালো স্টুডেন্টের নোট রেখে বাসায় মুখস্ত করে ক্লাস নেন। সাম্প্রতিক বই জার্নাল পড়ার প্রয়োজন পড়ে না। জার্নাল কেনার টাকা ঠিকই নেন। সকলের বাসা চেক করুন, বছর বছর হাজার হাজার টাকা নিয়ে কয়টি বই কিনেছেন। অন্ততঃ একটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রমাণ করুন। অথবা মিথ্যা ভাউচারে টাকা নেওয়ার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করুন, তার স্টুডেন্ট জানুক বিষয়টি।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হবেন জ্ঞানের ভূবন, মুক্ত জ্ঞান চর্চার আধার। তার প্রবন্ধ, বই ইত্যাদি তার পরিচয়কে বিকশিত করবে, এটি ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা সব শেষ করে দিয়েছে। এখন প্রবন্ধ ছাড়াও শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রোমোশন হয়।
শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তবে অবশ্যই আমাদেরকে এ সমীকরণ হতে মুক্ত হতে হবে, যে কোনো মূল্যে শিক্ষাকে রাজনীতির উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা তৈরি করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগ্য মানুষকে নিয়োগ দিতে হবে৷ শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি করে বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। আলাদা উচ্চতর বেতনস্কেল দিয়ে মেধাবী ব্যক্তিটিকে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, মেধা পাচার বন্ধ করতে হবে।
সর্বোপরি ওপর হতে সংষ্কার জরুরি। যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন এ্যাক্ট ও সায়ত্বশাসনের অপব্যবহার করেছে, লংঘিত হচছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের অধীন অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। যারা এর বিরোধিতা করবেন, তারা বুকে হাত দিয়ে বলুন ২০/২৫ বছর আগের পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রফেসর আর এখনকার প্রফেসর কি সম মর্যাদাসম্মন্ন?( সকলকে মিন করছি না, তাই ক্ষমা চেয়ে)
আপনি কি পিএসসি ফেস করতে প্রস্তুত? সরকারি কর্মকর্তা তথা প্রভাষক পদে টিকবেন তো?
(আবারো ক্ষমা চেয়ে) আমার চ্যালেন্জ, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫০-৬০% পিএসসিতে টিকবেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না। যোগ্য হলে নীতিমালা পরিবর্তন করতে হয় কেন? সংবাদ সম্মেলন কেন?
তাই দেশ ও জাতির বিবেক শিক্ষক এবং সমাজ ও নীতি নির্ধারকদের প্রতি আমার বিনীত আকুল আবেদন, নির্মোহভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবুন, দেশ ও জাতিকে বাঁচান। আমরা খাদের কিনারে দাড়িয়ে আছি, এখন আপনি ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিবেন? নাকি টেনে তুলবেন, সে দায়িত্ব আপনার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার।
আমি যে দুই একটি নেতিবাচক উদাহরণ দিলাম তার বিপরীতে বহু ভালো উদাহরণ আছে। কিন্তু সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ব্যক্তি যখন খুব বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তা জাতিকে আলোড়িত করে, ভালো মানুষের বিবেক দংশন করে। এ অবস্থা আমার দেখতে চাই না
ড. মোঃ আজিজুল হক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
২৮/০৬/২০২১ খ্রি.
১০.৪৫
3
1 Comment
1 Share
Like

Comment
Share
আরও পড়ুন