Ads

বুক রিভিউঃ ডাঃ শামসুল আরেফীনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩

।। এনামুল হক ইবনে ইউসুফ ।।

ডাঃ শামসুল আরেফীনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩ 

স্ট্যান্ডার্ড বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? এটা আগে আপনাকে বুঝতে হবে। এরপর বই এর আলাপ। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

সাধারণত “Standard” শব্দের বাংলা তর্জমা করলে হয়: মান/ ভিত্তি। আর “Standardization” অর্থ প্রমিতকরণ/ মান নির্ধারণ। সোজা ভাষায় বলতে গেলে নিদিষ্ট কিছু Criteria-এর ওপর বেস করে কোনো কিছুকে জাস্টিফাই করা।

তাহলে “Double Standard (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড) বলতে কী বোঝায়? একাধিক মান/ভিত্তি কিংবা আদর্শ তাই তো? উঁহু না। এটার অর্থ হচ্ছে—বিচার মানি কিন্তু বড় তালগাছটাই আমার। আর এটাই হচ্ছে নাস্তিক তথা মুক্তমনাদের একমাত্র হাতিয়ার। এরা যুক্তিতে একেকজন কলা বিজ্ঞানী হলে কী হবে? কম্মে এরা একেকটা আস্ত মাথামোটা।

শক্তিমান লেখক Amiruzzaman Muhammad Shamsul Arefin ভাই এর “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড” সিরিজের থার্ড ইন্সটলমেন্ট “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩” নিয়ে কথা বলব আজ।

যদিও শুরুতে বলেছি যে রিভিউ দেব কিন্তু আদতে এরকম একটি বই এর রিভিউ হয় না। কেন হয় না? প্রশ্নটা মনে জাগ্রত হলে জাস্ট বইটা খুলে বসে যান। বাকিটা ইতিহাস।

“ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩” বইটা মোট ৬টি গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে:

১। শুধু মিডল ইস্টের কাহিনী কেন?

২। দ্রোহের সাজা

৩। আম্মা আয়িশার বিবাহ

৪। অর্ধেক কেন? উত্তরাধিকার ও সাক্ষ্যে

৫। জান্নাতে এস কেন?

৬। তথ্য সংরক্ষণ

সারাংশ:

১।বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র রাকিব ও রাহাত। দুজনেই ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ানো দামাল ছেলে। রাজনীতির মাঠে দুজনেই বেশ দাপুটে মুখ। কিন্তু হঠাৎ করেই রাকিবটা কেমন যেন বদলে গেল। আড্ডাবাজি আর রাজনীতি ছেড়ে ছেলে এখন নিয়মিত মসজিদে যায়, কিছুদিন আগে ইস্তিমায়ও গিয়েছিল। এদিকে রাকিবের এই আমূল পরিবর্তন দেখে রাহাতের সে কী অবস্থা। রাহাতের বিশ্বাস যে, রাকিব দল থেকে চলে আসাতে ওদের রাজনৈতিক গ্রুপের এই দুরবস্থা ;কিন্তু কেন ও ফিরে এল?

কুরআন ও সুন্নাহর টানে? কিন্তু কুরআন তো ভাই মুহাম্মদের বানানো বই, দেখিস না সব ঘটনা শুধু মিডল ইস্ট কেন্দ্রিক।

২। নাঈম ও সাব্বির—দুজনেই ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে মাওলানা পাশ করে এখন ইবির থিওলজি ফ্যাকাল্টিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র। দুজনের মাঝে গলায় গলায় ভাব থাকলেও ফ্রি-মিক্সিং আর মুক্তমনাদের সাথে চলতে চলতে সাব্বির বেটার মাথাতেও ভূত ঢুকেছে। তার প্রশ্ন হলো “মুরতাদদের বিধানটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? আর কোনো ধর্মে কি এমন আছে যে, বিশ্বাসের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এটা কি ইনসাফ?”

