Ads

এখনো বিজয় আসেনি।। ৩য় পর্ব

।। শহীদ সিরাজী ।। 

নাসিম বলল, “হ্যাঁ বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইসলাম শুধু শ্রমিক নীতিই দেয়নি বরং ইসলামের নবী নিজে তা বাস্তবায়ন করে গেছেন। এ নীতিতে শ্রমিক এবং মালিকের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এটা বাস্তবতা শ্রমিকরা দুর্বল ও মালিকরা সবল হয়ে থাকে। তাই শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য মালিককেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে শ্রমিকের অধিকার আদায় করে দেয়া মালিকের কর্তব্য ও দায়িত্ব। এ ব্যাপারে মালিককে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন – হাদিসের আছে

– ‘মজুরের মজুরি নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিযুক্ত করবে না।’

– শ্রমিককে ন্যায্য মজুরি বা পারিশ্রমিক দিতে হবে।

নবিজি বলেছেন- ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পাওনা মিটিয়ে দাও।’

– শ্রমিকের ওপর বাড়তি কাজ চাপাবে না।

– তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে।

– যে ত্রুটি ক্ষমার যোগ্য তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে‌

– শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আবার শ্রমিকদের যেমন অধিকার আছে তেমন মালিকদের অধিকার আছে। মালিকের দায়িত্ব শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করা তেমনি শ্রমিকেরও দায়িত্ব মালিকের অধিকার রক্ষার। এই অধিকার আদায়ে শ্রমিকের করণীয় হলো-

শ্রমিকরা তাদের কাজকে আমানত মনে করবে।

শ্রমিকরা অবশ্যই মালিকের কল্যাণকামী হবে।

যে কাজ সম্ভব সে কাজটি কেবল দায়িত্ব নেবে।

দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবে না

এভাবেই ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে। এর ফলে এখানে কোন শ্রেণীবিদ্বেষ এর জন্ম হয়নি মানুষের মধ্যে কোন শ্রেণীবিভেদ সৃষ্টি হয়নি। এভাবে ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ অর্থ ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে।

ইসলামের অনুসারী মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্কে এমন যে তারা কাজের মাঝে এক কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করে। কোন পুঁজিবাদী বা সমাজতান্ত্রিক সমাজে এমন আছে? বরং তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রেণীবিভাগ সৃষ্টি করেছে। মালিক এবং শ্রমিক নামে দুটি শ্রেণী তৈরি করে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ সংঘাত বাধিয়ে রেখেছে। এ কারণেই মে দিবসের উদ্ভব হয়েছিল। যেদিনে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল এবং অনেক শ্রমিক মারা গিয়েছিল।”

ফাইজা প্রশ্ন যোগ করলো, মে দিবসে শ্রমিকদের যে দাবি ছিল যেমন একজন শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা ডিউটি করবে একটি বাস্তবায়িত হয়েছে ?”

নাসিম উত্তরে বললো, না তা এখনো বাস্তবে তো হয়নি। ইতিহাসের এটাই ট্রাজেডি। এ আন্দোলন হয়েছিল শ্রমের সময় ৮ ঘণ্টা, ন্যায্য মজুরির দাবি ও নিপীড়ন-নির্যাতন রোধে। সে ১৮৮৬ সালের কথা। আজ পর্যন্ত সেই আন্দোলনের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টো এর প্রতিক্রিয়ায় অনেক পরে ১৯১৭ সালে ঘটেছিল সমাজতন্ত্রের বিজয়। এর পরেও তাদের সে দাবির সফলতা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের কোথাও কোন শ্রমিকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। বরং শ্রমিকদের উপর মালিকের শোষণ জুলুম নির্যাতন আরো বেড়েছে।”

বন্ধু হাসিমের মুখে কথা নাই। কি বলে প্রতিবাদ করবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুটা বিব্রত সে। মনের গভীরে কোথাও যেন একটা পরিবর্তন তার চোখে ধরা পড়ছে। বুঝতে পারছি সে ইসলাম নিয়ে তার পড়াশোনার অনেক ঘাটতি আছে। নাসিম অনেকটা তার মনে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে। এ প্রশ্নের উত্তর তাকে খুঁজতে হবে। তবে তার চিন্তার বিষয় প্রকাশ না করে হেসে শেষে বললো,

“নাসিম তুমিতো এতক্ষণ প্রফেসরের মত বক্তৃতা দিলে। দেখছি আম্মু ও ফাইজাকে তুমি ভালোভাবেই দলে টানতে পেরেছো বন্ধু তোমাকে ধন্যবাদ।”

