Ads

আসুন সবাই সুস্থ সুখের নীড় গড়ি

মোঃরুহুল আমিন

বিবাহের মতো পবিত্র সম্পর্কগুলো আজকাল ভেঙে যাচ্ছে।দিনদিন এই পরিসংখ্যান বৃদ্ধির দিকে। বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ শহরের নাগরিক জীবনেই বেশি। কিন্তু তাই বলে গ্রামাঞ্চলেও থেমে নেই বিবাহ বিচ্ছেদ। তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রাম গুলোতেও লেগেছে। দিনদিন বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ বেড়েই চলছে!
এই দায় কার?
নারীর নাকি পুরুষের?
নাকি সমাজ তথা রাষ্টের?
কেন পবিত্র সম্পর্ক গুলো দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে? কি তার কারণ?
আমরা কি কখনো তার মূল সমস্যা খতিয়ে দেখেছি?
না চেষ্টা করছি?
আমাদের মতো জনবহুল দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেশি জানেন? সন্তান, ওদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়। অত্যাচার নিগৃহীত হয়ে উজ্জল ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায়। বাবার অবহেলায় কিংবা সৎ মায়ের মানসিক শারীরিক নির্যাতনে, এই বিষয়ে আমরা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবুও আমরা সচেতন নই,পুরুষ কিংবা নারী।খোঁজ নিয়ে দেখুন জেলা উপজেলা কিংবা রাজধানীতে প্রতিদিন কতো বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে।
এই বিচ্ছেদের কারণ কি?
কেন দিনদিন এর সংখ্যা বাড়ছে?
বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কি?
আমি আমার মতো করে কিছু বিশ্লেষণ করবো,সবাই একমত নাও হতে পারেন।
আমি একাডেমি আলোচনা করবো না।আমি বাস্তবতাটা তুলে ধরবো যেগুলোর কারণেই মূলত বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ বর্তমানে বেড়েই চলেছে। প্রথমে আসি শহরের নাগরিক জীবনের কথা।সবাই শিক্ষিত,স্বামী স্ত্রী দুজনই চাকুরিজীবি,বিবাহের শুরু দিকে দুজন দুজনের যত্ন নিতো ব্যস্ততার মাঝেও।সময়ের পরিক্রমায় দুজনের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে।
অনেক সময় অর্থের আর বিলাসিতার লোভে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।ভুলে যায় অর্থ আর বিলাসী জীবন মানেই সুখ নয়।সুখ হলো আত্মার প্রশান্তি,সম্পদে আসে না।
ধরুন, একজন পুরুষ তার ছুটির দিনের সময়টুকু স্ত্রীকে না দিয়ে বন্ধুবান্ধন নিয়ে আড্ডায় ব্যস্ত, স্ত্রীর খোঁজ কিংবা তাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। স্ত্রী স্বাভাবিক ভাবে মনক্ষুণ্ণ হবে।
আস্তে আস্তে তার মনে মানসিক অবসাদ তৈরি হবে। এই মানসিক অবসাদের ছাপ তার কর্মক্ষেত্রেও পড়ে। চেহারায় হতাশার ছাপ বাড়তে থাকে।
তখন সে কারো সঙ্গ বড়ই প্রয়োজন অনুভব করে।তার এই শূন্যতাটাকে তার সহকর্মী কাজে লাগিয়ে মিষ্টি কথার মাধুর্যে আস্তে আস্তে তাকে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত করে ফেলে।মেয়েরা পুরুষের বা প্রিয়জনের সঙ্গটাই পছন্দ করে প্রকৃতিগত কারণে।