৩। শহুরে জীবন আর গ্রামীণ জীবন—যেন একই পৃথিবীর দুটো ভিন্ন মাত্রা। Upside Down। ইমরান ছোটবেলা থেকেই শহরে মানুষ। উঁচু উঁচু দালান, গাড়ির বিকট শব্দ আর ধুলোবালির মাঝে তার বেড়ে ওঠা। কিন্তু আচমকা করোনার কারণে এবার তারা গ্রামের পথে। গ্রামের ছেলে মিঠুন। ইমরানের প্রিয় বন্ধু সে। মিঠুনের বাবা এলাকার হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি। এ বছর সেখানে ৬জন বাচ্চা কুরআনের হাফেজ হয়েছে। সেই উপলক্ষে অনুষ্ঠান। অভিভাবক, মাদ্রাসা কমিটি আর গ্রাম্য লোকজনের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে হাফেজদের। বাবা-মায়ের চোখে আনন্দ অশ্রু। এসব দেখে ইমরানের মনের ভেতরেও কেমন যেন করছে। বন্ধু মিঠুনের কাছে তার প্রশ্ন “দোস্ত আমি কি এখন চাইলে ওদের মতো কুরআনের হাফেজ হতে পারব না?”

সেই একই ভাবুক মন কিছুদিন পর আবার প্রশ্ন তোলে আচ্ছা মিঠুন, নবীজি যে ৫০ বছর বয়সে আয়িশা (রা.)কে বিয়ে করলেন, ৬ বছরের এক বাচ্চা মেয়ে—ব্যাপারটা কেমন অস্বস্তিকর না?

৪। শীতকালে তিথিরা গ্রামে আসে। শীতকালটা বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে থাকে। শীত যাই যাই করছে, তিথিরাও কিন্তু শীতেরও যাওয়া হচ্ছে না আর এই-সেই প্রোগ্রাম করে ওদেরও আর যাওয়া হচ্ছে না। তিথির ননদ মিনুকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে শুক্রবার। কিন্তু মিনু মোটেই রাজি না। মাসুদ বোনের জন্য যে ছেলে পছন্দ করেছে সে হুজুর টাইপ। মিনু হুজুরকে বিয়ে করবে না। ভাবী হিসেবে বুঝাতে গিয়েছিল তিথি। হুজুরে মিনুর কী সমস্যা? কেঁচো খুড়তে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল নানান রকমের কেউটে। আসলে ইসলাম নিয়েই মিনুর সমস্যা। নাস্তিক-ফেমিনিস্টদের লেখা ব্লগম্লগ পড়ে পড়ে তার এই অবস্থা।

মিনুর কথা হলো, “ইসলাম তো নারীকে মানুষই মনে করে না। আধামানব মনে করে। পুরুষ যা, নারী তার অর্ধেক। যেমন—মীনা অর্ধেক ডিম আর রাজু পুরো ডিম। এই গ্রাম্য মূর্খ মাইন্ডসেটের সাথে ইসলামের কোনো তফাৎ আছে?

৫। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গংনী, মেহেরপুর।

ডা. সজীব—মেডিক্যাল অফিসার। শামীম ও সিয়াম তার কলিগ। একই ইউনিভার্সিটির জুনিয়রও বটে। সেই সুবাদে তাদের বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবে সজীব মানুষ হিসেবে দিলখোলা স্বভাবের হলেও সে একজন নাস্তিক।

যদিও নাস্তিক পাড়ায় ডাক্তারদের আনাগোনা খুব রেয়ার কেইস। কেননা মানব দেহের জটিল রহস্যগুলো তারা পড়ে। কীভাবে কত নিখুঁতভাবে একেকটি কাজ সংঘটিত হচ্ছে, কীভাবে একই সময় শত শত বিক্রিয়া হয়ে চলেছে কোনো রকম সংঘর্ষ ছাড়া—এ সব স্বচক্ষে দেখার পর কি আর কেউ নাস্তিক কিংবা স্রষ্টায় অবিশ্বাসি হতে পারে? এরপরও যারা নাস্তিক হয়, তা সরাসরি আজাব ছাড়া আর কিছুই না।

একদিন দুপুরবেলা। ডিউটি শেষ করে ডাক্তারদের কমন রুমে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে তিনজন। সজীব ভাই, সিয়াম আর শামীম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।

বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে আবেগের বসে খেই হারিয়ে ফেলেছে সজীব ভাই। সিয়ামকে ডেকে বলছেন, “আহা! সিয়াম, কী আবহাওয়া দেখেছিস? আজ মরে যাওয়ার জন্য পারফেক্ট দিন। ইশ, এমন একটা দিনে যদি মরণ হতো। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের পাড়ে আধশোয়া হয়ে দু’পেগ জার্মান ভদকা” বলতে বলতে সজীব ভাইয়ের চোখ পড়ল শামীমের দিকে।

“ওহ হো, স্যরি। মাওলানা সাহেবের সামনে বলা ঠিক হয়নি এসব; কিন্তু মাওলানা সাহেব, আল্লাহ তো জান্নাতে মদ ( শরাবান তহূরা) ঠিকই খাওয়াবেন, তাহলে দুনিয়াতে নিষেধ করলেন কেন? এ কেমন বিচার? আর দুনিয়াতে নিষেধ করে জান্নাতেই-বা কেন সেই বাজে জিনিস খাওয়াবেন?”

