Ads

তুরস্কের গুলেন আন্দোলন ও ফেতুল্লাহ গুলেন

।। সুলতান সুলাইমান খান ।।

 

দেশের সর্বোচ্চ নেতা হতে কেই না চায়! দেশের ক্ষমতা দখলের মুল হাতিয়ার হচ্ছে একটি আদর্শ। গণতান্ত্রিক দেশ তুরস্কের ফেতুল্লাহ গুলেনের নাম হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। ২০১৬/১৭ সালে তিনি ছিলেন বিশ্ব মিডিয়ার কেন্দ্র বিন্দুতে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র প্রধান হতে চাওয়াটা অপরাধ না। কিন্তু হতে গেলে দেশের আইন মেনে হতে হয়।অথবা জোর করে ক্ষমতা দখল করতে হলে বিভিন্ন আদর্শ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হয় কিংবা সরাসরি সেনা বাহিনী থেকে বিদ্রোহ করা লাগে। কিন্তু এই ফেতুল্লাহ গুলেন নিজের আদর্শকে জনগণের মাঝে ছড়িয়েছেন,সেকুলারিজমের বিরোধিতা করেছেন, সেকুলার সেনাদের সমর্থন পেয়ে নিজের কাজ চালিয়েছেন এবং শেষে সেকুলার সামরিক নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে এরদগানের পতন ঘটানোর চেষ্টাও করেছেন।

 

ফেতুল্লাহ গুলেন ১৯৪১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।পেশায় ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক ও বক্তা।প্রাথমিক জীবনে তিনি ইমাম ওয়ায়েজ ও লেখক ছিলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়ায়েজ হিসেবে বিভিন্ন শহরে ওয়াজ করে বেড়াতেন। পরবর্তীকালে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেন।
সত্তরের দশক থেকে তিনি দেশে বিভিন্ন ভালো ভালো কার্যক্রম শুরু করেন।প্রকৃতপক্ষে তার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। নিছক ধর্মপ্রচার বা ধর্মীয় আধ্যাত্মবাদের মন্ত্র ব্যক্তি-পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া নয়, তার চোখে ছিল রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হবার জ্বলজ্বলে স্বপ্ন!
তিনি চাইছিলেন, দেশের শিক্ষা, মিডিয়া, ব্যবসা খাতসহ প্রভাবশালী সেক্টরে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। এজন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ গ্রুপ থেকে সব লোক ঢোকানোর ফন্দিফিকিরও শুরু করেন।

 

গুলেন মুভমেন্ট প্রাথমিকভাবে পরিচয় পায় একটি শিক্ষা আন্দোলন হিসেবে কিংবা সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এজন্য তুরস্কে তারা একসময় পরিচিত ছিল ‘হিজমেত’ তথা সেবা মুভমেন্ট হিসেবে।এই নাম দিয়ে তারা তুরস্কে ব্যাপকহারে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থার নাম দিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে ডরমিটরি প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ব্যবসা, প্রকাশনা, ব্যাংকিংসহ সকল সেক্টরে তারা ভালো একটি অবস্থান সৃষ্টি করে। প্রথমে তুরস্কে, পরে পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
ফেতুল্লাহ গুলেনের মূল উদ্দেশ্য হলো, তারা লং টাইম পরিকল্পনায় যেকোনোভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।এজন্য সরকারের বিভিন্ন জায়গাতে তারা লোক ঢুকিয়ে দেয়। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে প্রশাসন, বিচারবিভাগ, সেনাবাহিনীসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের লোক প্রবেশ করায়।

 

১৯৮০ সালে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের পর তিনি সামরিক সরকারকে সমর্থন দেন।১৯৯৭ সালের পোস্ট মডার্ন সেনা( ইসলাম বিরোধী সেনা ) অভ্যুত্থানের সময় ইসলামপন্থী দল নিষিদ্ধ এবং অন্যান্য জামায়াত তথা ধর্মীয় উপদলগুলো সমস্যার সম্মুখীন হলেও, তারা দিব্যি তাদের কাজ চালিয়ে গেছে। সেই সাথে তারাও সামরিক সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।
২০০১ সালে ৯/১১ ঘটনার পর তাঁর দাবি করা উদারবাদি বা মডারেট ইসলাম পাশ্চত্যে ভালোই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আস্তে আস্তে তাঁর এই আন্দোলন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
২০১০-১১ সালের দিকে এসে তুরস্কের শিক্ষা, মিডিয়াসহ বড় বড় সেক্টরগুলো তাদের একচেটিয়া কর্তৃত্বে চলে আসে। ওদিকে সরকারের বিভিন্ন পদে ঢুকানো লোকগুলো সিনিয়র হয়ে বড় পদগুলোতে চলে আসে। পুরো প্রশাসনে তারা সিন্ডিকেট শুরু করে।

 

তারা রাষ্ট্রের ভেতরে আরেক রাষ্ট্র তৈরি করে, যাকে ‘প্যারালাল কান্ট্রি’ বলে অভিহিত করা হয়। সেনাবাহিনী, বিচারপতি, প্রশাসন ইত্যাদি সেক্টরে যখন তার একটা শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়, তখনই তাদের মাথায় গণতান্ত্রিক সরকারকে হটানোর চিন্তা আসে।অতীতে এরদগানের একে পার্টির সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গুলেন আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বাড়া এবং তাঁর উচ্চাভিলাষ প্রকাশ পেলে এরদগানের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়।

 

সবশেষ ২০১৬ সালের ৫ই জুলাই তুরস্কের ব্যর্থ সেনা বিদ্রোহ ছিল গুলেন আন্দোলনের চুড়ান্ত রূপ।গুলেন কখনো স্বীকার করেন নি যে তিনি এই বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অসংখ্য প্রমাণ আছে যে তিনি এই বিদ্রোহের সাথে খুব মাখামাখিভাবে জড়িত।

 

ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর গুলেন মুভমেন্ট নিয়ে পড়লে বুঝতে পারবেন, তিনি খুব ধৈর্যশীল ব্যক্তি ছিলেন। প্রচলিত নিয়মের বাহিরে গিয়ে তিনি এক নতুন পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সেই ৭০ এর দশক থেকে বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম শুরু করেন এবং সফল হতে হতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন।
গুলেন আন্দোলন শুধু তুরস্কে না ,সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে। এমনকি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও আছে। পাকিস্তান সরকার এই গুলেনপন্থিদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তুরস্ক চেয়েছিল বাংলাদেশও যেন এই একই কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এই গুলেনপন্থি আন্দোলনকে সন্ত্রাসী তালিকা ভুক্ত করেনি।

 

সুত্রঃ রোর বাংলা, উইকিপিডিয়া, ইনকিলাব, প্রথম আলো

 

লেখকঃ কলাম লেখক

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ, পরিবার ও নিজেকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরণের

আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন  এবং

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন