Ads

নবিজীর (সা:) বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন যিনি

আরিফুল ইসলাম

সীরাত পাঠে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং ঘটনা পাওয়া যায়। কেউ কখনো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীর মর্যাদা লাভের জন্য জনসম্মুখে রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অন্যদিকে, এমন ঘটনাও পাওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু সেই নারী অজুহাত দেখান।
একদিন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবী আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এমন একজন নারীর কথা তাঁর মেয়েকে বলেন, যিনি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনসম্মুখে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এটা শুনে আনাস (রা:) –এর মেয়ে তাঁকে বলেন, “সেই মহিলা কতোই না নির্লজ্জ, ছিঃ কী লজ্জার কথা!” আনাস (রা:) মেয়ের বিস্ময়ের জবাবে বলেন:“সেই নারী তোমার চেয়ে উত্তম! তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহচর্য পেতে অনুরাগী ছিলেন। এ কারণেই তিনি নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন।”কোনো কোনো বইয়ে সেই নারীর নাম পাওয়া যায়- খাওলাহ বিনতে হাকিম (রাদিয়াল্লাহু আনহা)।

অন্যদিকে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন নারীকে দুই সময়ে দুইবার বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমবার সেই নারীর বাবা রাজি হননি, দ্বিতীয়বার সেই নারী অজুহাত দেখান। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচাতো বোন উম্মে হানী (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। তাঁর আরেক নাম ছিলো- ফাখতা। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আবু তালিবের মেয়ে, আলীর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বোন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনো নবুওয়াত পাননি। একদিন তিনি চাচা আবু তালিবের কাছে চাচাতো বোনের বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। একই সময়ে উম্মে হানীর (রা:) জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠান হুবায়রা ইবনে আমর। আবু তালিব রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে হুবায়রার সাথে বিয়ে দেন।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়াতকালীন উম্মে হানীর (রা:) সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ইসরা ও মিরাজের ঘটনা। একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিরাজ-যাত্রা শুরু হয়েছিলো উম্মে হানীর (রা:) ঘর থেকে।
মিরাজ থেকে ফিরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিস্ময়কর যাত্রার কথা সর্বপ্রথম বলেন উম্মে হানীকে (রা:)। উম্মে হানী (রা:) এমন বিস্ময়কর ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরামর্শ দেন- “হে আল্লাহর নবী! একথা আপনি আর কাউকে বলবেন না। এমন কথা মানুষ বিশ্বাস করবে না এবং আপনাকে কষ্ট দিবে।” কিন্তু, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কথা প্রচারের জন্য ছিলেন আদেশপ্রাপ্ত। তিনি চাচাতো বোনের উদ্বেগ বোঝেন এবং বলেন:“আল্লাহর কসম! একথা আমি তাদেরকে বলবোই।”

উম্মে হানী (রা:) বুঝতে পারলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরামর্শ রাখবেন না। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচারের পর প্রতিক্রিয়া কী হয় সেটা জানার জন্য তিনি তাঁর দাসীকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছু পিছু প্রেরণ করেন।
উম্মে হানী মদীনায় হিজরত করেননি, মক্কায় থেকে যান। মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর স্বামী মক্কা থেকে পালিয়ে নাজরানে চলে যান।
সেদিন আল-হারিস ইবনে হিশাম উম্মে হানীর (রা:) ঘরে আশ্রয় নেন, তিনি ছিলেন উম্মে হানীর (রা:) শ্বশুর-গোত্রের লোক; তিনি ছিলেন কাফির। উম্মে হানীর (রা:) ভাই আলী (রা:) হারিসকে হত্যা করতে চান, কিন্তু উম্মে হানী বাধা দেন। উম্মে হানী (রা:) তাঁর ভাইকে বলেন, “আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি।” তবুও আলী (রা:) বোনের কথা মানতে রাজি নন। অবশেষে, উম্মে হানী (রা:) বিষয়টি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মে হানীর কথা শুনে বলেন:“ও উম্মে হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছো, আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম।”
উম্মে হানীর (রা:) নিরাপত্তায় সেদিন আল-হারিস বেঁচে যায়।

উম্মে হানীর (রা:) স্বামী ইন্তেকাল করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিতীয়বারের মতো উম্মে হানীকে (রা:) বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাসূলুল্লাহর প্রস্তাব শুনে উম্মে হানী (রা:) ব্যক্তিগত অজুহাত দেখান। তিনি বলেন:

“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কান ও চোখ থেকেও আপনি আমার কাছে অধিক প্রিয়। স্বামীর অধিকার অনেক বড়ো জিনিস। স্বামীর দিকে মনোযোগী হলে আমার নিজের এবং আমার সন্তানদের (আগের স্বামীর) অনেককিছু ত্যাগ করতে হবে। অন্যদিকে, সন্তানদের দিকে মনোযোগ দিলে স্বামীর অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তাছাড়া আমি বৃদ্ধা হয়ে পড়েছি।”

উম্মে হানীর (রা:) এমন অজুহাতকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্মান দিলেন। তিনি বললেন:
“উটে আরোহণকারী নারীদের মধ্যে কুরাইশের নারীরা সর্বোত্তম। তারা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহশীল হয়ে থাকে, আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়।”

লেখকঃ কলাম লেখক
লেখকের প্রকাশিত লেখা-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেনো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো?

আরও পড়ুন