৬। গতকাল রুমে আকাশ আর রাতুলের খানিক তর্কাতর্কি হয়ে গেল। রাতুলকে নামাজের দাওয়াত নিয়ে শুরু। আগেও দিত আকাশ; কিন্তু এমন তো করেনি কখনো।

“দেখ আকাশ, আমাকে নামাজের জনু আর ডাকিস না। তোকে আজ স্পষ্ট করে একটা কথা বলে বলি। আসলে আমি বোধহয় ইসলামে বিশ্বাসী না। এই বিশ্বচরাচরের একজন সৃষ্টিকর্তা থাকা উচিত—এটা আমি বুঝি; কিন্তু ইসলামই ঠিক এটা মানতে পারি না কিছু কিছু বিষয় সামনে এলে। (সংশয়বাদী)

যেমন ধর, ‘বনু কুরাইজার গণহত্যা’ সৃষ্টিকর্তা এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন না যে, একটা গোষ্ঠীর সব পুরুষকে মেরে ফেলতে বলবেন। এটা মুহাম্মদের একটা পলিটিকাল এপ্রোচ। অবশ্য তাকে আমি দোষ দেই না। একজন মধ্যযুগের ওয়ারলর্ডের জন্য এটাই স্বাভাবিক রাজনীতি। তবে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হতে পারেন; কিন্তু প্রফেট না। প্রফেট হলে স্রষ্টার প্রেরিত মানুষ, শান্তির বাণীবাহক এমন করতে পারে না।”

মূল বক্তব্য: দেখেন আমি কিন্তু শুরুতেই বলেছি যে, আমি এ বই-এর রিভিউ দিতে পারব না। সম্ভব না। যোগ্যতাও নেই। তবে বইটা পড়ে একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আমার ভাবাবেগ তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস তো করাই যায়।

১। রাহাত, সাব্বির, মিনু, ডা. সজীব আর রাতুলরা কিন্তু কেউই মূর্খ ছিল না। তারা সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। সুতরাং

তাদের জ্ঞান বিস্তর; কিন্তু তা তাদের জন্য দিনশেষে কতটুকু কল্যাণ বয়ে এনেছে সেটাই আসল ব্যাপার। লক্ষ বছর একটা রান্নাঘরে সবকিছু রেখে তার ওপর ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প চালালে কি এক প্লেট নান্নার বিরিয়ানি হবে? অবশ্যই সেজন্য নান্নাকেই চাই—এই সিম্পল জিনিসটা তারা সবাই বোঝে। কিন্তু এই এরাই বুঝতে চায় না যে, এই যে মানব শরীর, এত এত নিখুঁত বিন্যাস, শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অফুরন্ত অক্সিজেন, সুমিষ্ট ফল-ফলাদি। রাত-দিনের আবর্তন—এর পেছনেও যে কোনো না কোনো কারিগরের নিখুঁত কর্মযজ্ঞ রয়েছে। এই দ্বিমুখী নীতিমালা তাদের আসলে কে যুগিয়েছে?

তারা কুরআন ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে কথা বলে অথচ তারা কেউই কুরআন খুলে তাকে তার ভাষায় পড়ে দেখতে চায়নি। তারা লোকমুখে শুনে শুনে মুহাম্মদকে (ﷺ) প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় অথচ গোটা জীবনে তারা একটা সিরাতগ্রন্থ আদ্যোপান্ত পড়ে শেষ করেনি। এটা কি কোনো লজিক হলো ভাই?

২। ইমরানের কথাটা ভাবেন, শহুরে জীবনে বেড়ে ওঠা ছেলে ইমরান—বাবা-মা তার চোখে এমন এক চশমা পরিয়ে দিয়েছিল যা দিয়ে সে জীবনকে দেখেছে ভিন্নভাবে। যেখানে জীবন মানে অনেক বড় কিছু হয়ে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে খাওয়া, এই ডিগ্রী সেই ডিগ্রী—সফলতা।

কিন্তু যখন সে দেখল ৮/৯ বছরের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা ৩০ পাড়া কুরআনকে অন্তস্থ করে ফেলছে, বাবা-মা তাদের এই সফলতায় আনন্দ অশ্রু ঝরাচ্ছে—তখন তার মনেও ইচ্ছে জাগে ইশ আমিও যদি পারতাম। ফিতরাতগতভাবে এটাই তো প্রতিটি মানুষের স্বভাব-চরিত্র। আমরা সত্যকে জানতে চাই। শিখতে চাই। বুঝতে চাই। তাই তো ইমরানের মনে প্রশ্ন জেগেছিল একজন ৫০ বছরের পুরুষ কীভাবে মাত্র ৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? এটা কি ভালো দেখায়?

আসলে জানার এই আগ্রহ থেকেই সৃষ্টি হয় জাগরণের আর জানতে না পারলে—সংশয়, কেননা আমাদের বাবা-মা কিংবা আশেপাশের মানুষ তো আর এসব ব্যাপারে ক্লিয়ার ধারণা রাখে না। নিজেরাই যেখানে কিচ্ছু জানে না সেখানে সন্তানদের শেখাবেই-বা কী? কিন্তু যদি এই আগ্রহ থেকে তাদেরকে সঠিকটা শেখানো যেত তাহলে কতই না উত্তম হতো যেমনিভাবে ইমরানের বন্ধু মিঠুন তাকে শিখিয়েছিল।

কিন্তু বেচারা সাব্বির নাঈমের মতো একজন বন্ধু পেয়েও দিনশেষে পথ হারিয়ে ফেলেছিল, কেননা মিঠুন কিংবা নাঈমদের তুলনায় অবিশ্বাসীদের সংখ্যাই যে মাত্রাতিরিক্ত। কে শেখাবে ওদের? কে বোঝাবে।

৩। যে বয়সে ছেলেমেয়েদের হাতে কায়েদা থাকবে, মক্তবে বসে শিখবে “আলহামদুলিল্লাহ-হি রাব্বিল আ-লামীন…..” সে বয়সে ওদের পাঠানো হয় গানের ক্লাস কিংবা কবিতার ক্লাসে। তো এরা সত্যিটা শিখবে কবে? আর সেজন্যই তো ডা. সজীব এত কাছ থেকেও মানুষের চলে যাওয়া দেখতে পেরেও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে, স্রষ্টাকে, তাঁর ক্ষমতাকে, তাঁর ইনসাফকে সে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না।

একইভাবে মিনু ইসলামকে ঘৃণা করছে এমন এক মাধ্যমে ইসলাম শিখে যেখানে অবিশ্বাসের ছায়াবৃক্ষই দাঁড়িয়ে আছে তার স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে। এ যেন অর্থনীতির বই-এ নিউটনের গতি সূত্রের এক্সপ্লেনেশান খুঁজে বার করার মতো। দিনশেষে যা বেকার খাটুনি বৈ আর কিচ্ছু না।

রাতুলের দশাও ওই একই, লোকমুখে শুনে শুনে না কুরআনের ব্যাখ্যা আর না হাদিসের কোনো বই পড়ে তারা যা বলেছে সেটাই সহীহ।

এনায়েতুল্লাহ আল তামাশের একটা বই পড়েছিলাম “আমি কারও মেয়ে নই!” যেখানে একজন পাকিস্তানি মেয়ের পতিতা হয়ে ওঠার গল্প তার নিজের জবানে উঠে এসেছিল। তার ভাষ্যমতে দেশভাগের আগে তারা অভাবের মাঝে থাকলেও ঈমান ও আমলে তাদের কখনো ভাটা পড়েনি। পর্দা রক্ষা করে চলাফেরা করেছে তারা সর্বত্র। কিন্তু যখন দেশ ভাগ হলো তখন তারা পাকিস্তানে এসে পড়ার পর বাবার সরকারি চাকুরী সুবাদে তারা একটা বিশাল বাড়ির মালিকানা লাভ করে। ধীরে ধীরে তার বাবা হারাম কামাই দিয়ে সংসার চালাতে শুরু করে। এক পর্যায় তার পরিবার তাকে একটা একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি করায়। অবশ্য অনেকটা জোর করেই তিনি সেখানে ভর্তি হন। এরপর থেকেই তার জীবন বদলে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে হায়া উঠে যায় তার পরিবার থেকে। আধুনিকা হবার বাসনায় সে ধনীর দুলালদের সাথে এদিক-সেদিক যেতে থাকে এবং অতঃপর….. কিন্তু যখন সব শেষ তখন সমাজ তাকে অস্বীকার করে এমনকি নিজ বাড়িতেও তার ঠাই মেলে না। আধুনিকতার চোখ ধাঁধানো আলো তাকে ঠেলে দেয় নিয়তির গহীন অন্ধকারে। আর উঠে আসা সম্ভব হয় না।

আমাদের এই সমাজের দিকে তাকালেও আপনি-আমি এই একই দৃশ্য দেখতে পাই। আমরা চাই আমার ছেলে-মেয়ে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলুক। সে আধুনিক, আধুনিকা হয়ে উঠুক। ছোট ছোট পোশাক পরছে, পরুক না, ক্ষতি কী? ও তো আর এমন না….ভাবুন তো এই চিন্তাভাবনা যে বাবা-মা লালন করে তার মেয়ে তার ছেলে দিনশেষে তাদের কি ফিডব্যাক দিতে পারবে? ঐশীর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে?

স্ট্যান্ডার্ডবাজির এই খেলায় আমরা আসলে নিজেদের অজান্তেই নিজেরা হারিয়ে যাচ্ছি। অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে না গিয়ে আমরা যদি ওয়ার্কশপে চলে যাই অপারেশন হবে? সম্ভব? বিজ্ঞানের বইতে যদি আমি ভূগোল খুঁজতে যাই, সম্ভব? তাহলে ইসলামকে জানার জন্য, বোঝার জন্য, চেনার জন্য স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে তো কুরআন, সুন্নাহ আছেই তাহলে এগুলো বাদ দিয়ে আমরা কোন স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে ইসলামকে মেজার করতে যাচ্ছি? হ্যাঁ কোন স্ট্যান্ডার্ড?

এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “….বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে তাদের হৃদয়।” (সূরা হজ : ৪৬)

শেষ কথা: যদিও কথাটা আমার না, শক্তি ভাই এরই কথা। যে কথাটা সেদিন সিয়াম সজীব ভাইকে বলেছিল। যে কথাটা তার হৃদয়ে বেশ প্রভাবও বিস্তার করেছিল—‘ না ভাই, সব ওলিরই একটা অতীত থাকে, আবার সব গুনাহগারের একটা ভবিষ্যৎ আছে। তাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে নেই। আপনি যদি ভাবেন আমি অনেক গুনাহ করেছি, আমার কোনো মাফ নেই, মরার পর কনফার্ম ধরা। অতএব, আমি দুনিয়াই ভোগ করে নেই। তাহলে আপনি ভুল। আরশে লেখা আছে, আমার দয়া আমার ক্রোধের ওপর বিজয়ী।’

[বিদ্রঃ লেখক ও তার লেখার মান নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না, যেহেতু রিভিউ দিচ্ছি না তবে একটা কথা ভাইকে বলতে চাই তা হচ্ছে সাহিত্য আপনাকে দিয়ে হচ্ছে ভাই। সত্যিই হচ্ছে। অন্তত এই বইটা পড়তে গিয়ে আমি মাঝেমধ্যেই আপনার ভাষা শৈলী দেখে অবাক হয়ে গেছি। বাকরুদ্ধ হয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভেবেছি। আর মাঝেমধ্যে চুরিও করেছি। আল্লাহ আপনার কলমে ভরপুর বারাকাহ দান করুন।]

আরও পড়ুন- লরা ডয়েলের স্যারেন্ডার্ড ওয়াইফ

এক নজরে:

বইঃ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩

লেখকঃ ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি

প্রকাশনায়ঃ পাথফাইন্ডার পাবলিকেশন্স

পৃষ্ঠাঃ ১৮২

মুদ্রিত মূল্যঃ ৩২০ টাকা

 

ডাঃ শামসুল আরেফীনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩ – ডাঃ শামসুল আরেফীনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩ – ডাঃ শামসুল আরেফীনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩ – ডাঃ শামসুল আরেফীনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩

আরও পড়ুন