আমরা যারা জব করি,অফিসে কলিগদের সাথে চমৎকার ব্যবহার করি, সুন্দর করে প্রশংসা করি। মেয়েরা স্বভাবতই প্রশংসা পছন্দ করে। কলিগ তার নিচুস্তরের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে সুযোগ বুঝে প্রশংসার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়,মাঝে মধ্যে ঘুরতে যাওয়া কিংবা চা কফির অফার করে।
যখন মেয়েটি দেখে তার স্বামী,তার কলিগের পঞ্চাশ ভাগ কেয়ার ও করেনা না,একটা সময় গিয়ে মেয়েটি ভুল করে ফেলে,পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়।
এটা কলিগ হতে হবে এমন নয়,অন্যকেউ হতে পারে।

পরকীয়ায় জড়িয়ে যাওয়ার পর স্বামীর সাথে শুরু হয়ে বাজে ব্যবহার করা। বাজে ব্যবহারের তিক্ততা যখন চরমে পৌঁছে যায়,তখন বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবটাও বিবেচনা করে না। যেমন কর্মক্ষেত্রে কতো সুন্দর মন্তব্য ব্যবহার পায়,কিন্তু স্বামীর কাছে তেমনটি পায় না।
কিন্তু তিনি তখন ভুলে যান অফিস কর্মক্ষেত্র মতো সংসার জীবন এতো চাকচিক্যপূর্ণ নয়। বাস্তবতা আরো অনেক কঠিন। অফিস চলে নির্দিষ্ট নিয়মে, জীবন চলে প্রকৃতির গতিতে।
আরো বাড়তি চাওয়া পাওয়ার কারনও থাকতে পারে। বিচক্ষণতার দক্ষতার ঘাটতির কারণে পরকীয়া  বা বিচ্ছেদের দিকে ধাবিত হয়ে একটা সুন্দর সংসারের পরিসমাপ্তি ঘটে।

পক্ষান্তরে, একটা পুরুষের দ্বায়িত্ববোধ বেশি থাকে,তার স্ত্রীকে হাসিখুশি রাখার জন্যে। আপনি অফিস থেকে আসলেন,এসেই বন্ধুদের সাথে চলে গেলেন সারা রাত শেষ করে এসে ঘুমিয়ে গেলেন,স্ত্রী খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন মনে করলেন না,মাঝে মধ্যে ছুটির দিনে তাকে নিয়ে ঘুরতে গেলেন না,তার প্রশংসা না করে দোষ ত্রুটি খোঁজ করতেই ব্যস্ত থাকেন,পর নারীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
আপনারও কিছু দ্বায়বদ্ধতা আছে,একটা মেয়ে তার আপনজন ছেড়ে আপনার ভালোবাসা প্রশংসা পাওয়ার জন্যে তার মন ছটফট করে।
আপনি ছাড়া এখানে তার আর কে আছে? ভুল ত্রুটি আপনার কাছেই করবে,তার জন্যে খারাপ ব্যবহার করতে হবে কেন? আপনার ব্যবহার সময় কেয়ার নির্ধারণ করবে সম্পর্কের স্থায়িত্ব।
আপনি সারারাত বন্ধুবান্ধব নিয়ে পড়ে থাকেন,অথচ স্ত্রীর খোঁজ রাখেন না,একটা মেয়ে কি চায় বলুন তো? যে পুরুষ তার স্ত্রীকে ভালোবাসায় আবদ্ধ করতে সক্ষম হবে,তার স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।বিবাহ বিচ্ছেদের কথা কল্পনাও করবে না কেউ।
অন্যের বউ সুন্দরী,এই কুদৃষ্টি থেকে সরে আসতে হবে পুরুষকে,ভাবতে হবে আমার ঘরে স্ত্রী আছে। আমার স্ত্রী আমার ভালোবাসা পাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনে।ওপর ওয়ালা সবার জন্যেই উপযুক্ত মেয়েকেই প্রতিটা পুরুষের নামের সাথে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
এইতো গেলো শহরের নাগরিক জীবনের কথা,এবার আসি গ্রামের দিকে, বর্তমানে গ্রামেও বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে,পরকীয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনদিন।তার অন্যতম কারণ পারিবারিক কলহ এবং ভারতীয় সিরিয়াল অনেকাংশে দায়ী।
যার প্রভাব গ্রামীণ জীবনে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে,ভবিষ্যতে ভয়ানক রূপ ধারণ করবে।গ্রামীণ জীবন আরেকটি মাধ্যম হলো প্রযুক্তি অপব্যবহার শুরু হয়েছে, ফোনের মাধ্যমে কথা পরিচয়,আস্তে আস্তে পরিক্রয়া জড়িয়ে যায় ভাবনাহীন ভাবে।দারিদ্রের কষাঘাতে যেনো পরকীয়ায়ই বিনোদনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়েক বছর আগেও এমন ছিল না।
সংসার হলো দুজনের ত্যাগ স্বীকার করে একসাথে এগিয়ে যাওয়া। ভুলে গুলো শুধরে প্রিয়জনকে বাহুতে আগলে রাখা। মেয়েদেকে স্বামীর প্রশংসা করতে হবে,উৎসাহিত করতে হবে সকল কাজে।স্বামীর যত্ন নিতে হবে।সম্মান আদর সোহাগে স্বামীকে ভালোবাসায় বন্দী করতে পারলে সেই সংসার সুখের হবে।

স্বামীকেও স্ত্রীর ভুলগুলো সুন্দর করে বলে দিতে হবে,তাকে সময় দিতে হবে,ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে পছন্দ অপছন্দের বিষয় গুলো জেনে নিতে হবে।তাকে বুঝাতে হবে দেখো তুমি আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ। তোমায় সঙ্গী করে সকল দূর্গমপথ পাড়ি দেবো তোমার হাত ধরে।
সংসার করতে হলে নারী পুরুষ দুজনকেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।মানুষের ভুল ত্রুটি থাকবেই, শুধরে নিয়ে একই ছাদের নিচে একই কম্বলের নীচে প্রিয় মানুষকে বুকে জড়িয়ে প্রশান্তির নিদ্রায় হারিয়ে যাওয়ার নামই ভালোবাসা,সংসার।
নারী পুরুষ সবাই পরকীয়ায় জড়ানোর আগে একবার ভেবে দেখুন আপনাদের আদরের সন্তানের ভবিষ্যৎ। বিচ্ছেদের আগে একবার ভাবুন আপনার সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
পরকীয়ার মাঝে শুধু শারিরীক চাহিদা পূরণ হবে হয়তো,কিন্তু ভালোবাসা থাকে না, কিছুদিন পরই ভুলের মাশুল গুনতে হয়,মাঝখানে পারিবারিক সামাজিক ভাবে হেয় হতে হয়,মানুষের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য চাহনির তীর্যক চোখ তাকিয়ে থাকবে।
আমাদের মূল সমস্যা হলো স্বামী স্ত্রী প্রশংসা করতে পারি না,স্ত্রী ও স্বামীর প্রশংসা করতে পারে না।
পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। একটা মেয়ের যখন স্বামীর ছায়ার হাত তার মাথার উপর থেকে হারিয়ে ফেলে,তখন বাস্তবতাটা অনুভব করতে পারে।একজন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলে তার পারিবারিক জীবনে অশান্তির স্রোত নামে। স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক।
সুতরাং দু’জনেরই দ্বায়বদ্ধতা আছে সংসার সুখের করতে। সবারই সীমাবদ্ধতা থাকে এগুলো কাটিয়ে সুখী হতে দুজনের বোঝা পড়া ভালো হওয়া আবশ্যক।
যতোই অযুহাত দেই না কেন,পরক্রিয়া কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদ কোন সমাধান নয়,বরং সমস্যার জটিলতার শুরু। আসুন সবাই সুস্থ সুখের নীড় গড়ি,ভালোবাসা বিশ্বাস শ্রদ্ধাবোধের বন্ধনে।
,
লেখকঃ সাহিত্যিক ও সৌদি আরব প্রবাসী
১৩/১২/২০২০ইং

আরও পড়ুন