এত কিছুর পরেও দুই বন্ধুর সম্পর্কে কোন

টানাপড়েন দেখা গেল না। তার কথার জবাবে নাসিম বললো,

“হাসিম! তুমি খোলা মন নিয়ে পড়াশোনা কর। লেলিন স্ট্যালিন পড়েছো, ঠিক আছে; ইসলামকে পড়ো না কেন? সবকিছু বুঝতে পারবে। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তোমার চোখে ধরা পড়বে। এই অর্থনীতি যে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি তা বুঝতে পারবে। তখন মে দিবসের আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না। মালিক- শ্রমিকের দ্বন্দ্ব থাকবে না। মালিক দ্বারা শ্রমিকরা নির্যাতিত হবে না। পরবর্তী প্রজন্ম আর কখনো মে দিবসের আন্দোলন দেখতে পাবে না।”

খালাম্মা খুশি হয়ে বলবো,

“বাবা! খুব সুন্দর ভাবে তুমি গরিব অসহায় শ্রমিকদের ব্যাপারে ইসলামের নীতিমালার কথা বললে। না জানার বা না মানার কারণে গরিব অসহায়দের উপর অনেকে নির্যাতন করে। এসব খুবই অন্যায়। আল্লাহ আমাদেরকে যেন এ থেকে দূরে রাখেন। বাবা! তোমাকে আবারও ধন্যবাদ। তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া।

তারপর ছেলেকে লক্ষ্য করে বললো,

” দেখ হাসিম! তোর বন্ধু সোনার টুকরা ছেলে। আমি চাই তুই তোর বন্ধুর মতো হবি। তাহলে আল্লাহ খুশি হবেন! আমরাও খুশি হবো।”

ফাইজাও দারুন খুশি! এতদিন সে নাসিমকে দূরে থেকে দেখেছে, কাছে যেতে লজ্জা পেয়েছে। আজকে সরাসরি কথা বলেছে। এসব যতই ভাবছে ততই তার মন এক ভিন্নরকম আমেজে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।

এমন সময় হাসিম নাসিমকে প্রশ্ন করতে ফাইজা নিজের জগতে ফিরে আসলো। জিজ্ঞেস করল,

” মে দিবসের প্রোগ্রামে তোমাদের ভেন্যু কোথায়? বন্ধু বলে তোমাকে সতর্ক করছি। আমি ওদের সাথে ঘোরাফেরা করি; তোমাদের প্রোগ্রাম কোন অঘটন ঘটতেও পারে সাবধান থাকবে।”

নাসিম শুনে মোটেও অবাক হলো না। ভার্সিটির পরিবেশ অনেকটা ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। একজন এক অন্য দলের আদর্শ মানতে নারাজ।

বলল,

“ধন্যবাদ বন্ধু! তবে সত্য তো প্রকাশ পাবেই। সত্যের জয় হবেই। বাধা আসলেও দিনের আলোয় রাতের আঁধার বিদায় নিবে ঠিকই। দেখো! মে দিবসে আমরা কী আলোচনা করব? আমরা চাই মে দিবসের আন্দোলন এতদিন পরে হলেও সফল হোক। এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল কেন? সফল কিভাবে করা যাবে সে বিষয়ে কথা বলব। বলবো এর সফলতার অন্যতম উপায় হচ্ছে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করা।”

মে দিবসের আলোচনার সভার রসদ সংগ্রহ করতে পেরে ফাইজার খুবই ভালো লাগছিল। তবে ভাইয়ার কথায় টেনশনে পড়ে গেল। কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না তো? নাসিমদের কোন বিপদ হবে না তো? কিছুটা দুশ্চিন্তা! তবে তার সাহসী ও সত্য কথায় ধীরে ধীরে মনে সাহস বাড়তে লাগলো।

যাই হোক না কেন সত্য কথা সে বলবেই। মে দিবসের আন্দোলন একটা বাস্তবতা সে কথা ঠিক। এখনো বিজয় আসেনি। তাই তার ব্যর্থতার বিষয়ও আলোচনা আনতে হবে, সত্য তুলে ধরতে হবে। নাসিমের আলোচনা থেকে সে পয়েন্ট পেয়েছে। এখন আলোচনা পেশ করতে পারবে। মেয়েদেরকেও সচেতন করতে হবে। সবচেয়ে খুশির বিষয় ইসলামের শ্রম নীতির কথা বলে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারবে।”

এসব ভাবতে ভাবতে তার হৃদয়ে একটা অপার্থিব আনন্দ আলোড়িত হতে লাগলো।

আগের পর্ব- এখনো বিজয় আসেনি ।। ২য় পর্ব

কবিঃ কবি , সাহিত্যিক এবং  সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন এবং সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হইন । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন